প্রথম-পর্ব
ভূয়া কোম্পানির এক্সিকিউটিভ
হারুন আল রাশিদ
কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলো হঠাৎ করেই। আপনজনদের একজন আমাকে বুঝাতে সক্ষম হলো, বর্তমান যুগে কম্পিউটার চালনায় অজ্ঞ থাকলে চলমান সভ্যতার সাথে তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়বে। বিজ্ঞান উৎকর্ষ পৃথিবীর বেশির ভাগই পরিচালিত হয় কম্পিউটারের কল্যাণে।
যুঁৎসই মনে হলো কথাগুলো। ভেতরে ভেতরে আগ্রহ বেড়ে গেলো এই যন্ত্রটার প্রতি। অনুকূল মাধ্যম পাচ্ছিলাম না। নিজের মতো শেখার পরিবেশ খুঁজতে ছিলাম। এক বিকেলে বাল্যবন্ধু সুমনের সাথে দেখা। ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর বেড়ি বাঁধের ওপরে। আমি তখন কামরাঙ্গীরচরেই থাকতাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, ওর একটা স্টুডিও আছে। সেখানে আছে কম্পিউটার শেখানোর ব্যবস্থা।
সুমন স্থায়ীভাবে বসত করে গাজীপুরের মাজুখান এলাকায়। তার কাছে শিখতে হলে কিছুদিনের জন্য আমাকে সেখানেই স্থায়ী হতে হবে। আব্বা রাজি না হলেও কৌশলে মা’কে দিয়ে ম্যানেজ করালাম।
পনের দিনের মাথায় চলে গেলাম গাজীপুরের মাজুখানে। প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র সাথে নিয়ে। সেখানেই পরিচয় হলো রাসেদ নামক একজন লোকের সাথে। ‘র ফলা’ উচ্চারণ না করেই কথা বলে সবসময়। যেমন- ব্রাদার্সকে বলে বাদার্স। চেষ্টা করেও উচ্চারণে সামান্য শুদ্ধতা আনতে পারিনি। কথায়, আচরণে অজ্ঞতার ছায়া লেগেই থাকতো। শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি পরিমাপ করতে সময় লাগবে বড়জোর কয়েক সেকেন্ড। কিছুটা সঙ্গ পাওয়া যাচ্ছে এতটুকুই।
সতের-আঠার দিনের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি যাওয়ার। ঢাকা, কামরাঙ্গীরচর। যাওয়ার আগেরদিন রাতে ধানক্ষেতের আলে বসে রাসেদ সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে কথাটা বললো- ‘বাদার্স কোম্পানিতে (ব্রাদার্স) দুইদিন হলো নতুন চাকরি নিয়েছি। আপনি চাইলেই জয়েন করতে পারবেন। এক্সিকিউটিভ পদে। গাজীপুরেই পোস্টিং দিবে। আমাদের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবো। মা আপনাকে খুব পছন্দ করেন।’
আমি রাজি হয়ে গেলাম। পরদিন বাসায় রওয়ানা হওয়ার আগে কাগজে লিখে ঠিকানা হাতে ধরিয়ে দিলাম। মুখে বললাম, আমার ব্যাপারে অফিসের বসের সাথে কথা ফাইনাল হলেই যেনো কামরাঙ্গীরচর চলে আসে।
বাসায় ফিরলে অধিকাংশেই পুনরায় গাজীপুর না যাওয়ার পক্ষে মত দিলো। অল্পদিনের মাথায় ভুলে গেলাম রাসেদের সাথে কথপোকথন। নিজের মতো করে চলছি। মাসখানেক বাদে একদিন রাত নয়টার দিকে রাসেদ এসে হাজির। আমি তখন বাসার বাইরে। আমাকে ফোনে বলা হলো, রাসেদ নামে একজন আমার খোঁজে এসেছে। বাসায় আসলে আব্বা বললেন, ‘তোর একটা চাকরির খবর। ছেলেটাকে ভালোই মনে হচ্ছে। ট্রাই করে দেখতে পারিস।’
সেদিন রাতে রাসেদকে যেতে দেয়া হলো না। আমাদের বাসায় রাত্রি যাপন করলো। পরেরদিন বিকেল চারটায় দু’জন বেরিয়ে পড়লাম। গুলিস্তান থেকে রিকশা যোগে বাংলা মটর ‘জহুরা মার্কেট’ গেটে গিয়ে নামলাম। দোতলায় উঠে সোজা অফিস রুমে। অফিস ইনচার্জের সাথে কথা বলে খুব একটা ভালো লাগলো না। চাকরি সুবাদে বাসা থেকে দূরে থাকতে পারবো এই সুবিধা লুফে নেয়ার জন্যই কথা পাকাপাকি করলাম।
আমাকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হলো। এর মধ্যেই সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে কর্মস্থল গাজীপুর যেতে হবে। ছোট্ট একটা স্যূটকেসে কয়েকটা প্রডাক্টের স্যাম্পল দেয়া হলো। তার ভেতরে ছিলো সয়াবিন তেল, সরিষা তেল, প্যাকেট আটা, চা, বাল্বসহ আরও দু’চারটা আইটেম। সবগুলো প্রডাক্টই নিম্নমানের। প্রশ্ন করলে বস আলম সাহেবের উত্তর, ‘কোম্পানির মাল যত খারাপই হোক আমার কাছে সেরা মানের। আপনারা ডিস্ট্রিবিউটরকে এই বুঝই দিবেন।’
তরিনো
ইতালি