রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার গেলেন পাংশা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মিঠাপুকুরে শাড়ী পেচিয়ে এক মহিলার আত্ম হত্যা পাংশায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত মৃত্যুর আগে ওয়াশরুম থেকে কবি হেলাল হাফিজের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ অনন্তলোকের চিরন্তন সফরে কবি হেলাল হাফিজ পাংশায় পুলিশকে দেখে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালানো আসামী গ্রেফতার ক্ষমা চাইলেন মুফতি আমীর হামযা আশা জাগিয়ে রাখি পাংশায় আগুনে পুড়ে ছাই হলো ৪টি ঘর খোকসায় আ.লীগ নেতাদের ছাড়াতে বিএনপির হাইব্রীড নেতাদের তদবিরে জনমনে প্রশ্ন  খোকসায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক, ছাড়িয়ে নিতে কৃষকদল নেতার তদবীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত কবি রফিকুল্লাহ কালবী : সাক্ষাৎকার পাংশায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী, কেক কাটা ও আলোচনা সভা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

ফররুখ আহমদের কাছে বাঙালি মুসলমানের ঋণ

আতাউর রহমান খসরু / ৪৩৩ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১, ৫:২০ অপরাহ্ন

আতাউর রহমান খসরু

বাংলা সাহিত্যে মুসলিম জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গর্বিত নবাব। যিনি তাঁর সৃষ্টিসম্ভার দিয়ে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছেন। ঋণী করেছেন বাঙালি জাতিকে। দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্য সাধনায় তিনি বিপুল পরিমাণ সাহিত্য-শস্য রেখে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য; যার বৃহদংশই শিল্প, শৈলী ও সৃষ্টিশীলতার গুণে এখনো সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে আবেদনময়ী।

কবি ফররুখের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো, একজন আধুনিক ও সৃষ্টিশীল কবি হওয়ার পরও আত্মপরিচয় ভোলেননি কখনো। সাহিত্য সাধনার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় তিনি আত্মবিমুখ হননি কখনো। বরং তিনি তাঁর কাব্য ও রচনায় ‘বাঙালি মুসলিম’ পরিচয়টি জাগিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন বরাবর।

সাহিত্য সমালোচক ড. আহমদ শরীফ- ফররুখ আহমদের এই চেতনাবোধ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের বাংলা ভাষায় স্বকীয় আদর্শে সাহিত্য সৃষ্টি করতে হবে, আদর্শ হবে কোরআনের শিক্ষা, আধার হবে মুসলিম ঐতিহ্যানুগ, বিষয়বস্তু হবে ব্যক্তি বা সমাজ অথবা বৃহদর্থে জগৎ ও জীবন। এভাবে আমাদের জাতীয় সাহিত্য ও জাতীয় জীবন গড়ে উঠবে। তরুণ কবি ফররুখ আহমদ একান্তভাবে মুসলিম ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কাব্য সাধনা করে পথের দিশারির গৌরব অর্জন করেছেন’।

তবে কবির ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধ যে সৃষ্টিশীলতা, কাব্যের অলংকার ও সাহিত্যের মান ক্ষুণ্ন করতে পারেনি সে সাক্ষ্য দিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান। তিনি লিখেছেন, ‘তিনি মারা গেছেন একেবারে নিঃস্ব অবস্থায়। না, ভুল বললাম, নিঃস্ব কথাটা তাঁর জন্য প্রযোজ্য নয়। তাঁর মানসিক ঐশ্বর্যের কোনো কমতি ছিল না। তিনি রেখে গেছেন এমন কয়েকটি গ্রন্থ, যেগুলো পঠিত হবে দীর্ঘকাল’।

মুসলিম জাগরণের কবি হিসেবে ফররুখ আহমদ খ্যাতি পেলেও তাঁর কাব্যে মানবিকতা ও রসবোধের কমতি ছিল না। ইসলামী আদর্শই তাঁর কবিতায় মানুষ ও মানবিকতাকে মুখ্য করে তুলেছে। কবি আবু রুশদের ভাষায়, ‘ফররুখ আহমদ রোমান্টিক কবি।…তাঁর কাব্যে সৌন্দর্যের জয়গান অকুণ্ঠ। সুদূরের প্রতি আকর্ষণও তাঁর কাব্যের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবু তিনি নিঃসন্দেহে আধুনিক কবি। তাঁর একটি বলিষ্ঠ সজাগ তীক্ষ অনুভূতিশীল মন আছে, যা সৌন্দর্যের অস্তিত্বকে স্বীকার করার সাহস রাখে; কিন্তু রোমান্টিসিজমের বিপদ সম্পর্কে যা সর্বদা সচেতন।’

কবির এই অনুভূতিশীল মন কবিকে আরো বেশি মানবিক করে তোলে, মানুষ ও মানবতার মুক্তির তাড়নায় তাঁকে ব্যাকুল করে। জাগরণ বলি আর মুসলিম সমাজের সংস্কারের ডাক বলি, সব কিছুতেই কবির এই ব্যাকুলতার ছাপ ছিল স্পষ্ট। যেমন—পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অমানবিকতা ও রূঢ়তার বিরুদ্ধে কবি লেখেন, ‘ত হানি/নিয়ে যাবো জাহান্নাম দ্বারপ্রান্তে টানি/আজ এই উত্পীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও/ধ্বংস হও, তুমি ধ্বংস হও।’ [লাশ/সাত সাগরের মাঝি]

বাঙালি মুসলমানের রাজনৈতিক দুরবস্থায় কবিকে প্রতিবাদের ভাষা দেয়, ‘বাঙালি মুসলিম’ পরিচয়ে উদ্বুদ্ধ করে, রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে। কবি দেখেন, ‘বুদ্ধির মুক্তি’ স্লোগানে যে সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তা মূলত পতিত মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজকে আত্মসমর্পণের মন্ত্রই শেখাচ্ছে। তাই তিনি ‘মুক্তির বুদ্ধি’র পরিবর্তে বাঙালি মুসলিম সমাজকে আত্মনিয়ন্ত্রণের মন্ত্র শেখানোর স্বপ্ন দেখেন।

তবে তাঁর জাগরণী মন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্লোগান প্রচলিত ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ছিল না। বরং তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন বাঙালি মুসলিম সমাজে ধর্মচিন্তা থেকে রাজনৈতিক মতবাদ পর্যন্ত সব কিছুতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। তবে সেটা অবশ্যই সংস্কার, ইসলামের মৌলিক চেতনার অঙ্গহানি নয়।

তাঁর ধর্মীয় মূল্যবোধ ও চেতনা এবং তাঁর সাহিত্যে তার প্রভাব সম্পর্কে আবুল ফজল লেখেন, ‘একটা সুনির্দিষ্ট মতাদর্শে প্রবল বিশ্বাসী থেকেও ফররুখ আহমদ বিশুদ্ধ কবি ছিলেন। এ কারণে আপন লক্ষ্যে সনিষ্ঠ থেকেও কবিতার নানা স্রোতে বিচরণ তাঁর পক্ষে সহজ হয়েছে। আদর্শনিষ্ঠ কবিতা সাধারণত একচোখা হয়ে থাকে। সুখের বিষয়, ফররুখ আহমদের বেলায় তা হয়নি’।
আর সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন, ‘ফররুখের কাব্যপ্রক্রিয়ায় যেহেতু একটা বিশ্বাসের উন্মুখরতা ছিল, তাই তার পাঠকের সংখ্যা আমাদের মাঝে সর্বাধিক। বিশ্বাসের সে একটা কল্লোলিত সমর্থন পেয়েছে। আবার ব্যবহৃত শব্দের পরিধির সার্থক বিবেচনায় এবং ধ্বনি সাম্যের কারণে অবিশ্বাসীরাও তাকে অগ্রাহ্য করতে পারেনি’।

কবি ফররুখ আহমদের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও সমাদৃত কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’র ভাষা ও ভাষ্য, ব্যাকুলতা ও আবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কবি একই সঙ্গে মুসলিম সমাজকে অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে উজ্জীবিত করছেন আবার তাদের পতিত জীবনযাপন দেখে ব্যথিত হচ্ছেন।

তিনি তাদের সোনালি দিনের শোভা গ্রহণ করতে বলছেন, অতীতে ফিরে যেতে নিষেধ করছেন। আর অতীতে ফিরে না গিয়ে ঐতিহ্য ধারণের নামই সম্ভবত জাগরণ। এ ডাক দিয়ে যাওয়ায় ফররুখ আহমদ জাগরণের কবি।

আদর্শিক নিষ্ঠা, জাতির জন্য নিঃস্বার্থ নিবেদন কবি ফররুখ আহমদের জীবনের সৌন্দর্য। এই দৃঢ়তা একসময় কবির জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘খল’ হয়ে উঠতে না পারায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়। আদর্শের সঙ্গে আপস না করায় চাকরিচ্যুত হন তিনি। সীমাহীন সংকটের ভেতর দিয়ে জীবনাবসান ঘটে এই কবির।

যে রাজনৈতিক চিন্তার কারণে ফররুখ আহমদকে সতীর্থরাই নির্বাসিত করেছিলেন, সে চিন্তা কিন্তু তাঁকে মোটেও সংকীর্ণ করতে পারেনি। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন শুরু হলে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন এবং বাঙালির অধিকারের পক্ষে কলম ধরেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘এটা দৃঢ়ভাবেই আশা করা যায় যে পাকিস্তানের জনগণের বৃহৎ অংশের মতানুযায়ী পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্বাচিত হবে। যদি তা-ই হয়, তাহলে এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বাংলা ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে’। তিনি পাকিস্তানি শাসকদের সমালোচনা করে ‘রাজ-রাজরা’ নামে নাটক রচনা করেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কবি ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজ কবির ১০১তম জন্মবার্ষিকী। কিশোর বয়স থেকে কবিতা রচনা করলেও ২৬ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’ প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে, ‘আজাদ কর পাকিস্তান’ (১৯৪৬), ‘সিরাজম মুনীরা’ (১৯৫২), ‘নৌফেল ও হাতেম’ (১৯৬১), ‘মুহূর্তের কবিতা’ (১৯৬৩), ‘হাতেম তা’য়ী’ (১৯৬৬), ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’ (১৯৭৬), ‘ইকবালের নির্বাচিত কবিতা’ (১৯৮০), ‘কাফেলা’ (১৯৮০), ‘হাবেদা মরুর কাহিনী’ (১৯৮১), ‘তসবির নামা’ (১৯৮৬), ‘দিলরুবা’ (১৯৯৪), ‘ঐতিহাসিক অনৈতিহাসিক কাব্য’ (১৯৯৪), ‘অনুস্বার’ ও ‘ধোলাই কাব্য’।

শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত গ্রন্থের নাম : ‘পাখীর বাসা’ (১৯৬৫), ‘হরফের ছড়া’ (১৯৬৮), ‘নতুন লেখা’ (১৯৬৯), ‘ছড়ার আসর’ (১৯৭৯), ‘চিড়িয়াখানা’ (১৯৮০), ‘কিস্্সা কাহিনী’ (১৯৮৪), ‘মাহফিল ১ম ও ২য় খণ্ড’ (১৯৮৪) ও ‘ফুলের জলসা’ (১৯৮৫)।

সাহিত্যকর্মের জন্য ফররুখ আহমদ ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার প্রাইড অব পারফরম্যান্স, ১৯৬৬ সালে আদমজী পুরস্কার এবং একই বছরে ইউনেসকো পুরস্কার লাভ করেন। ইস্কাটন গার্ডেনের সরকারি বাসায় নানা দুঃখ-কষ্ট, অনাহারে-অর্ধাহারে এবং বিনা চিকিৎসায় কবি অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪ সালে। মৃত্যুর পর তাঁকে ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্র: আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ‘ফররুখ আহমদ কবিতাসমগ্র’ ও শাহাবুদ্দীন আহমদ সম্পাদিত ‘ফররুখ আহমদ: ব্যক্তি ও কবি’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর