১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে তৎকালীন সরকার সকল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করলে গোয়ালন্দ মহকুমা রাজবাড়ী জেলায় রূপান্তরিত হয়। জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান ও বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও স্বাধীনতার আগে ও পরে অর্থাৎ পাকিস্তান আমল ও বাংলাদেশ আমল উভয় আমলেই শুধু যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভাবে রাজবাড়ী জেলায় প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব হয় নি। পাকিস্তান আমলে স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম স্পীকার ও আইয়ুব সরকারের দুইবারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন রাজবাড়ী জেলার বসন্তপুরের কৃতি সন্তান জনাব তমিজউদদীন খাঁন। জেলা সৃষ্টির পর বর্তমান মন্ত্রী মহোদয়ের আগ পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার ভাগ্যে জুটেছে মাত্র দুইজন প্রতিমন্ত্রী। এই দুজনের একজন ছিলেন ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী জাহানারা বেগম এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাত্র কয়েক মাসের জন্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর (মাদ্রাসা ও কারগরী শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করেন রাজবাড়ী- ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
ফলে রাজবাড়ী জেলার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জেলা সৃষ্টির আগে ও পরে কোন সময়েই রাজবাড়ী জেলার ১,২০৪ বর্গকি.মি. আয়তন বিশিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা থেকে কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বই পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান নি। ব্রিটিশ বিতাড়নের ৭৬ বছরের মন্ত্রিত্বের দীর্ঘ বঞ্চনা থেকে যিনি রাজবাড়ীবাসীকে মুক্ত করেন তিনিই জনাব মোঃ জিল্লুল হাকিম। তাঁর হাত ধরেই রাজবাড়ী জেলায় এক নব ইতিহাস রচিত হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান সরকারের মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনিই হয়েছেন রাজবাড়ী জেলার নতুন রাজনৈতিক ইতিহাস স্রষ্টা।
রাজবাড়ী জেলার প্রভাবশালী তিনটি উপজেলা পাংশা, কালুখালী ও বালিয়াকান্দি নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী- ২ আসন। এ আসনে যোগ্য রাজনৈতিক নেতার অভাব না থাকলেও জিল্লুল হাকিমের বিকল্প হিসেবে এখানকার জনসাধারণ এখনো কাউকে ভাবতে পারেন নি। তাই টানা চারবারসহ মোট পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তি সংগ্রামে তিনি যুদ্ধকালীন কমান্ডার হিসেবে অসীম ত্যাগ ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। তাঁর নেতৃত্বে রাজবাড়ী জেলায় পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি যে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও কঠোরতা অর্জন করেছিলেন তা সারা জীবনই বহন করেছেন আপন মহিমায়। তাঁর চারিত্রিক এই দৃঢ়তা ও কঠোরতার প্রতি মুগ্ধ হয়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মতো অপেক্ষাকৃত অধিক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ন্যস্ত করেছেন যাতে করে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় নিজ গুণে সেখানে শৃঙ্খলা ও সুব্যবস্থাপনা ফিরিয়ে আনেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জননেতা ১৯৫৪ সালের ২রা জানুয়ারি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার আনন্দবাজার গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব জনাব মোঃ আবুল হোসেন ছিলেন তাঁর পিতা। তাঁর মায়ের নাম মিনা খাতুন। হাবাসপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত খান পরিবার তাঁর নানা বাড়ি। মরহুম আবদুল কাদের খান ছিলেন তাঁর নানা আর মহরহুম শরিফা খানম ছিলেন তাঁর নানী। শৈশবের অনেক সোনাঝরা সুন্দর দিন কেটেছে তাঁর এ বাড়িতেই। তাছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকেন্দ্রিক অনেক স্মৃতির আধারও
তাঁর এই নানা বাড়িটি।
মিয়াসাবের দোষ-বু : খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নন্দিত অধ্যাপক মরহুম প্রফেসর ড. কে এম মোহসীন ছিলেন তাঁর মামা ও প্রত্যক্ষ শিক্ষক।
রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী সাঈদা হাকিম এবং দুই ছেলে মিতুল হাকিম ও রাতুল হাকিমও সফল ব্যবসায়ী। একমাত্র মেয়ে চিকিৎসা সেবার মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছেন।
তিনি রাজবাড়ী জেলার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিন যাবৎ সভাপতির পদ তিনিই অলংকৃত করে আছেন।
