মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা ঃ
“আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে…..” কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন আর শুধু বৈশাখ মাস নয়, বছরের ৮/৯ টি মাসেই পদ্মা – গড়াই নদীতে থাকে হাটু জল, নদীর বুকে বিশাল ধু-ধু বালু চর। পুরাতন চরে গড়ে উঠেছে আবাসন। ফলছে ফসলও।
বর্তমানে পানির অভাবে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা – গড়াই নদী মরা খালের পরিচয়েও টিকে থাকতে পারছে না। গড়াই নদীর উৎস মুখ কুষ্টিয়ার পদ্মার তালবাড়িয়া থেকে শুরু করে খোকসা পর্যন্ত দু-তীর এখন জেগে উঠা বালু চরের বিস্তীর্ন মরুভূমি।
নদী এলাকায় দেখা দিয়েছে মরুময়তা। ভূ-গর্ভস্থ’ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নল-কূপগুলোতে ঠিকমত পানি উঠছে না। পাশাপাশি টিউবয়েলগুলোতে দেখা দিয়েছে আর্সেনিক। এক কালের পদ্মার প্রধান এই শাখা গড়াই নদীর রূপ ছিল ভয়ংকর, যা এখন ইতিহাস।
ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে গড়াই তার রূপ হারিয়ে ফেলেছে। ভারত চুক্তি অনুযায়ী পানি সরবরাহ না করায় গড়াই নদী আজ পরিনত হয়েছে একটি মরা খালে। সঠিকভাবে নদী খনন ও ডেজিং না করার কারণে পলি জমে-জমে গড়াই নদী ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে পদ্মা-গড়াই নদীর বুকে বিস্তীর্ণ বালু চর।
নদীর চরে এখন ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলার মাঠ। অনেক পুরাতন চরে গড়ে উঠেছে সরকারী আবাসন। নৌকা পড়ে আছে নদীর চরে। গড়াই নদীর গড়াই রেলসেতু ও সড়ক সেতুর অধিকাংশ পিলার আটকে গেছে বালুর চরে। পদ্মা- গড়াই পাড়ের জনবসতির গোসলের পানি পর্যন্তও পাওয়া যাচ্ছেনা। কোথাও কোথাও হাটুসম পানিতে গোসল করতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষের।
গড়াই নদীর শুরু থেকে খোকসা পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত সকল খেয়াঘাটের একই অবস্থা। কোথাও এখন চলছে বাঁশের সাঁকো দিয়ে হেটে পারাপার। বিস্তীর্ণ চর দিয়ে মানুষ হেটে পার হওয়ায় দূর্ভোগের শেষ নেই। গড়াই নদীতে এখন আর নৌকা চোখে পড়েনা। মাঝিরা নৌকা ছেড়ে শুরু করেছে বিভিন্ন পেশা। পানি এবং মাছ না থাকায় জেলেদের দূর্দিনের অন্ত নেই। অনেকেই জাল-জলা ছেড়ে বেছে নিয়েছে অন্য পেশা। সারা রাতের সামান্য পানিতে জাল ফেলে ২/৩ কেজি মাছ পায়না।
অন্যদিকে বর্তমানে গড়াই নদীর বুক দিয়ে বড়-বড় ট্রাক হাকিয়ে বালু নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। অনেক জেলে এবং মাঝি বর্তমানে ঐ ট্রাকের বালু শ্রমিকে হয়েছে পরিনত। ফারাক্কার এই বিরূপ প্রভাবে গড়াই নদী পানি শূণ্যতার ফলে অত্র অঞ্চলে মরুকরনের আর খুব বেশী দেরী নেই বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
/