ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কুষ্টিয়ার মিরপুর রেলস্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দীর্ঘদিন ধরে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে স্টেশনের উন্নয়নের জন্য চিঠি দিলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর কোনো উত্তর মেলেনি। বিপুলসংখ্যক যাত্রী প্রতিদিন এ স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করলেও স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ট্রেন যেন থেমে আছে একই প্ল্যাটফর্মে।
স্থানীয় মিরপুর রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর মিরপুর রেলস্টেশনের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা এসএসএই কার্যালয়কে চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় স্টেশনমাস্টার অফিসের পার্টিশন দেয়াল নির্মাণ, স্টেশনমাস্টার অফিস সংলগ্ন টয়লেট নির্মাণ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। বিশ্রামাগার সংস্কার ও বর্ধিতকরণ। প্ল্যাটফরমে শেড নির্মাণ, প্ল্যাটফর্ম কার্পেটিং, প্ল্যাটফর্মে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ। প্ল্যাটফর্ম বর্ধিতকরণ। স্টেশনে প্রবেশের রাস্তাটি ও প্ল্যাটফর্ম মেরামত এবং রোডের যানবাহন প্ল্যাটফর্মে ওঠা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর একইভাবে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে আজ অব্দি এ চিঠির উত্তর মেলেনি।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়- পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর জেলাসহ, গাংনী, মুজিবনগর, কুষ্টিয়া সদর, দৌলতপুর, ভেড়ামারা উপজেলার বিশাল এলাকার জনসংযোগস্থল এবং উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ অবহেলিত মিরপুর রেলস্টেশনটি বিভিন্ন সমস্যায় জরাজীর্ণ। ২০১১ সালের ১০ জানুয়ারি হতে মিরপর স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বিরতির পর থেকে বিপুল পরিমাণ যাত্রী ট্রেনে চলাচল করে। অথচ আলাদা বুকিং অফিস না থাকায় স্টেশনমাস্টার অফিসের ভেতরেই টিকিট বিক্রয় করতে হয়, যা সুষ্ঠু ক্যাশ সংরক্ষণের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। একটি রুম বর্ধিত করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রত্যেক স্টেশনে স্টেশনমাস্টার অফিস সংলগ্ন টয়লেট থাকলেও মিরপুর স্টেশনে কোনো ব্যবস্থা নেই।
স্থানীয় মিরপুর নাগরিক কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার বলেন, বিগত এক যুগ ধরে মিরপুর রেলস্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু আজ অব্দি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা মিরপুরের উন্নয়ন বঞ্চিত রেলস্টেশনটি আধুনিকায়নের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী পলাশ কুমার বলেন, দেশের অনেক স্টেশনের উন্নয়ন হলেও মিরপুর স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত। এ স্টেশনের আধুনিকায়ন জরুরি। সেইসাথে সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত ট্রেন যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, মিরপুর স্টেশনে যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য শেড না থাকায় বৃষ্টির ফলে প্ল্যাটফরমে কাদাপানি জমে গেছে। এসব সমস্যার সমাধান হাওয়া প্রয়োজন।
স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আশরাফুল আলম হীরা বলেন, উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মিরপুর রেলস্টেশনটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। আমার জন্ম লগ্ন থেকে এ স্টেশনের কোনো উন্নয়ন হতে দেখিনি। একই সঙ্গে যাত্রী সেবার মানও খুবই নিম্নমুখী।
মিরপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জমির উদ্দিন বলেন, মিরপুর রেলস্টেশনের উন্নয়নের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বার বার চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। মিরপুরসহ ৫টি উপজেলা যাত্রীরা এ স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। তাছাড়া চিকিৎসার জন্য ঢাকা এবং রাজশাহী নিয়মিত মানুষের যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে মিরপুর রেলস্টেশন মাস্টার মীর ইসরাইল হোসেন বলেন, ২০১০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আজ পর্যন্ত এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। তাই চলতি বছর আর এ বিষয়ে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি।