বগুড়ার গাবতলীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিচয়ে চাকরি ও ঘর দেওয়ার কথা বলে চার লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জরিনা বেগম (২৮) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাবতলী থানা পুলিশ সোমবার উপজেলার তেরপাখী গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এক ভুক্তভোগীর স্বামী ব্যবসায়ী বিপ্লব দাস তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।
ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ভুয়া ইউএনওকে আদালতে পাঠানো হবে। প্রয়োজনে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, গাবতলী উপজেলার তেরপাখী গ্রামের রাজমিস্ত্রি বিকুল হোসেনের স্ত্রী জরিনা বেগম নিজেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপ্তি রানী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি পার্শ্ববর্তী নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ব্যবসায়ী বিপ্লব দাসের স্ত্রী বীণা রানীকে ফোন করে জানান, গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে মাস্টার রোলে অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়া হবে। চাকরি পেতে এক লাখ টাকা খরচ করতে হবে।
ফোনে জানানো হয়, জরিনা বেগম নামে বিশ্বস্ত একজন তার (বীণা রানী) কাছে যাবে, তাকে টাকা দিয়ে দিতে হবে। গত বছর জরিনা বেগম টাকার জন্য বীণা রানীর কাছে আসেন। বীণা তাকে ৪০ হাজার টাকা দেন। এক মাস পর নগদ হিসাবের মাধ্যমে আরও ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তখন জরিনা বেগম জানায়, তিন মাসের মধ্যে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। আচরণে সন্দেহ হওয়ায় বীণা রানী গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন ওই নামে কোনও কর্মকর্তা নেই।
জরিনা বেগম ভুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপ্তি রানী সেজে তার কাছে এক লাখ এক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে জরিনা বেগমের আরও প্রতারণার ঘটনা বেরিয়ে আসে। একই কায়দায় চাকরি দেওয়ার নামে তেরপাখী গ্রামের ঘুনু প্রামানিকের মেয়ে আসমা খাতুনের কাছ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা, একই গ্রামের সুলতান প্রামানিকের স্ত্রী গোলাপী বেগমকে ঘর ও ছাদ নির্মাণ করে দেওয়ার নামে এক লাখ ২৪ হাজার টাকা, ঘর নির্মাণের নামে জাবেদ আলীর স্ত্রী পিয়ারা বেগমের থেকে ৪০ হাজার টাকা, ধনঞ্জয় গ্রামের ইয়াসিন আলীর স্ত্রী পান্না বেগমের কাছে পাঁচ হাজার টাকা, একই গ্রামের মৃত সামাদ আলীর স্ত্রী মোমেনা বেওয়ার কাছে পাঁচ হাজার টাকা, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের দেবাশীষের স্ত্রী আশা রানীর কাছে ১৭ হাজার এবং একই গ্রামের শ্রী সুরাতের কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
গাবতলী থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, জরিনা বেগম নিজেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপ্তি রানী পরিচয় দেন। এরপর তিনি গত বছরের ২১ নভেম্বর থেকে এ বছরের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রামের অসহায় নারী ও পুরুষকে চাকরি, ঘর নির্মাণ ও সংস্কার করে দেওয়ার কথা বলে চার লাখ তিন হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। অভিযোগ পাওয়ার পর সোমবার দুপুরে তেরপাখী গ্রামের বাড়ি থেকে ভুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জরিনা বেগমকে আটক করা হয়। বিকালে ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থী বীণা রানীর স্বামী বিপ্লব দাস থানায় তার
বিরুদ্ধে মামলা করেন।