জন্ডিসের নির্মল আরোগ্য দেয় হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন
ডা.খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন
মানবদেহ একটি সয়ংক্রিয় কারখানার মত। বিরতিহীন ভাবে তার কার্যক্রম চলমান।
মহান স্রষ্টাতো প্রাণীকূল সৃষ্টি করেছেন বিশেষ কৌশল, বিশেষ বিশেষ মর্যাদা ও দায়- দায়িত্ব দিয়ে।
অনুরুপ মানবদেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের উপরও দিয়ে রেখেছেন নির্দিষ্ট কর্মক্ষমতা ও দায়- দায়িত্ব।
প্রাত্যহিক জীবনে পরিচালিত রুটিনের ব্যাত্যয় ঘটলে বা অনিয়ম হলেই স্বাভাবিক জীবন যাপনও ব্যহত হয়। আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। উপস্থিত হয় কিছু শারিরীক ও মানসিক কষ্ট। আর এ কষ্টমূলেই থেকে যায় ব্যাধী বা রোগ নামের যে শব্দগুলো আমরা চিহ্নিত করে থাকি।
যদিও হোমিওপ্যাথি শাস্ত্রের একটি নিয়ম হলো, রোগের নামে চিকিৎসা নয় মেডিসিনের সাদৃশ্যতায় রোগী ও রোগীর কষ্টসমষ্টির সিমটমের সদৃশ সন্ধান করে তারপর চিকিৎসা করা হয়।
যাহোক, আমরা যখন বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ি তখন কিছু রোগজ উপসর্গ দেখতে পাই। জন্ডিস এমনি একটি উপসর্গ সমূহের মধ্যে একটি।
প্রকৃতপক্ষে জন্ডিসকে কোন রোগ হিসেবে ধরা হয়না। এটি কোন রোগের উপসর্গ মাত্র। এতে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক ও চোখ হলুদাভ হয়ে থাকে।
বেড়ে যেতে থাকে শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ। ক্ষেত্র বিশেষ প্রস্রাব গাঢ় হলুদ হয়ে যায়। এ দেশে ভাইরাল হেপাটাইটিসের কারণেই মূলত: ৭০-৭৫ শতাংশ মানুষের জন্ডিস সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। শহরের শ্রমজীবি মানুষ এতে বেশি আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশের গ্রামীণ জনপদের মানুষ অনেকটা বেশিই অসচেতন, ফলে জন্ডিস প্রমাণিত হলেই ঝাড়-ফুঁক করেই চিকিৎসা শেষ করতে চায়।
সময় মত বিশ্রামসহ সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমি এখানে লক্ষণ ভিত্তিক কিছু মেডিসিনের নাম উল্লেখ করছি। তবে, অবশ্যই অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের পরামর্শের কোন বিকল্প নেই।
১। চক্ষু,প্রস্রাব ও চর্মের বর্ণ হলুদাভ। মুখে রুচিহীনতা। সাদা বর্ণের জিহবা। মাঝে মধ্যে বমির উদ্রেক হলে এমন কি নতুন-পুরাতন উভয় প্রকার জন্ডিসেই কার্যকর মেডিসিন -হাইড্রাসটিস ক্যান।
২। তিক্তস্বাদে মুখেী মধ্যস্থিত, হলুদবর্ণ বিশিষ্ট জিহ্বার ময়লা, চোখ,মূখ ও স্কীনও হলুদ বর্ণ। মৃত্তিকা বা ছাই রঙের মল, ক্ষুধাহীনতা, পিত্তবমির ভাব লক্ষণে মেডিসিনটি হলো- চেলিডোনিয়াম।
৩। রোগীর কোষ্ঠবদ্ধতা,কাদার মত মল,কখনও নরম হলদে,হলদে রঙের প্রস্রাব,বছর বছর গ্রীষ্মঋতুতে জন্ডিস,যকৃতে বেদনা, যকৃত বৃদ্ধি, আহারে ইচ্ছা মোটেই থাকেনা লক্ষণে চিওন্যান্থাস মেডিসিনটি বেশ খাটে।
এছাড়াও বার্বারিস ভল্গারিস, কার্ডুয়াস মেরি,মাইরিকা,চায়না,এসিড সাল্ফ, লাইকোপোডিয়াম, নাক্সভমিকা, নেট্রাম সাল্ফ,ক্যালি মিউর ইত্যাদি মেডিসিন লক্ষণভেদে প্রয়োগ করলে আশাতীত সুফল পাওয়া যায়।
তবে চিকিৎসার পাশাপাশি বিশ্রাম, মুক্ত হাওয়ায় ভ্রমন, ডাবের পানি, কমলা লেবু,আনারস, গ্লুকোজ এর পানি খেতে ভুলবেন না।
সর্বপরি, পরামর্শ হলো-জন্ডিস ধরা পড়লে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
মনে রাখবেন হোমিওপ্যাথিই নির্মল আরোগ্যদানে সক্ষম চিকিৎসা পদ্ধতি।