দ্বাদশ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত মন্ত্রিসভায় তাঁর নাম গণমাধ্যমে আসার সাথে সাথে রাজবাড়ীবাসী আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে। এ সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় উদ্বেলিত জনতা তাঁর পাংশার বাড়িতে ভীড় জমায়। অনেকেই প্রিয় এ নেতার সাথে সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আগমন করে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। রাজবাড়ীবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করেছেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর উপর আস্থা রেখে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে যুগোপযোগী ও কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ মাধ্যম রেলপথের আধুনিকায়ন ও স্মার্ট রেল ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বটি তাঁর কাঁধেই ছেড়ে দিয়েছেন। এক বক্তৃতায় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেছেন, “আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলাম রাজবাড়ী জেলা এ পর্যন্ত কোন পূর্ণ মন্ত্রী পায় নি- এবারে যেন সেই অপ্রাপ্তি পূর্ণ হয়। তিনি আমাকে নিরাশ করেন নি। আমাকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে তিনি আমার পাশাপাশি পুরো রাজবাড়ীবাসীকে সম্মানিত করেছেন। এজন্য আমরা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ।”
রেলপথমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি রেলওয়ের দুর্নীতি মুলোৎপাটনের ঘোষণা দিয়েছেন। রেলের দখলকৃত জমি উদ্ধার ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। রেলের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের বিষয়টিও তাঁর মাস্টার প্লানে রয়েছে। রেলওয়ের বর্তমান উন্নয়ন ধরে রেখে ভবিষ্যতে এটির আরও সম্প্রসারণের মাধ্যমে গোটা দেশকে রেল-নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে এসে রেলকে একটি নিরাপদ ভ্রমণের বাহন ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করাই তাঁর মন্ত্রণালয়ের প্রধান লক্ষ্য বলে তিনি মনে করেন।
বিরোধিতার আড়ালে ইসরায়েলকে বিপুল অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইতোমধ্যেই রেলপথ ব্যবস্থায় সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। মন্ত্রী মহোদয়ের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় চলতি মাসের ৫ তারিখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ১২৫ জন পরীক্ষার্থীকে নিয়ে যাত্রাকারী ঢাকা-রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার্থীদের পৌছে দিয়ে যে মানবিকতাবোধ আর দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই রেলব্যবস্থার আগামীর সুদিনকেই নির্দেশ করে।
নিজ জেলা ও নিজ সংসদীয় আসন রাজবাড়ী জেলার রেলপথ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যেও তিনি বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কোন ভালো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হবে- এই মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে তিনি নিজ ঘর পাংশা থেকেই রেলেওয়ের জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু করেছেন। আজকের পত্রিকার খবর অনুযায়ী গত ১১ই মার্চ তাঁর নিজ উপজেলার বারেক মোড় থেকে অবৈধ ৩৫ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং এ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ নিশ্চিত করেছেন। এভাবেই রেলের জমি উদ্ধারের মাধ্যমে রেলের শহর রাজবাড়ীর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। রাজবাড়ীতে দক্ষিণাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে বড় মেরামত কারখানা স্থাপনের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। চেষ্টা করছেন রাজবাড়ীবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া রাজবাড়ী জেলাকে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বা টানেলের মাধ্যমে সরাসরি ঢাকার সাথে সংযোগ স্থাপনের। তাছাড়া গত বছর রাজবাড়ী জেলায় ইউজিসি প্রস্তাবিত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজটি যাতে অতি দ্রুত শুরু হয় সে লক্ষ্যেও কাজ করছেন তিনি।
ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’
আজীবন সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম কঠোরতা ও কোমলতার মিশেলে একজন নিখাদ মানুষ। ইতিহাস পড়তে পড়তে তিনি নিজেই এখন হয়ে উঠেছেন ইতিহাস স্রষ্টা- রাজবাড়ী জেলার রাজনৈতিক ইতিহাস এখন শুধু তাঁকেই নিয়ে আবর্তিত। জেলার উন্নয়নে তিনি যে বিরাট কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়িত হলে তিনি পরিণত হবেন একজন মহানায়কে। রাজবাড়ীবাসীর নিকট এখন তাঁর একটিই চাওয়া তিনি যেন সুস্থভাবে সুন্দরভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব আস্থার সাথে পালন করতে পারেন। আমরা ক্ষণজন্মা এ রাজনৈতিক ইতিহাস স্রষ্টার জন্য মহান স্রষ্টার নিকট অশেষ রহমত প্রার্থনা করি।
সম্পাদনায়: ডা. জাহাঙ্গীর হুসাইন