কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল পূর্ব ধনিরাম গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ছবিজন বেওয়া (৭৫)। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। স্বাধীনতার আগে পাশের গ্রামের আব্দুল গফুরের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ছয় মাস স্বামী সংসার নিয়ে ভালোই ছিলেন ছবিজন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! হঠাৎ একদিন কালবৈশাখী ঝড় তার জীবনকে ভেঙে চুড়মার করে দেয়।
স্বজনরা জানান, বিয়ের ছয় মাস পর ওই ঝড় থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকা সিন্দুকের পাশে আশ্রয় নেন ছবিজন। কিন্তু সেই সিন্দুকটিই ছবিজনের মাথায় পড়ে গুরুতর আঘাত পান তিনি।
আঘাতের কারণে ছয় মাসের মধ্যেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ছবিজন। তার বাবা শবজন আলী তখন মেয়ে ছবিজনের সাধ্যমতো চিকিৎসা করালেও দৃষ্টিশক্তি আর ফিরে আসেনি। তিনি অন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বামী আব্দুল গফুর তাকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করেন। আর অন্ধ ছবিজনের ঠাঁই হয় গরিব অসহায় বাবার বাড়িতে।
বিয়ের ছয় মাসের মাথায় স্বামী সংসার হারানোয় পাথর হয়ে যান ছবিজন। কারো সাথে তেমন কথাবার্তা বলতেন না তিনি। চুপচাপ থাকতেন সব সময়। বাবা শবজন আলী পুনরায় মেয়ের বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও মেয়ের দৃষ্টিশক্তি না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর পর বাবাও মারা যান। এরপর শোকে ও দুঃখে বাকশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি। একপর্যায়ে দৃষ্টি ও বাকশক্তিহীন ছবিজন বেওয়ার আশ্রয় হয় ছোট ভাই আসমত আলীর বাড়িতে। ৩৫ বছর ধরে ভাইয়ের সাথেই আছেন তিনি। গরিব দিনমজুর ভাইয়ের সংসারে অভাব অনটনে দীর্ঘ সময় কাটলেও দৃষ্টিহীন ও বাক প্রতিবন্ধী ছবিজন বেওয়ার ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা বা বৃদ্ধভাতা।
শনিবার সকালে ছবিজনের খোঁজে হাসমত আলীর বাড়িতে গেলে স্থানীয়রা জানান, ৭৪ পেরিয়ে ৭৫-এ পা দিয়েছেন ছবিজন বেওয়া। এই বয়সে তিনি চোখে দেখেন না, কথাও বলতে পারেন না। সব সময় মাটিতে বসে থাকেন একা একা। ছবি তুলতে চাইলে কয়েকজন মিলে লাঠিতে ভর করে দাঁড় করানো হয় তাকে।
ছবিজনের ভাতিজা ফজলু জানান, তার ৭৫ বছর বয়সের অন্ধ ফুফু কোনো সরকারি সাহায্য পান না। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) নেই।
ফজলুর দাবি, ফুফুর না হয় আইডি কার্ড নেই, আমার বাবা আসমত আলীর তো আইডি কার্ড আছে। তার বসয় ৭০ বছর। বাবা ও ফুফুর ভাতার জন্য চেয়ারম্যান মেম্বরের পেছনে অনেক ঘুরেছি, ভাতা পাইনি। গরিব মানুষের কথা কেউ শোনে না।
এ প্রসঙ্গে বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী মিয়া জানান, ছবিজন বেওয়ার ভাতার ব্যাপারে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে তার ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।