সিগারেট বিব্রত
রোমানুর রোমান
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে একটা ভাপা পিঠার দোকান আছে। একদম খোলামেলা দোকান। শুধু শীতকালের বিকেলে একজন বয়স্কলোক বসে পিঠা বিক্রি করে।
কয়েকদিন খেয়েছি তার পিঠা। বেশ ভালো দাম হিসেবে।
সেদিন আমি বেঞ্চে বসে দুইটা ভাপা পিঠা খেয়ে দোকানের লোকটিকে ২০ টাকা দিয়ে সামনের ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে মোবাইল টিপছিলাম। এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা চাইল, তাকে কিছু দিতে পারিনি খুচরা পয়সা নেই।
আবারও আমি মোবাইলে মনোযোগ দিয়েছি, সময় কাটাচ্ছি একহাতে মোবাইল রেখে অন্যহাতে টার্চ করে করে কী যেন একটা কাজ করছি । এমন সময় হঠাৎ এক মধ্যবয়স্ক লোক এলো। জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আপনি কি সিগারেট টিগারেট খান?
আমি না বোধক মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, না!
সে আবার প্রশ্ন করল, মাঝেমধ্যে?
আমি মোবাইল স্কিনে তাকিয়ে থেকেই মাথা ঝাকিয়ে বললাম, না!
সে ফের প্রশ্ন করল, মাঝেমধ্যে হঠাৎ খান না?
তার প্রশ্ন শুনে মনে হচ্ছিল যে, আমি সিগারেট না খেলেও সে আমাকে খাইয়েই ছাড়বে! এমন একটা অবস্থা। আর আমি সিগারেট খাই না এটা যেন মহা অন্যায়।
যাহোক, তাকে পুনরায় মাথা ঝাঁকিয়ে ‘না’ বললাম।
বেচারা হতাশাগ্রস্ত হলো, আর প্রশ্ন করতে পারলো না। বলল, আমি সিগারেট কোম্পানি থেকে এসেছি, একটা নাম্বার লাগতো তো তাই।
তার কথা শুনেও পাত্তা দিলাম না, আমার মনোযোগ মোবাইলের দিকেই।
সে আর কিছু না বলে অসহায়ের মতো চলে গেল।
এই তো কয়েকমাস আগেও এমন দুজনকে বাধ্য হয়ে নাম্বার দিতে হয়েছে। একটা নাম্বার নিয়ে গেছে মেসে এসে। ছাত্রাবাসের বড় ভাইয়েরা দিতে বলেছিলো। কারণ, তারা সিগারেট খায় এবং পরেরদিন সবাইকে বিস্কুট আর চাবির রিং দিয়েছিলো লোকটি। মেসের বড়ভাই এসে আমাকেও দিয়েছিলো একটা বিস্কুট কিন্তু বলেছিলো যদি অফিস থেকে কেউ ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে আপনি কোন সিগারেট খান, তাহলে যেন ওদের সিগারেটের নাম বলি।
আরেকটা নাম্বার নিয়েছিলো পায়রাচত্তর, রংপুরে। ঐ সময় সাথে এক সিগারেট খোর বন্ধু ছিলো। সে দিব্বি হাসিখুশি দুই-তিনটা নাম্বার দিয়েছিলো সাথে ফ্রি নিয়েছে একটা সিগারেট। লোকটা আমার কাছে যখন চেয়েছিলো, বন্ধুও সম্মতি জানিয়ে বলেছিলো দে একটা নাম্বার। যাইহোক, সিগারেট খাই বা না খাই নাম্বারটা দিলাম। কিন্তু তারও এক অনুরোধ, কেউ ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলে যেন বলি, হ্যাঁ আমি সিগারেট খাই। আপনাদের সিগারেট ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি।
কি একটা অবস্থা! আমি কেন মিথ্যা বলতে যাব বলুন! তার মুখের ওপর কিছু বলতেও পারলাম না। কিন্তু মনেমনে ঠিকই বললাম, আমার ঠেকা পড়ছে মিথ্যে বলার। ফোন দিলে সত্যিই বলবো সিগারেট খাই না। কিন্তু লোকটার কপাল ভালো আমাকে অফিস থেকে কেউ ফোন করেনি।