প্রতারণা করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন
চন্দ্রপাড়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। পর্ব-১
নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাকরী দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুর জেলার সদরপুর চন্দ্রপাড়া দরবারে প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রপাড়া
সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসার বির্তর্কিত অধ্যক্ষ মোঃ আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মাদরাসার প্রতি শিক্ষক নিয়োগ দিতে ঘুষ ১০লাখ টাকা থেকে ১৫লাখ টাকা লেনদেন করেছেন। সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসার শিক্ষক এম পিও ভুক্ত থাকতেও অন্য কলেজে শিক্ষকতা করতে অধ্যক্ষ সহযোগিতা করছেন।
চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসায় চাকুরীতে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে শিক্ষিকারা কোনো ক্লাস না করলেও অধ্যক্ষ তাদের বেতন থেকে ৬ হাজার টাকা কেটে রাখছেন।
মাদ্রাসায় মহিলা শিক্ষিকা থাকলেও নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে আসে না কিন্তু অধ্যক্ষ তাদের বেতন দিয়ে দিচ্ছে। সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসার এমনও শিক্ষক তিনি রেখেছেন যে ১টি বিষয়ে নিবন্ধিত হলেও অন্য বিষয়ে চাকুরী করছে।
মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা অধ্যক্ষ নিজেই আত্মসাৎ করছেন। মাদ্রাসার বিভিন্ন শিক্ষকদের সার্টিফিকেট জাল করে তাদের বেতন ভাতা পাইয়ে দিচ্ছে অধ্যক্ষ। অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের অনেককেই অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে পাশ দেখাচ্ছেন । অধ্যক্ষের নির্দেশে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার সময় পাশের হার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শিক্ষকদের দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছে পরীক্ষার হলের মধ্যেই।
অনেক শিক্ষককে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের বছরের পর বছর ঘুড়াচ্ছেন।
মাদ্রাসার কারিগরি শাখায় ডেমোনেষ্টেটর শিক্ষক , ইলেক্ট্রনিক বিষয়ের শিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যাক্তির কাছ থেকে ঘুষ বানিজ্য করে আসছেন। যাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেয়নি।
এন টি আর সি এ সার্টিফিকেট জাল করে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকদের কাছে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করছেন।
যেহেতু ২০১৫ইং সালের পর থেকে কোনো এন টি আর সি এ সার্টিফিকেট প্রদান বন্ধ রয়েছে কিন্তু এই অধ্যক্ষ ২০২০ সালে ১৫ জন শিক্ষককে এম পিও ভুক্ত করিয়েছেন।
মাদ্রাসার নিয়মে সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করার সময় নির্ধারন করা থাকলেও এই অধ্যক্ষ দুপুর ১টার মধ্যেই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করে দেন এবং বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার মধ্যে প্রতিষ্টান বন্ধ করে দেন।
প্রতিষ্ঠানে আসা বিভিন্ন সরকারী অনুদান মাদ্রাসার হত দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে না দিয়ে নিজের ইচ্ছেমত সচ্ছল পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে যৎসামান্ন বরাদ্ধ করেন।
জানা যায়, চন্দ্রপাডা সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আনিছুর রহমানের দূর্নীতি করে আয় করা অর্থ দিয়ে ফরিদপুর জেলা শহরের আলীপুরে ৩ তলা বাড়ি ও বায়তুলআমান এলাকায় ২ তালা বাড়ি প্লান পাশ না করে নির্মান করেছেন।
মোঃ আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো রয়েছে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ। তিনি ইসলামী একটি প্রতিষ্ঠানে থেকেও অণ্য ধর্মের একজন মহিলাকে বিবাহ করেন । জানাযায় হিন্দু মহিলার স্বামীর কাছ থেকে ভাগিয়ে নিয়ে।
