যাকে মৃগী রোগের কারণে পাঁচ মাস আগেও বেঁধে রাখা হতো, সেই রোগী এখন সর্বরোগের কবিরাজ। বাড়িতে শামিয়ানা টাঙিয়ে দিনে তিনবার আগত লোকদের সর্বরোগের দাওয়াই দিচ্ছে। তার দাওয়াই পানি-তেল পড়া ও ঝাঁড়ুপেটা। আর বিনিময়ে রোগীরা দিচ্ছে পাশে থাকা বাক্সে নজরানা। টাকা দিলেই মাথায়ং হাত রেখে দোয়া, না হয় আসতে হবে বারাবার। আধুনিক যুগেও এমন কবিরাজের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। ময়মনসিংহের নান্দাইলে এ রকম এক কিশোর কবিরাজের আবির্ভাব ঘটেছে।
জানা যায়, ওই কিশোর কবিরাজের নাম মো. হৃদয় মিয়া। সে নান্দাইল উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের বীরকামাটখালী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের তৃতীয় ছেলে। শফিকুলের বড় দুই পুত্র গাজীপুরের মাওনা এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। এলাকার একটি চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শফিকুল তার ছোট ছেলে হৃদয়কে দিয়ে কবিরাজির আসর বসিয়েছেন।
কবিরাজের বাবা হতদরিদ্র কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ছোট ছেলে হৃদয় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এ অবস্থায় প্রায় পাঁচ মাস আগে হঠাৎ আবোলতাবোল বলতে থাকে। পরিবার ছাড়াও যারে সামনে দেখে তারেই আক্রমণ করে বসে। হাত-পা নাড়াচাড়া করে নিস্তেজ হয়ে যায়। কোনো উপায় না দেখে বাড়িতেই বেঁধে রাখা হতো। কয়েক দিন পর কিছুটা ভালো হলে একদিন বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায় গাজীপুর এলাকার একটি সেতুর নিচে। সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে কবিরাজের চিকিৎসা করানো হয়। এ সময় কবিরাজ বলছে, জিনের আসর লেগেছে। একদিন গভীর রাতে ছেলে জিনের হয়ে বলতে থাকে নিজেই কবিরাজ হয়ে লোকজনের চিকিৎসা করালে তবেই মুক্তি পাবে। অন্যথায় নিরুদ্দেশ হবে। এ কথায় রাজি হলে পরদিন থেকেই শুরু হয় সাধারণ মানুষের বিভিন্ন চিকিৎসা। পরিবর্তন ঘটে হৃদয়ের। লুঙ্গি ও প্যান্ট বাদ দিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি ছাড়াও মাথায় টুপি পরে হয়ে যায় কবিরাজ।
বাড়ির সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে চারপাশ বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা জায়গা করে দেওয়া হয়। সকাল, দুপুর ও বিকাল তিন বেলা রোগী দেখে কবিরাজ হৃদয়। রোগী দেখার সময় নিজের চেয়ারের পাশেই অন্য দুটি চেয়ারের একটিতে থাকে কোরআন শরিফ, অন্যটিতে থাকে টাকার বাক্স। ঝাঁড়ুপেটা, তেল-পানি পড়া দিয়ে প্যারালাইসিস, পুরাতন গ্যাস্ট্রিক, চোখের সমস্যা, পেট ব্যথা থেকে শুরু করে জটিল রোগ ক্যান্সারের চিকিৎসা হচ্ছে। বিষয়টি জানার পরও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
এ বিষয়ে উপজেলার ১ নম্বর বীর বেতাগৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল মতিন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। তবে ইউপির কাজে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টিতে নজর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন। নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রশীদ বলেন, ‘আমার একার পক্ষে এটা বন্ধ করা ঠিক হবে না। যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল মনসুর বলেন, ‘প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এখন খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেব। ‘