হে সুন্দরতম, প্রিয় মুহাম্মদ (সঃ)
“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে এক সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে ”। (সূরা আহযাব, আয়াত- ২১)
তোমার ভালবাসা মানে মুহাজির প্রাণ তোমার আনুগত্য অনুসরণ মানে রক্ত মাখা ওহুদের ঘ্রাণ। আমার সচকিত চেতনায় সর্বক্ষণ ধারণ করতে চাই তোমার প্রেম, ক্ষমা, ঔদার্য্য, সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খিত অভিলাষ, জড়িয়ে রাখতে চাই তোমার চরিত্রের বিশুদ্ধ মুগ্ধতা ও সৌন্দর্যবোধ।
হানাহানি, গোত্র লড়াই, সন্ত্রাস, অশ্লীলতা- বেহায়াপনা, দস্যূতা, লুন্ঠন, নারীর অপমান, নির্যাতন, ব্যাভিচার, উলঙ্গপনা, মদ্যপান, জুয়া ভাগ্যগণনা, কূশাসন-শোষন সীমাহীন নৈতিক অধঃপাত, ধর্ম ব্যবসা, বেইনসাফী, মানবিক দায়িত্বশূন্যতা ইত্যাদি নিয়ে পুরো জগতটাই তখন জাহেলিয়াতের ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এমন দূর্বিসহ নিকৃষ্টতম বৈষম্য ও অবিচারে দগ্ধ লগ্নে মানবতার মুক্তির আলোকজ্জল দিশারী এবং উৎকৃষ্টতম গুনাবলী, পরিপূর্ন সততা নির্মলতম চরিত্রের উজ্জলতম নন্দিত তারকা, বিশ্বমানবতার মহত্তম গুনের এবং পূর্ণতম বিশ্বস্ততার অনুপম আলোক রৌশনীর নির্ভুল প্রতীক মুরশিদে মুস্তাকিম প্রাণাধিক প্রিয় মুহাম্মদ রাসুল (সাঃ) ৫৭০ খৃষ্টাব্দে ১২ই রবিউল আউয়াল বিস্তীর্ন ঊষর মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকায়, জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীতে তাসরিফ আনেন। এখানে বসবাসকারী অধিকাংশই ভ্রাম্যমান বেদুঈন, তাদের উপজীবিকা পশুপালন, কিছু সংখ্যক ব্যবসা- বানিজ্যের সাথে জড়িত, আর কিছু ছিল দুরাগত বানিজ্য কাফেলা যারা লুটপাট করে সংসার নির্বাহ করতেন। সমকালীন জগতে অধিকাংশ জনপদ-অঞ্চলের লোকেরা মনে করতেন মক্কায় অসভ্য, জাহেল, নিরক্ষর, অভাবী, প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষের বসবাস কিন্তু বাইতুল্লার অবস্থানের কারনে এটির আলাদা মর্যাদা ছিল। অবশ্য এখানে কিছু সংখ্যক উচ্চ মানের কবি, সাহিত্যিক, কূট রাজতিনীবিদ, সুদি ব্যবসায়ি এবং কয়েকটি সম্ভ্রান্তগোত্র পরিবারও বসবাস করতেন।
রাসুলে করিম সাঃ জন্ম এবং নবুয়্যত প্রাপ্তির সময় পর্যন্ত সভ্য সমাজ-দেশ মোটামোটি রোম এবং পারস্য সম্রাজ্য নামক দুটি বলয়ে বিভক্ত ছিল। আরব-মক্কার মরুচারী বেদুঈন, ক্ষুধায় কন্ঠহীন অনগ্রসর গোত্র বিভেদ প্রতিদ্বন্দিদ্বতার মধ্যেও কিঞ্চিত স্থিতিশীল জীবন-যাপন করতেন। রাজনৈতিক ভাবে তারা কোন দিকেই কোন বলয়ে না জড়িয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল।
মানবতার অকৃত্রিম সুন্দরতম প্রিয় রাসুল সাঃ এর জীবনের প্রতিটি ক্ষন এতো গুরুত্বপূর্ন ও তাৎপর্যমন্ডিত যে, এক একটি দিন যেন এক একটি শতাব্দী। রাসুল (সাঃ) জন্ম থেকে নবুয়্যত প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত মাতার মৃত্যুর পর পিতামহ ও পিতৃব্যের ¯স্নেহ মমতায় অন্যান্য মরু দুলালের ন্যায় বেড়ে উঠেছিলেন। সমস্যা-সংকট অভাব অনটন সুখ, দুঃখ ইত্যাদি নিয়ে রাসুল (সাঃ) জীবন ছিল সাধরান এক আরব্য জীবন।
তিনি মক্কা ও আশেপাশের জনবসতির নৈতিক অবক্ষয়, খুন, রাহাজানি, জুলুম, অত্যাচার অশান্তি দেখে খুবই ব্যথিত ও চিন্তিত হয়ে মানুষের মুক্তির জন্য প্রায়ই নির্জন জাবালে হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকা অবস্থায় ৪০ বছর বয়সে ১২ই রবিউল আউয়াল মাসে প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আল্লাপাক জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত রাসুল হিসাবে সুসংবাদ প্রাপ্তীর মহিমায় অভিষিক্ত হলেন।
আল্লাহ ঘোষনা করলেন “হে নবী, পাঠ কর তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। (সূরা আলাক, আয়াত- ১)।
“হে বস্ত্রাবৃত (মুহাম্মদ) শয়নকারী ব্যক্তি, ওঠ এবং মানুষকে সাবধান করে দাও, তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা কর”। (সূরা আল-মুদাস্সির, আয়াত ঃ ১-৩)।
অতপর রাসুল (সাঃ) আল্লাহ্ তায়ালার নির্দেশে প্রথম দিকে তাওহিদের দাওয়াত গোপনে ও পরে প্রকাশ্যে মক্কার মানুষদের কাছে দিতে থাকেন। বার বার ও নানাভাবে তাওহীদ পরকাল ও নবুয়্যত-রেসালতের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে। তার প্রতি ঈমান আনার নৈতিক ও অধ্যাতিক কল্যণ বুঝানো হয়েছে। দরদপূর্ন উপদেশ নসিহতও দেয়া হয়েছে যেন অজ্ঞ-মূর্খ লোকেরা নিজেদের বিভ্রান্তিমূলক হটকারিতা পরিহার করে।
রাসুল (সাঃ) আল্লাহর বাণী তাদের কাছে পেশ করেন। “হে মুহাম্মদ! এমনই মর্যাদা সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। এদেরকে বলে দাও, তিনি আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে”। (সূরা রাদ, আয়াত ৩১) ধীরে-ধীরে দাওয়াত ও তাবলীগে প্রভাবিত হয়ে মক্কার গরীব, মজলুম, নিঃস্ব পরে কিছু-কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাবিত হয়ে ইসলামের সুমহান বানী গ্রহন করতে আরম্ভ করলেন আর ক্রমশ কুরাইসদের বাধা-প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
দাওয়াত ও তাবলীগের কারণে মক্কার ঘুনে ধরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী প্রমাদগোণে। তারা বুঝতে পারে মুহাম্মদ (সাঃ) এর এই মানবতাবাদী কল্যাণময় একত্ববাদের দাওয়াত চলতে থাকলে তাদের জাহেলী অনৈতিক বিকৃত নেতৃত্ব বেশিদিন টিকবে না। আরবের জাহেলী সমাজের এই বিকৃতি নিকৃষ্টতম পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল। এই বিকৃতির ওপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল কোরাইশ গোত্রের ধর্মীয় পৌরহিত্যের গদি। এই বিরাট লাভজনক ক্ষমতার গদিকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঐ বিকৃত ধর্মীয় পৌরহিত্যের গদি। এই বিরাট লাভজনক ক্ষমতার গদিকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঐ বিকৃত ধর্মীয় আবহ ও অবকাঠামোকে বহাল রাখা আবশ্যক ছিল। তার বিরুদ্ধে কোন বাদ-প্রতিবাদ ও ভিন্নমতের আওয়ায তোলা এবং কোন ধরনের সংস্কার ও সংশোধনের আহবান জানানো যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য ছিল। সুতরাং কোরাইশ গোত্র যে ইসলামের দাওয়াতে তেলে বেগুনে জ¦লে ওঠবে সেটা ছিল সম্পূর্ন স্বাভাবিক। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরাইশ-কাফেরদের উগ্রতা ও চরিত্র সম্পর্কে বলেন
“আর তাদেরকে যখন আমাদের সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ কারে শুনানো হয়ে তখন তুমি দেখতে পাও যে সত্যের দুশমনদের মুখের চেহাড়া রাগে রক্তিম আভায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর মনে হয় তারা সেই লোকদের উপর এখনই আক্রশে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যারা তাদেরকে আমাদের আয়াত শুনায়”। (সূরা আল- হজ্জ, আয়াত- ৭২)
“তা ছাড়া, কোরাইশদের সংস্কৃতি ছিল চরম পাপাচারী সংস্কৃতি। মদ্যপান, ব্যভিচার, জুয়া সুদখোরী, নারী নির্যাতন, মেয়ে শিশুকে জ্যান্ত মাটিতে পুতে ফেলা, স্বাধীন মানুষকে গোলাম বানানো এবং দুর্বলদের ওপর যুলুম করা এসব ছিল কোরায়েশ সংস্কৃতির বৈশিষ্ট। শত শত বছরব্যাপী পুঞ্জীভূত বদভ্যাস ও গৌরবময় জাতীয় ঐতিহ্যের রুপ ধারণকারী কদর্য সমাজপ্রথার সমন্বয়েই গঠিত ছিল এই সংস্কৃতি। নিজেদের হাতে গড়া এই সাংস্কৃতিক লৌহ খাঁচা ভেংগে একটা নতুন পরিবেশ বিচরণ করতে প্রস্তুত হওয়া কোরাইশদের জন্য সহজ ছিল না । তারা সংগে সংগেই বুঝতে পেরেছিল যে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাওয়াত তাদের চিরাচরিত রীতি-প্রথা, আদত অভ্যাস, কামনা- বাসনা, ললিতকলা তথা তাদের প্রিয় সংস্কৃতির শত্রু। তাই তারা প্রচন্ড আবেগে উদ্বেলিত হয়ে ঐ দাওয়াতের বিরোধিতা করতে বদ্ধ পরিকর হয়ে যায়”। (মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ সাঃ, পাতা-১১৫)
তাদের চরম হিংসা, বিদ্বেশ ও দুশমনি মানষিকতা দিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ) ও সাথীদের বিরুদ্ধে ষঠতা, ষড়যন্ত্র ও প্রাণঘাতী পরিকল্পনার সাথে মুসলিমদের জীবন চরম ঝুকির মধ্যে ফেলে দেয়।
“নবুয়্যত উত্তর মাক্কী জীবন শুরুটাই কল্পণাতীত, আকস্মিক ও অভাবনীয়। আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ গোটা মানবজাতীর কল্যাণ ও জীবন পরিচালনার নির্ভুল বিধি বিধান মানুষদের কাছে পেশ করলে, প্রতিষ্ঠিত কায়েমী গোত্রপতি গোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পরে। মক্কায় মুশরিকদের দ্বারা রাসুল (সাঃ) এর অনুসারীগণ দুঃসহ বেদনা, জেল-জুলুম, উচ্ছেদ, বয়কট, নিদারুন উপেক্ষা আপনজনদের নিকট থেকে সীমাহীন অসূয়া অবজ্ঞা মোকাবেলা করে ১৩ (তের) টি বছর কন্টকাকীর্ন পথ আর বেশুমার জীবন, মাল, সম্পদহানী রক্ত, অবর্ণনীয় ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে খাঁটি কিছু সংখ্যক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দক্ষ, যোগ্য, প্রজ্ঞাবান, বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসি, মানব কল্যাণী একদল মুমিন-মুজাহিদ প্রস্তুত করে মহান রবের নির্দেশে, চির প্রিয় বন্ধু হযরত আবু বকর (রাঃ) এর সাথে মদিনায় হিজরত করেন”। (মহানবীর সাঃ মহাজীবন)।
