কুষ্টিয়ার বুনো-বাগদীরাই আদীবাসীদের জীবন ধারা হিসেবে যুগযুগ ধরে বসবাস করে আসছে। কোন কোন স্থানে এদেরকে বিন্দি, ব্রিটিশচর, সরদার, বাগদীসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। অশিক্ষা, অভাব আর সামাজিক বৈষম্য তাদেরকে সমাজের মূল ধারার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অনেকটাই বাধার সৃষ্টি করেছে। ফলে , আধুনিকতার ছোয়া থেকে বঞ্চিত কুষ্টিয়ার খোকসা, কুমারখালী, ভেড়ামারা, মিরপুরসহ জেলার প্রায় আট হাজার আদিবাসী।
জানা যায়,বৃটিশ আমলে জমিদাররা নীল চাষ করার জন্য কুষ্টিয়ায় এনেছিলেন আদিবাসীদের। নীলকর শাসক টমাস আইভান কেনী এ আদিবাসীদের জঙ্গল পরিস্কার করে নীল চাষ করার জন্য এনেছিলেন। তাদের দিয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নীলের আবাদ করে। সেই সাথে কুষ্টিয়ার স্থানীয় চাষীদেরও জোরপূর্বক তারা নীল চাষ করতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে এ নীলচাষের বিরুদ্ধে দেশীয় জমিদার প্যারী সুন্দরীসহ এ জেলার সচেতন ব্যক্তিবর্গ নীলকর বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। গড়ে তোলেন ইংরেজ নীলকর বিরোধী সংগ্রাম। তীব্র আন্দোলনের মুখে তারা এদেশ থেকে বিদায় নেন। নীলকর জমিদাররা এদেশ থেকে চলে গেলেও আদিবাসীরা এদেশে রয়েই যায়। বর্তমানে এ জেলায় আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। জেলার ৬টি উপজেলার রাস্তার ধারে, জিকের পরিত্যক্ত জায়গায় এরা অতিকষ্টে বাস করে আসছে। এরা কোথাও বুনো নামে, কোথাও কোল সম্প্রদায় নামে, কোথাও সর্দার নামে, কোথাও বিন্দি, কোথাও বাগাদী নামে পরিচিত। এ সম্প্রদায়ের মানুষেরা জীবন বাঁচানোর জন্য নারী পুরুষ উভয়েই কাজ করে সংসার চালায়। আদিবাসী এ সম্প্রদায়ের পুরুষেরা নদী নালা খাল বিলে বড়শী দিয়ে মাছ ধরে। খাল বিলে পানি না থাকায় এ কর্মটিও তাদের অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। এদের কেউ ধান ক্ষেতে ইদুরের গর্ত থেকে ধান তোলে। মহিলার খেজুরের পাতার পাটি, মুড়ি ও ভুট্টার খই তৈরি করে। অনেকে কচ্ছপ, কুচে, কাঁকড়া ধরে বিক্রি করে।
দেশে করোনাকালীন অতিমারীর এই ভয়বহ বিপর্যয়ে তাদের জীবন ও জীবিকা ব্যাপক হুমকীর মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ ভূমি’র এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় জেলার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের আদিবাসী শিউলি রানীর (ছদ্মনাম) সাথে। তিনি জানান, ‘তার স্বামী বেশ কয়েক বছর ধরে তার পেশা পাল্টিয়ে ঢাকার সাভারে রিকশা চালিয়ে কোন মত সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনার এই দুঃসময়ে বাড়িতে এসে আটকা পড়েছে। কোন কাজ নেই। খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটছে। ’
আদীবাসী সুরক্ষায় সমাজের সচেতন মহলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান আদীবাসী এই নারী।