একটি পাখির স্বাধীনতা
রাজীব হাসান
রহিমের ছোট ছেলে ফাহিম। ফাহিম প্রতিদিন বাড়ির আঙিনার পাশে বড় বটগাছটার নিচে বন্ধুদের নিয়ে খেলা করে। প্রতিদিনের মত আজও সে বন্ধুদের সেখানে খেলা করছিল। অবশ্য সেদিন রাতে প্রচুর বৃষ্টি আর ঝড় হয়েছে। গাছতলাটা ডাল-পালা,লতা-পাতায় নোংরা হয়ে গেছে। ফাহিম তার বন্ধুদের নিয়ে খেলা করবে কিন্তু জায়গাটা ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। ফাহিমকে তার বন্ধুরা বলতেছে এখানে তো ময়লা কি করে খেলবি। ফাহিম বলে চলো আমরা সবাই হাতে হাতে ময়লা গুলো পরিষ্কার করে ফেলি। তাহলে আমরা খেলা করতে পারবো। ফাহিমের কথায় সবাই রাজি হয়ে যায়। সবাই মিলে ময়লা গুলো পরিষ্কার করতে শুরু করে। পরিষ্কার করার এক পর্যায়ে ফাহিম একটি ঝোপের আড়ালে একটি পাখির বাসা দেখতে পায়। বাসাটি বট গাছ থেকে নিচে পড়ে গেছে। ফাহিম বাসাটি হাতে নিতে ভেতরে ভাল করে দেখে তার ভিতরে একটা ছোট ঘুঘুর ছানা। ঘুঘুর ছানাটা দেখে ফাহিম খুব আনন্দিত হয়। পরক্ষণে ভাবে এতো ছোট বাচ্চা কিভাবে তার মাকে ছাড়া থাকবে। আশে পাশে মা ঘুঘুটাকে ও দেখা যাচ্ছে না। ফাহিম পাখিটাকে বাচাতে চায় যার কারণে সে পাখিটাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সেদিন আর ওদের খেলা হলো না।
সবাই পাখির বাচ্চাটাকে নিয়ে ব্যস্ত। ফাহিম পাখির বাচ্চাটকে খুব সুন্দর করে যত্ন করে একটি খাচার মধ্যে নরম বিছানা করে রাখে। নিজের হাতে পাখির ছানাটাকে খাইয়ে দেয়। এভাবেই সে প্রতিদিন পাখির ছানাটা নিয়ে খেলা করে। একটু বড় হলে ফাহিম ছানাটিকে যখন খাবার খাওয়াতে যায়, তখন ফাহিম খাবারটা নিজের মুখে নিয়ে হা করে থাকলে পাখির ছানাটা খাবার ফাহিমের মুখ থেকে বের করে খায়। এভাবেই দেখতে দেখতে পাখির ছানাটা বড় হয়ে গেলো। খাচার ভেতরে পাখিটা ছোটাছুটি করতো আর কত মিষ্টি সুরে ডাকতো ডাক শুনে বাড়ির সবাই খুব মজা পেত। সকাল হলেই সে ডাকাডাকি শুরু করে দিত। পাখিটা ফাহিমের খুব ভাল বন্ধুতে পরিনত হয়। কিন্তু যতদিন যায় ফাহিম ততো কেমন একটা হয়ে গেছে। ফাহিম ভাবে পাখিটা এখন বড় হয়ে গেছে। এখন সে উড়তে পারে নিজের খাবার নিজে খেতে পারে। তাকে ব বন্দি করে রাখাটা আমার উচিত না ।
পাখিরা মুক্ত আকাশ ভালবাসে। তাই একদিন ফাহিম সিদ্ধান্ত নেয় সে পাখিটিকে মুক্ত করে দেবে। একদিন সকাল বেলা ফাহিম ঘুম থেকে উঠে পাখির ছানাটিকে খেতে দেয় আর তার সাথে একা একা কথা বলে। ফাহিম বলে, তোকে অনেক দিন খাচার মধ্যে আটকে রেখেছি তোর অনেক কষ্ট হয়েছে না- রে। খোলা আকাশে ডানা মেলে উড়তে পারিস না। যা খুশি করতে পারিস না। সব সময় এই খাচার মধ্যে বন্দি হয়ে থাকতে হয়। কত কষ্ট হয় তোর তাই না। আমি তোর মত এভাবে একা একা বন্দি একটা ঘরে তো একদিন থাকতে পারবো না। আর তোকে কতগুলো মাস এই খাচার মধ্যে বন্দি করে তোর স্বাধীনতাটা আমি কেড়ে নিয়েছি। তবে আর রাখবো না তোকে আটকে। এখনি তোকে তোর চির ঠিকানা ওই খোলা আকাশে মুক্ত করে দেবে। তুই স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে পারবি। তোকে ছেড়ে দিলে আমার ও অনেক কষ্ট হবে তবে কিছু করার নেই। তোর স্বাধীনতাটা আমি হরণ করতে পারি না। তাই আজ থেকে তোকে মুক্ত করে দিলাম যা— এই বলে ফাহিম খাচার দরজাটা খুলে দিলো। পাখিটি ফুরুত করে আকাশের মাঝে উড়ে গেলো। যতদূর চোখ যায় ফাহিম পাখিটার দিকে চেয়ে আছে। এরপর হঠাৎ পাখিটি আবার ফাহিমের বাড়ির আঙিনায় ফিরে আসে। মুক্ত হয়েও সে তার বন্ধুকে ছেড়ে যেতে পারছে না। তাই ফিরে এসেছে।
আর এভাবেই ফাহিমের সাথে মাঝে মাঝে এসে পাখিটি দেখা করে যায়। আর মনের আনন্দে মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে যায়।