সম্প্রতি বাংলাদেশে করোনা অতিমারির মধ্যে দেশে প্রাথমিক স্কুল ও আলিয়া মাদরাসাগুলিতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার তুলনামূলকভাবে কমেছে।
অন্যদিকে, এই সময়ে কওমী নেসাবের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে। আর এতে ,
‘করোনা মহামারির কারণে স্কুল বন্ধের সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা – প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।আর এতেই অন্তর্জালা জ্বলছেন ইসলাম বিরোধী নাস্তিক শক্তি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগে গবেষণাটি করা হয়।
এ গবেষণায় দেখা যায় কওমি, হাফেজিয়া ও নূরানি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেশি ছিল।
২০২০ সালে মাদ্রাসায় পাঁচ বছরের শিশুদের ভর্তির হার ছিল সাড়ে আট শতাংশ। সেটি ২০২১ সালে বেড়ে হয় সাড়ে নয় শতাংশ।
এ ছাড়া ছয় থেকে ১০ বছরের শিশুদের মধ্যে ২০২০ সালে মাদ্রাসায় ভর্তির হার ছিল ১১ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয় ১৪ দশমিক এক শতাংশ।
মাদ্রাসায় ভর্তি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রাম হেড সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে পিতা মাতার মধ্যে সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়ানোর ঝোঁক বাড়ছে। করোনা মাহামারীর সময় তা বেড়ে গেছে।
মি. নাথ বলেন, “একটি কারণ হল ঐ সময় স্কুলগুলো সব বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে ঐ মাদ্রাসাগুলো বন্ধ করা হয়। কিন্তু মাদ্রাসাগুলোর কর্তৃপক্ষ দাবি জানায় যে, মাদ্রাসাগুলো খুলে দিতে হবে এবং সরকার সেগুলো খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়।”
“পিতা-মাতা হয়তো ভেবেছেন স্কুলগুলো বন্ধ, ছেলে-মেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার চেয়ে মাদ্রাসায় গেলে যদি এক ঘণ্টার জন্য হলেও হুজুর পড়াবে। আর ধর্মশিক্ষাকে কেউ খারাপ বলে মনে করছে না বাংলাদেশে। সুতরাং পিতা মাতারা এটা ভেবে বাচ্চাদেরকে মাদ্রাসায় পাঠাতে পারেন।”
কীভাবে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বাড়লো এটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জামেয়া ইসলামী দারুল খাদেমুল ইসলামের অধ্যক্ষ রুহুল আমীন বলেন, মাদ্রাসা গুলো যেহেতু আবাসিক তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম। মি. আমীন বলেন, “এখানে তারা কোয়ারেন্টাইনে থাকার মতই থাকতে পারে। সে কারণে এই দুই বছরে শিক্ষার্থী কমেনি। হিসেব করলে দেখা যাবে বেড়েছে।”
এ গবেষণার জন্য গত বছরের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে ৬১টি গ্রাম ও ৩৯টি শহর এলাকার প্রায় ১২ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালানো হয়।
এতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ৪,৬৮৯ জন শিক্ষার্থী এবং ৩৯৮ জন শিক্ষক অংশ নেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৬২ দশমিক সাত শতাংশ এবং প্রাথমিকে ৯৬ দশমিক দুই শতাংশ।
২০২১ সালে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা কমে হয় ৪৯ দশমিক ছয় এবং প্রাথমিকে ৯৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
অর্থাৎ করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার কমেছে।
ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের সমীর রঞ্জন নাথ বলেন “একটা ধারণা রয়েছে যে গরীব ঘরের সন্তানেরা মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু সেটা ঠিক না। করোনার সময় দেখা গেছে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের সন্তানেরা মাদ্রাসায় পড়ছে।”
“তারা স্কুলে ছিল কিন্তু এখন স্কুলে নেই। তাহলে কি তারা ড্রপ আউট? বাবা-মার কাছে জানতে চাইলে তারা বলছেন, না তাদেরকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়েছে,” বলেন মি. নাথ। ।