হে অভিশপ্ত কন্যা শিশু!
তাজ ইসলাম
হায় অভিশপ্ত কন্যা শিশু! জনক কর্তৃক অভিশপ্ত কন্যা তুমি। তোমার পাষণ্ড পিতা তোমাকে অবজ্ঞা করেছে, জন্মের সাত মাসের সময় যখন আধুনিক যন্ত্র ঘোষণা করল তোমার অস্তিত্বের কথা তখনই তোমার জন্মদাতা তুমি কন্যা শিশু হওয়ার অপরাধে তোমাকে সাব্যস্হ করল অপরাধী হিসেবে।অথচ তুমিতো এক নিস্পাপ স্বর্গীয় শিশু।একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে সভ্যতার দ্বারপ্রান্তে এসে তোমার পিতা ও দাদা প্রতিনিধিত্ব করল হাজার বছর আগের জাহেলিয়াতের।যে যুগে জীবন্ত কবর দেয়া হত তোমার মত অসহায় নিরপরাধ কন্যা শিশুকে।আজ তোমার জন্মের অপরাধে,পৃথিবীতে তোমার আগমনের অপরাধে তোমার দাদা ও বাবা তোমাকে করেছে প্রত্যাখান।হে নিষ্পাপ শিশু, সভ্যতার এই সময়ে তুমি এমন নির্মমতার শিকার হবে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।কেবল তোমাকে গর্ভেধারণ করার অপরাধে তোমার মায়ের সংসার ভেঙে গেল, তোমার মায়ের জীবন দূর্বিষহ হল।
নারী যেন আজও চরম অসহায় কোন প্রাণী।পৃথিবীতে নারী বা কন্যা হয়ে জন্ম গ্রহণ করা আজও তাহলে পাপ!
হাজার বছর আগে ইতিহাস স্বাক্ষী আইয়ামে জাহেলিয়াত নামে একটা যুগ ছিল।যে যুগে মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হত।পৃথিবী এগিয়ে চলেছে সভ্যতার পথে।২০২১ এ এসে সভ্যতার মুখে এখনও কোন কোন মানুষ সভ্যতার মুখে চুনকালি মাখে।কন্যা সন্তান গর্ভধারণ করা কী নারীর অপরাধ? এই অপরাধেই তালাকপ্রাপ্ত হল নুসরাতের মা।নুসরাতের বয়স সাত মাস প্লাস।মা বাবার প্রথম সন্তান।প্রথম সন্তানের জন্য মা বাবার থাকে অসীম আকর্ষণ। অথচ শুধুমাত্র মেয়ে শিশু হিসেবে দুনিয়ায় আসার অপরাধে নুসরাতের মাকে তালাক দিয়েছে তার বাবা। নুসরাতের বাবা মোঃ রুহুল আমিন( আনসার সদস্য) ।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫/০৯/২০২১ জয়কা ইউনিয়ন পরিষদে।থানা করিমগঞ্জ জেলা
কিশোরগঞ্জ। সেদিন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত ছিলেন গুনধর, নোয়াবাদ,বৌলাই,জয়কা ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান ৭/৮ চেয়ারম্যান,ও চেয়ারম্যান প্রার্থী, মেম্বার,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অসংখ্য সমাজকর্মী।
নুসরাতের মায়ের বিয়ে হয়েছিল কুড়ি মাস আগে।একই থানার সিন্দিপ গ্রামে সাবেক মেম্বার আঃ রাজ্জাকের ছেলে আনসার সদস্য রুহুল আমিন র সাথে।তারপর নুসরাতের মায়ের পেটে নুসরাত আসে।এ সময় রুহুল আমিন পরকিয়ায় জড়িয়ে পরে।নেমে আসে আফরোজার উপর নির্যাতন।নুসরাতের মামারা জেনে না জেনে,শোনে না শোনে সয়ে যেতে থাকে।নুসরাত তখন তার মায়ের পেটে সাত মাসের শিশু।নুসরাতের মা অসুস্হ হয়ে পড়লে তার মামারা তাকে কিশোরগঞ্জ সদরে চিকিৎসা করাশ।তখন জানা যায় নুসরাত বিধাতার দান কন্যা পরিচয়ে পৃথিবীতে আসছে।তারপর গত ১৫/০১/২০২১ নুসরাত পৃথিবীতে আসে।এই অপরাধে নুসরাতের বাবা নুসরাতে জন্মের ত্রিশদিনের মাথায় তার মাকে মৌখিক ডিভোর্স দেয়।তারপর চলে সাতমাস যাবৎ দেনদরবার।নুসরাতের মামাদের উদ্দেশ্য যেন বোনের সংসার ঠিকে।তা আর হল না।ইতিমধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে রুহুল আমিন গোপনে তার পরকিয়াকে বিয়েতে রূপ দিয়েছে।উপাশন্তর না দেখে গত ২৫/০৮/২০২১ এক শালিশ- দরবার আহবান করা হয় জয়কা ইউনিয়ন
পরিষদে।যেন সংসার জোড়া লাগে।
সেখানে উপস্হিত ছিলেন জয়কা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, গুনধর ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান, নোয়াবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থী,বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার জনগন,বৌলাই ইউনিয়নের অনেক লোক।বালিয়ারবাড়ি জয়কার অসংখ্য জনতা।হাউস ভর্তি লোকজন।মেয়ে পক্ষের জবানবন্দির পর ডাকা হল ছেলে ও তার বাবাকে।তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট হল কন্যা সন্তান হওয়াতেই ডিভোর্স। এবং স্পষ্টত বলল তাকে নিয়ে সংসার করা আদৌ সম্ভব না।উপস্থিত জনতা রাগে ক্ষোভে,ঘৃণায় ফেটে পড়ল।পুরুষ হিসেবে বিবেকবানরা লজ্জিত হল।একপর্যায়ে হল থেকে আওয়াজ এল ধিক্কার ধিক্কার! তবু তারা অর্থাৎ রুহুল আমিনরা তাদের সীদ্ধান্ত রইল অনঢ়।এই হল সংক্ষিপ্ত কাহিনী।
বিচার চাই বা না চাই, চাই ব্যধি নির্মূল হোক
……………….
একটা মেয়ে সন্তান গর্ভধারণ করায় মাকে তালাক দেয়া হল।এই মা এবং তার পরিবার আইন আদালতে গেল না স্বামী পক্ষের প্রভাব,আইনি জটিলতা,সামাজিক সুনাম- বদনামের দিকে খেয়াল করে।গ্রামীন ঐতিহ্যের স্মরণাপন্ন হয়ে শালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিস্পত্তি হল।হয়তো বিষয়টির আপাতত সুরাহা হয়েছে।তবু রাষ্ট এবং সমাজের দায় থেকে যায়।এটি একটি ব্যধি।সভ্য সমাজে আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য তৎপর হওয়া।এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করা।মেয়ে পক্ষকে আইনি জটিলতায় না জড়িয়ে এই পশুদের কীভাবে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আওতায় আনা যায় সে ব্যবস্হা করা।আর এই কাজে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে মিডিয়া।মিডিয়া এই ঘটনাকে প্রচার করলে প্রশাসনের নজরে আসবে।তখন আইন পেশার কেউ না কেউ জনস্বার্থে পদক্ষেপ নিবে।আর তারা আসবে আইনের আওতায়।নিশ্চিত হবে শাস্তির।এবং অন্যরাও হবে সচেতন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নতুবা একবিংশ শতাব্দীর এই প্রান্তে এসেও নারীর লাঞ্চনা বাড়বে বৈ কমবে না।আমি মনে করি এসব ঘটনা সংশ্লিষ্ট এলাকার মিডিয়া কর্মীগণ তাদের লিখনীর মাধ্যমে প্রশাসনের নজরে আনবে।আইন সংশ্লিষ্ট কেউ তাদের আইনি প্রজ্ঞা দিয়ে প্রশাসনের নজরে আনবে।তাহলে সমাজে আর পশু তৈরী হবে না,পশু হতে ভয় পাবে।নতুবা নিস্পাপ নুসরাতরা কন্যা হওয়ার অপরাধে অভিশপ্ত হবে পিতা নামক পশু কর্তৃ,দাদা নামক পাষাণ কর্তৃক।
(বিস্তারিত আরও জানতে চাইলে আরও লিখব