সাংবাদিকতার মূল উৎস আল কুরআন
– মুহাম্মদ ইসমাঈল
সংবাদ, সাংবাদিক, সংবাদপত্র আমাদের জীবনেরই একটি অংশ। একটি দেশ বা জাতি কখনো চলতে পারে না সংবাদ ছাড়া। এক সময় চিঠিপত্রের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করা হতো। টেলিগ্রামের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করা হতো। লোকের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করা হতো। এখন পৃথিবী অনেক এগিয়ে বিজ্ঞানের কল্যাণের কারনে এখন সংবাদ নানা শাখা প্রশাখায় বেরুচ্ছে। যেমন প্রিন্ট মিডিয়া কাগজের সংবাদ ইলেকট্রিক মিডিয়া রেডিও টিভির সংবাদ, এখন আবার শুরু হয়েছে সোশাল মিডিয়া ফেজবুকের সংবাদ। সংবাদ যাই হোক একজন সাংবাদিক যদি ঠিক থাকে তা’হলে সংবাদ পরিবেশন হয় সুষ্ঠভাবে।
কারণ একজন সাংবাদিকের ভুলে জাতি ধ্বংস হয় বা মরে যায়। একজন ডাক্তারের ভুলে একজন রুগিই মারা যায়। সুতরাং সাংবাদিকের গুরুত্বই বেশী। সাংবাদিকরা জাতির কর্ণধার। সাংবাদিকতার উৎস যে আল কুরআনে তা হয়তো আমরা অনেকে বোধগম্য নয়।
আমাদের সামনে একটি সংবাদ কিভাবে প্রচার করতে হবে, তাতে কি কি উপাদান থাকতে হবে, তার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করেছে আল কুরআন।
আধুনিক সাংবাদিকতা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকতার প্রফেসররা বলেন একটি সংবাদ বস্তুনিষ্ঠ, প্রচারযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তাতে ছয়টি প্রশ্নের জবাব থাকা আবশ্যক। এই ছয়টি প্রশ্নকে বোঝাতে বাংলায় ষড়ক এবং ইংরেজীতে SWs+H সংকেত ব্যবহার করা হয়।
সেই প্রশ্ন ছয়টি হলো:
১. What – কি হয়েছে?
২. When- কখন হয়েছে?
৩. Where – কোথায় হয়েছে?
৪. Who- কে ঘটিয়েছে?
৫. Why – কেন ঘটেছে?
৬. How – কিভাবে ঘটেছে?
কোনো সংবাদ শৈল্পিক দিক থেকে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য এই পাঁচটি প্রশ্নের বা তার অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব জানা থাকা আবশ্যক।
তবেই সংবাদটি বস্তুনিষ্ঠ ও প্রচারযোগ্য হয়। কারন এই প্রশ্নগুলোর বা তার অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব জানা না থাকলে পাঠকের মনে প্রশ্ন থেকে যায়।
সংবাদের এই পাঁচটি মৌলিক উপাদানের কথা আল-কুরআনে রয়েছে। কুরআন তার সব কটি উপাদানের ব্যাখ্যা দান করেছে। পাশ্চাত্যের সাংবাদিকতা বিশেষজ্ঞরা এ উপাদানগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়ার হাজার বছর আগেই আল-কুরআন একটি বাস্তব ঘটনায় বিবরণদানের মাধ্যমে এসব উপাদান সুস্পষ্ট করেছে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড’ নামক ম্যাগাজিনের ২৮ জুলাই ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক শাওয়াল ১৪০৬ হিজরী সংখ্যায় প্রফেসর আহমদ ইদরিস “আল কুরআনে আধুনিক সাংবাদিক তার উপাদান” বিষয়ের ব্যাখ্যা দান করেন। এ উপাদান গুলো রয়েছে হুদহুদ ও সোলাইমান (আ:) এর ঘটনায় এভাবে। তারপর হুদহুদ এসে বলল আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে দেয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার কাছে এক বিশাল সিংহাসন। আমি তাকে ও তার কাওমকে দেখতে পেলাম তারা আল্লার পরিবর্তে সূর্যকে সিজদাহ করছে। আর শয়তান তাদের কার্যাবলিকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিয়েছে এবং তাদের সৎপথ থেকে নিবৃত করেছে, ফলে তারা হিদায়াত পায় না। যাতে তারা আল্লাহকে সিজদাহ না করে যিনি আসমান ও যমিনের লুকায়িত বস্তুকে বের করেন। আর তোমরা যা গোপন করো এবং তোমরা যা প্রকাশ করো তিনি সবই জানেন। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহাআরশের রব বা মালিক।
(সূরা আন নামল, আয়াত ২২-২৬)
আল কুরআনে উল্লেখিত এ ঘটনার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে, আমরা এই আয়াতগুলো থেকে সাংবাদিকতা ও সংবাদ শিল্পের এমন সব উপাদান বের করতে পারি যা আধুনিক সাংবাদিক তার মূল ভিত্তিস্থলে পরিণত হতে পারে। সেই উপাদানগুলো হলো পাঁচটি (W) ও একটি (H) দিয়ে শুরু হওয়া ছয়টি প্রশ্নের জবাব।
আল কুরআনে হুদহুদের সংবাদে সাংবাদিকতার মৌলিক পাঁচটি উপাদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সেই পাঁচটি প্রশ্ন হলো এই:-
এক. Where:- কোথায় ঘটেছে = আমি সাবা থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি।
দুই. Who:- কে ঘটিয়েছে = আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম। হুদহুদ সেই নারীর নাম নেয়নি। কারন সে খবরটি শুনেছিল। তাই সে তার শ্রবনৈন্দ্রীয় এর ওপর নির্ভর করেছিল।
তিন. What :- কি ঘটিয়েছে = সে তাদের ওপর রাজত্ব করেছে। তাকে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন। আমি তাকেও তার কাওমকে দেখতে পেলাম তারা আল্লার পরিবর্তে সূর্যকে সিজদাহ করছে।
চার. Why:- কেন ঘটেছে = কারণ শয়তান তাদের কার্যাবলিকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিয়েছে এবং তাদের সৎপথ থেকে নিবৃত করেছে। ফলে তারা হিদায়াত পায় না।
পাঁচ. When :- কখন ঘটেছে = এ প্রশ্নটির জবাব সংবাদ পরিবেশন থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে। কারন হুদহুদ পাখি সোলাইমান (আ:) এর কাছে তখনই এসেছে।
আলোচ্য আয়াতে হুদহুদ যে সংবাদটি পরিবেশন করেছে তা শৈল্পিক দিক থেকে পরিপূর্ণ। তাই সংবাদটি শোনার পর শ্রোতার মনে কোনো ধরনের প্রশ্ন থাকে না। বরং মনে হয় সাংবাদিকতা বিশেষজ্ঞরা যেন আল-কুরআন গবেষনা করেই এই পাঁচটি প্রশ্ন তা থেকে বের করেছেন।