মদিনায় গমন করার পর হযরত আবু আইউব আনসারী গৃহকে বসবাসের জন্য বেছে নেন। পূর্বে যাঁরা হিজরত করে এসেছিলেন, তাঁরা এসেই কোবাতে একটি মসজিদ তৈরি করলেন। কোবা তৎকালে ছিল মদীনা থেকে তিন মাইল দূরবর্তী একটি পৃথক এলাকা। হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে এই কোবা-তেই প্রথমে কয়েকদিন অবস্থান এবং উক্ত মসজিদে সালাত আদায় করেন। মদিনায় প্রথমেই যে গুরুত্বপূর্ন কাজটি করলেন সেটি হচ্ছে মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করা। অতঃপর মদিনায় ইয়াহুদি, ইছায়ি, নাছারা ও অন্যান্য বহুধা গোত্র বিভক্ত সকল গোত্রের সবাইকে নিয়ে মদিনা কেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রিয় কাঠামো নির্মাণ করেন। ধর্মীয় পরিচিতি যাই থাক, বংশ-গোত্রের পার্থক্য যে-রকমই হোক, মদীনার সার্বিক নিরাপত্তা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও বহিঃশত্রুর মোকাবিলায় প্রশ্নে সকলেই সমান দায়িত্বশীল, এই ঐক্যমতের উপর তৈরি হলো সবার জন্য অনুস্বরনীয় একটি চুক্তিনামা; যা পৃথিবীর সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধানরুপে খ্যাত মদীনা- সনদ। এই সংবিধানের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হলো মদিনা নগর রাষ্ট্র। আর এই প্রথম ক্ষুদ্র ইসলামী রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও রাষ্ট্রপ্রধান হলেন আল্লাহর রাসুল হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)।
এই মদিনা সনদের ধারাগুলো ছিল নিম্নরূপ:
১. অন্যদের মোকাবিলায় তারা এক জাতী বলে গণ্য হবে।
২. নিঃসন্দেহে আল্লাহর জিম্মা বা অভয় অভিন্ন। তাদের যে কোন সাধারণ ব্যক্তি কাউকে অভয় দিয়ে সকলকে সে চুক্তির মর্যাদা রক্ষার দায়িত্বে আবদ্ধ করতে পারবে। আর মুমিনগণ অন্যান্য লোকের মোকাবিলায় পরস্পর ভাই ভাই।
৩. আর ইয়াহূদীদের মধ্যে যারা আমাদের আনুগত্য করবে, তারাও সাহায্য ও সমতার হকদার বলে গণ্য হবে, তাদের প্রতি জুলুমও হবেনা আর তাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করাও চলবেনা।
৪. এবং আমাদের পক্ষের শক্তিরূপে যারা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে, তাদের একে অপরের পিছনে থাকবে।
৫. আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে আর সাক্ষ্য-প্রমাণে তা প্রমাণিতও হয়ে যাবে, তার উপর থেকে কিসাস গ্রহণ করা হবে হত্যার বদলে তাকে হত্যা করা হবে। হ্যা, যদি নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী রক্তপণ নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে রাযী হয়, আর সমস্ত মুমিনের তাতে সায় থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। এ ছাড়া তার আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেই (অর্থাৎ, এটা অবশ্য করণীয়)।
৬. আর যে মুমিন ব্যক্তি এই লিপির বক্তব্য স্বীকার করে নিয়েছে। আর সে আল্লাহ্ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে, তার জন্যে কোন নতুন ফিতনা সৃষ্টিকারীকে সাহায্য করা বা তাকে আশ্রয় দান বৈধ হবেনা। যে ব্যক্তি তাকে সাহায্য করবে বা আশ্রয় দেবে, তার প্রতি আল্লাহর লা’নত ও গযব হবে কিয়ামতের দিনে এবং তার থেকে কোন ফিদয়া (মুক্তিপণ) বা বদলা গ্রহণ করা হবেনা।
৭. আর যখন তোমাদের মধ্যে কোন বিরোধ উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা ও মুহাম্মদ (সা)-এর নিকট তা উত্থাপন করতে হবে।
৮. বানু আউফ, বানু নাজ্জার, বানু হারিস, বানু সাঈদা, বানু জুশাম, বানু আউস ও বানু সালাবার ইয়াহুদীরা; জাফনা উপগোত্রে যা সালাবার শাখাগোত্র, বানু শুতাইবার লোকজন, সা’লাবাদের মাওালীরা মু’মিনদের সাথে একই উম্মতরূপে গণ্য হবে। ইয়াহুদীদের জন্যে তাদের ইহুদি ধর্ম, মুসলমানদের জন্যে তাদের ইসলাম ধর্ম, তাদের দাসদের এবং তাদের নিজেদের ব্যাপারে একথা প্রযােজ্য হবে। তবে যে ব্যক্তি জুলুম বা অপরাধ করবে, সে তার নিজকে ও স্ব গোত্রবাসীদেরকে ছাড়া অন্য কাউকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবেনা।
৯. এবং যখমের প্রতিশোধ গ্রহণের পথে কোন বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করা হবেনা। যে ব্যক্তি রক্তপাত করবে, সে নিজে ও নিজ পরিজনদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনবে। অবশ্য, যে অত্যাচারিত হয়েছ এবং (সে হিসাবে) আল্লাহর আনুকূল্য পাবে (তার কথা স্বতন্ত্র)।
১০. যে কেউ এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী কোন পক্ষের বিরদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, তার বিরদ্ধে একে অপরকে সাহায্য করবে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও মঙ্গল কামনার সম্পর্ক থাকবে। একপক্ষ অপরপক্ষকে সুপরামর্শ দেবে। বিশ্বস্ততা সুরক্ষা ও শক্তিশালী করবে, বিশ্বাস ভঙ্গ বা বিশ্বাসঘাতকতা করবেনা।
১১. এই চুক্তিনামা গ্রহণকারী পক্ষসমূহের মধ্যে যদি এমন কোন নতুন সমস্যার বা বিরোধের উদ্ভব হয়-যা থেকে দাঙ্গা বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ তায়ালার এবং আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ-এর নিকট মীমাংসার্থে উত্থাপিত করতে হবে। এ চুক্তিনামায় যা কিছু রয়েছে এর প্রতি সর্বাধিক নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছেই খুবই পছন্দনীয়।
১২. যখন তাদেরকে সন্ধির জন্য আহবান জানানো হবে, তখন তারা সন্ধিবদ্ধ হবে। অনুরূপ যখন তারা সন্ধির জন্যে আহবান জানাবে তখন মুমিনদেরকেও সন্ধির আহ্বানে সাড়া দিতে হবে। তবে, যদি কেউ ধর্মের বিরদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে তার ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য হবেনা।
১৩. ইহুদীরা ও মুসলিমরা তাদের স্বযুদ্ধের ব্যয়ভার নিজের গোত্রবাসীরাই বহন করবে। আর যারা এই চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তাদের বিরদ্ধে যুদ্ধ করবে তাদের বিপক্ষে সাহায্য করা চুক্তিবদ্ধ সবার জন্য আবশ্যক হবে। চুক্তিবদ্ধ দলসমূহ মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক শুভকামনা ও সদুপদেশের মতো থাকবে এবং তাদের মাঝে অন্যায় ও অপরাধের পরিবর্তে উদারতা এবং মহানুভবতার সম্পর্ক বিরাজ করবে। নিশ্চয়ই মিত্রের সাথে সম্পাদিত সন্ধিচুক্তি লঙ্ঘন করবেনা। অবশ্যই নিপীড়িত,অত্যাচারিত, নির্যাতিত,শাসিত-শোষিতকে সম্পূর্ণরূপে সাহায্য করা হবে।
১৪. প্রতিবেশীরা স্বগোত্রলোকদের মতই নিরাপত্তা ভোগ করবে, তাদের কোনো ক্ষতি করবেনা আর তারাও কোনো অপরাধ লিপ্ত হবেনা।
১৫. ইয়াসরীব বহিশত্রুর আক্রমিত হলে প্রত্যেক চুক্তিবদ্ধ শরীকদলের উপর তাদের সম্মুখে নগরাংশে সুরক্ষা করার দায়িত্ব-কর্তব্য বর্তাবে। ইহুদিদেরকে কোন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন জন্য আহ্বান জানানো হলে তারা সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করবে। একইভাবে মুসলিমদেরকে কোন সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপনের জন্য আহ্বান জানানো হলে মুমিনদের সন্ধি ও মৈত্রী স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। তবে ধর্মীয় কারণে যুদ্ধ হলে সেকথা ভিন্ন ও পৃথক।
১৬. বানু আউস গোত্রের ইহুদিরা এবং তাদের মিত্ররা এই চুক্তিতে অন্তর্গত অন্যান্য শরীকদলের মত সমান অধিকার ও দায়িত্ব রাখেন। এই ঘোষণাপত্র সম্পাদকদের কাছে থেকে তারা সম্পূর্ণরূপে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লাভ করবে। অপরাধী ব্যক্তি কেবল নিজের অপরাধের দায়িত্ব বহন করবে। যে ব্যক্তি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে চুক্তি পালন করবে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সহায়ক হবেন।
১৭. (ক) এই চুক্তিতে কোনো অত্যাচারী-অপরাধী বা চুক্তিভঙ্গকের জন্য একটি আক্রমণ কবচ। যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তার জন্য রয়েছে সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তা বন্দোবস্তো আর যে ব্যক্তি যুদ্ধ অংশ নিবেনা নিষ্কিয় হয়ে বাড়ীতে বসে থাকবে তার জন্য রযেেছ সম্পূর্ণরূপে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত। (খ) প্রত্যেকেরই যেদিকে থেকে তার অংশ সেদিকে পাবে।
১৮. আল-আউসের ইহুদীরা, তাদের মুক্তিদাতারা এবং নিজেরা এই দলিলের লোকদের কাছ থেকে বিশুদ্ধভাবে আনুগত্যের সাথে এই দলিলের লোকদের সাথে একই অবস্থান করে। আনুগত্য বিশ্বাসঘাতকতা বিরদ্ধে একটি সুরক্ষা যে অর্জন করে তার নিজের জন্যই অর্জন করা উচিত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দলিল অনুমোদিত ও সম্মতিযোগ্য।
১৯. এই কাজটি অন্যায়কারী ও পাপীকে আক্রমণ করবে। যে ব্যক্তি যুদ্ধ করতে বের হয় এবং যে ব্যক্তি শহরে বাড়িতে থাকে সে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ থাকে যদি না সে অন্যায় ও পাপ না করে থাকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভাল এবং খোদাভীরু মানুষের মহারক্ষক এবং মুহাম্মদ (সঃ) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত একজন(খাতামুন নাবিয়িন) নবী ও রাসূল।
মদীনায় নগর কেন্দ্রিক রাষ্ট্রটি দেখে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে সবাই বেশ উৎফুল্ল-আনন্দিত হয়েছিলেন। পৃথিবী অবলোকন করেছে সংখ্যায় মুষ্ঠিমেয় কিন্তু তাওহিদী চেতনায় উজ্জিবিত নির্ভুল লক্ষের দিকে দৃঢ় ও ধীর পায়ে অগ্রসরমান একটি কাফেলা। মক্কার কাফের মুশরিকদের চোখে সমূহ বিপদ বিলক্ষণ করলেন। সেই জন্য ইসলামের এই রাষ্ট্রটি শুরুতের মূলোৎপাটন করার জন্য কাফেরেরা এক বড় রকমের যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। ফলে বদর, ওহুদ, হুনায়ন, খন্দক সহ মোট ২৭ টি যুদ্ধে রাসুল (সাঃ) কে নেতৃত্ব দিতে হয়েছিল। মুসলিম সম্প্রদায়ের এই যুদ্ধগুলোতে জয়-পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ধীরে-ধীরে এগিয়ে ৬ষ্ঠ হিজরিতে গিয়ে পৌছে। মুসলিম কাফেলার ক্রমবর্ধমান প্রভাব সামরিক শক্তি কৌশলী সরব তৎপরতার কারনে সমগ্র আরব দেশে ইসলাম এক অপ্রতিরোধ্য ও অজেয় শক্তি হিসাবে মাথা তুলে দাড়িয়েছিল। মদীনার ইসলামী রাষ্ট্রটি একদিকে নজদের সীমানা পর্যন্ত অপরদিকে সিরিয়ার সীমা রেখা পর্যন্ত, তৃতীয় দিকে লৌহিত সাগরের বেলাভূমি পর্যন্ত এবং চতুর দিকে মক্কার নিকট পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। মুসলিমদের সর্বব্যাপি প্রভাব প্রতিপত্তি বিচক্ষণ নীতি কৌশল ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে মক্কার কুরাইশদের আপষ মিমাংশার পথে উদ্বুদ্ধ করে। অতঃপর হুদাইবিয়ার সন্ধির মত বিরাট গুরুত্বপুর্ণ সন্ধি সম্পাদিত হয় মক্কার মোশরেক কুরাইসদের সাথে যে সন্ধিকে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ফাতহুম মুবিন বা মহাবিজয় বলে ঘোষনা করেছেন।
হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পাদনের পর রাসুল (সাঃ) একটি দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিলেন। রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহপাক প্রেরণ করেছেন মানুষের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেবার জন্য, সমগ্র মানব বংশের জন্যই এই দাওয়াত; কিন্তু এতদিন পর্যন্ত মক্কা ও মদীনার মধ্যেই তাঁর প্রচার-কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। এতদিন তিনি কেবল নিকটস্থ ও নিকটবর্তী মানুষের কাছেই ইসলামের কথা পেশ করেছেন; প্রতিকূল অবস্থার কারণে বাইরের দুনিয়ার ইসলামের পয়গাম প্রেরণের কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন নি। কিন্তু আল্লাহপাকের ইচ্ছা, হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তির পর অনেকটা নিশ্চিত বোধ করায় এবং অভ্যন্তরীণ বৈরী পরিস্থিতি অনেকটা স্থিমীত হয়ে আসায়, রাসুল (সাঃ) এবার আরবের বহির্ভাগে অনেক দেশে ইসলামের দাওয়ার পৌঁছানো দিকে মনোনিবেশ করলেন।
রাসুল (সাঃ) ছিলেন গোটা মানবজাতীর জন্য রহমত সরুপ, প্রেম-ভালবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা, কল্যাণকামী, ক্ষমা-ঔদার্যের মূর্ত প্রতীক। তিনি ছিলেন রহমাতালিল আলামিন।
পবিত্র আল কোরানে আল্লাহ তায়ালার ঘোষনা করেছে “আমি আপনাকে গোটা মানবজাতির জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি”। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত- ১০৭)
পবিত্র কুরআনে অনত্রে বর্ণিত আছে যে, “হে নবী এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল। নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্তের হতে, তাহলে তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ত্রটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করো” (সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৫৯)।
এছাড়াও পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “হে নবী আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী স্বরুপ-সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শণকারী হিসাবে এবং আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে তার দিকে আহবানকারী ও উজ্জল প্রদীপরুপে”। (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৪৫-৪৬)।
যেহেতু রাসুল (সাঃ) কে পৃথিবীতে পাঠানোর আল্লাহ তায়ালার মুল উদ্দেশ্য ছিল যে, তৎকালীন পৃথিবীর সকল মতবাদ, আইন-কানুন, বিধি-বিধান এর উপর আল্লাহর বিধান এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার প্রতিনিধি হিসাবে।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন “তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসুলকে জীবন জাপন পরিচালনা করার সঠিক বিধি বিধান ও দ্বীনে হক দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।” (সূরা আস-সফ, আয়াত- ৯)
হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পাদনের পরবর্তী সময়ে ইসলাম ও মুসলিমদের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির পরেও ধীরে-ধীরে ইসলাম ও মুসলমানদের সার্বিক প্রভাব ও শক্তি সমৃদ্ধি পেতে থাকে। ৮ম হিজরীতে রাসুল (সাঃ) মক্কা অভিযানের জন্য স্থীর সংকল্প গ্রহন করলেন, দশ সহস্র রণসজ্জিত সাহাবা রাসুল (সাঃ) অষ্টম হিজরির ১০ই রমজান মক্কা অভিমুখে যাত্রা করলেন। আবু সুফিয়ান ও অন্যান্য মুশরিকরা মক্কার বাইরে এসে জানতে পারলেন যে, দশ সহস্র সশস্ত্র মুজাহিদসহ রাসুল (সাঃ) একেবারে মক্কার দোরগোড়ায় সমুপস্থিত। এমতাবস্থায় করার কিছু নেই। যুদ্ধ হয়তো করা যায় কিন্তু আবু সুফিয়ান ভেবে চিন্তে দেখলো, সেটা হবে স্বেচ্ছায় তলোয়ারের নীচে গলা বাড়িয়ে দেয়া। আব্বাস (রাঃ) এর বিশেষ সুপারিশে রাসুল (সাঃ) কুরাইস নেতা আবু সুফিয়ানকে নিরাপত্তা ও স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়ে জানিয়ে দিলেন “যারা তোমার ঘরে আশ্রয় নিবে তারা নিরাপদ, যারা নিজ-নিজ গৃহে আবদ্ধ থাকবে অথবা বাইতুল্লাহ শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করবে, তারা নিরাপদ। রাসুল (সাঃ) প্রদত্ত নিরাপত্তার এই সংবাদ নিয়ে আবু সুফিয়ান অতি দ্রুত মক্কায় পৌঁছালো। সে রাসুল (সাঃ) এর সব কথা সবাইকে হুবহু জানিয়ে দিল। এবং এই কথাও জানালো যে, কেউ যেন ভুলক্রমেও প্রতিরোধ-সৃষ্টি বা যুদ্ধের কথা চিন্তা না করে। এই ঘোষনার পরে মক্কার অধিকাংশ অধিবাসিরা ইসলামের ছায়াতলে অশ্রয় নিয়ে, সাহাবায়ে রুপান্তরিত হন। এরকম সর্ব বিপ্লবী বিজয় এবং একই সঙ্গে এমন অভাবনীয় ক্ষমা ও ঔদার্যের মহামান্বিত রুপ ইতিপূর্বে পৃথিবী অবলোকন করেনি। এভাবে মক্কা বিজয়ের পর তিনি কাল বিলম্ব না করে বিভিন্ন এলাকায় সাহাবিদেরকে প্রেরণ করে বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মূর্তি সমূহ ধ্বংশ করার নির্দেশ প্রদান করেন। রাসুল (সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর সেখানে ১৯ দিন অবস্থান করে জুরুরী যা কিছু করণীয় রাসুল (সাঃ) তা জরুরীভাবে সম্পন্ন করেন এবং মক্কার আশে-পাশের বিভিন্ন ছোট-বড় শহরে অভিযান চালিয়ে সেগুলো বিজয় করে স্ব-স্ব স্থানে গভর্নর নিয়োগ করেন। অতঃপর রাসুল (সাঃ) এহেরাম বেধে সবাইকে সংগে নিয়ে মক্কায় এসে প্রথমে ওমরাহ পালন করেন এবং তারপর মক্কার গভর্নর হিসাবে হজরত আত্তাব ইবনে আছীদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করে মদীনার পথে রওয়ানা হলেন।
“মদীনায় ফেরার পর রাসুল (সাঃ) মুসলমানদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাপ্রদান, সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উন্নতি সাধন ইত্যাদি নানামূখি রাষ্ট্রিয় দ্বায়িত্বপালনের মনোযোগী হলেন। একদিন অব্যাহত যুদ্ধ-বিগ্রোহের কারণে উল্লেখিত বিষায়াবলীর দিকে যথোচিত নজর দেওয়া সম্ভব হয় নি। এখন পরিবেশ পূর্বাপেক্ষা অনেক অনুকূল, প্রায় পুরো আরব ভূখন্ডেই এখন রাসুল (সাঃ) এর একক কর্তৃত্বাধীন । অতএব এটাই যথার্থ সময়, আল-কোরআনের অব্যর্থ হেদায়াতকে ইসলামী হুকুমাত কায়েমের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন। মদিনা হয়ে উঠলো সমগ্র আরব জাহানের কেন্দ্রস্থল; মদিনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলো এক নতুন সভ্যতা, ইসলামী সভ্যতা। এক নাম-পরিচয়হীন মরুবাসী যাযাবর জাতী তাদের বহুদিনের পুঞ্জীভূত অন্ধকার ভেঙ্গে রাসুল (সাঃ) এর নেতৃত্বে অভাবনীয় পরাত্রম নিয়ে অবির্ভূত হল এক অপরাজেয় শক্তিরুপে। পুরো পৃথিবী বিষ্ময়চোখে অবলোকন করছে মুসলিম সভ্যতার এই অপ্রতিহত উত্থান অবলোকন করছে একটি গ্রন্থ ও একজন মানুষের কী-নির্ভুল অব্যর্থ পথনির্দেশন!”(মহানবীর সাঃ মহাজীবন, পাতা নং- ৭৪)।
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে রাসুল (সাঃ), সূরা আল ইমরানের ১৬৪ নং আয়াত অনুযায়ী মুসলিমদের সার্বিক জীবনের পরিশুদ্ধ ও পূর্ণবিন্যাশ এর জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষন দিতে থাকেন।
আল্লাহ বলেন “আসলে ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন । সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়, তাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল”।
পূনরায় মদিনায় ফেরার পরে স্বাভাবিক জীবন-জাপন ও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই রোমান সম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো। তাবুক নামক স্থানে মুসলিম এবং খৃষ্টান রোমান বাহিনীর মুখো-মুখি অবস্থানকালে রোমান বাহিনী জানতে পারলেন যে মুসলিম বাহিনীর প্রধান সেনাপতি স্বয়ং মুহাম্মদ (সাঃ) ত্রিশ হাজার প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত জানবাজ মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে উপস্থিত। এই সংবাদ শোনার পরে রোমান বাহিনী যুদ্ধ না করেই পলায়ন করে। এই অবস্থা দেখে আশে-পাশের সকল ছোট খাট রাজ্যসমূহ মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমার্পন করে বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।
“শুরু হলো দশম হিজরি; রাসুল (সাঃ) এর মাদানী জিন্দিগীর সর্বশেষ বছর। আল্লাহপাকের বিশেষ ইশারায় তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলেন যে, এই বৎসরই তাঁর পার্থিব জীবনের সর্বশেষ বৎসর; এই বছরটি অতিক্রান্ত হওয়ার পর তিনি আর বেশিদিন থাকবেন না। পূর্বের যে-কোন সময় অপেক্ষা তিনি এই সময় খুবই বেশি-বেশি আল্লাহপাকের ইবাদত বন্দেগীতে কাটাতে লাগলেন। এইভাবেই পবিত্র হজে¦র সময় এসে গেল। শাওয়াল মাস শেষ হতে তখনো কয়েকদিন বাকি তিনি হজে¦র সফরে মক্কার দিকে যাত্রা করলেন। পথে অতিবাহিত হলো মাসাধিক কাল। রাসুল (সাঃ) সফর সঙ্গীদের নিয়ে মক্কায় প্রবেশ করলেন দশম হিজরির জি¦লহজ¦ মাসের চার তারিখে। পবিত্র হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানিকতা পালন করতে করতে ৮ তারিখ মীনায় কাটিয়ে ৯ই জি¦লহজ¦ তারিখে দ্বিপ্রহরের পূর্বে আরাফাতে উপস্থিত হলেন। তাঁর চারপাশে তখন বিশাল এক জনসমূদ্র; এক লক্ষ চল্লিশ হাজার, কোন কোন বর্ণনায় এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার সাহাবীর সমাবেশ। রাসুল (সাঃ) সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ প্রদান করেন: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম ভাষণ। তিনি বললেন, জানি-না এই স্থানে তোমাদের সঙ্গে এইভাবে আর মিলিত হতে পারবো কি না । তোমাদের কাছে এমন একটি বস্তু রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না, সেটা আল কোরআন”। (মহানবীর সাঃ মহাজীবন)।
রাসুল (সাঃ) স্পষ্ট বুঝতে পারলেন যে, তিনি তাঁর এই পার্থিব জিন্দিগীর একেবারে শেষপ্রান্তে এস পৌঁচেছেন; বুঝতে পারলেন, এই সূরা নসর তাঁর মৃত্যুর খবর নিয়েই নাজিল হয়েছে। এরপরে রাসুল (সাঃ) খুবই বেশি বেশি হামদ তাসবিহ ও ইসতেগ্ফারে নিবিষ্ট থাকতেন; উঠতে বসতে সর্বক্ষণ সর্বাবস্থায় তিনি পড়তেন “সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি”।
রাসুলে কারীম (সাঃ) এর এই ধরাধাম থেকে বিদায়ের পূর্বে ইচ্ছাপত্র ঘোষনা করেন। তার বর্ণনা অধ্যাপক আবু জাফর তার বিখ্যাত গ্রন্থ মহানবীর মহাজীবন বইয়ের ৮০-৮১ নং পাতায় এভাবে তুলে ধরেছেন। “ওফাতপূর্ব সময়ে রাসুল (সাঃ) কিছু অসিয়ত করেন । মৃত্যুর পাঁচদিন আগে, সেদিন ছিল বুধবার, রাসুল (সাঃ) অপেক্ষাকৃত কিছুটা সুস্থ বোধ করায় মসজিদে এসে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ইহুদি নাসারাদের উপর আল্লহপাকের লানত, তারা তাদের কবরকে মসজিদে পরিণত করেছে। তোমরা আমার কবরকে ইবাদতগাহে পরিণত করো না। তারপর বললেন, “ আমি যদি কাউকে কখনো আঘাত বা অসম্মান করে থাকি, আমি চাই সে আমার নিকট থেকে বদলা গ্রহণ করুক”। এক ব্যক্তি তার তিন দিরহাম পাওনার কথা বললে রাসুল (সাঃ) ফজল ইবনে আব্বাসকে (রাঃ) পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি জোহরের নামাজ পড়ানো শেষ করে আরো কিছু কথা বললেন। আনসারদের সম্পর্কেঅসিয়ত করলেন, “তারা আমার হৃদয় ও কলিজা, আনসারদের মধ্যে যারা নেককার তাদেরকে গ্রহণ করবে, যারা বদ্কার তাদেরকে ক্ষমা করো”। বললেন, “আল্লাহপাক তাঁর এক বান্দাহকে দুনিয়ার শান শওকত এবং আল্লহর কাছে যা- আছে, এই দুটির যে-কোন একটিকে বেছে নেবার এখতিয়ার দিয়েছেন। সেই বান্দাহ শেষেরটি গ্রহণ করেছে”। এই কথায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন; কারণ এই কথায় হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন; কারণ এই কথার মধ্যে তিনি শুনতে পেলেন রাসুল (সাঃ) এর অত্যাসন্ন অন্তিমযাত্রার পদধ্বনি”।
ওফাতের পূর্বমুহূর্তে তাঁর পবিত্র মুখে শুধু একটাই কথা বার বার উচ্চারিত হচ্ছিলো, “আস্সালাত আস্সালাত, অমা মালাকাত আইমানাকুম” অর্থাৎ নামাজ নামাজ এবং তোমাদের অধীনস্ত দাসদাসী। একেবারে শেষ মুহূর্তে, রাসুল (সাঃ) অস্ফুটস্বরে তখন বলছিলেন, “ইয়া আল্লাহ, নবী-সিদ্দীক শহীদ সালেহীন, যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ, আমাকে তাদের দলভুক্ত করো, আমাকে মার্জনা করো, আমার প্রতি অনুগ্রহ করো । ইয়া আল্লাহ রফিকে আলা”। আল্লাহর রাসুল আল্লাহর কাছে পত্যাবর্তন করলেন আমাদের জননী মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) আন্হার ঘরে তাঁরই কোলে মাথা রেখে। সময়, দ্বিপ্রহরের বেশ আগে, চাশতের ওয়াক্ত তখন পার হয়ে গেছে;দিনটা ছিল একাদশ হিজরির ১২ই রবিউল আউয়াল। উপস্থিত সবাই বিমূঢ়, সবাই যেন এক আকস্মিক বজ্রাঘাতে বিপন্ন বিহবল ও নির্বাক।
