বন্ধুরা কোথা আজ বল দেখি তোরা?
খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন
বন্ধুরা কে কোথায়? ভালো আছিস নাকি-
কোভিডের ধাক্কাটা গেলোনাতো বুঝি?
আমি আর লক্ষণ বৌ-ছেলে নিয়ে
পাশাপাশি বেঁচে থাকার ফাঁক-ফোকড় খুঁজি।
আলিমের খোঁজ-টোজ কেউ জানে নাতো !
সে কোথায় হারায়েছে কোভিডের আগে,
রহিমার ঘর নাকি ভেঙে গেছে কবে
দারোয়ান মোকা নাকি আজো রাত জাগে।
বন্ধুরা কে কোথায়? ফোন-টোন করিস
এভাবে আর কিরে বাঁচা যায় মোটে?
আলেয়ার বুকে নাকি ওপেন সার্জারী
মাঝে মাঝে ভয়ানক শ্বাস টান ওঠে।
লালনের মাজারের লাল সালু পড়া
সবদুল আজো নাকি গঞ্জিকা টানে,
নিদারুণ অভাবি তাঁতি মনিরুল
বেলায়েত-রোবায়েত মেতে থাকে গানে।
কবিতার প্রেমে পড়া সেই আনোয়ার
আজ নাকি পুলিশের বড়সড় বস্,
বিসিএস পাওয়া সেই কাজীদের ছেলে
মফিজের জীবনেতো নেমেছিলো ধ্স।
পদ্মার কোল ঘেঁষা বাড়ী ছিলো কার?
মনে পড়ে? বোকাসোকা..! ওহ্ মনোয়ার
তার নাকি ভিটেমাটি সব গেছে খোয়া
সে কোথায় জানা আছে? খোঁজ নাই তার?
বন্ধুরা মনে আছে? খাদেমের কথা?
সারাদিন ছেলেটার ছিলো নীরবতা-
সেন্ট্রাল কমিটিতে আলোচিত হয়ে
খাদেমুল–সেই নাকি হলো বড় নেতা।
আহা!আজ মনে পড়ে শিশিরের স্মৃতি
তার সাথে কত কথা কত ছিলো প্রীতি
সাইকেল চালিয়ে সে –মাইলে মাইল
গেয়ে যেতো অনাবিল প্রেমময় গীতি।
আরিফুল-আমানত যোগাযোগে নেই
কোভিডের চাপ কবে যাবে বল তোরা?
কবিতার চিঠি যদি পাস কভূ শোন!
দেখে যাস কীভাবে বেঁচে আছি মোরা।
মনে যার হিংসের ছিলোনাকো চ্ছটা
রাজ্জাক সে কোথা? নদীয়ায় থাকে?
দেশে আর ফেরা নাকি হবেনাকো তারও?
সে নাকি রাতদিন আল্লাহকে ডাকে।
ইমরান ইমারতে গড়ে ঘরবাড়ী
গাড়ী-টারী কিনে নাকি পোয়া বারো, সের-
ব্যবসায় টাকা-কড়ি বেশ জমে তার
ফোন কলে কথা বলে পেয়েছিনু টের।
আরজুর দোকানও বিলজানি মোড়ে
আড্ডার কত কী যে কোভিডের আগে,
নাই আজ আড্ডার কোন আয়োজন
জনগণ বেঁচে থাকার শুধু রাহা মাগে।
বন্ধুরা কোথা আজ বল দেখি তোরা
মিলেমিশে এক সাথে কত দিন যেতো,
আজ কেউ পাশে নেই, মান্নান কাকু-
মোড়ে বসে সিঙ্গারা,ডাল-পুড়ি খেতো।
ক্ষুদিরাম খেয়াঘাটে ভাব নিতো খুব
হাসি দিতো হামিদুল খিলখিল করে
খাদিজাকে বারবার ভালোবাসি বলে
রশিদুল বিড়ি খেতো বসে বসে মোড়ে।
গাল ভরা হাসি হাসা সেই শহিদুল
কোথা আজ জানা নেই, নেই একেবারে,
খয়বার-মনোজের মিছে বাহাদুরী
দেখিনাতো কতকাল, দেখিনোতো তারে!
বিষাদের বিষমাখা বেলী ছিলো ফুল
ভালোবেসে কতজন হয়েছিলো শেষ,
আমি আর কুমারেশ কবি হবো বলে
নজরুল আদলে রেখেছিলাম কেশ।
কবি-টবি হতে আর পারিনিকো শেষে
হয়ে গেছি একেবারে শেষ একেবারে,
কুতুবের কথা আজ মনে পড়ে খুব
ছোট-খাটো ভূত নাকি চড়েছিলো ঘাড়ে।
কেউ তার খোঁজ আর বলেনাকো এসে-
আমিরুল বড় সাব চিটাগাঙ পথে
ধীরে নাকি ধোরা সাপ হয়ে গেছে শুনি
গাঁয়ে আর ফিরবেনা সেতো কোন মতে।
বিদেশের ভাত-পানি খেয়ে মুবারক
ফারুকের মতো তার জমিজমা ঢের,
তারা আজ মোটামোটি ধনী লোক বটে
আমি তো চাউল কিনি দিনে সোয়া সের।
মজিদের মলদ্বারে ক্ষত ছিলো জানা
ধীরে ধীরে ক্যানসারে রূপ নিলো তার,
মরে গেলো গতকাল করোনার ঘা’য়ে
লক ডাউন, বিধিবাম হলো জানাজার।
মারা গেছে আরো এক বান্ধবী রূমী
কচুয়ার বড়বাড়ী বউ হয়েছিলো
করোনার টিকা তার নেওয়া ছিলোনা
পজেটিভ ছিলো তার, ফোনে কয়েছিলো।
ধীরে ধীরে চলে গেলো কতগুলি প্রাণ
শৈশবের স্মৃতি ঘেঁটে নাম আসে কত!
মইনুল বজ্জাত গণবাহিনীতে
মিলেমিশে, লুকায়ে আছে অবিরত।
আরএফএল আজাদ আর বাবুলের সাথে
মাঝে মাঝে কথা হয় মোবাইল ফোনে
মন চায়-মন চায় ফিরে যাই আহা
ভালবাসা পেতে চায় মন, মনে মনে।