মোহাম্মদ বরকত আলী’র পক্ষী জীবন
রোমানুর রোমান
এই বইয়ের গল্প আমাকে নিয়ে যায় অতীতে, নিয়ে যায় গ্রামে কিংবা প্রকৃতিতে। এই বইয়ের গল্প আমাকে নিয়ে যায় টিনের চালার স্কুলে কিংবা রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পাগলের কাছে।
এই বইয়ের গল্প আমাকে মনে করিয়ে দেয়, একসময় আমিও পান্তাভাতে পেট পুষতাম, ধান ক্ষেতে শীষ কুড়াতাম। মনে করিয়ে দেয় বাল্যকাল, লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ দেখেছি, পাখি ধরেছি, আদার খাইয়েছি, আরো কত কি! কিন্তু সেই দিনগুলো নেই।
বইয়ের প্রথম গল্প “নুরা পাগলা” আমার ভালো লেগেছে। গল্পের মূল চরিত্র সে, পাগল বেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে থাকে।
নুরা পাগলা একটি প্রতিবাদি কণ্ঠ , অথবা হারু। বোঝানো হয়েছে, সে একেক সময় একেক নামে পাগল বেশে প্রতিবাদ করে। কিন্তু কেউ তার কথার মুল্য দেয় না। পাগলে কি না বলে, ছাগলে কি না খায়!
গল্পাংশে “পুলিশ লাঠি ঘুরিয়ে বলে, ‘ দেখছেন, সে পাগল কি না? পাগলেরা সবসময় বলে, সে নিজে পাগল না, বাকিরা সবাই পাগল।”
২য় গল্পটি “স্কুল দপ্তরি” এই গল্পটিকে পাঠক হিসেবে আমি এভাবেও বলতে পারি ‘ শিক্ষিত দপ্তরী’। এরপর, “উচ্চ শিক্ষিত দপ্তরী”। এটাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাস্তবতা। এই গল্পে লেখক পদে পদে দুঃখ, দুর্দশার প্রতিফলন যেমন তুলে ধরেছেন, বাস্তব জীবনেও তেমনি।
মানুষ কখনো হাতি, কখনো মশা,
আবার কখনো হয় দুর্দশা।
“পক্ষী জীবন” গল্পটাও তাই। যেখানে পাখি ও মানুষের জীবনযাত্রার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এবং আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ ভালো লেগেছে। কাজের বিনিময় খাদ্য “কাবিখা” নামক দলের কথা উল্লেখ করেছেন।
“মৃত্যু আয়োজন”, “একলা বাবা”, “শেষ বিকেল”, “মা”, “ঝড়”, “এক টুকরো মেঘ”, “অপরিচিতা”, “অভিনয়”, “একজন আগন্তুক এবং কিছু সংশয়”সহ মোট ১২টি গল্প আছে এই বইয়ে। বইটিকে নিয়ে তেমন কিছু না বললেও চলে। কারণ, এটি একটি পাণ্ডুলিপি পুরষ্কার প্রাপ্ত বই। শত শত পাণ্ডুলিপি থেকে বাছাই করে প্রকাশ করা হয়েছে। তাই বোঝাই যায় এর বিশেষত্ব কী। আর একটি বিষয় হচ্ছে কোনো বই পড়ে অল্পকথায় বিশ্লেষণ করা আমার কাছে খুউব কঠিণ বলে মনে হয়। সেজন্য আমি ভালো কিছু গ্রহণ করি এবং খারাপ কিছু ভুলে যাই। আর সাধারণ পাঠক হিসেবে ভালো লাগা মন্দ লাগা একেক জনের একেক রকম হতেই পারে। যেমন “মা” গল্পটি আমার ভালো লেগেছে” আরেক জনের নাও লাগতে পারে।
গল্পাংশ “মেহজাবিন এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল, ‘মা’ তুমি সত্যি করে একটা কথা বলবে?
মেয়ের হঠাৎ এই প্রশ্ন ভয় পেয়ে যান আমেনা।
‘কি কথা?’
মেয়ে কঠিন স্বরে বলে, ‘আগে বলো, সত্যি বলবে?
আমেনা শক্ত হয়। কি এমন কথা যে এভাবে তাকে সত্য বলার শপথ করতে হবে? মেয়েকে লুকানোর কোন কথা তার কাছে নেই। তবে কি কথা? প্রস্তুত হয় প্রশ্ন শোনার।
“আচ্ছা বল, বল কি কথা?” মেহজাবিন দুম করে বলে বসে, আমার বাবা কে তার পরিচয় কি?
বাকিটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। আর কথা বাড়াবো না। অধিকাংশ গল্পেই এমন গ্রামীণ প্রেক্ষাপট। গ্রাম, গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা, প্রকৃতি এসবই যেন “মুহাম্মদ বরকত আলী’র লেখার মূল উৎস।
গল্পগ্রন্থ : পক্ষী জীবন
লেখক : মুহাম্মদ বরকত আলী
প্রকাশক : প্রিয় বাংলা
পৃষ্ঠা : ৮০
মূল্য : ২০০ টাকা