অর্থ হাতিয়ে নিতে ইমাম-খাদেম-বক্তাদের ব্যবহার করে
————-
এহসান গ্রুপ ১৭টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
==========
অর্থ হাতিয়ে নিতে ইমাম-খাদেম-বক্তাদের ব্যবহার করে এহসান গ্রুপ
১৭টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
‘বিনিয়োগ করলে বেহেশত, ইহকালে দ্বিগুণ লাভ, পরকালে মুক্তি’ এমন সব চটকদার কথা বলে ধর্মপ্রাণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে থাকে এহসান গ্রুপ। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার মানুষ বিনিয়োগ করতে থাকেন গ্রুপটিতে। বিনিয়োগের অংক ও গতি বাড়াতে এহসান গ্রুপ ব্যবহার করে ধর্মীয় বক্তা, মসজিদের ইমাম ও খাদেমদের মতো ব্যক্তিদেরও। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব পরিচয়ে অনেকের নানান প্রকারের বক্তব্যে মানুষ আরও টাকা ঢালতে থাকে এহসান গ্রুপে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মানুষ বুঝতে পারেন, তারা প্রতারিত হচ্ছেন। এখন অনেক কষ্টের বিনিয়োগ হারিয়ে তারা ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। সম্প্রতি গ্রুপটির প্রতারণা-জালিয়াতি ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
জালিয়াতির জাল বিছিয়ে প্রতারণা করে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসানকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে গ্রেফতার করা হয় আরও চারজনকে। র্যাব বলছে, সারাদেশে রাগীব আহসানের বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা হয়েছে। জেলা পুলিশের ভাষ্যে, কেবল পিরোজপুরেই পাঁচটি মামলা রয়েছে রাগীবের এহসান গ্রুপের বিরুদ্ধে।
বাবা তার কথায় প্রভাবিত হন এবং এহসান গ্রুপে ১৮ লাখ ছয় হাজার টাকা রাখেন। প্রথম দুই বছর লাখে মাসিক ১৬০০ টাকা দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকেই শুরু হয় তাদের টালবাহানা। টাকার শোকে ২০১৬ সালে স্ট্রোক করে বিছানায় পড়ে যান বাবা
রাগীব আহসান ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত হাটহাজারীর একটি মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খুলনার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি পিরোজপুরে একটি মাদরাসায় চাকরি শুরু করেন। এর মধ্যে ২০০৬-২০০৭ সালে এস মাল্টিপারপাস নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনে চাকরি নেন। মূলত ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা কার্যক্রম রপ্ত করেন। পরে নিজে ২০০৮ সালে এহসান রিয়েল এস্টেট নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর নানান কথা আর কৌশলে চলতে থাকে তার প্রতারণা।
র্যাব সূত্র জানায়, রাগীব আহসান সুদবিহীন বিনিয়োগের বিষয়টির ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালান। ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের নামে ব্যবসায়িক প্রচার-প্রচারণা করতেন। হাউজিং, ল্যান্ড প্রজেক্ট, দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করেন। এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
প্রতারণার ফাঁদ ১৭টি প্রতিষ্ঠান
=====
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাগীব আহসান জানিয়েছেন, তিনি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- (১) এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, (২) এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, (৩) এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, (৪) নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, (৫) জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, (৬) হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), (৭) আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, (৮) পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, (৯) এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, (১০) মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, (১১) মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, (১২) এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, (১৩) এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, (১৪) ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট (১৫) এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, (১৬) এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার, (১৭) এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।
‘এহসান গ্রুপকে যারা বিশ্বাস করবে না তারা মুনাফেক’
============
এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান তার প্রতারণা পাকাপোক্ত করতে ২০১৩-১৪ সালের দিকে সৌদি আরব থেকে একজন বক্তাকে নিয়ে আসেন। ওই বক্তার ওয়াজ মাহফিলে আশপাশের কয়েক জেলা থেকে মুসল্লিরা সমবেত হন। ওই বক্তা টানা ৪৫ মিনিটের মতো আরবিতে ওয়াজ করেন। পরে তাকে বলার জন্য রাগীব আহসান আরবিতে লিখে দেন একটি বাক্য। যাতে লেখা ছিল এমন- ‘সবাই এহসান গ্রুপে বিনিয়োগ করুন। এখানে বিনিয়োগ করলে শান্তি পাবেন।’
রাগীব আহসানকে গ্রেফতার করতেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে কুয়াকাটা হজুর নামে পরিচিত পটুয়াখালীর হাফিজুর রহমান সিদ্দিকের ওয়াজের একটি ভিডিও ক্লিপ। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায় ‘এহসান গ্রুপ গোটা জাতির জন্য রহমত’, ‘যারা আমাদের ভালোবাসেন তারা এহসান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না’, ‘এহসান গ্রুপকে যারা বিশ্বাস করবে না তারা মুনাফেক’।