সাংস্কৃতিক ভাবনা .আজিজ হাকিম "চমক লাগানো কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা আমাদের লক্ষ্য নয়" এই কথা নিত্যদিন পড়ি, এক কান দিয়ে শুনি আরেক কান দিয়ে বের করি। কিন্তু সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে চমকের শেষ নাই। যতটুকু কাজ হচ্ছে সব চমক হিসেবেই আসছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে ছুটে চলার অভিপ্রায়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। শুধু চমক আর চমক। লাগামহীন ঘোড়া এলোপাথাড়ি দৌড়ঝাঁপ পারছে। কখন কোথায় কোন দিকে যাচ্ছে তার কোনো নির্দিষ্টতা নেই। লাগাম টেনে ধরারও কেউ নেই। রাস্তার দুধার থেকে যারা লাগামহীন ঘোড়া দেখে চিল্লাচ্ছেন, তাদের কথায় কোনো কর্ণপাতই নেই। কারণ তারা ঘোড়ার মালিকায় নেই। চিল্লাইয়া মার্কেট পাওয়া যাবে? তো ভাই, আপনার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক আছে তো?? নাকি শুধু চমক দেখিয়েই আপনার কাল শেষ করবেন? রাগ করবেন না। কথাটা খোলাসা করেই বলি। এই অবিজ্ঞতাগুলো ২০১৬ সালের দিকে। কিন্তু উপলব্ধি করতে পারলাম এখন। ১/ চেয়াম্যান: এই শুনছাও, দেখছাও, ওমুক শিল্পীগোষ্ঠী এতো সুন্দর একখান গান বানাইলো। তারা জেলার সংগঠন হয়া যদি পারে আমরা শহর সংগঠন হয়া পারমু না ক্যা। -তাইলে কি করমু ভাই? -কী করমু মানে? ওবা দেইখা একটা গান করা লাগবো টাকা যা লাগে দিমু নি। -ঠিক আছে ভাই। [] শুরু হলো একটি গানের কাজ। খরচ ৩০ হাজার টাকা। সেরা একটি গান বের হলো। নাম হলো এই বার গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান হেব্বি হইছে। দেখছ কী গানডাই না বানাইছে। খরচও করেছে দুই হাত খুইলা। এরপর চেয়ারম্যানের টার্ম অই গানের রেশ ধরিয়ায় চলিতে লাগিলো। ২/ তত্ত্বাবধায়ক: চেয়ারম্যান সাহেব, আমি কিন্তু সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক। এখন আমার তত্ত্বাবধানকৃত শাখার যদি কোনো সাংস্কৃতিক আউটপুট না থাকে তাইলে কি আমার মান সম্মান থাকে? কিছু গানের কাজ কিন্তু অবশ্যই করতে হবে। -জ্বী ভাই অবশ্যই। কেন করব না। আপনি কোনো চিন্তা কইরেন না ভাই। [] কিছু গানের কাজ: খরচ ১ লক্ষটাকা। এরপর আবার যেই লাউ সেই কদু। উদ্দেশ্য যা ছিল তা পুরণ হইয়া গিয়াছে। টার্ম শেষ। কাজ কাম শেষ। আমার নতুন দায়িত্বশীল। ৩/ পরিচালক: সবাই শুনেন। এই বছর এমন কাজ দেখাবো সারা বাংলাদেশের মধ্যে যেন আমাদের শিল্পীগোষ্ঠী সেরা হয়। বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। -জ্বী ভাই অবশ্যই। আমরাই সেরা হবো। [] সারা বছরব্যাপী কাজ। খরচ: আনুমানিক ৩ লক্ষটাকা। বছর শেষে বাংলায় সেরা শিল্পীগোষ্ঠী হিসেবে নাম করিয়াছে। সবাই ধন্য ধন্য বলিতে লাগিল। সেই বছরের মত কাজ সমাপ্ত। এই এক বছরের কাজের নাম করিয়াই বাকি তিন চার বছর তারা কাজহীন সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল। ৪/ সংগীত পরিচালক: ভাই, গতবছর রোজায় আমাদের একটা গান বের হইছিল। এই বছর আমি চিন্তা করছি ৫টা রোজার গান বের করব। পাঁচ শুক্রবারে পাঁচটা রিলিজ দেবো। দারুণ সাড়া পরে যাবে। ইতোমধ্যেই গান রেডি করে ফেলছি। -ঠিক আছে দারুণ পরিকল্পনা নিয়েছ। এই না হলে সংগীত পরিচালক। যাও কাজ করো, টাকা যা লাগে ব্যবস্থা করতেছি। [] তো শুরু হলো রমজানের গানের কাজ। খরচ: আনুমানিক: এক লক্ষ বিশ। রমজান শেষ, তাদের সংগীত বিদ্ধা জাহির করারও সমাপ্তি ঘটিল। এই হলো আমাদের সাংস্কৃতিক চমককর্মকাণ্ড। বিনয়ের সাথে সবার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কেউ এই কথাগুলো ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না। সাংস্কৃতিক সমালোচনা হিসেবে গ্রহণ করার কড়জোর দাগাদা থাকলো। আর তা না পারলে ক্ষমা করে দেবেন এই ছোট ভাইকে। আমরা যদি এমন চমক দেখাতে দেখাতেই আমাদের জীবন আয়ূ ফুরাতে থাকি, তাহলে ৪০ বছর কেন? আরো একশ চল্লিশেও কোন কাজের কাজ হবে না। ভাইরাল ইস্যু নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লাইক কমেন্ট শেয়ারের বন্য বয়ে যায়। কিন্তু মৌলিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে ভাল্লাগে না। মানুষ বাহবা দেয় না। আপনি এক লক্ষ টাকা দিয়ে ৪-৫টা গান করবেন? এর থেকে এক কাজ করুন। সাংস্কৃতিক সংগঠনে দুইজন টেকনিক্যাল পারসন তৈরি করুন। একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আরেকজন ভিজ্যুয়াল নির্দেশক। ব্যাশ হয়ে গেলো। এখন এক লক্ষ্য টাকা দিয়ে কম্পিউটার এবং সাউন্ড সিস্টেম কিনে নিন। আর এক লক্ষ খরচ করুন ক্যামেরায়। ব্যাস হয়ে গেলো। যদি টাকার পরিমানটা বেশি হয় তাহলে সেটা এক লক্ষের মধ্যেও টোটাল করতে পারবেন। কোয়ালিটির তো শেষ নাই। এখন ঘরে বসেই তারা মাসে আপাদত ২-৩ প্রডাকশন আনতে পারবে নির্দ্বিধায়। প্রত্যেক মাসের পরিকল্পনা নিন। ইউটিউব চ্যানেল খুলুন। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন ও সময় নির্ধারণ করুন। সবাই জানবে ওমুক চ্যানেলে সপ্তাহের এই দিনে এই সময়ে গান অথবা নাটক আসে। এইভাবে আপনার শিল্পীগোষ্ঠী একটি প্রডাকশন হাউজ হিসেবে আউটপুট দিতে থাকবে। কারিগরি টিমের কাজই প্রডাকশন দেওয়া। প্রয়োজনে বাকি সব কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা যেতে পারে। এই কাজটা আমার মতে সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় যা বিশেষ বিশেষভাবে দরকার। চিন্তা করুন ''সারা বাংলায় ৫০টি একটিভ চ্যানেল। যে চ্যানেলগুলো থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে গান বা নাটক রিলিজ হচ্ছে''। কেমনটা লাগে কল্পনা করতে? আসুন আমরা কল্পনা করতে থাকি। ওদিকে সাহিত্য সাংস্কৃতিক কাজ গোল্লায় যাক। মায়াসসালাম আজিজ হাকিম সোনারগাঁও