রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার গেলেন পাংশা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মিঠাপুকুরে শাড়ী পেচিয়ে এক মহিলার আত্ম হত্যা পাংশায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত মৃত্যুর আগে ওয়াশরুম থেকে কবি হেলাল হাফিজের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ অনন্তলোকের চিরন্তন সফরে কবি হেলাল হাফিজ পাংশায় পুলিশকে দেখে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালানো আসামী গ্রেফতার ক্ষমা চাইলেন মুফতি আমীর হামযা আশা জাগিয়ে রাখি পাংশায় আগুনে পুড়ে ছাই হলো ৪টি ঘর খোকসায় আ.লীগ নেতাদের ছাড়াতে বিএনপির হাইব্রীড নেতাদের তদবিরে জনমনে প্রশ্ন  খোকসায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক, ছাড়িয়ে নিতে কৃষকদল নেতার তদবীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত কবি রফিকুল্লাহ কালবী : সাক্ষাৎকার পাংশায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী, কেক কাটা ও আলোচনা সভা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

দ্রব্যমূল্য নিয়ে অসহায় সাধারণ মানুষ

॥ সাইদুর রহমান রুমী॥ / ৩২৮ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১:০১ অপরাহ্ন

কখনো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কখনো ভারতের রফতানি বন্ধ, কখনো-বা অতিবৃষ্টি-বন্যা ইত্যাদি নানা ছলছুঁতায় সারা বছরই সাধারণ মানুষের পকেট কেটে চলেছে শক্তিশালী ব্যবসায়ী-রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। বিভিন্ন সময় এ সিন্ডিকেটের সম্পর্কে তথ্য এলেও বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কখনো পেঁয়াজ, কখনো মরিচ, কখনো আদা, কখনো চিনি। সিন্ডিকেট যে যার মতো জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে। এ যেন এক লুটেরার কারবার। অথচ দোকান আর গোডাউনে থরে থরে সাজানো জিনিসপত্র দেখলে কে বলবে পণ্যের সংকট রয়েছে। সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে যেন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থা বিভিন্ন অজুহাতে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত না করে বরং বাজেটে তাদের বেতন বাড়িয়ে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। কথিত এ সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী, খোদ বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনেকটা অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংঘবদ্ধ মাফিয়া চক্রটিই দেশের মানুষকে জিম্মি করে ২০ টাকার আলু কখনো ৫০ টাকায়, ৮০ টাকার কাঁচামরিচ ১২০ টাকায়, ৯০ টাকা ডজনের ডিম ১৬০ টাকায় বিক্রি করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুপাটকারী সিন্ডিকেট কখন কোন আইটেম ধরবে, বলাও মুশকিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, চরম বেকারত্ব, মন্দা অর্থনীতি আর নানা বৈশ্বিক পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের চরম দুঃসময় যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চরম এ টালমাটাল পরিস্থিতি; বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ভোগান্তি মানুষকে পাগল করে দিচ্ছে। দিন দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল্যের চড়া বাজারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন কী মধ্যবিত্ত, কী গরিব কিংবা ধনী পরিবারের সদস্যরা। কিছুদিন পরপর ধরা হচ্ছে একটি একটি করে আইটেম। তেল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ ও ডিমের পর এবার আলুতে চোখ সিন্ডিকেটের। সুতরাং আলুর দাম বাড়ছে তাদের ইশারাতেই। দামে হাফসেঞ্চুরি হাঁকাচ্ছে বাঙালির নিত্যপণ্য আলু। কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে আলুর দাম এখন অর্ধশতকে ঠেকল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষক নয়, আলুর মজুদ এখন কোটিপতির হাতে। কোল্ডস্টোরেজগুলোয় চাহিদার চেয়েও বেশি আলু থাকার পরও কেন আলুর দাম বাড়ানো হচ্ছে, এর উত্তর কারো কাছে নেই। বাজার, হিমাগার কোথাও আলুর কোনো সংকট নেই। অথচ দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এমনকি আলুর জন্য প্রসিদ্ধ জেলা মুন্সীগঞ্জেও আলুর দাম বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ীরাই বলছেন, হিমাগারে রাখা আলুর মালিকানার দলিল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের মধ্যে হাতবদল হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম বাড়ছে। এজন্য আলু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোয় চাহিদার তুলনায় আলুর মজুদ অনেক বেশি রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলুর কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন। তারা দাম বাড়িয়ে নিজেরাই হিমাগারে রাখা আলুর দলিল একজন অন্যজনের কাছে বেচাকেনা করছেন। হাতবদলে প্রতিবার বাড়ানো হচ্ছে দাম, যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ভোক্তাদের মোট আলুর চাহিদা রয়েছে ৯৫ হাজার ৮৮ টন। সেখানে উৎপাদিত হয়েছে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৬৩ টন। জেলার হিমাগারগুলোয় গত ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার পর্যন্ত মজুদ ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩২ টন আলু। জাতীয় পর্যায়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ টন। দেশে আলুর চাহিদা ৮৯ লাখ ৯২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ ৯ হাজার টন। সে হিসেবে উদ্বৃত্ত থাকে ২০ লাখ টনের বেশি আলু।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এ বি এম মিজানুল হক জানান, গত বছর আলুর উৎপাদন সামান্য কম হয়েছে। তবে মুন্সীগঞ্জে আলুর কোনো সংকট নেই। এখনো যে পরিমাণ আলু হিমাগারে মজুদ আছে, তা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। জাতীয় পর্যায়েও একই অবস্থা। পুরনো আলু শেষ হওয়ার আগে নতুন আলু চলে আসবে। আলু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছেন। সাধারণ ক্রেতারা জানান, একমাত্র আলুই ছিল গরিব ও মধ্যবিত্তের প্রধান সবজি। সেটিও সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। ১৮-২০ টাকার আলু ৪৫-৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সাধারণ মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে হিমাগারগুলোয় আলুর সংকট দেখাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ২ সপ্তাহ আগে তাঁরা যে আলু ৩০-৩২ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন, সে আলু ২ দিন ধরে ৩৫-৩৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে এবং ক্রমেই তা বাড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ রয়েছে আরও এক থেকে দেড় টাকা। তাই বাধ্য হয়ে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, শুধু মুন্সীগঞ্জেই ৬২টি হিমাগার রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬০ টন আলু রাখা যায়। মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় আলুর পাশাপাশি রংপুর থেকেও আলু এনে এসব হিমাগারে রাখা হয়। এসব আলু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, বরিশাল, বরগুনা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি হয়। মৌসুমের শুরুতে হিমাগারগুলোয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কৃষকরা আলু রাখলেও জুলাইয়ের আগে কৃষকদের এসব আলু কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এরপরই আলুর বাজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। আলুর দাম নিয়ে কথা বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরাও; বরং অন্যান্য জিনিসের দামের সঙ্গে আলুর এমন দাম যৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা। এবার আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ‘হিমাগারগুলোয় প্রতিদিন যেমন শত শত বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে, তেমনি আলুর মালিকানার দলিল বিক্রি হচ্ছে। এসব দলিল আমাদের মতো ব্যবসায়ীরাই একজন আরেকজনের কাছ থেকে কিনছেন। এমনও হয়েছে ২ মাস আগে ৫০ কেজির বস্তার যে দলিল ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করেছিলাম, সেই দলিল ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় কিনেছি। ১৫ দিন ধরে একই দলিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবার হাতবদল হলেই ৫০-১০০ টাকা দাম বাড়ছে।’ প্রায় একই কথা বললেন আরেক আলু ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, সবাই আলুর দলিল বিক্রি করেন না। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী এ কাজ করছেন।
সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে গরিবের সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে পরিচিত ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। গত বছর এ সময় এক হালি ডিম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায় কিনতে পারতাম। বর্তমানে তা বেড়ে আকাশচুম্বী হয়েছে। মাত্র চারটি ডিম কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কিনতে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত কেজিতে খরচ বৃদ্ধি পায়। তা কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়।
এদিকে সরকারি হিসাবে, দেশে যে হারে মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি হারে নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর প্রভাবে সাধারণ মানুষ তার খাবারের তালিকা ছোট করছেন। কারণ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধারণ মানুষের আয় না বাড়ায় তাদের কষ্ট আরও বেড়েছে। ফলে গত এক বছর ধরেই মূল্যস্ফীতির চাপ তীব্রভাবে অনুভব করছেন সাধারণ মানুষ। গত বছরের আগস্ট থেকে এ চাপের শুরু। এ সময়ের মধ্যে কোনো মাসেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৮ শতাংশের নিচে নামেনি। মূল্যস্ফীতির এ ঊর্ধ্বগতি গত এক দশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। এক বছর ধরে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। এর মানে হলো, দেশের মানুষকে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মজুরি সূচক বেড়েছে গড়ে ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশের মতো। কিন্তু এ সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। অর্থাৎ যে হারে মজুরি বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে নিত্যপণ্যের মূল্য। মাছের দামও বেশি; দাম কম থাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের মাছ হিসেবে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ছিল পছন্দের শীর্ষে। কিন্তু দাম বাড়ায় এ মাছও কিনতে এখন দুবার ভাবতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে, তার সঙ্গেও বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। কেনাবেচায় লিখিত রসিদ থাকার কথা থাকলেও তার হদিস মিলছে না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের এলসি খোলা বা দেশে আনার বিষয়টিতেও নেই যথাযথভাবে তদারকি। বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়। এসব মিলিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছে চরম এক বিশৃঙ্খলা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। সুযোগ নিচ্ছে সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষকে পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি পাঙ্গাস ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় ও তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়, যা এক বছর আগেও যথাক্রমে ১৮০ থেকে ২০০ ও ২০০ থেকে ২২০ টাকায় পাওয়া গেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর বাজারে রুই মাছ বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে যা গত বছর ছিল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। শুধু সবজি নয়, গত কিছুদিনে পেঁয়াজ থেকে ডিম, চিনি, গুঁড়া দুধ, এমনকি চাষের রুই মাছসহ সবকিছুর দামই চড়া। গত এক বছরের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। গ্রামে মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি, মূল্যস্ফীতির এ চাপ শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় হিসাবে শহরের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, অথচ গ্রামে ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। নতুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতেই একই চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে শহরাঞ্চলের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামের মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামে বরং মূল্যস্ফীতি কম থাকার কথা। কেননা গ্রামে উৎপাদিত পণ্য শহরে আসতে পরিবহন ব্যয় রয়েছে। আবার মধ্যস্বত্বভোগী আছে। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। এরপরও নিত্যপণ্যের দাম গ্রামে বেশি। সস্তার পাঙ্গাস মাছও গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালে নেই। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া ও কৈ-এর মতো মাছের উৎপাদন অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু বাজারে এর সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। দাম কেন বাড়ছে, সেটিও বলতে পারছেন না খুচরা বিক্রেতারা।
রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বসবাসকারী একটি বাসের ড্রাইভার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দাম বৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য কেনা ৩০ শতাংশ কমাতে হয়েছে। এমনকি আমি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি। বাচ্চাদের সাধারণ স্কুলে পড়াই। তাও মনে হয় চালাতে পারব না। এ নিয়ে পরিবারে অসন্তোষ চলছে। চাল কিনলে ডালের টাকা থাকছে না। তেল কিনলে সবজির টাকা থাকছে না। এর মধ্যে বাসা ভাড়া ও পরিবারের অন্যান্য খরচ বহন করতে ঋণ করে চলতে হচ্ছে।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে। ‘এটি ভবিষ্যতে তাদের জীবনে নেতিবাচক জটিলতা সৃষ্টি করবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির ফলে স্থায়ী আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান খারাপ হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যম ও স্থির আয়ের মানুষের দুর্দশা আরও বেড়েছে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকতে হবে। সব জিনিসের দামই নিয়ন্ত্রণহীন। তাই খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সবাই বিপদে আছেন। এটাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এখানে ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িত। কঠোর হাতে বাজার মনিটরিং করতে হবে। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তিনি বলেন, সরকারও দ্রব্যবমূল্যের লাগাম টানতে পারছে না। সরকারি পর্যায়ে আর্থিক নীতি. মুদ্রানীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সমন্বনয় নেই। তিনি বলেন, বাজারের ক্রমাগত উত্থান-পতনের কারণে মানুষের হাত ফাঁকা। যার কারণে পুরো অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর