হারুন আল রাশিদ Harun Al Rasid কবি, ছড়াকার ও কথাসাহিত্যিক। ১৯৮১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন ভোলায়। বাবা- আবদুল হান্নান। মাতা- মোসাম্মদ নাজমা বেগম। দুই ভাই,দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি ব্রজ মোহন বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল থেকে বাংলায় অনার্স করেন। তার স্ত্রী রেহেনা আক্তার। ছেলে নাইফ হাসান। তিনি বর্তমানে তরিনো, ইতালিতে বসবাস করছেন। তার রক্তের গ্রুপ বি-পজিটিভ।
তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ: মুদ্রাদোষ, (ছড়া ও কিশোর কবিতা ১৯৯৯), বাড পাবলিকেসন্স। একলা পাখি, (ছড়া ও কিশোর কবিতা ২০০১), মসলিন প্রকাশন। স্মৃতিনদী নিরবধি-১ম খন্ড (স্মৃতিকথা ২০১৯), বই পল্টন। স্মৃতিনদী নিরবধি-২য় খন্ড, (স্মৃতি কথা ২০২০) সাহিত্য বাড়ি প্রকাশন। দুঃখ করো না কান্না করো না মেয়ে, (ছড়া ও কিশোর কবিতা ২০১৯), বই পল্টন। ভালোবাসলেই পৃথিবী, (কবিতা ২০১৯) বই পল্টন।
লেখকের সাথে যোগাযোগ মোবাইল ০০৩৯৩২৭৪৫৩৮৬৪২, ই-মেইল alrasid449@gmail.com, ফেসবুক : হারুন আল রাশিদ।
আমরা বাংলাদেশ ভূমি’র পাঠকদের জন্য এই গুণীর কবিতা লেখা কিছু কবিতা উপস্থাপন করলাম। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
এক.
মহা সম্রাজ্ঞী
হারুন আল রাশিদ
(একটা বহতা নদীর প্রেরণায় প্রসবিত কবিতা)
স্পষ্ট আঁধারের সঙ্গী ছিলাম কিছুদিন
তার অদ্ভুত আচরণে ভেতরে জড়তা ছিলো
তবুও সুগভীর মমতার বসতি পাশাপাশি
পালং নদীর মতো প্রবাহিত ছিলো প্রেম
ফাল্গুন নিশীথের চাঁদ উপহার দেবো বলে
লক্ষ তারকার সাথে গোপন বৈঠক হয়
একদিন টের পেয়ে যাই আঁধারের বিক্ষত স্বভাব
বুঝানোর চেষ্টা করি নিলীমার সৌন্দর্য
অগণিত পাতার শিহরণ, সন্ধ্যার জোনাকি
কস্তুরি অবহেলা করে উন্মাদ অন্ধকার
অতঃপর হাঁড়িটা উপড়ে ফেলি
গড়িয়ে যায় অতীতের আবর্জনা
ফিরে আসি আপন সত্ত্বায়
অস্তিত্ব অবমুক্ত হলেই
ভার বিহীন জীবনের চাকা
দ্রুত লয়ে ছুটতে ছুটতে
পেয়ে যায় হিরক রাজ্য
আমি এখন বিশাল সাম্রাজ্যের
মহা সম্রাজ্ঞী।
দুই.
রূপালী তরঙ্গের অথৈ সমুদ্রে
হারুন আল রাশিদ
গোলাপটাকে ছিন্নভিন্ন করি
যৌক্তিক উত্তেজনায়
নির্জন রাতে পাশ কেটে যাই চাঁদের মমতা
ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিই ভাসমান মেঘ।
আমাকে অবমুক্ত করি জাগতিক পরিক্রমায়
স্বপ্নেরা হাঁটতে থাকে গুটি গুটি পায়ে।
হে সময়! পুষ্প পরিস্ফুট করো
প্রভাতি পরিচ্ছন্নতায়
হে অরণ্য! সুরভিত হও
মুহূর্মুহূ প্রেমে।
যে বাঁশি সুরেলা হবে মহাকালে
তার জন্য সত্ত্বা ডুবিয়ে দেবো
নিবিড় মুর্ছনায়
রূপালী তরঙ্গের অথৈ সমুদ্রে।
দুই.
রাত্রির পকেটে চন্দ্রোৎসব
হারুন আল রাশিদ
পল্লবে ঝরুক সৌখিন জোছনা
হয়ে যাবো বিনয়ী বাতাস
সঞ্চিত করে রাতের আরাধনা
রেখে দেবো ঘাসের অভিজাত সংসারে।
যে আকাশ সমুদ্রের মুখোমুখি
এঁকে যায় জ্যামিতিক সুর
তার কাছে গুঁজে দেবো
সৈকত ভাঁজ করে
যে নদী বহমান হতে হতে
উজানে নির্মাণ করে মুক্তোর হাট
আমি তাকে বাহবা দেবো
শৈল্পিক বিন্যাসে।
এখন রাত্রির পকেটে চন্দ্রোৎসব
তার সাথে হবে রোজ জোনাকি আলাপ।
তরিনো
তিন.
অনন্ত প্রেমের গালিচায়
হারুন আল রাশিদ
তাড়াহুড়ো করে স্টেশনে এলাম
পাঁচ মিনিট বাকি আছে ট্রেন ছাড়তে
জেনেভার পৃন্সিপা থেকে
যেতে হবে মিলান পর্যন্ত
সেখান থেকে তরিনো
ইটালিতে আমার বর্তমান ঠিকানায়।
বগিতে বসে আছি ভাবনাহীন
বাঁ দিকের জানালার পাশে।
এখান থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে
পৃন্সিপা স্টেশনের অপরিচিত মানুষের
গন্তব্যে যাওয়ার স্বাভাবিক ব্যস্ততা।
আর মাত্র দুই মিনিট বাকি আছে
অল্প বয়সি দু’জন তরুণ-তরুণী
হাতে হাত রেখে এগিয়ে আসছে
আমাদের ট্রেনের দিকে।
সময়ের স্বল্পতায় মেয়েটি পা রাখলো সিঁড়িতে
ডান হাত ধরে আছে প্রেমিক পুরুষ
আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন হলো
ভালোবাসায় মোড়ানো দুটি হাত।
ট্রেন ছেড়ে দিলো
সাথে সাথে হাঁটতে লাগলো যুবক
দুই জোড়া চোখ অপলক চেয়ে আছে
এক সময় গতি বেড়ে গেলো
হাতের ইশারায় ইতিহাস হয়ে গেলো সময়।
একটি বারের জন্যও বসলো না মেয়েটি।
আমি কাছাকাছি বোবা দর্শক
ফেলে আসা স্টেশনের দিকে
বারবার সকরুণ চাউনি তরুণীর
এক সময় চোখ বন্ধ করলো সে
আবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আকাশে।
আহা! ভেতর থেকে যেনো
হৃৎপিণ্ড বেরিয়ে আসতে চাইছে
বিচ্ছেদ ফুটে আছে অবয়বে
ভালোবাসার রঙ বুঝি এমন-ই হয়!
ইচ্ছে করছে আমার সমস্ত কবিতা
উৎসর্গ করে দেই
অনন্ত প্রেমের গালিচায়।
চার.
বিপরীত ফর্মুলা
হারুন আল রাশিদ
মনোনিবেশ করো মধ্যহ্ন আয়োজনে।
যদি বিঘ্নিত হয় রোদের নিপূণতা
সর্তকতা প্রভাতি কারিশমায়
চিন্তিত চঞ্চল পাখির সমাজ
যদি সময়ের ফুল বিকশিত হয় বিলম্বে
আমি হবো মহাকাশের মুখোমুখি।
যদি আস্ফালন দেখি শেয়ালের মুখে
ছেয়ে যায় চারিদিকে বেড়ালের ভয়
রজনী ক্রন্দন করে ডুবে গেলে চাঁদ
যদি নক্ষত্র প্রেরণ করে অদ্ভুত চিঠি
আমি হবো সুবিশাল ধরনীর মুখোমুখি।
মনোনিবেশ করো মধ্যহ্ন আয়োজনে
সময়ের ব্যবধানে এনাউন্স হবে
মানব জমিনে বিপরীত ফর্মুলা।
পাঁচ.
নক্ষত্র করাঘাতে
হারুন আল রাশিদ
(প্রিয় কবি রিতা ফারিয়া রিচি’কে)
মননের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ফসলি সম্ভাবনা
কোটি মানুষের গহীনে শিহরিত হয় বসন্ত আচরণ
বুকের সমুদ্রে দোল খায় পৃথিবীর অবারিত বৈচিত্র্য
সৌন্দর্যের বিপরীতে লুকায়িত থাকে
কবিতার আগ্নেয়গিরি
লেনাদেনা চুকে দেয় বহুকাল আগে অচল আধুলির
পারিজাত উন্মুক্ত করে নক্ষত্র করাঘাতে
সকালের সুষমায় নতজানু হয় নির্লিপ্ত মুখে
জেগে থাকে প্রত্যহ প্রত্যুষের প্রত্যাশায়
প্রতিভার স্নিগ্ধতায় অগণিত সূর্যের ঘোরাফেরা
অপেক্ষার দুয়ারে বসা সুবাসিত মাঠ
মেঘ কেটে উল্লাসে ছুটে চলে রাত জাগা চাঁদ৷
ছয়.
স্বভাবের ভিন্নতায় নির্বাচিত করো বন্ধু
হারুন আল রাশিদ
যদি আগুনের কাছে হাত বাড়াও
তোমাকে দগ্ধ করবে
যদি গোলাপের কাছে হাত বাড়াও
সুরভি ঢেলে দিবে
স্বভাবের ভিন্নতায় নির্বাচিত করো বন্ধু
কেবল বাইরের চাকচিক্যতায় আহলাদি হয় কাপুরুষ
ফরজ সালাত সমাপ্তিতে
মুমিন করে রিজিকের তালাশ
মুনাফেকি অন্তরে দোল খায় রাতের নিস্তব্ধতা
ছোপ ছোপ অন্ধকার
যাকে বিমুগ্ধ করে মসজিদের আজান
সে চায় গোলাপের সান্নিধ্য
নিটোল সৌরভ
দুর্ভাগা মন উড়ায় হতাশায় ফানুস
অহেতুক কাকলিতে ফুরায় জিন্দেগানি
অস্তিত্ব বিলীন করে কুফরি আগুনে।
বাহ্ প্রতিটি কবিতা চমৎকার হয়েছে৷