৫২ বছর আগে এক পুরিয়ার দাম পাঁচ পয়সা নিতেন৷ তারপর সবাই তাকে ‘পাঁচ পাই ডাক্তার’ নামেই চিনে৷ গরম কেমন লাগে? শীতে খাবার রুচি কেমন থাকে? সকালে ভালো লাগে, না বিকেলে? এভাবেই রোগীর কাছে বিস্তারিত শুনে নেন গাইবান্ধা জেলার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নুরুল ইসলাম৷
রোগী দেখেন দুই বেলা। সকালের হালকা নাস্তা সেরে ৯ টায় নুরুল ইসলাম রওনা দেন গাইবান্ধা জেলার ব্রিজ রোডের চেম্বারের উদ্দেশ্যে৷ প্রতিদিন সকাল ৯ টা – দুপুর ১ টা এবং বিকাল ৫ টা – রাত ৯ টা পর্যন্ত তিনি রোগী দেখেন৷
রোগীর ভিড়, গাইবান্ধার ঘাঘট নদের তীরে বাজারের কাছে ছোট টিন ছাওয়া চেম্বারে সকাল-সন্ধ্যা দুই বেলাতেই গিয়ে দেখা গেল রোগীর উপচে পড়া ভিড়৷ সিরিয়াল না পাওয়ায় অনেককে আবার পরদিন আসতে অনুরোধ করা হয়৷
রয়েছে অপেক্ষাগার। নারী, শিশু ও বয়স্কদের সুবিধার্থে চেম্বার লাগোয়া একটি অপেক্ষাগারতৈরি করে দেওয়া হয়েছে৷ দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা এখানে বসে চিকিৎসকের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন৷
ব্যক্তিগত সমস্যা। সদ্য বিবাহিত এক তরুণী এসেছেন চিকিৎসা সেবা নিতে৷ আলাদা কোন কক্ষ না থাকায় শুধু মুখে শুনেই পাঁচ পাই ডাক্তারকে চিকিৎসা দিতে দেখা গেলো৷
রোগী অনুপস্থিত। ছোট শিশুটির গাল ফুলে গেছে, কিন্তু তাকে নিয়ে আসা সম্ভব হয় নি৷ তাই শিশুটির বাবা মোবাইলে তোলা ছবি দেখিয়েই তার সন্তানের জন্য ব্যবস্থাপত্র নিতে এসেছেন৷
ক্লান্তি। গাইবান্ধা জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক রোগী আসেন পাঁচ পাই ডাক্তারের কাছে৷ বয়স্ক একজন মহিলাকে অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখা গেলো৷
চিকিৎসার সুনাম। প্রতিদিন শতাধিক রোগী বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসছেন এখানে৷ রোগের বিস্তারিত বলার পর সকলেই কিছু না কিছু চিকিৎসা নিয়ে বাসায় যাচ্ছেন৷ তাঁর চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ায় দূর দূরান্তের বিভিন্ন জেলায় তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে৷
নেই পৃথক ব্যবস্থাপত্র। পাঁচ পাই ডাক্তারের চেম্বারে দেখা গেলো নাই কোন আলাদা ব্যবস্থাপত্র৷ শুরুতে এক পুরিয়া ওষুধের দাম পাঁচ পয়সা রাখা হলেও এখন রাখা হয় ২ টাকা থেকে ২০ টাকা৷ চিকিৎসকের কোন ফি নেওয়া হয় না৷
আন্তরিকতা। মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ এক তরুণের মাথায় হাত দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপের চেষ্টা করা হচ্ছে৷ চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সাথে আন্তরিক এই ডাক্তার৷
রাখেন দেশ বিদেশের খবর। বয়সের ভারে কিছুটা ন্যুব্জ হলেও মানসিকভাবে অনেকটাই শক্ত নুরুল ইসলাম৷ সারাদিনের ব্যস্ততার মাঝেও দেশ বিদেশের খবর রাখতে ভুলেন না তিনি৷
কুশলাদি বিনিময়। বিকালে চেম্বারের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ এক রোগী কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ফোন করে ডাক্তারের কুশল জানতে চাইলেন৷ রোগীদের এই ভালোবাসা ও দোয়া বড় অর্জন জানালেন এই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক৷
বাড়ির পথে। সকালের রোগী দেখা শেষে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন চিকিৎসক নুরুল ইসলাম সরকার৷ বয়স ৯০ পেরিয়ে যাওয়ায় একা খুব একটা চলাফেরা করতে পারেন না৷ চেম্বার সহকারি পাপন তাই তাকে রিক্সায় উঠতে সহযোগিতা করছেন৷