ফরিদপুর জেলার সদরপুর চন্দ্রপাডা সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বির্তর্কিত অধ্যক্ষ মোঃ আনিছুর রহমানের বিভিন্ন দূর্নীতি এবং অপকর্মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরই রয়েছে নানান আপত্তি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা কথা বলেন চন্দ্রপাডা সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মহিলা শিক্ষিকা নাজনীন আক্তার লাইলীর সাথে , তিনি বলেন, আমি কলেজে যাইনা কারন এটা পীরের মাদ্রাসা। এখানে মহিলাদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। অধ্যক্ষই আমাকে কলেজে যেতে মানা করেছেন। মাদ্রাসায় না গেলেও আমার বেতন ঠিকই তুলতে পারছি। তবে আমি একাই নই আমার মত প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত শিক্ষিকাই প্রতিষ্ঠানে যায় না।
মাদ্রাসায় লাইব্রেরীয়ান দুলাল মিয়া দুলাল সাংবাদিকদের জানান, আমি সহকারী লাইবেরীয়ান কোর্স করেছি কিন্তু আমার অধ্যক্ষ কোনো কায়দায় আমাকে লাইবেরীয়ান পদে নিযুক্ত করে সারপ্রাইস দিয়েছেন।এই পদে নিযুক্ত হতে অধ্যক্ষকে আমি ৪ লাখ টাকা দিয়েছি।
মাদ্রাসার শিক্ষক রইচের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমি মুলত ইংরেজীতে নিবন্ধিত কিন্তু এই মাদ্রাসায় ক্যামিষ্টিতে এমপিও হয়েছি। এটা কিভাবে হয়েছে আমি জানি না তবে অধ্যক্ষ স্যারই ভালো বলতে পারবেন। তবে অনুরূপ ভাবে এই প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষদের ক্ষেত্রের হয়েছে।
মাদ্রাসার শিক্ষক রিফাত সাংবাদিকদের জানান, আমি নিবন্ধিত হওয়ার পরও ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০২০ ইং সালে এই মাদ্রাসায় এমপিও হয়েছি। মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ সাংবাদিকদের জানান, আমি ২০২০ ইং সালে ৫লাখ ৫০ হাজার টাকা অধ্যক্ষকে দিয়ে অফিস সহকারী পদে বেতন করিয়েছি।
মাদ্রাসার শিক্ষক রোকন সাংবাদিকদের জানান, আমি ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা অধ্যক্ষকে দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কারীগরি শাখায় ডেমোনেষ্টেটর পদের জন্য আবেদন করেছি কিন্তু আমাকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে। ৩ বছর অতিবাহিত হলেও আমার এখন পর্যন্ত কোনো বেতনাদী হয় নাই।
মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক বাসার সাংবাদিকদের জানান, এই প্রতিষ্ঠানের দেখভালো করেন অধ্যক্ষ মোঃ আনিছুর রহমান। তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই সকলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন।কোনটা সঠিক আর কোনটা দূর্নীতি সেটা তিনি নিজ দায়িত্বে নেন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।
এ বিষয়ে চন্দ্রপাড়া সুলতানিয়া ফাজিল (ডিগ্রি)মাদ্রাসার ফাজিল তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাকির সাংবাদিকদের জানান, দেশের সুনামধণ্য চন্দ্রপাড়া পীরের মাদ্রাসা হলেও এখানে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে চলছে সব ধরনের দূর্নীতি।আমি ১৩ বছর যাবৎ এই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছি কিন্তু এখানে আজ পর্যন্ত কোনো মহিলা শিক্ষিকাকে ক্লাস করাতে দেখিনাই।এই মাদ্রাসায় কোনো ছাত্রী ক্লাস করে না, কিন্তু কারিগরী শাখায় ছাত্র ছাত্রী একসাথে ক্লাস করে। আমরা মাঝে মাঝে কিছু নতুন শিক্ষকদের দেখি তবে কিছুদিন পর সেই শিক্ষকদের আর দেখা যায় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক ছাত্রই একই অভিযোগ করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছে।তারা আরো বলেন,মাদ্রাসার বোডিংএ নিম্ম মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে অধ্যক্ষ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আনিছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে বিদ্রুপ করেন এবং প্রাণ নাশের হুমকি দেন।
চন্দ্রপাড়া দরবারে গিয়ে মাদরাসার সভাপতি ও পীর সাহেব মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রিন্সিপাল আনিছুর রহমানের ক্যাডার বাহিনীর বাধার মুখে দরবারের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি।