চন্দ্রপাড়া দরবারের বড় হুজুর ও তার প্রেমের স্ত্রী মিতুল বালার প্রতারণার গল্প ।।পর্ব-৪
জাল সনদ ও ভূয়া নিয়োপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা ।
বিশেষ প্রতিবেদক: সনদপত্র জালিয়াতি ও ভূয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের সুলতানিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল আনিছুর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মিতুল বালা ওরফে মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে। তারা ফরিদপুর শহরে গড়ে তুলেছেন আলিশান মমতাজ মহল। আনিছ হুজুর ও মিতুল বালার নেতৃত্বে গড়ে উঠা প্রতারকচক্রটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও লেনদেনসহ সার্বিক অপতৎপরতা পরিচালিত হয় ফরিদপুর শহরের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন মমতাজ ভিলাতে। এ ছাড়া ফরিদপুর শহরের বাইতুল আমান এলাকায়ও রয়েছে তাদের কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি। ছেলে মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত করতে ইউরোপ এ্যামেরিকায় সেটেল করেছেন প্রতারণার টাকায়। শোনা যায়, মওলানা আনিছুর রহমান বৃদ্ধ বয়সেও নিয়মিত নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত করেও প্রচুর অর্থ অপচয় করেন।
তারা নিবন্ধন সনদ জাল করে ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতির প্রভাষক হিসেবে এমপিওভুক্ত করিয়েছেন ইফতেখার রসুলকে। সে গোপালগঞ্জ জেলার কান্দিবানিয়ারি গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। অবৈধ এই নিয়োগ বানিজ্যে কমপক্ষে ১৫লক্ষ টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে।
ইতোমধ্যে ২০২০ সাল থেকে বেতন ভাতার নামে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা উত্তোলনও করেছেন তারা। দৈনিক বাংলাদেশ ভূমিতে এ সংক্রান্ত নিউজ প্রকাশিত হবার পর নড়েচড়ে বসেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।
তারা তলব করেন প্রতারক কথিত মওলানা আনিসুর রহমানকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সিরাজ নগর গ্রামের দিদার হোসেনের ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম নামের একজন বেকার যুবক, সোনার হরিণ চাকুরীর জন্য ঘুরছিলেন দ্বারে দ্বারে। কোন এক অশুভ ক্ষণে পরিচয় ঘটে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার তথাকথিত দরবার শরীফ পরিচালিত চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সাথে৷ তাকে প্রভাষক পদে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে চাকরী প্রত্যাশী যুবকের নিকট থেকে বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। আবেদনের কথা বলে নিয়ে নেন শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদ। আরিফুল ইসলাম আশায় বুক বেঁধে ছিলেন তার চাকরি হবে কিন্তু পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান তার কথা রাখেনি। এমনকি ফেরত দেয়নি তার একটি টাকাও।
মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, আমি শিক্ষক নিবন্ধনে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে টিকেছিলাম। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে আবেদন করতে গিয়ে দেখি আমার সনদটির রোল নম্বর ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর দিয়ে অলরেডি ইনডেক্স হয়ে গেছে৷ পরবর্তীতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে, ইফতেখার রসুল নামের এক ব্যক্তির নামে এই ইনডেক্সটি ( যার নম্বর স০০০৮১৫৬) করা হয়েছে। সে চন্দ্রপাড়া ফাজিল মাদরাসাতেই চাকরি করছে। আরিফুল ইসলাম মাদরাসা অধিদপ্তরের নিকট আবেদন করেছেন তার নিবন্ধনের ইনডেক্স বাতিলের জন্য।
অপরদিকে আরেক ভুক্তভোগী মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন জানান, চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল আনিছুর রহমান ও তার ২য় স্ত্রী নওমুসলিম মিতুল বালা ওরফে মমতাজ বেগম আমাকে চাকরী প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে বারো লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগপত্র দেন। বেতন ভাতার কথা বললে চার বছর ধরে অজুহাত দেখাতে থাকেন।পরে টাকা ফেরত চাইলে প্রিন্সিপাল আনিছুর রহমান অর্ধেক টাকার চেক দিয়েছেন। বাঁকি অর্ধেক টাকা নাকি সভাপতিকে দিয়েছেন।পারলে সভাপতির নিকট থেকে টাকা আদায় করে নিতে বলেন।তবে তার স্বাক্ষরিত চেকটিও ভূয়া।
জাহাঙ্গীর আরো জানায়, আনিছ হুজুরের দ্বিতীয় স্ত্রীর আশ্বাসেই তিনি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরীর আবেদন করেন কিন্তু আনিছ হুজুর জানান, তিনি সহকারী মৌলবী পদে বেতন করিয়ে দিতে পারবেন। তাদের আশ্বাসের ভিত্তিতেই শহরের আলীপুর এলাকার মমতাজ ভিলায় বসে টাকা দেনদেন করা হয়। কিন্তু তিন/চার বছর অতিবাহিত হলেও তারা চাকরী অথবা টাকা ফেরত দিচ্ছে না। টাকা চাইতে গেলে তারা আমার বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়।
প্রশাসনিক চাপ দিতে থাকলে ওই কথিত বড় হুজুরের প্রতারণায় সহযোগী ও দ্বিতীয় স্ত্রী মিতুল বালা ওরফে মমতাজ বেগম মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইনের টাকাগুলি পরিশোধের আশ্বাস দিলেও প্রতিনিয়িত মিথ্যে-ভূয়া ডেট দিয়ে আসছেন কিন্তু কোন টাকা পরিশোধ করছেননা।
চক্রের এক সদস্য ওই মাদরাসার কর্মচারী ইলিয়াস পাটোয়ারী বলেন, ‘আনিছ হুজুরের নিকট থেকে টাকা আদায় করার ক্ষমতা বাংলাদেশের কারো নাই। কারণ, সারা দেশে চন্দ্রপাড়া দরবারের মুরীদ রয়েছে তারাই হুজুরকে রক্ষা করবে।’ প্রকাশ থাকে যে, চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফের পীর সৈয়দ কামরুজ্জামান উক্ত চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল মাদরাসার সভাপতি হয়ে থাকেন।
খবর নিয়ে আরো জানা গেছে, আরিফুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরের এর মত অসংখ্য বেকার মানুষ এই প্রিন্সিপাল দম্পতির কাছে প্রতারনার শিকার হয়েছেন।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল আনিছুর রহমান একজন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বড় হুজুর হয়েও ঘরে প্রথম স্ত্রী রেখে ভিন্ন ধর্মের আরেকটি মেয়ে মিতুল বালার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ অনৈতিক সম্পর্কের একপর্যায়ে ভাগিয়ে বিয়ে করে এনে গড়ে তোলে বিশাল প্রতারণাচক্র। চক্রটি জাল সনদ ও চাকরীর প্রলোভন দিয়ে অসংখ্য মানুষের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গড়ে তুলেছে ফরিদপুর শহরে একাধিক বহুতল বিশিষ্ট বাড়ি।
জালজালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত কথিত এই বড়হুজুর নামীয় অধ্যক্ষ আনিছুর রহমানের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, তিনি বলেন- ‘আমার কোন কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে তাকে খবর করে ছাড়ি” জাহাঙ্গীর হুসাইনের টাকার কথা বললেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, টাকা কোন দিনই ফেরত দেওয়া হবে না। পারলে কিছু করে দেখান। আমার অনেক ছাত্র এবং দরবারের ভক্তরা সাংবাদিকদের শায়েস্তা করবে ।’– বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
কিছুক্ষণ পরেই মোফাজ্জল হোসেন তুহিন নামের এক ব্যাক্তি অধ্যক্ষ আনিস হুজুরের অনুসারী দাবী করে+৮৮০১৯১১৭১৩০৬১ এই নাম্বার থেকে কল করে এই প্রতিবেদককে নিউজ প্রকাশ না করার জন্য শাঁসিয়ে দেন।
আমরা ভূয়া নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকুরী পাওয়া সেই ইফতেখার রসুলের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন কেটে দেন।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ জাকির হুসাইন বলেন, প্রতারক মওলানা আনিসুর রহমানকে তলব করা হয়েছিলো, তাকে ভর্ৎসনা করা হয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।