রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার গেলেন পাংশা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মিঠাপুকুরে শাড়ী পেচিয়ে এক মহিলার আত্ম হত্যা পাংশায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত মৃত্যুর আগে ওয়াশরুম থেকে কবি হেলাল হাফিজের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ অনন্তলোকের চিরন্তন সফরে কবি হেলাল হাফিজ পাংশায় পুলিশকে দেখে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালানো আসামী গ্রেফতার ক্ষমা চাইলেন মুফতি আমীর হামযা আশা জাগিয়ে রাখি পাংশায় আগুনে পুড়ে ছাই হলো ৪টি ঘর খোকসায় আ.লীগ নেতাদের ছাড়াতে বিএনপির হাইব্রীড নেতাদের তদবিরে জনমনে প্রশ্ন  খোকসায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক, ছাড়িয়ে নিতে কৃষকদল নেতার তদবীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত কবি রফিকুল্লাহ কালবী : সাক্ষাৎকার পাংশায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী, কেক কাটা ও আলোচনা সভা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

কুষ্টিয়া-মেহেরপুর  ও ঝিনাইদহে একদিন

রোমানুর রোমান / ৬৭৬ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১১:১৫ পূর্বাহ্ন

কুষ্টিয়া- মেহেরপুর  ও ঝিনাইদহে একদিন
রোমানুর রোমান
ভ্রমণ মানুষের জীবনের একটা অংশ। ভ্রমণে যেমন প্রকৃতি দর্শন হয়, আবিষ্কার হয় নানান কিছুর এবং অর্জন হয় জ্ঞানের। তেমনি ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানা যায় এবং ভ্রমণ করলে মানুষের মনে প্রশান্তি আসে, অবসাদ কেটে যায়।
তাই মানুষের জীবনে বেশি বেশি ভ্রমণ করা প্রয়োজন।
ভ্রমণ করতে কার না ভালো লাগে! তাও যদি হয় স্মৃতিবিজড়িত কোনো স্থানে, তাহলে তো কথাই নেই। আমরা “মোমিন ছাত্রাবাস” লুফে নিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান মুজিবনগর দেখার সুযোগ। এজন‍্য কৃতজ্ঞতা আমাদের মেসের মালিক ও বড় ভাইদের প্রতি, ভ্রমণের জন‍্য তারা এই সুন্দর জায়গাটি নির্ধারণ করেছেন।
এক দিনের ভ্রমনে আমরা দেখেছি শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, লালন সাঁইয়ের আখড়া, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রভৃতি।
দিনটা ছিলো শুক্রবার। আকর্ষণীয় ব‍্যাপার হলো, আমাদের ভ্রমণটা শুরু হয় ভোর রাতে, ঠিক চারটায় সিরাজগঞ্জ থেকে বাস ছাড়ে। তারও আগে অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকেই মেসে আয়োজন শুরু হয় বিরিয়ানি রান্নাবান্নার। যদিও কোনো পাকা রাধুনী ছিলো না, আমরা সকলে সহযোগিতা করে রান্না করেছি। সে কী আনন্দ! রাতে কেউ ঘুমিয়েছে আবার কেউ ঘুমাতে পারেনি আনন্দের চোটে।
রাত তিনটায় এক বন্ধুর ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে দেখি সবাই সাজুগুজু করে রেডি হচ্ছে। মঈন ভাই আমাকে তাড়া দিল, “যাও তাড়াতাড়ি রেডি হও।”
সকলে রেডি হতে হতে ততক্ষণে বাস এসে দাঁড়িয়েছে মেচের সামনে। তবে সিট নিয়ে যেন ঝামেলা না হয় সেজন‍্য লটারির মাধ‍্যমে সিটপ্লান করেছে বড়ভাই কাওসার। কিন্তু বিড়ম্বনা ছিলো কয়েকজনের। আমারা ছিলাম মোটে ৫০ জন আর সিট ছিল ৪৫টা তাই এই কয়েকজনকে কষ্ট করে সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে হয়েছে। তার মধ‍্যে আমিও ছিলাম একজন। ভ্রমণে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন আমাদের মেচ মালিক হাজী আব্দুল মোমিন চাচা এবং উনার ছেলে সোহাগ ভাই।
বাহারী সাজে সেজেছে আমার বন্ধু নাজমুল, জাহিদ, বড়ভাই; সোহাগ মাহমুদ, মঈন উদ্দিন, মারুফ সরকার, বুলবুল আহমেদ, মামুন মিয়া, ছোটভাই; মেরাজুল, রাসেল, শামীম, আল আমিন, আতিকসহ অনেকেই। সবার মনে বাঁধভাঙা আনন্দ। কারও যেন অপেক্ষার তর সইছে না।
গাড়ি চালুর শব্দে এক অনাবিল আনন্দ বয়ে চলল সবার মনে। শাঁই শাঁই করে ছুটে চলল বাস। মনের আনন্দে গানের তালে, হইহুল্লোড়ে নাচতে শুরু করল অনেকে। গান, নাচ ও হইহুল্লোড়ে সবুজের বুক চিরে সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী-কুষ্টিয়া সড়কে সর্পিল ভঙ্গিতে এঁকেবেঁকে চলছে আমাদের বাস।  কোনো কোনো জায়গায় রাস্তার বেহাল দশা। ঝাকিতে ঝাকিতে রাস্তার খোয়া দেখে শান্ত ভাই কবিতা আবিস্কার করে শোনান,
রাস্তার খোয়াগুলো খাড়া খাড়া
আমাদের বলছে একটু দাড়া,
তোদের কেন এত্ত তাড়া!
গাড়ীর গতি আস্তে বাড়া। হা হা হা
কয়েকজন পাশ থেকে শুনে হেসে বলল, বাহ! বাহ, দারুণ! দারুণ!
পথিমধ্যে বাস থামিয়ে একটি মসজিদে ফজরের সালাত আদায় করে চলতি বাসে সকালের নাস্তা সেরে নেই। সবাইকে রুটি আর কলা বিলি করেন সোহাগ ভাই। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মুজিবনগরের প্রধান ফটকে আমরা পৌঁছাই সকাল ৮টা ২০ মিনিটে।
বাস থেকে নেমেই খানিকটা বিশ্রাম নিলাম। বিশ্রাম শেষে বেরিয়ে পড়লাম মুজিবনগরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
আমাদের ভ্রমণপিপাসু মন, ভ্যানে চেপে দল বেঁধে ছুটে চললাম বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত অভিমুখে। এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত, মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। কর্মরত বিজিবি সদস্যদের সাথে অনেক কথা হলো। জানলাম এখানকার মানুষ ও মুহূর্তের গল্প।
ক্লিকে ক্লিকে স্মৃতি ধরে রাকতেও ভুললাম না। চলে আসলাম বিশাল আকৃতির বাংলাদেশের মানচিত্র দেখতে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে ১১টি সেক্টরের ভাগ দেখানো হয়েছে এই মানচিত্রে। এ ছাড়া যুদ্ধের এলাকা, শরণার্থীদের দেশত্যাগের চিত্রও স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এ সময় আশপাশে দেখা মেলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন ভাস্কর্য, যার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন ইতিহাস।
এর পাশেই আমবাগান দেখা শেষে আমরা গেলাম স্থপতি তানভির মোকাম্মেলের নকশায় দেশের প্রথম রাজধানীর ঐতিহ্য তুলে ধরতে গড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মেহেরপুর সদর থানার (বর্তমান মুজিবনগর উপজেলা) বাগোয়ান ইউনিয়নবৈদ্যনাথতলা গ্রামের ঐতিহাসিক আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।  শপথ গ্রহণের  স্মৃতিকে অম্লান করে ধরে রাখার উদ্দেশ্যে শপথগ্রহণের স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে কর্মরত ও ঘুরতে আসা অনেক মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ শেষে আমারা সাড়ে ১১টায় খেতে বসি। সোহাগ ভাই ও দুজন স্থানীয় মহিলার সহযোগিতায় সকলে বসে পেট ভরে বিরিয়ানি খেয়ে উঠি। তারপর ঐ স্থানীয়দের কিছু বকশিশ ও অতিরিক্ত খাবার দিয়ে দেই।
