অনলাইন ডেস্ক: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই ডা. মুরাদকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডা. মুরাদের বিষয়ে তার কথা হয়। আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে ডা. মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলে তিনি এই বার্তা রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।
জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে তাকে প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি।
গত কয়েকদিন থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে আলোচনায় ছিলেন মুরাদ হাসান। বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বিভিন্ন মহল থেকেই তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি উঠছিলো।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম জিয়ার নাতনি ও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
এরই মধ্যে রোববার মধ্যরাতে চলচ্চিত্র অভিনেতা মামনুন হাসান ইমন ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সাথে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর এক ফোনালাপের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফোনালাপে প্রতিমন্ত্রী আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেন।
সংবাদমাধ্যমকে ভাইরাল হওয়া সেই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই ফোনালাপ দুই বছর আগের। একটি সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে প্রতিমন্ত্রী তাকে ফোন করেছিলেন।
ওদিকে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতির মধ্যে শিষ্টাচার থাকা বাঞ্ছনীয়।
‘যারা জনগণকে নিয়ে সব সময় ভাববে, জনগণের জন্য কথা বলবে তাদের মধ্যে যদি শিষ্টাচার না থাকে তাহলে তাদের দিয়ে জনগণের কোন কল্যাণ আসতে পারে না,’ বলছিলেন তিনি।
‘রাজনৈতিক মত-পার্থক্য থাকতে পারে, চেতনার পার্থক্য থাকতে পারে, তাই বলে কারো বিষয়ে অশালীন কথাবার্তা বলা, কুৎসিত কোন আচরণ করা – এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।’
হানিফ জানান, সোমবার সকালেই দলের পক্ষ থেকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নেয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।
এদিকে মুরাদ হাসানের সাথে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মুরাদ হাসানের একাধিক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সাথে কথা হয়। তারা বলেছেন, মুরাদ হাসান এমুহূর্তে কোনো বক্তব্য দেবেন না। তবে মুরাদ হাসান মঙ্গলবারের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।
মুরাদ হাসান এখনও এমপি পদে আছেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে দলীয় পদে আছেন, তাহলে তার কী হবে, বিবিসির এই প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সম্পাদক জানান, সেসব ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
‘আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ শান্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকবে,’ জানান হানিফ।
সূত্র : বিবিসি