“যৌতুক একটি অভিশাপ” “যৌতুক প্রথা বন্ধ হোক”
শামীমা আক্তার : যৌতুক একটি অভিশাপের নাম। যৌতুক একটি ভয়াবহতার নাম। যৌতুক একটি নির্মমতার নাম। যৌতুক প্রথা নারীদের জীবনে ধ্বংস এবং মহাবিপদ ডেকে আনে। এই প্রথা অনেক নারীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনে। তাই এই ভয়াবহ প্রথা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজে এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে যে, এটি এখন একটি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ একটি মেয়েকে বিয়ে দিতে হলে অবশ্যই তাকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিতে হবে। যৌতুক ছাড়া বিয়ে যেন এখন কল্পনাই করা যায়না।
ধনী-গরীব-মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণীর মানুষই এখন যৌতুক প্রথায় আক্রান্ত। এটি এখন পারিবারিক সম্মানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানে যে যত বেশি যৌতুক নিয়ে বিয়ে করতে পারবে তার মর্যাদা ও গর্ব তত বেশি। বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে মেয়ের বিয়েতে বরপক্ষকে সাধ্যমতো যৌতুক দিয়ে থাকে। কিন্তু তাতে হীতে বিপরীত হয়। মানে মেয়ে সুখী হওয়ার পরিবর্তে অসুখী হয়। লোভী অনেক স্বামী আছে, যারা বিয়ের পর আরও বেশি যৌতুক দাবি করে। যৌতুক দিতে না পারলে তারা তখন স্ত্রীর উপর চালায় নির্মম নির্যাতন। শুধু স্বামী দ্বারাই নয়, গৃহবধূরা তাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন দ্বারাও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়। নির্মম নির্যাতন করে অনেক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়। গৃহবধূর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। যৌতুকের জন্য এমন নির্মভাবে গৃহবধূ হত্যার অনেক ঘটনা ঘটেছে। পত্রিকা এবং টেলিভিশনে এমন খবর আমরা প্রতিনিয়তই দেখতে পাই। যৌতুকের জন্য কত নারী যে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, কত নারীর যে সংসার ভাঙছে, কত নারীর জীবন যে ধ্বংস হচ্ছে, কত নারীর যে মৃত্যু ঘটছে, তার কোনো হিসাব নেই। অনেকে বলেন যে, যৌতুকের মামলাগুলোর বেশিরভাগই নাকি মিথ্যা মামলা। স্বামীদেরকে হেনস্তা করার জন্য স্ত্রীরা এসব মিথ্যা মামলা করে থাকে।
এটা আমি মানতে পারলাম না। মিথ্যা মামলা হয়তো কিছু আছে, তাই বলে বেশিরভাগ মামলা মিথ্যা নয়। কারণ, নারীরা যে যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে এবং তাদের মৃত্যু ঘটছে, এটা তো মিথ্যা নয়। যৌতুকের জন্যই নারীরা সবচেয়ে বেশি পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এটি খুবই দুঃখজনক বিষয়। যৌতুক প্রথা বন্ধ হলে এটা নিয়ে মিথ্যা মামলা করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।
যৌতুক প্রথা এখন আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে মিশে গিয়েছে যে, এই প্রথা থেকে বের হয়ে আসাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে সবাই চাইলে এই প্রথা থেকেও বের হয়ে আসা সম্ভব। সবার সচেতনতা, স্বদিচ্ছা এবং সহযোগীতা থাকলে যৌতুক প্রথা বন্ধ করা সম্ভব। সেজন্য সরকারের উদ্যোগ এবং সহযোগীতা প্রয়োজন। সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা সত্যি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এর ফলে আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ কমে এসেছে। সরকার যদি যৌতুক প্রথা বন্ধেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা বন্ধ করাও সম্ভব। সরকারের পাশাপাশি সবার সহযোগীতায় এবং আন্তরিক প্রচেষ্টায় যৌতুক প্রথা বন্ধ করা সম্ভব হবে। আমরা চাই যৌতুক প্রথা বন্ধ হোক। বাংলাদেশ যৌতুকের অভিশাপমুক্ত হোক।
বাংলাদেশ একদিন যৌতুকের অভিশাপমুক্ত হবে, আমরা সেই প্রত্যাশা করছি। বিঃদ্রঃ- অভিভাবকদের নিকট আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিবেন না, এবং ছেলের বিয়েতে যৌতুক নিবেন না প্লিজ। তাহলেই যৌতুক প্রথা বন্ধ করা সম্ভব হবে। আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, “আমরা যৌতুক দেবও না, এবং যৌতুক নেবও না”।
লেখিকা – শামীমা আক্তার সাংবাদিক – দৈনিক সরকার পত্রিকা