সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার গেলেন পাংশা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মিঠাপুকুরে শাড়ী পেচিয়ে এক মহিলার আত্ম হত্যা পাংশায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত মৃত্যুর আগে ওয়াশরুম থেকে কবি হেলাল হাফিজের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ অনন্তলোকের চিরন্তন সফরে কবি হেলাল হাফিজ পাংশায় পুলিশকে দেখে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালানো আসামী গ্রেফতার ক্ষমা চাইলেন মুফতি আমীর হামযা আশা জাগিয়ে রাখি পাংশায় আগুনে পুড়ে ছাই হলো ৪টি ঘর খোকসায় আ.লীগ নেতাদের ছাড়াতে বিএনপির হাইব্রীড নেতাদের তদবিরে জনমনে প্রশ্ন  খোকসায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক, ছাড়িয়ে নিতে কৃষকদল নেতার তদবীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত কবি রফিকুল্লাহ কালবী : সাক্ষাৎকার পাংশায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী, কেক কাটা ও আলোচনা সভা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

গল্প: এক মুঠো খুশী —- মাহমুদশরীফ

মাহমুদ শরীফ / ৩৯৪ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০২৩, ১০:১৮ অপরাহ্ন

                                                                    এক মুঠো খুশী
—————-মাহমুদ শরীফ
মা! মা! ওমা! ভাত দাও। খুব খিদে লাগিছে। সেই রাত্রি বেলা খাইছি, বিহানে কিছু খাতি দাওনি। কইছিলা দুপুরে দিমুনে। দুপুর তো বয়াা যাইছে। দেহ, সুরুজ পশ্চিমে ঢলে পরিছে।
রমেছা বানু স্বামী ফজর আলীর মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছিল। দীর্ঘ তিন মাস ফজর আলীর অসুখ। অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা। হবে কী করে ? ফজর আলীর রোজগারে এই সংসার চলে। কিন্তু সে যে বিছানায়। কাজ করা তো দূরের কথা, দু’সপ্তাহ হলো বিছানা ছেড়ে উঠার মত শক্তিও নেই এই নি মজুরের।
রমেছা বানু এক বাসায় বুয়ার কাজ করে অবশেষে বাধ্য হয়ে। সকালে যায়। দুপুরে ফিরে। সামান্য ডাল-ভাত যা পায়, তাই নিয়ে এসে সবাই মিলে খায়। এ যেন বকের খাবার। জামশেদ সাহেবের বউ ফেরার সময় রমেছা বানুর হাতে কিছু চাল বা টাকা দেয় আর তাই হয় ওদের রাতের খাবার। সংসারে সদস্য চারজন। ফজর আলী, রমেছা বানু, নয় বছরের ছেলে সাবু ও চার বছরের মেয়ে ছুটু।
ছেলের কথা শুনে রমেছা বানু বলে ঃ দুপুর বয়া যাইছে তো কী করুম! খাওয়ন নাই, অমনেই থাকগে। কলের পানি তুলে খাগে।
– খাওন নাই! কেন নাই? আজ বাসার কামে থেইকা কিছু আননি? কিছু দেয়নি মেম সাব? জানতে চায় সাবু।
– না, কিছু না।
– কেন ?
– কেন আবার। পরশু তোর বাজানের অসুখ বাড়ার জন্যি যাতি পরিনি; আর কালকে তোর বাজানের লগে গিলাম দাতব্য কেন্দ্রে। দু’দিন যায়নি বইলা সাহেবরা অন্য মানুষ রাহিছে। খাওয়ন আসবো কৈ থেইক্যা। কামই তো নাই। মুখ খিচিয়ে রাগের স্বরে এক বারে কথাগুলো বললো রমেছা বানু।
– হাঁড়িতে খুদ আছে না? তুমি বাজানের মাথায় পট্টি কর, আমি খুদগুলা ভাজিগে। বললো সাবু।
রমেছা বানু আবার মুখ খিচিয়ে বলে ঃ খুদ ভাজি! কইলেই হইল। খুদ থাহা লাগে না? যা আছিল রাত্রি রাধে দিছি। আর আমি হ্যের ফ্যানটুকু খায়া আছি….