এবার আমাদের ফেরার পালা। ফেরা বলতে পথে আরো স্পট দেখার বাকি আছে। তাই সোহাগ ভাইয়ের তাড়া, আমাদের শিলাইদহে গিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করতে হবে। সেকারণে দ্রুত বাসে উঠে শিলাইদহ যাত্রা করি। তবুও সময় বয়ে যাওয়ায় রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি পৌঁছনোর কিছু আগেই জুম্মার সালাত আদায় করে নেই।
শিলাইদহ পৌঁছে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে ঢুকতে আমাদের ২০টাকা করে টিকিট কাটতে হয়। তবে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৫টাকায় টিকিট নেয়া যায়।
কুঠিবাড়ির তিন তলার কামরাটা ছিল কবি গুরুর লেখার ঘর। এখানে তার স্মৃতিবিজড়িত অনেক চিহ্ন রয়েছে। কবি এই ছাদের উপর বসে সুর্যোদয়, সূর্য্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন। ঘরে বসেই শুনতে পেতেন নদীর ডাক। নদী যেন কলকল ছলছল করে কবিকে ডাকতো। কবিও সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন পদ্মার বুকে, গড়াইয়ের বুকে। কখনো পদ্মার বুকে সাঁতরিয়ে তিনি আনন্দ উপভোগ করতেন। তার ব‍্যবহৃত খাটসহ নানান জিনিস এখানা সংরক্ষিত। আছে লেখা, চিত্র। লাইব্রেরী কক্ষে বই। ফুলের বাগান, পুকুর, গাছগাছালি ইত‍্যাদি।
জানা যায়; রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, ইত্যাদি। গীতাঞ্জলী কাব্যের অনুবাদ কাজও শুরু করেন।
বিকেল চারটায় বেরিয়ে পড়ি আরেকটি স্পটের দিকে। সবচেয়ে বেশি সময় আমরা এখানে কাঠিয়েছি। কাঠিয়েছি গোধূলি বিকেল। এটি হলো বাউল সম্রাট লালনের কবরস্থান। কুঠিবাড়ি থেকে খুব সহজেই এখানে আসা যায়।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়া নামক গ্রামে অবস্থিত লালন শাহের মাজার। এখানে তার সময়কার অনেকের কবর সংরক্ষিত। তার ম‍্যূরাল প্রতিকৃতি এবং দুটি দিঘি রয়েছে।
দিনটি শুক্রবার হওয়ায় অনেক মানুষের সমাগম হয়েছে। দিঘিতে বিশাল বড় বড় মাছ। একদল মানুষকে বর্শি দিয়ে মাছ মারতে দেখে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। মাছ দেখতে অনেক মানুষের ভীড় জমেছিল সন্ধ‍্যা পর্যন্তই।
জানা যায়; ১৮৯০ সালে লালনের মৃত্যুর পর তার ভক্তরা এখানে ভিড় করতে থাকে, বহু দর্শনার্থী সমাগমের ফলে এই মাজারটির উৎপত্তি হয়েছে। ১৯৬৩ সালে সেখানে তার বর্তমান মাজারটি নির্মাণ করা হয় এবং তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর মোনায়েম খান।
এই দীর্ঘ ভ্রমণ, ঘোরাফেরার মধ‍্যে যে যার মতো খেয়ে দেয়ে সন্ধ্যায় আমরা বাসে উঠে ফেরার জন‍্য রওনা দেই। আর কোথাও না থেমে লালন শাহ ব্রীজের ওপর দিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় মেচে এসে পৌঁছাই। যদিও পুরো ভ্রমণে বাসে কয়েকজনের অনেকটা কষ্ট হয়েছে। তবে এই ভ্রমণে ক্লান্তি আর অবসাদ নিয়েও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বুকে লালন করে আমরা ফিরে এসেছি। পেয়েছি কবিগুরু ও বাউল সম্রাটের স্পর্শ। তাই এই ভ্রমণ অথবা এই দিনটি আমাদের স্মৃতির পাতায় চির অম্লান হয়ে থাকবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর