প্রবাসী কান্না
হারুন আল রাশিদ
প্রবাসীরা জীবন-জীবিকার তাগিদেই প্রবাস জীবন যাপন করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা মোটেও সুখকর নয়। সন্দেহাতীত কষ্টের জীবন। যেখান অসহনীয় বেদনার মিশ্রণ। আমার মতো অধিকাংশ প্রবাসীরাই প্রতিদিন বারো-চৌদ্দ ঘন্টা একটানা কাজ করেন। রাতে বাসায় ফেরেন ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে। সৃজনশীলেরা বিশ্রামের সময় থেকে সময় বের করে সৃষ্টিশীল কাজে লেগে যান। আগামীকালের পরিশ্রম ইনভেস্টের কথা মাথায় রেখেই। কেউ কেউ দেশের উত্তপ্ত রাজনীতির খোঁজ-খবর নিতে থাকেন নেটের কল্যাণে। এই পরিশ্রমী মানুষগুলো বাংলাদেশেরই নাগরিক। সখ করে প্রবাসে অবস্থান করছেন না। জীবিকার নিমিত্তে পরিবারের কথা চিন্তা করেই কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছেন।
হাড়ভাঙা খাটুনির পরও রেমিট্যান্স যোদ্ধারা চেতনার দূরবীনে হাজারও ব্যস্ততায় পর্যবেক্ষণ করছেন, বাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি। অথচ, আবাল মার্কা কিছু মানুষরূপী কীট-পতঙ্গ এদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে। তাদের সম্মানের ওপর চপেটাঘাত করছে। তাদেরকে নিয়ে যত্তোসব বাজে মন্তব্য করছে। সেইসব মুষ্টিমেয় বেয়াদবগুলো কি জানে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতোটা পজিটিভ ভূমিকা রাখছেন এই ত্যাগী মানুষগুলো? হয়তোবা দেশের সবকিছুর ওপর সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারছেন না প্রবাসীরা। কেবলমাত্র দূরত্বের প্রতিবন্ধকতায়। তাই বলে তাদের শ্রম, ঘাম, সীমাহীন ত্যাগ খাটো করে দেখার ন্যূনতম কারণ আছে কি? আপনাদের কি মনে হয় প্রবাসীদের ভেতরে কোনো মেধাবী পার্সন নেই? নেতৃত্ব দানের মতো যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নেই? সাহসের কথা বলবেন? কিভাবে সাহস দেখাবে প্রবাসীরা? তারা তো বিদেশের মাটিতে অবস্থান করছেন। কি কারণে, কোন্ যুক্তিতে প্রবাসীদের আবদান হালকাভাবে নিচ্ছেন? কি করে দেখাচ্ছেন এতোটা লজ্জাহীন মনোভাব? তারাও তো তাদের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছেন দেশের জন্য। দেশের মানুষের জন্য। পরিবার- পরিজনদের জন্য। অজ্ঞতা বশতঃ এমন কিছু বলা উচিৎ নয় যা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বুকে শূলের মতো আঘাত করে।
প্রবাসীদের হৃদয়ে সবসময় উপচে পড়ে মাতৃভূমির প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা। মা হারা সন্তানই মমতাময়ী মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। তেমনি প্রবাসীরা স্বদেশ থেকে বহুদূর বিদেশে অবস্থান করে, মাতৃভূমির প্রতি প্রতিনিয়ত অনুভব করেন গভীর প্রেম। যা হয়তো অনেকের অজানাই রয়ে গেছে এখনও। বন্ধুরা! এ যন্ত্রণার পরিমাপ করা সম্ভব হবে না আপনাদের পক্ষে। একবার আপন-স্বজন ছেড়ে বিদেশে আসুন। বাস্তবতায় পা রাখুন। অনুভব করতে পারবেন প্রবাসী মনের আকুলতা।
আক্রোশ থেকে নয়। বলতে পারেন, অনেকটা অভিমান থেকেই নিগড়ে দিলাম হৃদয়ে জমানো কষ্টের ঘোলাটে জল। উদ্দেশ্য, প্রবাসীদের কষ্টের স্বরুপ উন্মোচন করে দেশবাসীর সামনে কঠিন বাস্তবতার অলিখিত পৃষ্ঠা মেলে ধরা।
আজ এখানেই শেষ করলাম। আবারও আসবো বেদনার প্যাকেট থেকে দু’একটা কান্না মোড়ানো কাহিনী অবলীলায় ব্যক্ত করার জন্য। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন প্রিয় দেশবাসী। ভালো থাকুন প্রিয় ভাই ও বোনেরা। অনেক অনেক ভালো থাকুন সকল দল ও মতাদর্শীরা ! শুভকামনা থাকলো সবার প্রতি সতত। আসসালামু আলাইকুম।
তরিনো
ইতালি
৩১-০৩-২০২১