কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সেতুর পিলার বসাতেই মেয়াদ শেষ। তবুও নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়নি সেতুর পিলারের কাজ। চুক্তি অনুযায়ী কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে।মেয়াদ শেষে এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। দৃশ্যমান হয়েছে শুধুমাত্র একটি পিলারের আংশিক অংশ। দেড় বছরেও তবুও নির্মাণ হয়নি সেই সেতু। শুধু পিলার বসাতেই মেয়াদ শেষ করে ফেলেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এমন অবস্থা কুষ্টিয়ার কুমারখালী মহেন্দ্রপুর অভিমুখী প্রধান সড়কের গড়েরমাঠ বিলের ওপর নির্মাণাধীন ‘গড়েরমাঠ সেতু’র।
এদিকে নির্মাণাধীন সেতুর পাশে যে রাস্তাটি সাময়িক বানানো হয়েছিল। সেখানে পানির জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদারের গাফিলতি কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া (এলজিইডি) কার্যালয় নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম মন্ডল বলেন, গড়ের মাঠের বিলের উপর নির্মাণাধীন সেতুটি কাজ পেয়েছিল মেসার্স নুর কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজের অগ্রগতি না হলে কার্যাদেশ বাতিল করে দেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদকী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হামিদ ও স্থানীয় প্রায় ৩০টি পরিবার।
অভিযোগকারী ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ বলেন, গড়েরমাঠ সেতুর নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতু নির্মাণ হয়নি। ফলে সেতুর পাশে সরু বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। এখন সেই সরু পথে বৃষ্টির পানি আটকে গেছে।জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে এতে দুর্গাপুর, কাঠালডাঙ্গী, খোর্দ্দতারাপুর, বাটিকামারা, মালিয়াট, মটমালিয়াট গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এই সেতু দিয়ে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ, জগন্নাথপুর ইউনিয়নসহ খোকসা উপজেলা,রাজবাড়ী জেলার পাংশা পাংসা উপজেলার মাছপাড়া ও উত্তর এলাকার হাজারো মানুষ চলাচল করে।
উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা গেছে, গড়েরমাঠ বিলের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৫ মিটার এবং প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৯২ হাজার ১৯৯ টাকা পাঁচ পয়সা। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চুক্তি সম্পন্ন করেন নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার লক্ষীপাশার মেসার্স নূর কনস্ট্রাকশন। ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করার চুক্তি ছিল। কিন্তু কাজের নমুনা মেলেনি চুক্তির কয়েক মাস পরেও। ঠিকাদার টিপু সুলতান বলেন, করোনা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেতুর কাজ শেষ হয়নি। সময় বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, বর্ষায় আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোনো চিঠি পাননি। এ পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক মেজবাহ উদ্দিন বলেন,দেড় বছর আগে থেকে শুনছে সেতু হবে কিন্তু এখনো নির্মাণ হয়নি সেই সেতু। রাস্তাঘাট নাই চলাচলে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। অল্পতেই অটোরিকশার বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
সাইকেল চালক রনি বিশ্বাস বলেন,এ রাস্তায় চলাচল করা যায় না।কদিন আগেও সাইকেল পড়ে গিয়েছিলাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, নির্মাণাধীন সেতু নিয়ে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ। এবার আবার জলাবদ্ধতার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার টিপু সুলতান বলেন,কারোনা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নির্ধারিত মেয়াদে কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারিনি। সময় বাড়ানোর কথা জানিয়েছি।আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো।