বঞ্চিত থেকেই গেলেন গ্রেড -৬ প্রত্যাশী মাদরাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপকরা
প্রায় দেড় বছর আগে ২৩/১১/২০২০ইং তারিখে প্রকাশিত হয়েছে বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) এর নতুন জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা যা ১৯শে জুলাই ২০১৮ইং এর সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালা। নীতিমালার ১০ পৃষ্ঠায় ১১.৪ এর বিধি এমপিও ভূক্ত প্রভাষকগণ এমপিও ভূক্তির ৮বছর পূর্তিতে ৫০% হিসাবে অনুচ্ছেদ ১৩ মোতাবেক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। যা আগের নীতিমালায় ছিল ৫:২ অনুপাতে।
র্অথ্যাৎ ফাজিল কামিল মাদরাসায় এমপওি ভুক্ত সাত জন প্রভাষক এর মধ্যে দুইজন সহকারী অধ্যাপক হওয়ার বিধান ছিল । জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮(সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালা ২৩ শে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) এর ১০পৃষ্ঠা ১১.৪ অনুচ্ছেদ বর্ণিত বিধি এমপিও ভুক্ত প্রভাষকগণ৮ বছর পূর্তিতে ৫০ শতাংশ হিসাবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। উক্ত সংশোধিত বিধি অনুসারে (তৎকালিন বিধি ৫:২ অনুপাতে) বিদ্যমান ২ জন ছাড়াও নতুন আরো ১.৫ জন সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। উল্লখ্যে যে, মাদরাসায় বর্তমানে কর্মরত তিন স্তররে প্রভাষক বিদ্যমান। ১.প্রভাষক গ্রডে-৯ ০২.প্রভাষক গ্রডে-৮ ও ০৩.প্রভাষক গ্রডে-৭ ।শুরুতে প্রভাষক গ্রডে-৯ এবং তার বছর পরে গ্রডে-৮ এ উন্নতি হয়।
ফাজিল কামিল মারদাসা যেসব প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন তাদের প্রায় ৯৫ শতাংশই পূর্বের বিধি অনুয়ায়ী ১ টি টাইম স্কেল পেয়ে বর্তমানে ০৭ গ্রেডে (২০১৫ সালের জাতীয় ¯স্কেল) অনুয়ায়ী মূল স্কেল ২৯,০০০/- টাকা থেকে প্রতি বছর ৫% ইনক্রিমেন্ট সহ ৩৫,২৬০/- টাকা বেতন স্কেল পাচ্ছেন। ০৬ গ্রেডে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলে মূল স্কেল হবে ৩৫,৫০০/-টাকা। সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিলে জন প্রতি প্রতিমাসে ২৪০/- টাকা বেশি দেওয়া লাগবে সরকারের। যা দেওয়ার জন্য প্রায় দেড় বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন এখনো উক্ত বিধি বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা,তার কারন অজানা। দেশে এমপিও ভুক্ত ফাজিল কামিল ও মাদরাসার সংখ্যা খুবই কম এসব মাদরাসার বর্তমান বিধি ৫০% অনুয়ায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে হয়তো এক থেকে দুই জন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। টাকার পরিমান কম বেশি যাই হক না কেন ০৬ গ্রেডে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া বেশি প্রয়োজন। এবিষয়ে মাদরাসা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন্ কর্মকর্তা বিভিন্ন্ মত পোষণ করেন। অর্থ ও প্রশাষন শাখার একজন কর্মকর্তা কে (ফেব্রæয়ারী /২০২১ইং) জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন নীতিমালা হয়েছে বছরের মাঝামাঝি । আপনারা জুলাই/ ২০২১ সাল থেকে পাবেন। আবার আর এক জন কর্মকর্তাকে ভোলা জেলার জনৈক এডিসি স্যার এব্যাপারে জিঙ্গাস করলে তিনি বলেন আপনারা খোঁজ রাখবেন কলেজ যে দিন থেকে দিবে আমরাও সে দিন থেকে দিব। এই কর্মকর্তা কেন এমন কথা বললেন মাদরাসার সংশোধিত নীতিমালা জারি করা হয়েছে ২৩ শে নভেম্বর ২০২০ইং তারিখে আর কলেজের নীতিমালা জারি করা হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। কলেজের নীতিমালায় আছে ডিগ্রী কলেজের প্রভাষকগন ১৬ বছর পরে সবাই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন। ইতোমধ্যে ডিগ্রী কলেজের অনেক প্রভাষক উক্ত বিধি অনুয়ায়ী সহকারী অধ্যাপক পদে বেতন ভাতাদি পাচ্ছেন। কিন্তু মাদরাসার নীতিমালায় ৫০% সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন ।আর ৫০% প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন না। যতক্ষন না ১৩.৪ অনুচ্ছেদের আওতা ভুক্ত না হবেন । ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রভাষক গনও ১৬ বছর পর সবাই জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ০৬ গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু আলিম মাদরাসার প্রভাষকগন ৫০% অনুয়ায়ী জেষ্ঠ প্রভাষক গ্রেড ০৬ এ পদোন্নতি পাবেন। কলেজের প্রভাষকগণের পদোন্নতি দেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে।আর মাদরাসা প্রভাষকদের পদোন্নতি দেওয়া হয় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। মাদরাসা প্রভাষকদের আগে পদোন্নতি দেওয়া হলে কলেজের প্রভাষক গণের মর্যাদা কমে যাবে হয়তো সেই জন্যই এ কর্মকর্তা একথা বলেছেন। কলেজের প্রভাষক গণের পদোন্নতির জন্য ০৯ সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে । কিন্তু মাদরাসার নীতিমালায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য এরকম কোন বিধি নাই। তাহলে কেন মাদরাসা প্রভাষকদের এখনো সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না যা খুবই দুঃখ ও হতাশা জনক। এবিষয়ে ডিসেম্বর ২০২১ইং শেষ সপ্তাহে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয়ের নিকট ভুক্তভোগিরা সরাসরি দেখা করে প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বিধি কার্যকর করতে সবিনয় অনুরোধ জানানো হয়। সচিব মহোদয় সবার উপস্থিতে মাদরাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে ফোন করে পদোন্নতির বিষয়ে বাধা কোথায় জানতে চাইলে মাদরাসার ডিজি সাহেব প্রতিউত্তরে বলেছেন অত্র অধিদপ্তর এপর্যন্ত ২ বার কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগে সচিবের মহোদয়ের নিকট অনুমতি ও নির্দেশনা চেয়ে পত্র প্রেরণ করে যার তারিখ ০৬/১২/২০২০ইং ও সর্বশেষ ০৫/১০/২০২১ইং তারিখ।সচিব মহোদয় ০৫/১০/২০২১ইং তারিখে অধিদপ্তরের চিঠি খুঁজে বের করে সবার সামনে ফাইলে রেখে দেন এবং বলেন ২০শে জানুয়ারী ২০২২ ইং তারিখের মধ্যে আমরা মিটিং করে অর্ডার দিয়ে দিব। অথচ আজ পর্যন্ত কোন অর্ডার দেওয়া হয়নি। কারিগরি কলেজের প্রভাষকগন কিন্তু ০৬ গ্রেডে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ও ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রভাষক গনও ১৬ বছর পরে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন এবং ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক গনও ১৬ বছর পরে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন যা মিডিয়ার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। শুধু মাত্র মাদরাসার প্রভাষকগনেরই সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। আমার মনে হয় মাদরাসার প্রভাষকদের মানুষ বলেই গণ্য করা হয় না । একদেশে বসবাস, একই সিলেবাসে পাঠ দান অথচ পারিশ্রমিক ও মর্যাদা দেওয়াও ক্ষেত্রে এমন অমানবিক ও বিমাতা সুলভ আচরণ কি কখনো দূর হবে না । মাদরাসার প্রভাষকগনের ০৬ গ্রেডে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না দেওয়ায় তাদের চাকুরি জীবনে অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে। যেমন-
১। সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতা অর্জনকে পিছিয়ে দিয়ে চাকুরী জীবনের অভিজ্ঞতাকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
২। অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের জন্য সহকারী অধ্যাপকের প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে।
৩। অনেক সম্মানিত সিনিয়র প্রভাষক তাদের দীর্ঘ চাকুরী জীবনে বহু প্রতীক্ষিত সহকারী অধ্যাপক পদের সম্মান ও আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েই অবসরে যেতে হচ্ছে!
সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না পেলে সিনিয়ার প্রভাষক গ্রেড ০৮ ও গ্রেড ০৭ এ কর্মরত চৌকষ, মেধাবী, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রীধারী যোগ্য ও দক্ষতা সম্পর্ন প্রভাষকবৃন্দ আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ/ উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবে না, সুযোগ থেকে নিষ্ঠুর ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমমান এবতেদায়ী মাদরাসা প্রধান থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমমান দাখিল মাদরাসার সহ সুপার পদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ/ উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিগ্রী ও মার্ষ্টাস কলেজের সমমানের প্রতিষ্ঠান ফাজিল ও কামিল মাদরাসার গ্রেড ০৮ ও গ্রেড ০৭ এ কর্মরত প্রভাষকবৃন্দ শত যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকার পরেও অধ্যক্ষ/ উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবে না। এই মর্মে কালো আইন করা হয়েছে। যা খুবই অন্যায় ও অমানবিক। সিনিয়ার প্রভাষক এর সমগ্রেড ০৭ এ কর্মরত দাখিল মাদরাসার সুপার ও নিচের গ্রেডে ০৮ এ কর্মরত দাখিল মাদরাসার সহ সুপার অধ্যক্ষ/ উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে। আর উচ্চতর গ্রেড ০৮ ও গ্রেড ০৭ এ কর্মরত প্রভাষকবৃন্দ সুযোগ পাচ্ছে না। দুঃখ জনক হলেও সত্য যে নি¤œ পদ এবতেদায়ী প্রধান থেকে সহসুপার ও সুপার পদের অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যক্ষ/ উপাধ্যক্ষ হচ্ছে। এটি একটি হাস্যকর বিধি । তাহলে বুঝতে হবে মাদরাসা শিক্ষার মান কেথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে । কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকরা অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে ইন্টারমিডিয়েট ও ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবে আর ফাজিল ও কামিল মাদরাসার গ্রেড ০৮ গ্রেড ও ০৭ এ কর্মরত প্রভাষকবৃন্দ আলিম, ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবে না। ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে কর্মরত যোগ্য ও দক্ষ সিনিয়র প্রভাষকদের মান মর্যদাকে চরমভাবে অপমানিত করা হয়েছে।
অতএব, শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ঠ সবার নিকট সবিনয় অনুরোধ বর্তমান গ্রেড ০৮ ও গ্রেড ০৭ এ কর্মরত প্রভাষকদের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদনের সুযোগ দিতে জনস্বার্থে সংশোধিত নীতিমালার(২৩ শে নভেম্বর ২০২০ ইং) পরিশিষ্ঠ “ঘ” তে বর্ণিত কাঙ্খিত অভিজ্ঞতার বিধি পুনরায় সংশোধন ও ৫০% হিসাবে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে গ্রেড ০৬ এ সহকারী অধ্যপক পদে পদোন্নতির তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে একান্ত মর্জি হয়।
লেখক : আবু আফিফ, প্রভাষক, শাহ জুই কামিল মাদ্রাসা, পাংশা,রাজবাড়ী।