নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৪ বছরের কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম রতন (৫০) নামের এক পাষণ্ড বাবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। অভিযুক্ত পিতা সিরাজুল ইসলাম রতন (৫০) লক্ষ্মীপুরের ৯ নং উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য।
০২ অক্টোবর সকালে ওই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মোঃ বেলায়েত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো জানান, ১ অক্টোবর ভিকটিম কিশোরীর মামা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে চন্দ্রগঞ্জ থানায় সিরাজুল ইসলাম রতনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে স্থানীয় হানিফ মিয়াজীরহাটে মানববন্ধন করেছে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। মানবন্ধনে রতনের ফাঁসির দাবি করে ঘটনার বর্ণনাকারী ও ভিকটিমের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি করেন বক্তারা। মানববন্ধন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর প্রতিবাদ হলেও অনেকদিন অতিবাহিতের পরও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। অনেকেই মনে করেন, এখনো অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম রতনকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি না দেওয়ায়, বা আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন- বিষয়টি নিয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা হয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মামলার এজাহার ও বাদী সাইফুল ইসলাম জানায়, সিরাজুল ইসলাম রতনের প্রথম স্ত্রী জোলেখা বেগম (৪০) নিজের মেয়েকে যৌন নির্যাতন (ধর্ষণ)সহ স্বামীর বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এতে রতন তার স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। পরে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে তার স্ত্রী জোলেখা বেগম বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা জানি। প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর কয়েক দিন পর রতন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পরও নিজের কিশোরী কন্যার প্রতি তার লোলুপ দৃষ্টি আরো বেড়ে যায় এবং একাধিকবার মেয়েকে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন নির্যাতন করে পাষণ্ড ওই পিতা। বিষয়টি দ্বিতীয় স্ত্রী জানার পর শুরুতে তিনিও প্রতিবাদ করেন। নাম প্রকাশ না করা সত্ত্বে স্থানীয় কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, পাষন্ড বাবার লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে ভিকটিম তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার কাছে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে ওই শিক্ষিকা ভিকটিমের মাকে বিষয়টি অবহিত করলে রতন ওই শিক্ষিকার উপর চড়া হয়।
নানা হুমকি ধামকি দিতে থাকে ওই শিক্ষিকাকে। এরই মাঝে বিচার চেয়ে ওই কিশোরীর একটি অডিও বক্তব্য ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখনই পুলিশ তৎপর হয়ে রতন ও কিশোরীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। চন্দ্রগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একে ফজলুল হক জানান, অভিযুক্ত রতনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।