প্রত্যেকটি শিক্ষকের বকাঝকা একটা সময়ে একজন ছাত্র বা ছাত্রী মিস করতে থাকে। তখন মনে হতে থাকে শিক্ষকদের সেই সকল বকাঝকা তাদের বর্তমান জীবনে গন্তব্যগুলো নিশ্চিত করেছে। স্কুল জীবন ছিল বলেই তাদের এত সুন্দর একটা মধুর স্মৃতি রয়েছে। এখনো অলস দুপুরে আনমনা হয়ে খুঁজে ফিরি আলিম স্যার, আলতাফ স্যার, প্রষন্ন কুমার স্যারকে। হয়তো উনারা ওপারে ভাল আছেন। কোনপ্রকার জ্যামিতি সামনে পড়লেই গোলাম সরোয়ার স্যারের জ্যামিতি বুঝানো এখনো মনে পড়ে। এখনো ভুলি নাই শফি স্যারের উক্তি “অতিরিক্ত কোনো কিছুই কিন্তু ভালনা”। শাহজাহান স্যার ছিলেন অঙ্কের জাহাজ, উনার কাছে শুধু অধ্যায় ও অংক নাম্বার বললেই বোর্ডে কষতে শুরু করতেন, কোনো বই লাগত না, যা আমাদের বিস্মিত করত। যেহেতু স্কুল থেকে আমাদের প্রধান ভিত্তি গড়ে ওঠে সেহেতু আমরা স্কুলকে কখনোই ভুলি না এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্কুলকে মিস করতে থাকি। খুব মিস করি, এক টাকা দিয়ে চারটা চকলেট কিনে খাওয়া বন্ধুগুলোকে। যাদের ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত কল্পনাহীন ছিল, যদিও দিনশেষে আমরা সবাই সবার মত হয়ে যায়।
বন্ধুদের সাথে মান অভিমান, রাগ অনুরাগ থাকাটা অসম্ভব কিছু না। স্কুল জীবনে সেই মান অভিমান, ঝগড়া আর মারামারি গুলোকে খুব মিস করি। রাজকুমার স্যারের ইংরেজি গ্রামারে মার খাওয়ার ভয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বাহিরে কাটানো সময় গুলোকে খুব মিস করি। পানি খাওয়ার কথা বলে হুজুর স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে প্রাইমারি স্কুল এবং মাদ্রাসা ঘুরে আসার সময় গুলোকে খুব মিস করি।
মনে পড়ে, স্কুল লাইফের সেই বৃহস্পতিবার এর অপেক্ষার কথা। যার অপেক্ষায় পাঁচ দিন বসে থাকতাম, কারণ বৃহস্পতিবার হাফ ক্লাস এবং পরে একদিন বন্ধ পাওয়া যেত। দশম শ্রেণীতে বৃহস্পতিবার চতুর্থ পিরিয়ডে বি.এস.সি স্যারের (আবুল হোসেন) পদার্থ ক্লাসে ছুটির ঘন্টার অপেক্ষায় আনমনা হয়ে বসে থাকা এখনো মনে পড়ে। এখন বৃহস্পতিবার আছে ছুটি আছে ঠিকই কিন্তু আগের মত সেই অনুভূতিগুলো আর নেই।
স্কুল জীবনের সবথেকে কষ্টের দিন এস.এস.সি পরীক্ষার বিদায় অনুষ্ঠানের দিন। সেদিন বন্ধুদের বিদায় জানাতে অনেক কষ্ট হয় কারন এটা ভেবে অনেকের সাথেই পরবর্তীতে আর কোনদিন যোগাযোগ হবেনা। অপরদিকে স্যারদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যগুলো জীবনে চলার পথের পাথেয় হিসেবে গ্রহনকরে চলে আসতে হয় স্কুল থেকে চোখ মুছতে মুছতে। যা প্রতিটি ছাত্র/ছাত্রীর জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক।
“হাইস্কুল জীবনের শেষদিন; মৃত্যুজালা।
অশ্র সিক্ত নয়নে জানিয়েছি, বিদায়।
বুকে পাথর চেপে মুখে হাসি রেখে
তবুও বলেছি মনে মনে ,
এ দেখাই শেষ দেখা নয়!
চলে যাওয়া রাস্তায় লিখে ছিলাম
বিদায় সবুজ ঘাসের রঙে ঘেরা, প্রিয় স্কুল।
ডেকে যায় নীল এ আকাশ,
বিষাদে ভরা স্নিগ্ধ বাতাস।
যে ঘাসে মেখেছি আলো,
পেছনের বেঞ্চে ফেলে আসা ধুলো জমা
সেই স্মৃতিই আজ কতনা মিষ্টি মধুর!
মনে পড়লেই কেন লাগে এত ভালো?”
স্কুল ছেড়ে চলে আসার অনেক বছর পর, কোনএক কর্মব্যস্ততাময় জীবনের একফাঁকে হঠাৎ যদি মনে পড়ে স্কুলের কথা, মনে পড়ে যায় যদি প্রথম প্রেমের কথা, নিশ্চিত হয়তো সবারই আবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করবে প্রানপ্রিয় স্কুল জীবনে। টাইম মেশিনে চড়ে আমরা যদি ফিরে যেতে পারতাম অতীতে বেশিরভাগ মানুষই ফিরে যেত তার স্কুল জীবনে, বিশেষকরে হাইস্কুল জীবনে।
“যদি কখনো ফিরে আসে
স্কুলের স্বর্ণালী দিনগুলি।
যেতাম ছুটে, রইতাম বসে
নাওয়া-খাওয়া ভূলি।”