প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিশাল প্রতিবাদ বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে বাংলাদেশের বিরোধী দলের অসংখ্য সমর্থকের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। ঢাকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। বার্তা সংস্থা এএফপি শনিবার ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এ কথা লিখেছে। এতে আরও বলা হয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে দুটি বিরোধী দলের লাখো সমর্থক বিক্ষোভ করেন। প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভেরিফায়েড ফেসবুকে সরাসরি প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে- একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও রাস্তার কালো ধোঁয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে হাজারো নেতাকর্মী দৌড়াচ্ছেন। এএফপি’র সংবাদদাতারা বলেছেন, পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ফলে সহিংসতা বিভিন্ন রাস্তা ও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলেছেন, এতে একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক।
বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা ওই পুলিশ কর্মকর্তার মাথায় কুপিয়েছে।
উপস্থিত এএফপি’র সাংবাদিকরা বলেছেন, বিরোধী বিএনপি এবং ইসলামপন্থি সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামীর এই প্রতিবাদ এ বছরের সবচেয়ে বড় সমাবেশ ছিল। তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তাকে সামনে রেখে তাদের এই বিক্ষোভ নতুন মোড় নিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। এ সময়ে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেশি। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বলেছেন, রাবার বুলেটে আহত কমপক্ষে ২০ জনকে নেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই সংঘর্ষ শুরু হয় ঢাকার সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক চার্চের সম্মুখে। সেখানে উত্তেজিত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছিলেন। অভিযোগ আছে, একটি বাসে ও একটি পুলিশ পোস্টে আগুন দেয়া হয়েছে। বিক্ষোভে সহিংসতার প্রতিবাদে রোববার দেশজুড়ে হরতাল আহ্বান করেছে বিএনপি। দলটির মুখপাত্র জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা করেছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা।
দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে বিএনপি’র অসুস্থ নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার পুরনো শত্রু খালেদা জিয়া কার্যত গৃহবন্দি আছেন। ওদিকে বিরোধী দল মাসের পর মাস তাদের দাবির পক্ষে প্রতিবাদ বিক্ষোভ গড়ে তুলছিল চাপ সৃষ্টির জন্য। শনিবারের র্যালিকে সামনে রেখে বিরোধীদলীয় শত শত নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। কর্মকর্তারা এটা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতাকর্মীরা শনিবার ঢাকায় জড়ো হন। রাজধানীমুখী রাস্তায় রাস্তায় চেকপয়েন্ট বসানো হলেও বাসে গাদাগাদি করে ট্রেনের ছাদে চড়ে তারা ঢাকায় আসেন। বিএনপি’র প্রধান কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভে তারা বিগত নির্বাচনে ভোট কারচুপি নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। চট্টগ্রাম থেকে আসা ছাত্র সেকান্দার বাদশা (২৪) বলেছেন, আমাদের দাবি শেখ হাসিনা সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জনগণের ভোট দেয়ার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, কমপক্ষে ১০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল এদিন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপি’র র্যালিতে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। অন্যদিকে এর কাছাকাছি জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন ২৫ হাজার মানুষ। তবে তাদের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল পুলিশের। অন্যদিকে বিএনপি’র মুখপাত্র স্বপন বলেন, তাদের র্যালিতে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। তিনি একে শেখ হাসিনার পদত্যাগের জন্য চূড়ান্ত আহ্বান বলে অভিহিত করেছেন। যদি তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন (যা তিনি করবেন না বলেই জোরালোভাবে দেখা যাচ্ছে) তাহলে দল আরও আগ্রাসী প্রতিবাদ কর্মসূচি দেবে। এর মধ্যে আছে হরতাল ও অবরোধ।
এএফপি আরও লিখেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা সরকারগুলো। এখানে শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টে আধিপত্য বিস্তার করে আছে এবং কার্যত একে একটি রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে পরিচালনা করছে। বিরোধী হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক, শত শত মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, শত শত নেতাকর্মীকে গুম করে দেয়ার অভিযোগ আছে সরকারের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে।