বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা
জামাল উদ্দিন
সৈকত,সামির ও সুশমিতা তিন ভাই-বোনের জনক আরমান আলি ও জননী রেবেকা বেগম।আরমান আলি একজন প্রাইভেট কোম্পানির ১২০০০ টাকা বেতনের চাকুরি করতো।স্বল্প আয়েও ছিল তার সুখের সংসার। শত কষ্টের মাঝেও ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষা দানে তার আগ্রহ ছিল প্রবল। এদিকে রেবেকা বেগমও জীবনের আরাম আয়েস আর স্বচ্ছন্দ্য দূর করে সন্তানাদি মানুষ করার লালসায় মেতে উঠেন।সৈকত কলেজ এর গন্ডি অবসান করে উচ্চ শিক্ষার্জন করতে টাকা লাগবে ২০০০০ টাকা। বাবা শুনে আশ্বাস দিলো ছেলেকে।আর বাহিরে এসে হতাশ মনে বসে আছে। চোখের পানি অঝোর ধারায় বইছে।কিভাবে ছেলের টাকা জোগাড় করবে।রেবেকা বেগম তার শাশুড়ির দেওয়া এক জোড়া বালা হাতে তুলে দিলেন এবং তা বিক্রয় করে ছেলের হাতে তুলে দিতে বলেন। আরমান আলি উপায় না পেয়ে শেষ স্মৃতিতে রাখা সেই বালা বিক্রয় করে ছেলের হাতে তুলে দিলেন।ছেলে শহরে চলে গেলেন আর বাবা মাসে মাসে টাকা পঠান। তার আশা ছেলে একদিন বড় হয়ে বাবার কষ্ট দূর করবেন।এদিকে দিন গুনতে গুনতে মেয়ে বড় হয়ে গেলেন।উচ্চ মাধ্যমিক পার হতেই আরমান আলি তার নামমাত্র পিতৃসম্পদ তাও বিক্রি করে সুশমিতার নাম করা এক সুনাম ধন্য বাড়িতে বিয়ে দেন।ভাবলেন মেয়েতো সুখেই থাকবেন।জমি গেলেও মেয়ে হয়তো ভাবাকে দেখবেন।ঐদিকে বড় ছেলে লেখাপড়া শেষ হতে না হতেই সহপাঠি এক ধনির দুলারির সাথে প্রেম করে বিয়ে করে ঘর জামাই হয়ে দিব্যি সাবলিল দিন কাটাচ্ছে।ছোট ছেলেও লেখাপড়া প্রায় শেষ করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে বাবার সুপারিশে চাকুরি করতে লাগলেন।বড় ছেলের তেমন কোনো সাড়া না পেয়ে বাবা ছোট ছেলের আশায় বুক বাধেন।আর ছেলেকে দেখে শুনে সুন্দর একখান বিয়ে করালেন।এর মধ্যে বাবা অবসরে গেলেন।বাবা আর টাকা আয় করতে পারেনা অপর দিকে রেবেকা বেগম ও সংসার ঘানি টানতে টানতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।এদিকে বাবা মা দুজনকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানো ঘরের লহ্মীর পক্ষে সম্ভম নয় বলে জানালেন তার আদরের স্বামীকে।দিন দিন কথার তীক্ষ্ণ তীরের অঘাত পড়তে লাগলো বুড়াবুড়ির বুকে।কিন্তু তাদের একমাত্র নাতির মায়া শত কষ্টের আঘাত ও সহ্য করতে সাহায্য করে।নাতিকে নিয়ে তাদের শেষ বয়সের আনন্দ বেদনা।নাতিও দাদা দাদিকে ছাড়া যেন কিছুই বুঝেনা। বউয়ের তথাকথিত অত্যাচার আর নানা অশান্তির অতিষ্ট হয়ে ছেলেও চিন্তা করে, বাবা মাকে সংসারে রাখতে নিরুৎসাহিত হলেন।এক পর্যায়ে বাবাকে বলেন তার একার পক্ষে রাখা সম্ভব না।তাদের কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবেন।বাবা মা অনেক আকুতি জানালেন শেষ বয়সে একটু ছেলেকে পাশে রেখে কাছে থেকে দেখবেন।নাতির সাথে খেলা করবেন।শেষ নিশ্বাস যেন নিজের ঘরে ফেলে অন্তিম কাল শেষ করতে পারেন।তিন বেলার মধ্যে এক বেলা খেয়ে ঘরের এক কোনায় তারা দুজন থাকবেন। কিন্তু দাজ্জাল বউ কিছুতেই ক্ষ্যন্ত হলেন না।অবশেষে বাবা মা দুজনেই দুই জনই আশ্রমের বাসিন্দা হলেন।একসময়ের রক্তঝরা সেই শক্তি ব্যায় করে মানুষ করা ছেলেদের সুসময়ের মধ্যে আজ আরমান আলি ও রেবেকা বেগম হলেন বৃদ্ধশ্রমের বাসিন্দা।