এমন সময় ছুটু দৌড়ে এসে বলল: মা! মা!! ওমা!!! ট্যাহা দ্যাও, আমড়া খামু। আমড়ওয়ালা আইছে। ফরিদারা কিনতাছে।
রমেছা বানুর কাটা ঘায়ে যেন লবনের ছিটা পড়ল। স্বামীর মাথা থেকে হাত সরিরয় ঘুরে বসে বলল ঃ
আমড়া খাবি? আয়! দিতাছি। বলেই ছুটুকে ধরে মারতে শুরু করে। ফজর আলী কুকাতে কুকাতে দু’হাত উঁচিয়ে বলে ঃ ছুটুর মা ওরে মাইরো না। কইলিই তো হয়- ট্যাহা নাই। ছোড মানুষ। বলেই আবার কাশতে শুরু করে অসুস্থ ফজর আলী।
রমেছা বানু বলে- কইবার কমু! বিহানে লিচুওয়ালা আইছে, তহনই কইছি ট্যাহা নাই। হেই লগন লিচুর জন্যি কান্দি কান্দি বারাইছে, আবার এহন আইছে আমড়ার বায়না ধইরা। আমি আর পারিনে, এত খিজি সয় না। বলতে বলতে ছুটুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়, যা রাস্তায় গিয়া মরগে!
কিশোর সাবু এতক্ষণ কোন কথা না বলে প্রত্যক্ষ করছিল সংসারের হাল অবস্থার। ছুটু ছুটে এসে সাবুর গলা জড়িয়ে ধরে। সাবুও ছুটুকে বুকে টেনে নেয় পরম সোহাগে। চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে ঃ কান্দে না বহিন, কান্দেনা। তোর জন্যি আজই আমড়া আর লিচু আনবো, তুই বাড়ী থাক। আমি কামাই কইরা আমড়া আর লিচু কিইন্না তবেই ফিরুম। বলেই সাবু চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায়।
রমেছা বানু আর ফজর আলী অধীর নয়নে চেয়ে থাকে ছেলের দিকে। পিছন থেকে সাবুর হাঁটার ছন্দ সুন্দর দেখায়। ছেড়া তালি দেয়া হাফ প্যান্ট আর রং চটা ফতোয়া শরীরে জড়িয়ে আছে ওর। দ্রæত গ্রামের গলি পেরিয়ে সাবু বড় রাসÍায় উঠে। চোখের আড়াল হয়। ধক্ করে উঠে রমেছা বানুর বুক। স্বামীর শিয়র থেকে উঠে নতুন পানি আনতে কল তলায় ছোটে চোখের পানি মুছতে মুছতে।
ফজর আলী মেয়েকে কাছে ডাকে। আয় মা! কাছে আয়, আয়! ছুটু মায়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে ধীরে ধীরে যেয়ে বাজানের পাশে বসে। ফজর আলী মেয়ের মাথায় হাত বুলায়। কিছুক্ষণ পূর্বে ঘটে যাওয়া স্মৃতিতে ভুলিয়ে নিতে চায় আদর, সোহাগ, স্নেহের বিনিময়ে।
এদিকে সাবু সোজা যেয়ে উপস্থিত হয় শহরের বাসস্ট্যান্ডে। বাস আসবে, সাবু বাসের যাত্রীদের বোচকা – ব্যাগ মাথায় টেনে তুলে দেবে ভ্যান বা রিক্সায়। পারিশ্রমিক হিসাবে সে পাবে ২/৫টি টাকা পাবে। এভাবে সারা দিনে সাবুর মত আরো অনেক কিশোর ১০/২০ টাকা আয় করে। সাবুও তাই করবে। তারপর ছুটুর জন্য আমড়া আর লিচু কিনবে। সামান্য কিছু চাউল বা ময়দা কিনে বাড়ী ফিরবে সে। বাড়ীতে সবাই না খেয়ে আছে।
