মমিনুল ইসলাম:ক্যাসিনো খেলায় মেতেছে এনটিআরসিএ,তীক্ষ্ম নজর নেই শিক্ষামন্ত্রীর–
৪০,৪২ নম্বরধারীদের এনটিআরসিএ সুপারিশ করেছে।তবে এর চেয়ে অনেক বেশি নম্বরধারীদেরও সুপারিশ করেনি এনটিআরসিএ।কেউ প্রমাণ চাইলে সেটাও দেওয়া সম্ভব।কেননা তার সিলেক্টেড কপি আমার কাছে আছে।আরো অনেকেরই এরূপ পিক এণ্ড চুজ পদ্ধতির কারণে সুপারিশ করা হয়েছে।অথচ অনেক বেশি নম্বরধারীদেরকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়নি।বিষয়টি হাস্যকর।জাতি নিশ্চয়ই এরূপ ক্যাসিনো খেলা শিক্ষাখাতে দেখতে চায় না।যারা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন,তারা বলবে ঘুষবিহীন নিয়োগ।একজন বেকার কোনোমতে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেই মনে করে তার সাথে কোনো বৈষম্য করা হয়নি।সে চিন্তাও করে এনটিআরসিএ তার বিধিমালায়ই ভুল করে রেখেছে।তারা কিভাবে একটি নিয়োগের জন্য শত শত আবেদনের সুযোগ করতে পারে? এ দেশে শিক্ষা ক্যাডার থাকলেও এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান হয়ে আসছে এডমিন ক্যাডার থেকে।এটাও বৈষম্য।প্রাইমারী শিক্ষা স্তরের নিয়োগেও আমলাদের দৌড়াত্ব।এখানেও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের জায়গাটা পূরণ করেছে এডমিন ক্যাডারের বিজ্ঞরা।এখানে বিসিএস ক্যাডাররাও তেমন কোনো শক্ত ভূমিকা নিচ্ছেন না।ফলে বৈষম্য বেড়েই চলছে।আমলাদের দাপটে দিশেহারা সাংসদরাও।সরকারের সাথেও মনে হয় আমলাদের কোল পলিটিক্সনীতি চরমে পৌঁছেছে।
অনিয়ম করেও আমতান্ত্রিক জটিলতায় সুপারিশ করে এক শ্রেণির মনে জায়গা করতে চায় আমলারা।এতে সুপারিশপ্রাপ্তরা খুশি হয়।তাদের নিয়োগকে আমরা নেতিবাচকভাবে দেখতে পারি না।তবে শত বৈষম্য সৃষ্টি করে সুপারিশ করলেই যদি একটা শ্রেণি মহাখুশি হয়,তবে সেটা জাতির বৃহৎ স্বার্থে নয়,সেটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক কথা।জাতির বৃহৎ স্বার্থকে জ্বলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থে কথা বলা ঠিক নয়।নিজের সুপারিশ করা হলেও সেখতে হবে বাকিদের সাথে বৈষম্য করা হল কি না।কেননা সবাই জনগণের টাকায় পড়াশোনা করে এসেছে।তাই জনগণ স্বার্থে অন্ততপক্ষে হক কথাটা বলা জরুরী।
বিসিএসসহ এমন কোনো পরীক্ষা নেই যেখানে কেউ কম নম্বরধারীরা বেশি নম্বরধারীদের চেয়ে আগে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।সুপারিশ যদি মেধার ভিত্তিতেই হবে,তবে এতো গড়মিল কেন হল?এটা তো বড় ক্যাসিনো খেলা?এদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।
জুয়া খেলার মতো কখনো আবেদন করা অন্যায়।
একাধিক আবেদন বাদ রেখে ব্যাংকের মতো একটি আবেদনে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
ইনডেক্সধারীদের বদলির জন্য আগে পদ পূরণ করে নতুনভাবে শূণ্যকৃত পদের চাহিদা নিয়ে সর্বমোট শূণ্যপদের বিপরীতে শুধুমাত্র ইনডেক্সবিহীনদেরই সুপারিশ করতে হবে।
১-১২তমদের পৃথক ব্যাচ ভিত্তিক সুপারিশ করতে হবে।
১৩তম- বাকিদের আলাদা সুপারিশ করতে হবে।
ব্যাচ ভিত্তিক নিয়োগের জন্য সুপারিশ না করে এনটিআরসিএ মহা ভুল করেছে।এতে জটলা বেশি হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় কিভাবে এনটিআরসিএ’র এমন শিক্ষা বৈষম্য মানতে পারেন?এনটিআরসিএ কি বেকারদের সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান নাকি কর্মজীবীদের জন্য সুপারিশকারী প্রতিষ্ঠান?আমরা তালিকা চাই কত শতাংশ বেকাররা সুপারিশ পেয়েছেন আর কত শতাংশ এমপিও শিক্ষকরা পুণরায় সুপারিশ পেয়েছেন।আমাদের কাছে মনে হয়েছে ৬৫-৭০% সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ইনডেক্সধারীরাই।
আবার জাল সনদধারীদের কোনো তালিকায় আজ অবধি চূড়ান্ত করা হয়নি।এতে কি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে?আমরা মনে করি এ দেশে প্রায় ৫০ হাজার জাল সনদধারা শিক্ষক আছেন।সরকার সুনির্দিষ্টভাবে এদের তালিকা প্রণয়ের জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে তাগিদ দিবেন এ প্রত্যাশা করছি।জাল সনদধারীরা এ দেশের শত্রু।তাদের চাকরিচ্যূত করে বেকার শিক্ষিতদের সুপারিশ করতে হবে।এতে ক্রমান্বয়ে নিবন্ধিতরা সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন।ইনডেক্সধারীদের আলাদা নিয়োগ দিয়ে নতুনদের জন্য প্যানেল করেও নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
ইনডেক্সধারীদের আলাদাভাবে আবেদনের সুযোগ না রেখে এনটিআরসিএ ইনডেক্সবিহীনদের সাথে চরম প্রতারণা করেছে।এ বৈষম্য ও প্রতারণাকে দেখলেন না শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়।ইনডেক্সধারীরা অনেকের অনেক বেশি নাম্বার আছে।তারা আরো ভালো প্রতিষ্ঠানে আসার জন্য বা নিজেদের এলাকায় বদলি হওয়ার জন্য অনেকটা সমানুপাতিক হারে আবেদন করায় প্রতিযোগী আরো বেড়েছে।ফলে কম নম্বরধারীরা ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।তাদের কখনো নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।এটা এনটিআরসিএ আগে থেকেই জানে।আর জানে বলেই এরূপ ক্যাসিনো খেলায় মেতেছে যার ফলে শত শত কোটি টাকা পিক এন্ড চুজ পদ্ধতিতে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ইচ্ছেকৃতভাবেই ব্যাচ ভিত্তিক নিয়োগ না দিয়ে এরূপ বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ইনডেক্সধারীরা নতুন প্রতিষ্ঠান চলে গেলে ঐ প্রতিষ্ঠানে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক শূণ্যতার সৃষ্টি হবে যা এনটিআরসিএ এ মুহূর্তে পূরণ করতে পারবে না।
ইনডেক্সধারীরা চলে যাওয়ায় বিষয় ভিত্তিক যে পদ মুহূর্তেই শূণ্য হয়ে যাবে তাদেরকে একই সময়ে সুপারিশ করা সম্ভব না হওয়ায় বিপাকে পরবে হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।প্রতিষ্ঠান প্রধানের ঐ শিক্ষককে পছন্দ নাও হতে পারে কেননা সকল শিক্ষককে আগে ঠিকমতো ভাইভা নেওয়া হয়নি।শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার সাহায্যে একজন শিক্ষকের বহুগুণ যাচাই করা সম্ভব। ভুলভাবে শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষাঙ্গনের ফলাফল খারাপও হতে পারে।শিক্ষার্থীরা সকল শিক্ষককে পছন্দ নাও করতে পারেন।
তাছাড়া মুহূ্র্তেই কঠিন বিষয়গুলোর পদ শূণ্য হলে স্ব স্ব শিক্ষাঙ্গনে ঐ মুহূর্তে ক্লাস করানো কঠিন হয়ে যাবে।
ধরুন গণিতের শিক্ষক চলে গেলেন।তিনি গত পাঁচ বছর আপনার প্রতিষ্ঠানে ছিলেন।এখন পুরোপুরি নতুন একজন যদি আসেন, তার নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতেও অনেক সময় লেগে যাবে।এ ঘাটতি কত দিনে পূরণ করবেন এনটিআরসিএ সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকলেও বছর বছর বা একই বছরে একাধিকবার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ থেকে থাকবে না।
প্রতি বছর ইনডেক্সধারীরা এরুপে সুপারিশ পেলে শুধু সুপারিশকৃতরাই প্রতি বছর সিংহ ভাগ পুনঃপুন সুপারিশ পাবে যা বেকারদের সাথে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে চরম প্রতারণার সামিল।
সুতরাং ইনডেক্সধারীদের আলাদা বদলির ব্যবস্থা রেখে দ্বিতীয় ধাপে ফল প্রকাশের ব্যবস্থা করা উচিৎ।এতে হাজারো শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণ হবে।বৈষম্য কমবে।ক্যাসিনো সদৃশ খেলা বাদ দিয়ে এনটিআরসিএ সবাইকে ব্যাচ ভিত্তিক মেধা তালিকা করে সুপারিশ করুক।