মধ্যবিত্তের হিসেব
মাজেদুল ইসলাম
দেনায় ডুবেছে বাপ যে আমার হয়েছে শয্যাশায়ী,
সামাজিকভাবে হেয় সে আজ অবস্থা তার ত্রাহী।
মা আমার ঘরে শুয়ে শুয়ে কাশে; সেও যে হার্টের রুগী,
বিবাহ যোগ্যা বোন আমার ঘাড়ে; আমি হতাশায় ভুগি।
ছোট ভাইটা আমার স্কুলে পড়ে; সেখানেও আছে ভাটা,
শিশুশ্রম অবৈধ জেনেও ছাড়তে হলো পড়াটা।
পড়া বাদ দিয়ে আমার সাথেই সে কামলা দিতে চায়,
কিছু না হোক কাজের নামে যদি খোরাক চলে যায়।
স্বপ্ন-আশা-ভালোবাসা সব, তার কাছে এখন ফিকে-
বেছে নিয়েছে কঠিন পথ সে থাকতে হবে যে টিকে।
চাকরী-বাকরি-রাজনীতি ক’রে তারা সবাই আছে ভালো,
সবার ঘরেই খুশির মিছিল; আমার ঘর আঁধার কালো।
ছন্নছাড়া আমি, বাউণ্ডুলে আমি নেই বাহারী সাজ-
ক’টাকাই বা জোগায় আমি, ক’রে নিত্য কাজ?
চাল-ডাল-তেল-নুনের বাজারে দাম বাড়ে তো রোজ-
কই? আমার মজুরী বাড়লো কিনা; নিলো না তো কেউ খোঁজ?
এক কাপ চা দুটাকা থেকে পাঁচটাকা তো হলো,
আমার মজুরী তো আগে যা ছিলো এখনও তাই র’লো?
ওগো সাহেব, ওগো মোসাহেব, ওগো দেশের নেতা-
আমাদের মতো মানুষের তরে আছে কি মাথাব্যথা?
বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি, তা একবারো কি ভাবো?
একবারো কি আমাদের মতো ভিখারী পল্লীতে নাবো?
নামো বটে তোমরা; সেই যে এসেছিলে ইলেকশনের কালে-
কত স্বপ্ন আর গালগল্প দিয়ে আমাদের চোখ চমকালে।
সব-ই তোমরা করেছো গো রাজা, সব কথা-ই তোমরা রেখেছো-
আমাদের মতো হীন-নিচদের উন্নয়ন কাফনে ঢেকেছো।
আত্মহত্যা মহাপাপ জেনেই তো এখনও ধুকে ধুকে পথ চলি-
গুনে চলি সব নিয়ম-অনিয়ম হিসেব রাখে অঙ্গুলি।
সময় যদি আসে গো কভু, সব হিসেব ফিরিয়ে দেওয়ার-
জেনে রাখো ওগো সাহেব তোমরা, হবে কিন্তু তা ফেয়ার।