সমগ্র মদীনা শোকাভিভূত । দৃশ্যত সবকিছুই ঠিকঠাক আছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মদীনার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। হজরত আনাস (রাঃ) বলেন “আল্লহর রাসুল (সাঃ) যেদিন আমাদের মধ্যে আগমন করেন, সিদিনের চেয়ে সমুজ্জ্বল কোন দিন আমি আর দেখিনি। আর যেদিন তিনি আমাদের ছেড়ে বিদায় গ্রহণ করলেন, তার চেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দুর্ভোগ্যজনক দিন আমি আর কখনো দেখি নি”। যাই হোক, রাসুল (সাঃ) পৃতিবীতে চিরকাল থাকবার জন্য আসেন নি। “ওয়ামা আনা ইল্লা নাজীরুম মুবীন”, আমি একজন সুস্পষ্ট ভয়-প্রদর্শক মাত্র (সুরা আহকাফ)। অতএব যা- হবারা তাই-ই হলো। সকল দায়িত্ব কর্তব্য সুচারুভাবে সম্পাদন করবার পর পৃথিবীর শেষ্ঠতম মহামানব শ্রেষ্ঠতম রাসুল আল্লাহর প্রিয়তম হাবীব আল্লাহ পাকের আহবানে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন। পার্থিব হিসাবে সেদিন তাঁর বয়স ৬৩ বৎসর পুর্ণ হয়ে ১ দিন, কোন কোন বর্ণনাতে ৪ দিন। মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৩ ই রবিউল আউয়াল তারিখে তাঁকে গোসল করানো হলো। তিন প্রস্থ ইয়েমেনী চাদরে তাঁর কাফনের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর নামাজে জানাযা দশজন দশজন করে পাঠ করেন, এতে পুরো দিন এবং রাতেরও অনেকাংশ ব্যয়িত হয়। জানাযার নামাজে কেউ ইমাম হন-নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রি দ্বিপ্রহরের দিকে রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র দেহ-মোবারক করবে সমাহিত করা হলো। তিনি অশ্রয় গ্রহণ করলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে তাঁর শ্রেষ্ঠতম বন্ধু রফিকে-আলা আল্লাহপাকের পরম সান্নিধ্যে। ইয়া আল্লাহ, আপনি আপনার প্রিয়তম হাবীব-কে মাকামে মাহমুদ জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিক স্থানে অধিষ্ঠিত করুন; আর আমাদেরকে দান করুন ক্ষমা ও অনুগ্রহের জন্য আপনার মহান দরবারে তাঁর শাফায়াতলাভের সৌভাগ্য। আমীন, ছুম্মা আমীন।
যেহেতু আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সাঃ) এর মাধ্যমে গোটা মানবজাতীর জন্য সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, নৈতিক, আধ্যাত্মিক তথা সার্বিক জীবন যাপনের বিধান এবং ইনসাফপূর্ন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সত্য মিথা পরিষ্কাররুপে পরিপূর্নভাবে তুলে ধরেছেন। এইভাবে ইসলামী আদর্শ রীতি-নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী মুসলিমরা একটি সতন্ত্র ও স্বয়ং সম্পন্ন সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। জীবনের সমগ্র বিস্তৃতিতেই এই সভ্যতা অন্যান্যদের হতে সতন্ত্র একটি বৈশিষ্ট ও মর্যাদা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালা তার দ্বীনকে পরিপূর্ন ও তার নিয়ামতে পরিপূর্ন বলে ঘোষনা করলেন। অর্থাৎ দ্বীন একটি স্থায়ী জীবন ব্যাবস্থার রুপ লাভ করেছে এবং তার সার্বভৌম ক্ষমতায় কার্যকরি ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই পসঙ্গে মহাল আল্লাহ তায়ালার অমোঘ ঘোষনা “আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি পূর্ণ করেছি আর তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে কবুল করে নিয়েছি”। (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত নং- ৩)
এই আদর্শিক রাষ্ট্রটি কোন ইন্দ্রজাল নয়। এই বিষ্ময়কর সাফল্যের একটিই বাস্তব রহস্য, এবং তা-হলো রাসুল (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ থেকে বিকীর্ণ আলোকরশ্মি। ইসলাম তো আসলে অন্য কিছু নয়, ইসলাম হলো আল-কোরআন এবং রাসুলের (সাঃ) উপস্থাপিত বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনাদর্শের সমন্বিত রুপ। মানুষ যদি সত্যি মুক্তি চায়, যদি সত্যিই ব্যধিমুক্ত স্বাস্থ্যজ্জ্বল পৃথিবী চায়, যদি চায় মাটির এই পৃথিবীকে জান্নাতি সৌরভে সুবাসিত করে তুলতে, তাহলে অযথা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে কোন লাভ নেই; ফিরে আসতে হবে ইসলামের কাছে, অর্থাৎ আল কোরআন ও রাসুল (সাঃ)- এর নির্ভুল অব্যর্থ শিক্ষা এবং আদর্শের কাছে। পথ-হারানো পৃথিবীর জন্য এটাই পথ, অন্ধ ও অভিশপ্ত পৃথিবীর জন্য এটাই আত্মরক্ষার একমাত্র মহৌষধ; এবং আমরা পূর্ণ নিশ্চয়তাসহ ব্যক্ত করতে পারি, রাসুল (সাঃ)-এর জীবনাদেশ থেকে হেদায়াত বা পথনির্দেশ গ্রহণ করতে পৃথিবী যদি নিজেকে বদলে নিতে পারে, কোন সন্দেহ নেই, মানব সভ্যতা আবার খেলাফতে রাশেদার মত সুশাসনে ধন্য হবে।
লেখকঃ
মোঃ রেজাউল ইসলাম (রেজা)
এ্যাডভোকেট,
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট