ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা শাহনাজ চৌধুরী ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য সাড়ে নয় শতাংশ সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর পরেই ব্যাংক তার সেই সুদ হার সাড়ে ১২ শতাংশ করে ফেলে।
”আমি যখন ব্যাংকের শাখায় গিয়ে অভিযোগ করি, তখন তারা আমাকে কাগজপত্রের ভেতর শর্ত দেখান যে, ব্যাংক বিভিন্ন সময় সুদের হার পরিবর্তন করতে পারবে। ফলে আমাকে সেটা মেনে নিতে হয়েছে।” বলছিলেন মিসেস চৌধুরী।
ব্যক্তিগত পারিবারিক বা ব্যবসার প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে অনেকেই ঋণ নিতে চান। বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়াও অনেক সহজ করেছে।
কিন্তু ঋণ নেবার আগে যেমন অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়, তেমনি অজ্ঞতার কারণেই হয়তো ঋণ নেবার পরেও কেউ কেউ পড়ে যান মিজ চৌধুরীর মত বিপদে।
ব্যাংক ঋণ নেবার জন্য কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন? তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে এই প্রতিবেদনে:
ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংক কি কি বিষয় বিবেচনা করে?
সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”যেকোনো ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করে যে, সে ঋণের টাকা ঠিকমতো ফেরত পাবে কিনা। কোন গ্রাহক যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন যে, যে উদ্দেশ্যে তিনি ঋণ চাইছেন, সেটা সঠিক, তিনি যথাসময়ে ঋণের টাকা সুদসহ ফেরত দিতে পারবেন, তখনই তাকে ব্যাংক ঋণ দিতে সম্মতি দেয়।”
সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ শর্ত রয়েছে।
যেমন ঋণ গ্রহীতার বয়স ১৮ বছরের ওপরে হতে হবে, তার নিয়মিত আয় থাকতে হবে। ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে তাকে ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে।
ঋণ আবেদনকারী কত টাকা ঋণ পাবেন, তা নির্ভর করে তার আয়-উদ্বৃত্ত কতটা, অথবা ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কতটা, তার ওপরে।
আয়-উদ্বৃত্ত হল একজন ব্যক্তি যত টাকা আয় করে, সেখান থেকে ইনকাম ট্যাক্স বা অন্য ঋণের কিস্তি পরিশোধের পর কত টাকা থাকে। ব্যাংক ভেদে যদিও এর রকমফের হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যাংক এই আয়ের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধের সক্ষমতা বলে ধরে নেয়।
সেই সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংক তাকে ঋণ বরাদ্দ করে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আয়কর পরিশোধের পর একজন ব্যক্তির মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা।
ব্যাংক হিসাব করবে, তার ২৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য সক্ষমতা রয়েছে। সেখান থেকে হয়তো একটি ঋণের কিস্তি হিসাবে মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়।
এখন ব্যাংক তাকে সেই পরিমাণ ঋণ বরাদ্দ দেবে, যাতে ঋণ পরিশোধে সুদ ও আসলসহ তার মাসিক কিস্তির পরিমাণ ২০ হাজার টাকার মধ্যে থাকবে।
এর পাশাপাশি ওই ব্যক্তির অতীত ঋণ পরিশোধের তথ্য, অন্য ব্যাংকে আর কোন ঋণ আছে কিনা, অন্যান্য সম্পদ কেমন রয়েছে, চাকরির বা ব্যবসার ধরন-ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রাখে।
যেমন সরকারি চাকরিজীবী, চিকিৎসক বা প্রকৌশলীর মতো পেশাজীবীদের ব্যাংক বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আবার এমন কিছু পেশা রয়েছে, যেক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে।
বাংলাদেশের অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শামস উল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”আমরা ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে দেখি তার ব্যবসায় ক্যাশ ফ্লো কতটা আছে, টার্ন ওভার কেমন, সিআইবি রেকর্ড কেমন, অতীতে খেলাপি বা ক্লিন ইমেজ আছে কিনা, কী ধরণের ব্যবসা করছেন ইত্যাদি। সেই সঙ্গে তার ব্যবসা দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখছে, সেটাও আমাদের বিবেচনায় থাকে।”
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যেমন বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ঋণ নিতে হলে গ্রাহককে দেড় বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা অথবা দুই বছরের ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বেতন হতে হবে ১৮ হাজার টাকা, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসায়ী হলে আয় হতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
তবে এই ব্যাংক থেকে বাড়ি কেনার ঋণ নিতে হলে সরকারি কর্মচারীর সর্বনিম্ন বেতন হতে হবে ২৫ হাজার, বেসরকারি চাকরিজীবীর ৪০ হাজার আর ব্যবসায়ীর আয় হতে হবে ৫০ হাজার টাকা।