কবি মোঃ আমির আলী —–
কবিরা স্বভাবতই মানবতাবাদী হন। হয়ে থাকেন মানব কল্যাণে নিবেদিত ও উচ্চকিত কণ্ঠস্বর।তবে বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকগণ হাতে গোনা দু‘চার জন ব্যতিত প্রায় সবাই তাঁদের মৃত্যুর আগে মূল্যায়িত হওয়ার ঘটনা ঘটেনা। নিভৃতচারণকেই বেছে নিতে হয় এসব সাহিত্যের সাধকদের। বাংলাদেশ ভূমি’র সাহিত্য পাতা নিজেদের সামর্থ ও সাধ্যকে বিবেচনায় রেখেই এসব ঢাঁকাপড়া ও নিভৃতচারী কবিদের তালাশ করে থাকেন।
আমরা আজকে এমন একজন কবি ও তাঁর কবিতা উপস্থাপন করবো তাঁর নাম মোঃ আমির আলী । মোঃ আমির আলী 1958 সালে জন্মেছেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শেখপাড়া বিহারিয়া গ্রামে। পিতা মৃত জরিফ মন্ডল, মাতা মৃত সারেজান নেছা। কবি শৈশবেই অর্থ্যাৎ ৫/৬ বছর বয়সে মাতৃহারা হন। পিতৃস্নেহে লালিত পালিত কবি 1981 সালে রাজবাড়ী জেলার পাংশা সরকারী কলেজ থেকে বি.এ (পাস)করেন। তবে সেকালে শেখপাড়া বিহারিয়া গ্রামে তিনিই প্রথম বি.এ পাশ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কর্মজীবনে তিনি বিলজানি দাখিল মাদরাসায় জেনারেল শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে অবসরে যাবার আগে তিনি ওই মাদরাসাতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। কবির জীবনে কী কখনো অবসর যাপন সম্ভব? কখনোই নয়। তিনি এখন সাহিত্য সাধনায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। লিখে চলেছেন নিরবধি। আমরা এই কবির সার্বিক সফলতা কামনা করি। বাংলাদেশ ভূমি’র পাঠকদের জন্য আমরা এখানে কয়েকটি কবিতা উপস্থাপন করলাম। আশা করছি পাঠক তা পাঠে তৃপ্ত হবেন।
কবির ফেসবুক আইডি Amir Ali মোবাইল নাম্বার 01729689755 কবির সাথে সাক্ষাৎকামীরা কুষ্টিয়ার খোকসা শহরে গিয়ে কল করতে পারেন। সাহিত্য রসিকগণ নিশ্চয় আনন্দিত ও উপকৃত হবেন তাঁর সাক্ষাৎ লাভে।
এক.
যত আলো নিভে যাক
সখি আর কটা দিন বাঁকি
এ ভূবন ছেড়ে যেতে হবে চির তরে চলি;
চিরতরে হারিয়ে যাবে নীল আসমান
তোমার বাঁকা ঠোঁটের মিষ্টি মধুর হাঁসি।।
ভোর হলে আসবে না কানে ভেসে
আজানের ধ্বনি আর পাখির কাকলি;
থেমে যাবে হৃদয়ের স্পন্দন ধ্বনি
দু-হাত তুলি বিদায় জানাবে ধরিত্রী।।
আমিতো হাফিজ না, কি়ংবা খৈয়াম নজরুল রবি
থাকবেনা কোন স্মৃতির ফলক, শুন্য রবে সমাধি;
স্বার্থপর আমি, নিজ বাগিচায় গাছে ঢেলেছি বারি
দিবা শেষে বিকেলে দেখেছি বির্বন গাছের সারি।।
ক্ষমা চাইব না , তোমরা হাঁসবে বিদ্রুপের হাঁসি
অনুরোধ, অন্ধকার কে বলো ত্বরা অন্ধকারে দিক ঢাঁকি;
যত আলো নিভে যাক ঘুমতে চাই আমি-
আলো আঁধারের খেলায় হৃদয় দহনে জ্বলি।।
দুই.
আমি হাজারো বছরের বাংলা
আমি হাজার বছরের বাংলাদেশ
কত যে বয়স নিজেও জানিনা।
যদিও বিভিন্ন কালে বিভিন্ন অজুহাতে
আমার নামের পরিবর্তন হয়েছে
পরিবর্তন করা হয়েছে আমার দেহটাকেও
মরা শব নিয়ে যেমন খেলা করে গিধর শুকুনী।
আমি খেলনা হয়েছি শত শত বার
তবু মুখ খুলে করিনি প্রতিবাদ,
শুধু কেঁদেছি বার বার বোবা পশুর মতন
আমার না খাওয়া লাশ্চিত বঞ্চিত সন্তানের জন্য।
রাজা লক্ষনকে তাড়িয়ে এলো দুর্র্ধষ বখতিয়ার
গেল সালতানাত, এলো মোঘল পাঠান,
তবুও দিবা রজনী আমার ক্ষুধার্ত সন্তানের কাতর ধ্বনি
আমি শুনে চলেছি বার বার হাজার বার।
রক্তে শিক্ত হয়ে ইংরেজকে জানিয়ে ছিলাম সালাম
বিনিময়ে বঙ্গঁ হতে হলেম পূর্ব বাংলা,
শুনেছি আমার ধর্ষিতা সন্তানের আর্তনাদ
দর্শন করেছি উলঙ্গঁ কন্যার বিভষৎ মূর্তি।
স্বাধীনতার ধুয়া তুলে আমারই ছেলেরা
আমাকেই ভাগ করে নিল পূর্ব আর পশ্চিমে,
এবার আমি চিৎকার করেছিলাম-
তবুও ওরা শুনেনি আমার ফরিয়াদ।
ধর্মের নেশায় বিভোর মাতাল ওরা
হাজার মাইল ব্যবধানে গড়িলো মিতালী,
আমি বুক ভরা ব্যাথা নিয়ে নিথর পাথর
শুনে চলেছি লাশ্চিত বঞ্চিত সন্তানের আর্তনাদ।
স্বাধীনতার নেশায় বিভোর আমারই ছেলেরা
বুকের তাজা রক্তে আমাকে রাঙ্গিয়ে বানালো জয় বাংলা,
ভাই হয়ে ভাইকে হত্যা করে পূণর্বার
আমাকে আবার বানালো সোনার বাংলাদেশ ।
গণতন্ত্রের জোয়ারে আমাকে আবার কাঁদালো
নিজ সন্তানের রক্তে গোসল করে পবিত্র হলাম
তবু আহ নিশি শুনি সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের আহাজারি
ধর্ষিতা কন্যার আর্তনাদ, না খাওয়া ছেলের কাতর ধ্বনি।
আমি হাজারো বছরের এই বাংলা
আমার বয়স কত আমি নিজেও জানিনা।
তিন.
নিলর্জ্জ কে ?
তুমি, ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে
নিলর্জ্জের মত আবার আমাকে উলঙ্গ করেছো।
নিজের কবিত্ব জাহির করতে গিয়ে
আমার ধর্ষনের বিভষৎ ইতিহাস পুনঃরায় বলেছো।
সমাজের শিরমনিদের দৃষ্টি কাড়তে
আবার আমার লজ্জার আবরণ খুলেছো।
আমার জন্য তোমার প্রাণ ব্যাথিত
আমি অস্বীকার করিনা-
আমার দেহের বিকৃত ব্যবহারের জ্বালা
তোমাকেও বন্ধুর মত জ্বালায়
আমি কস্মিন কালেও ভুলব না।
তোমার মিঠে ভালোবাসা চিরকাল
আমার সমগ্র সত্ত্বায় বিরাজ করবে।
তবে আমাকে বাঁচাবার পথ তোমার জানা নেই
আমি জানি হে বান্ধব তুমি কাগুজে দার্শনিক।
তোমাকে বলব তুমি জেনে নিও
আমার সমগ্র অঙ্গের পরাজয়ের ইতিহাস হতে
কি ভাবে কোথায় হারিয়েছি আমার অধিকার।
আমার অনুরোধ তুমি জেনে নিও
আমার ব্যবহৃত জরায়ু কেন মূল্যহীন
আমার উন্নত বক্ষ যুগল কেন পরাধীন
আমার সন্তান পালনের শ্রম কেন মূল্যহীন।
বুর্জোয়া সমাজের পূঁজির ঝুপ কাষ্ঠে
আমরা অধিকার হারা বহুযুগ বহুদিন।
আমার ব্যবহৃত অঙ্গেঁর বিকৃত গান না খেয়ে
তুমি বল, কি ভাবে , কত দিনে
আমরা মুক্তির ইতিহাস রচনা করব
বুর্জোয়া শাসিত পূঁজির সমাজে।।
চার.
কবি ও কবিতা
আমি সেই কবিতা লিখব ও পড়ব
যে কবিতা বলবে আমার বাঁচা আর বাড়ার কথা।
আমি সেই কবিতা স্মৃতিতে আজীবন ধরে রাখব
যে নিশ্চয়তা দেবে আমার চিকিৎসার।
আমি সেই কবিতা আজীবন পূজো করব
যে কবিতায় থাকবে আমার লজ্জা ঢাকার কথা।
আমি সেই কবিকে ভালোবাসব
যে কবি আমার শিশুর বাঁচার অধিকার দাবী করবে।
আমি সেই কবিকে শেষ রক্তটুকু উপহার দেব
যে কবির কবিতায় মাথা গুজবার ব্যবস্থা থাকবে।
আমি সেই কবিকে আমার কবি বলে ভাবব
যে কবি লিখবে আমার শ্রেণীর অধিকারের দাবী।
সেই কবি ও কবিতাই হবে আমার একান্ত
যে কবি ও কবিতা আমার শ্রেণীর মুক্তির দাবী রাখে।
পাঁচ.
আহ্বান
নগ্ন সভ্যতার বিকালংগ সন্তানেরা শোন
শ্রেণীর অধিকার হেরেও কেন পূজিঁ দাসত্ব টানো।
শ্রেণীতে শ্রেণীতে বৈরিতা বেড়েছে যুদ্ধ হয়েছে শত
শোষন ত্রাশনের জোয়াল ছিরেছে ইতিহাস হতে জান।
যত বাড়িছে পূজিঁর দৌরাত্ব, শোষণ বাড়িছে তত
দাসত্বের শৃংখল তোমাদের ধরিছে অক্টোপাসের মতো।
শৃংখলার নামে নব নব আইন তৈরি হয় রাত দিন
সে আইন তোমারি পায়ে পরায় উল্টো জিঞ্জির।
শোষনের তরে গনতন্ত্র আর সামাজিক অধিকার
খোলা বাজার আর বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব গাল ভরা বুলি তার।
শান্তির নামে শোষনের বোঝা চাপায় তোমার ঘাড়ে
জাগবে নাকি তবু তোমরা শ্রেণীর মুক্তির তরে।
হিসাবের খাতায় শ্রেণীর সংখ্যায় তোমাদের পাল্লাই ভারী
জাগিয়া উঠো শ্রেণীর চেতনায় তোমরাই হবে জয়ী।
আমরাও মানুষ বলিয়া একবার দেনা হুংকার
শাসকের হাতের শোষনের জিঞ্জির ভেঙ্গে হবে চুরমার।
স্যারের কবিতা গুলো অসাধারণ, আমি নিয়মিত স্যারের ফেসবুক স্টাটাস গুলো পড়ি, খুব ভাল লাগে।