একটি বাস এসে দাঁড়ায়। সাবু ছুটে যায় বাসের দরজায়। হেলপার একটা বড় ব্যাগ বের করতেই সাবু মাথা পেতে দেয়। ভারি ব্যাগ। সাবুর টানতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া সে এ কাজে নতুন। পিঠ বেঁকে যাচ্ছ ওর। ব্যাগের মালিক এক ভদ্র লোক। সাবুকে সে ব্যাগটি রাস্তার ওপাড়ে ভ্যানে তুলে দিয়ে আসতে বলে।
চারিদিকে অসংখ্য মানুষের উঠা-নামার ভীড়। মানুষের গুঞ্জন আর যানবাহনের বিকট আওয়াজে কানে তালা লাগে। সাবু ডানে-বামে না তাকিয়ে দ্রুত রাস্তা পার হতে যায়। এমন সময় একটা রিক্সা এসে ধাক্কা দেয় তাকে। তাল সামলাতে পারে না ছোট্ট সাবু। ব্যাগটি ছিটকে পড়ে যায় দুরে। হঠাৎ একটা ট্রাক ব্যাগটাকে পিষ্ট করে ছুটে চলে সামনে। সাবুর গা ঘেঁষে ট্রাকটা দ্রুত গতিতে হাওয়া হওয়ার দৃশ্য দেখে সবাই আঁতকে উঠে। গেল, গেল! ইস! আহারে!! কিন্তু সাবুর কিছুই হয় নি। দেখে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে। বেঁচে গেল ছেলেটি! কপাল ভালো।
রাস্তার লোকজনের মুখে হাসি দেখে সাবু আশ্বস্ত হয়। তাহলে কিছু হয়নি দেখে। কিন্তু মাথায় তুলে নেওয়া ব্যাগের হাল দেখে সাবু ভীত হয়ে পড়ে। ব্যাগের মালিকের দিকে তাকাতে সাহস পায় না। হাত পা ঝেড়ে আস্তে আস্তে সে উঠে দাঁড়ায়। ব্যাগের মালিক সাবুর হাত ধরে রাস্তার এক পাশে এনে বলেন- ডরাস ক্যান? মাল গ্যাছে-জীবন বাঁচছে। ধর, টাকা নে, সোজা বাড়ী যাবি। আর কোন দিন এই কাজ করবি না। আর এই নে আমার ভিজিটিং কার্ড। এইডাতে আমার ঠিকানা আছে। দু’একদিনের মধ্যে দেখা করবি। কাম দিবো।
সাবুর হাতে তখন কড়কড়ে ১০০টাকার নোট। এতো টাকা এক সঙ্গে কেউ তাকে কোন দিন দেয়নি। এক মুঠো খুশিতে সাবুর বুকের ভেতরটা আনন্দ আর সফলতায় নেচে উঠে। মনে পড়ে একমাত্র ছোট্ট বোন ছুটুর কথা। মায়ের কথা। অসুস্থ বাবার কথা। না, সে এই টাকা খরচ করবে না। পুরো টাকা মায়ের হাতে দেবে। কিন্তু ছোট বোনকে যে সে বলে এসেছে আমড়া আর লিচু দেবে। কয়েকটি আমড়া অঅর এক ডজন লিচু কিনে নেয় জটপট। অঅরো কিছু কিনতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, তা হোক মায়ের কাম চইলা গেছে। এই টাকা দিয়েই মা আটা কিনবো। সবাইর রাতের খাওন হইব।
অবশিষ্ট টাকাগুলো আর ভিজিটিং কার্ডটি কয়েকবার পরখ করে ছেড়া প্যান্টের পকেটে রাখে সাবু। তারপর দ্রুত হাঁটতে থাকে পুঁটিয়া গ্রামের দিকে। পা চালায় জোর কদমে। এটাকে হাঁটা না বলে দৌড়ানোই বলা উচিত!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর