দ্বিতীয়-পর্ব
ভূয়া কোম্পানির এক্সিকিউটিভ
হারুন আল রাশিদ
স্থায়ী হলাম গাজীপুরে। রাসেদের বাড়িতে। গ্রামের নাম মেঘডুবি। চমৎকার নাম। শোনামাত্রই ভালো লেগেছিলো। রাসেদের বাবা একদিন কথা প্রসঙ্গে বললো, ‘আমাদের গ্রামের নাম শুনলেই মনে হয় গ্রামটা মেঘে ঢাকা পড়ে আছে। দূর থেকে যে কেউ এটাই মনে করবে। আসলে নামটাই এমন।’
‘মেঘডুবি’ কি মিষ্টি নাম! মনে মনে যতোই উচ্চারণ করি ততই ভালো লাগে। অনেক সময় ভাবতাম, গ্রামের এতো সুন্দর নামটা কে রেখেছিলো? এক কথায় বলা যায় কাব্যিক নাম। হতে পারে কবি হৃদয়ের ভালোলাগার মধুময় কোমলতার নির্যাস। এমন মায়াবী নামের জন্যই হয়তোবা অসম্ভব ভালো লেগেছিলো এলাকাটা।
দু’তিনদিন কাজে বের হলাম না। একাই ঘুরে ঘুরে আশপাশটা দেখতে লাগলাম। মাঝেমাঝে রাসেদ থাকতো। ইচ্ছা করেই রাসেদকে মাইনাসে রাখতাম। একাকিত্বকেই বেছে নিতাম বেশিরভাগ। একটানা দেড় মাস ছিলাম সেখানে। কবিতার একটা লাইনও খাতায় লিপিবদ্ধ করার অাগ্রহ অনুভব করিনি। তবে, কাব্যিক সত্ত্বার আস্ফালনের আওয়াজ হৃদয়কে উদ্বেলিত করতো প্রতিনিয়ত।
অন্তরের বিশ্বাস থেকে বলছি, কবি কখনো নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। পারেন না চোখ বন্ধ রাখতে। কবির স্বভাবই হলো দেখা এবং লেখা। সাময়িক বিরতি কখনো কখনো আর্শীবাদ হয়ে যায়। একটা পাখি উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলেই ডালে বসে বিশ্রাম নেয়। নতুন শক্তি সঞ্চার করে নব উদ্যমে বিস্তৃত দিগন্তে পাখা মেলার উদ্দেশ্যে। কবি লেখনির সাময়িক বিরতিকে কাজে লাগিয়ে শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ করতে পারেন। অতঃপর নতুন উপমা, চিত্রকল্পের সমন্বয়ে পাঠক নন্দিত কবিতা উপহার দিতে সক্ষম হন পৃথিবীকে।
প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে লাগলাম। সরিষা ফুলের কাছাকাছি গিয়ে মৌমাছি ও ফুলের দৈহিক সখ্যতার নিবিড় কামুকতা পর্যবেক্ষণ করতাম।
গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বাতাসের সাথে পাতার আলাপন, সুমধুর ঝিরিঝিরি শব্দের বিশ্লেষণ করতাম। তাকিয়ে থাকতাম ফসলি জমির দিকে। সবুজ মাঠের কোমলতা পাঠ করতাম দীর্ঘ সময় নিয়ে।
লেখালেখি ক্ষান্ত দিলেও সময়কে এনজয় করা থেকে অবসর দিলাম না মনটাকে। ভালোই বুঝেছিলাম, মনের খাতায় অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করার এমন সুচারু দিন দ্বিতীয়বার জীবনে নাও আসতে পারে। লেখালেখি না হোক দেখাদেখি চালিয়ে যাবো নিরলসভাবে। কাজে লাগানো যাবে পরবর্তী কাব্যিক জীবনের চড়াই-উৎরাই পথে।
তরিনো
ইতালি