তাজ ইসলাম, প্রকৃত নাম মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তাজু কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার কামারাটিয়া বড় বন্দেরবাড়ী গ্রামে ১৯৭৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ আবুল হাসিম বেপারী এবং মা মোছাম্মাদ কমলা খাতুন। তাজ তিন ভাই, তিন বোনের মাঝে প্রথম। কিশোরগঞ্জ সদরের রশিদাবাদ গ্রামে মোঃ মানিক মিয়ার প্রথম মেয়ে সুমী আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী গৃহিনী। ছেলে সাইয়্যেদ তাহসীনুল ইসলাম পরম ৫ম শ্রেণীতে মেয়ে ইশরাত জাহান লাবীবা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। ছোট ছেলে সাইয়্যেদ তাহমীদ ইসলাম সাবিত র বয়স তিনমাস।
তাজ ইসলাম প্যারামেডিক্স চিকিৎসক। প্রাকটিস করছেন ঢাকার সাভার থানার ভাকুর্তার আউয়াল মার্কেট, তার ফর্মেসির নাম তাজ ফার্মেসী। তার রক্তের গ্রুপ বি-পজেটিভ।
তাজ কবিতা, ছড়া, সাহিত্যালোচনা, গ্রন্থালোচনা, ছোটগল্প লিখে থাকেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থ ১. আরো কিছু কান্নার খবর (কবিতা ২০১৮ বইমেলা), ২. বিসমিল্লাহতে গলদ নাই (ছড়া ২০২০ বইমেলা) ইনভেলাপ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়। তিনি স্বরশব্দ নামক লিটলম্যাগ সম্পাদক, ছড়াপত্র নিব’র সহসম্পাদক।
তাজ ইসলাম যেসকল পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছে ১) শুরূক প্রকাশনা পরিষদ ও শুরূক সাহিত্য মজলিশ কর্তৃক “সম্মাননা স্মারক ২০১৮”; ২) বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি পরিবার কর্তৃক “বাসাসপ সম্মাননা ২০১৮” ৩) ইয়ুথ ডেভলাপমেন্ট ফোরাম কর্তৃক “সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯” এ ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
তিনি উৎসঙ্গ সৃজন চিন্তন এর সাংগঠনিক সম্পাদক, বিপরীত উচ্চারণ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ এর সাবেক সেক্রেটারি । এছাড়া অনেক সাহিত্য সংস্কৃতি ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন।
আমরা এখানে কবি তাজ ইসলাম এর পাঁচটি কবিতা দিয়েছি। পাঠক নিশ্চয় আপনার অন্তরের অনুভূতিতে সামান্য হলেও নাড়া দেবে এই কবির কবিতাগুলি।
১.
দৃষ্টির তাওয়াফ করি
আমার মা বুড়ো হয়ে
এখন তিনি এক পবিত্র শিশু।
বয়সের জমজমে ধৌত হওয়া
আমার গৃহে পবিত্র হাজরে আসওয়াদ
দরজায় উঁকি দিয়ে শ্বেত জোসনা দেখি
দৃষ্টির তাওয়াফ করি বারবার
মনে পাই মকবুল হজেরই স্বাদ।
মা ডাকে মৃদু কণ্ঠে “বাবা কইরে”
আমি লাব্বাইক লাব্বাইক
বলে সামনে দাঁড়াই।
মা আমার বুড়ো হয়ে
এখন তিনি এক স্বর্গ শিশু।
নাতি নাতনিরা তার খুনসুটি সাথী
তাদের হাসির রিনিঝিনি শব্দে
ঘরে জান্নাতের শীতল বাতাস বহে
আমি আঁড়চোখে মার পদতলে
জান্নাতের প্রশান্ত প্রস্রবণ দেখি।
২.
সাপেরা সুস্হ্য হয়ে ফিরে স্ব-বিষে
এই সাপ দংশিছে আমাদের বলয়ের
বহুত পায়ে
তার এখন অসুখ হায়! আমাদের কোন
ভাই
কাঁদিছে দোয়ায় সুস্হ হয়ে ফিরে আসে সে যেন গাঁয়ে।
আমিতো আতংকে আছি সে সাপের ভয়ে
সাপেরাতো ফিরে আসে স্ব-বিষে সুস্হ্য হয়ে হয়ে
ফিরে এসে ফের জানি দংশন করে কার পায়ে!
খোড়লের কাছে বসে এই ভেবে
বুড়ো এক পেঁচা তার ঝাপটায় ডানা
দেয় অভিশাপ,হায় সাপ!
এই সাপ গিলেছিল তার ক টি ছোট
ছোট ছানা।
সে সাপের দংশনে নীল হয়ে এ পেঁচাও
কাটিয়েছে কত বিষময় রাত
এখন সে অসুখ,তার মনে অতীতের শোক
নিশির শরীর খুঁজে এ পেঁচা সাপের তরে
পায় নাকো পায় নাকো কোন মোনাজাত।
৩.
তারা হলে মাঝি
(গীতি কবিতা)
দেশটা সুখের স্বর্গ হবে
দেশের সবাই সুখে রবে
দেশটা যদি নৌকা হয় আর তারা হলে মাঝি।
যারা দেশের জন্য দশের জন্য জীবন দিতে রাজি।
…….
দেশকে শত্রু মুক্ত রাখতে লড়াই করে যারা
আগ্রাসীদের চোখে শত্রু চিহ্নিত হয় তারা
তারা দেশের জন্য সর্বহারা হতে আছে রাজি
জানে তারা হতে পারে শহীদ কিংবা গাজী
দেশের জন্য তবু তারা জীবন দিতে রাজি।
তারা হতে পারে শহীদ কিংবা হতে পারে গাজী।
………
ন্যায় কায়েম আর
হক কায়েমের জন্য জীবন যারা
উৎসর্গ করতে দেয় হকের ডাকে সাড়া
দ্বীন কায়েমের জন্য তারা জীবন দিতে রাজি
তারা তৈরী সদা শহীদ হতে কিংবা হতে গাজী।
…..
তারা হতে পারে শহীদ কিংবা হতে পারে গাজী।
শহীদ গাজীর আশা নিয়েই তারা লড়াই করে
রণাঙ্গনে লড়াই করে কেউ মারে কেউ মরে
মরতে কিংবা মারতে তারা উভয়টাতে রাজি।
………
দ্বীন কায়েমের জন্য তারা শহীদ হতে রাজি
তারা তৈরী শহীদ হতে কিংবা তৈরী হতে গাজী।
৪.
স্বপ্নের তাবীর
স্বপ্নে দেখি রাজার সেপাই
আমার ঘর করেছে ঘেরাও
স্বপ্নে দেখি সিংহাসনের পায়া
লেহন করছে দূর্বল এবং সেরাও।
বজ্রকণ্ঠগুলো সব বিড়াল হয়ে গেছে
বিড়ালগুলো সব ইঁদুর হয়ে গেছে
সম্ভাবনাময় জোসনার রাতে
অমাবস্যার স্বপ্ন দেখি।
স্বপ্ন দেখি,দেখা স্বপ্ন ভুলে যাই
বাটনে আঙুল চেপে অতিদ্রুত লেখি।
আজিজ মিসরির বন্দিশালায়
নির্দোষ আমি বন্দি আছি
একই কক্ষে আল্লার নবী
হযরত ইউসুফ( আঃ) র কাছাকাছি।
এক হাতে স্বপ্নের হাতকড়া,
ডান্ডাবেড়ি, রিমান্ডের উষ্ণডিম
একগুচ্ছ গুম হওয়া গোলাপ;
আর অপর হাতে ছিল
ভোগ বেহালার সুর
আনন্দ নৃত্য ধ্বনি
মসনদ থেকে নেমে আসা
প্রাপ্তি মধু যা-কিছু আছে
সব নিয়ে গেছি তার কাছে।
সত্যবাদির মস্তক ছিন্ন হবে
চুপ থাকলে রাজার অমাত্য হয়ে রবে
তাবীর করলেন স্বপ্ন গোনে গোনে
আমি একদম চুপ আছি
স্বপ্নের তাবীর শোনে।
৫.
নির্মম পৈশাচিকতার শোকের পদাবলী
রাজনীতির অন্ধ ঘোড়া খুরের আঘাতে
উড়িয়ে দিতে চায় ঐতিহাসিক সত্য।
মুছে দিতে চায় প্রতিপক্ষের সকল সফল অর্জন।
আর নিরীহ জনতা পাঠ নেয় নিরপেক্ষতার
ইতিহাসের পাতা উল্টাতে উল্টাতে
নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেয়
বট বৃক্ষের ছায়ায়।
সত্য সন্ধানী যুবকের মত
পাঠ করে তারা একেকটি অমর নাম।
হৃদয়ে ধারণ করে ঘটে যাওয়া প্রতিটি নির্মম পৈশাচিকতার শোক
বুকের গভীরে প্রতীতী জাগে
দল নয়,মত নয়, বর্ণ নয়, মানুষের ব্যথায় মানুষের অন্তর ব্যথিত হোক।
জনতার কোন এক নিরপেক্ষ মন
ইতিহাসের সোনালী সত্যগুলো সযতনে তুলে রাখে নিজের থলিতে।
কেবল রাজনীতির অন্ধঘোড়ার দলীয় খুরাঘাতে নির্মম নিহত আহত হয় একেকটি পরম সত্য।