টিপ কান্ড ও মায়ের অবমাননা
আমার ৩+ বছরের নাতি আয়মান। মোবাইলে ইউটিউবে কার্টুন দেখায় ওস্তাদ। সারাদিন হাতে মোবাইল থাকলে খেলাধুলা, খাওয়াদাওয়া সবই ভুলে যায়। যাহোক সেদিন আমি কাছে গিয়ে দেখি কার্টুনের ছবিতে বানর, হাতি, জিরাফ, গন্ডার ইটিসি। যে যার স্বভাব অনুযায়ী লাফালাফি করে যাচ্ছে। বানরটাকে দেখিয়ে বললাম, ” ভাইয়া, এটা কি?” ও বলল, ” এটা মাংকি।” আমি বললাম, ” এটা তো বান্দর!” ও খুব অবাক হয়ে বলল, ” দাদী মাংকি টা কি বান্দর হয়ে গেছে?” আমাদের কথোপকথন মোটামুটি এরকমই। কথা কিছু বেশি থাকলেও লিখলাম না। এখন এ পর্যন্তই। পরবর্তী কথায় আসি।
তিনদিন আগে ফেসবুকে একজন বিজ্ঞ লোক একটা পোস্ট দিয়েছেন সাম্প্রতিক টিপ কান্ড নিয়ে। অনেক দুঃখ নিয়ে টিপের পক্ষে পুলিশের বিপক্ষে। জ্ঞান ভান্ডার উজার করে উনি মোল্লা, মাওলানা, ওয়াজনসিহত, হিজাব, তেঁতুল হুজুর, টিপের মাহাত্ম্য, টিপ পরুয়াদের অধিকার সব মিলিয়ে একটি অতি দীর্ঘ বয়ান। তারপর শুরু হয়েছে কমেন্টের ঝড়। আমি একটু দেরীতে দেখলাম এবং সাদামাটা একটা কমেন্ট করলাম। উপরে কিছুদূর স্ক্রল করে একটা কমেন্টে এসে আমার চোখ আটকে গেল। টিপ কান্ডের মহানায়ক পুলিশকে নিয়ে লেখা। কমেন্ট টা হলোঃ “কোন মা তোর মতো খবিশকে জন্ম দিয়েছে?” ব্যস এতটুকুই। আমার মাথায় একটা আন্দোলন হলো। তবুও ঠান্ডা মাথায় রিপ্লাই দিলামঃ ” আপনার মায়ের মতোই এক মা।” তারপর চুপ করে আছি। দেখলাম এক বোন আমার রিপ্লাই টা লাইক করল। আমাকে ওই সময় অন্য একটা কাজে যেতে হলো। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার পূর্বে করা কমেন্ট এবং অন্য কমেন্টে করা আমার রিপ্লাই এবং তার লাইকসহ নোটিফিকেশন করা হয়েছে। ভাবলাম ভালোই হলো ইচ্ছামতো দেখতে পারব। এখন দেখতে গিয়ে দেখি নোটিফিকেশন টা থাকলেও কমেন্ট, রিপ্লাই, লাইক সব উধাও। বারবার খুঁজলাম — নাই। আগে পিছে অন্য সব কমেন্ট আছে। আরও যুক্ত হচ্ছে। ব্যপারটা বুঝলাম না। কিছুক্ষণ পরেই আবার দেখতে গিয়ে দেখলাম আমার নিজস্ব কমেন্ট ও নাই, দুটো নোটিফিকেশন এর একটাও নাই! আর সবই আছ। বেশিক্ষণ দেখার সময় পাই নাই। পোস্টটি স্বনামধন্য পেন্সিল থেকে করা হয়েছে। বুঝলাম না ফেসবুক এবং পেন্সিল এডমিন মহোদয়গন কেন আমার কমেন্ট ও রিপ্লাই গুলো উধাও করে দিলেন।
যাইহোক এখন আমার কথাঃ সন্তান জন্মদান মায়েদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটা পবিত্র দায়িত্ব। এখন পুলিশের মা এবং এই কমেন্ট করা খবিশের মা উভয়েই এই দায়িত্ব পালন করেছেন। জন্ম দান পর্যন্ত এটা পবিত্রই ____ কোনো ভুল নাই! ভালো- মন্দ, খবিশ, বদমাশ হওয়া এতো পরের ব্যপার। কিছটা বাবা মায়ের অবহেলা বাকি পুরোটা খবিশের নিজের অর্জন। এখন মায়ের এই পবিত্র দায়িত্ব পালনকে কটাক্ষ করে মাকে যে অপমান করা হলো তার কি হবে? বড়ো দুঃখের কথা হলো এই খবিশটা কমেন্ট এর আগে পিছে অসংখ্য কমেন্ট, জ্ঞান গরিমা কারোরই কম নয়- তাদের কারো চোখেই কি এই দূর্বৃত্তি টা পড়েনি? কিংবা চোখে পড়লেও মায়ের অপমানটা গায়ে বেঁধেনি?
কতো বড়ো বড়ো কথাই না বলি, বলছি টিপ কান্ড নিয়েও! মায়ের অপমানের চেয়ে টিপের অপমানই বড়ো! আসলেই বড়ো। তাই তো মানুষ ( নামধারী), কুকুর এককাতারে দাঁড়িয়ে কপালে টিপ পরে বাঙ্গালীত্ব জারি করছে, টিপ পরার অধিকার দাবী করছে। আমরা আর ওরা ( কুকুর) কি একই হয়ে গেলাম? ( উত্তর টা নেতিবাচক। শেষে আছে।)
পাঠক, উপসংহারে এসে গেছি এখন আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার নাতির গল্পের মো’জেজার সাথে কি এই গল্পের মো’জেজার কোনো সাযুজ্য খুঁজে পাচ্ছেন? ____ যদি পান দূর্বৃত্তদের বিচার দাবী করুন, মায়ের সম্মান পুনরুদ্ধার করুন। আল্লাহপাক আমাদের সহায় হউন, আমিন, ছুম্মা আমিন।
বিঃ দ্রঃ যদিও বানরের আচরন স্বভাব জাত, সে নিষ্পাপ। আর মানুষ? তার দূর্বৃত্তি? এক করলে বানর আর কুকুরকে অপমান করা হবে। আমরা এদের চেয়ে অধম। কুকুর যদি বুঝতে পারত ওকে টিপ পরানো হয়েছে _____ অপমানে মরেই যেতো। পক্ষে বিপক্ষে যে- ই কুকুরের কপালে টিপ পরাক – অন্যায় করেছে। নিজেই ছোট হয়েছে।