আজ পলাশী দিবস
আসলাম হোসেন :
“পলাশী যুদ্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের শেষ পরিণত
১৭৫৭ সালের এ দিনে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে সংঘটিত হয় পলাশীর যুদ্ধ ।
মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় বিশাল সেনাবহর নিয়েও যুদ্ধে অশ্বারোহী ও ৩৫ হাজার পদাতিক বাহিনী নিয়েও নবাব সিরাজ পরাজয় বরণ করেন।
পক্ষান্তরে ক্লাইভের ছিল ৩ হাজার সৈন্য। তাদের মধ্যে ২ হাজার ১শ’ ছিল দেশীয় সিপাহি ও ৬ শ’ ইউরোপিয়ান পদাতিক ও ১ শ’৫০ জন গোলন্দাজ। তারপরও নবাবের পরাজয় হয়।
নবাবের পতনের মধ্যদিয়ে ভারতবর্ষে সাড়ে ৫ শ’ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারতবর্ষের শাসনভার পুরোপুরিভাবে চলে যায় ইংরেজদের হাতে।
যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ভগবান গোলায় মীর জাফরের জামাতা মীর কাশিমের হাতে সপরিবারে গ্রেফতার হন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
এরপর মীর জাফরের পুত্র মিরনের ইশারায় মোহাম্মদী বেগ তাকে হত্যা করে এবং মীর জাফর নবাব হয়।
কিন্তু প্রকৃতির বড়ই নির্মম পরিহাস। আল্লাহ কোনো জুলুমবাজ, প্রতারক, অত্যাচারীকে কখনও ক্ষমা করেন না।
সিরাজকে হত্যা করার কিছুদিন পরই খুনি মোহাম্মদী বেগের মাথায় গোলমাল দেখা দিলে নিজেই কুপে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।
মীর জাফরের মৃত্যু হয় দুরারোগ্য কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে।
ইংরেজ শাসন পাকাপোক্ত করতে তারা মীরজাফরের পুত্র মিরন কে শক্ত প্রতিপক্ষ মনে করে। লর্ড ক্লাইভের চক্রান্তে বিহারের রাজধানী পাটনার নিকট একটি সেনা ছাওনির তাবুতে অবস্হানকলে তাবুতে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়।
মহারাজা নন্দকুমারকে তহবিল তসরুফের অভিযোগে যাদের পক্ষে ষড়যন্ত্র করেছিল, সেই ইংরেজ কতৃক ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়।
জগৎ শেঠকে তার নিকটাত্মীয় স্বরূপ চাঁদের আদেশে নতুন নতুন বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে মুঙ্গের দুর্গ থেকে গঙ্গাবক্ষে ডুবিয়ে মারা হয়।
ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে গোপনে মৃত্যুবরণ করে।
পলাশী যুদ্ধের আর এক প্রধান ষড়যন্ত্রকারী রাজা রাজবল্লভ পদ্মায় ডুবে মারা যয়।
রায় দুর্লভ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কারাগারে ধুকে ধুকে মারা যায়।
ষড়যন্ত্রের পুরস্কর এক কোটি স্বর্ণমূদ্রা প্রাপ্তিতে ক্লাইভের দ্বারাপ্রতারিত হয়ে উর্মিচাঁদ উন্মাদ অবস্থায় পথে পথে ঘুরে করুণ মৃত্যুবরণ করে।
বিনা কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রবার্ট ক্লাইভ।
ওয়াটস কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় মারা যায়।
ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নবাব হয়ে মীর কাশেম যখন প্রকৃত নবাব হওয়ার চেষ্টা করেন, তখনই তার সঙ্গে ইংরেজদের যুদ্ধ বেঁধে যায়। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি ছদ্মবেশে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত কপর্দকহীন ও অনাহারে তার করুণ মৃত্যু হয়।
ইতিহাস থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেয়া উচিত।