এক দিকে কাব্যময়তায় ছড়িয়েছেন বিদ্রোহের দাবানল, অন্যদিকে গেয়েছেন প্রেম আর মানবতার জয়গান। লিখেছেন, ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য’। তিনি বাংলা সাহিত্যের বিস্ময় প্রতিভা কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবি খ্যাত বাংলাদেশের জাতীয় কবির আজ ৪৫তম মৃত্যুদিবস।
এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জাতি আজ অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে প্রিয় কবিকে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আনুষ্ঠানিক আয়োজন সীমিত হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির সমাধি ছেয়ে যাবে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ফুলে।
সাহিত্য, সংস্কৃতি এমনকি রাজনীতির ময়দানে অসাম্প্রদায়িকতার মশাল জ্বালানো এই কবির জীবন প্রদীপ নিভেছিল মাত্র ৭৭ বছর বয়সে। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারত) বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি।
কাজী নজরুল ইসলাম সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। অসুস্থ হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন ১৯৪২ সালে। ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ ও সৈনিক। ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের যে রত্নভাণ্ডার সৃষ্টি করেছেন তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে রয়েছে। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে।
কবিতা, গান, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর সৃষ্টি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারকে উত্খাতের আন্দোলনে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। যার কারণে কারাবরণও করতে হয়েছে কবিকে। সংগীতে সৃষ্টি করেছিলেন অনন্য ধারা।
কাজী নজরুল ইসলামকে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁকে দেওয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। পরবর্তী সময়ে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় একুশে পদক। কবিকে দেওয়া ধানমণ্ডির কবিভবন পরিণত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নজরুল ইনস্টিটিউট’ হিসেবে। তাঁর রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণসংগীত।
কর্মসূচি : আজ শুক্রবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছায়ানট আয়োজন করেছে ‘মিলনে বিরহে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের। রাত ৯টায় ছায়ানটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হবে। ‘আমারে দেব না ভুলিতে’ শীর্ষক অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। আগামীকাল শনিবার রাত ৮টায় ফেসবুকে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হবে।