শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
বাৎসরিক আনন্দ ভ্রমণে কক্সবাজার গেলেন পাংশা প্রেসক্লাবের সদস্যরা মিঠাপুকুরে শাড়ী পেচিয়ে এক মহিলার আত্ম হত্যা পাংশায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত মৃত্যুর আগে ওয়াশরুম থেকে কবি হেলাল হাফিজের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ অনন্তলোকের চিরন্তন সফরে কবি হেলাল হাফিজ পাংশায় পুলিশকে দেখে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালানো আসামী গ্রেফতার ক্ষমা চাইলেন মুফতি আমীর হামযা আশা জাগিয়ে রাখি পাংশায় আগুনে পুড়ে ছাই হলো ৪টি ঘর খোকসায় আ.লীগ নেতাদের ছাড়াতে বিএনপির হাইব্রীড নেতাদের তদবিরে জনমনে প্রশ্ন  খোকসায় আওয়ামীলীগ নেতা আটক, ছাড়িয়ে নিতে কৃষকদল নেতার তদবীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত কবি রফিকুল্লাহ কালবী : সাক্ষাৎকার পাংশায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী, কেক কাটা ও আলোচনা সভা কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

জুমআর দিনে হক্কানীর বয়ান–ইসলামে ন্যায় বিচার ::

মাওলানা খালিদ হোসাইন সিপাহী / ৬৪৪ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় শুক্রবার, ১১ জুন, ২০২১, ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

জুমআর দিনে হক্কানীর বয়ান
—————-
ইসলামে ন্যায় বিচার ::
>>>>>>>>>
وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ
‘তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন তা ন্যায় পরায়ণতার সাথে করবে
===========
মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ‘তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন তা ন্যায় পরায়ণতার সাথে করবে’ (নিসা ৪/৫৮)।
আরবী আল-আদল শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ন্যায়-বিচার। আল-আদল আল্লাহ তা’আলার ৯৯ বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। আল্লাহ তা’আলা ন্যায়বিচারক, সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক তা আল-কুর’আনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন।
ন্যায়বিচার করা, সত্যকথা বলা, স্বজনপ্রীতি পরিহার করা এবং দুর্নীতির মূলোচ্ছেদের প্রচেষ্টা হচ্ছে পরহেজগারী বৈশিষ্ট্য। এটা একমাত্র ঈমানে দৃঢ়তা সম্পন্ন জবাবদিহিতার ভয়ে আল্লাহভীতি, আল-ফিতরায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব।
সমাজে কোনো একজন অপর একজন ব্যক্তি, পরিবার কিংবা গোষ্ঠী কর্তৃক আর্থিক কিংবা সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিষয়টি সুরাহার জন্যে স্থানীয় সমাজপতিদের নিকট বিচার প্রার্থী হন। এসব সমস্যার বিষয়ে ফায়সালা দেয়ার অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বল ব্যক্তিদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা থাকে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ::
وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ‘তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি’ (শূরা ৪২/১৫)।
অন্যত্র তিনি বলেন
,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاء لِلّهِ وَلَوْ عَلَى أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالأَقْرَبِينَ إِن يَكُنْ غَنِيّاً أَوْ فَقَيراً فَاللهُ أَوْلَى بِهِمَا فَلاَ تَتَّبِعُواْ الْهَوَى أَن تَعْدِلُواْ وَإِن تَلْوُواْ أَوْ تُعْرِضُواْ فَإِنَّ اللهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيراً ‘
হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও এটা তোমাদের নিজের অথবা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, যদি সে সম্পদশালী বা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট। অতএব সুবিচারে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ কর না এবং যদি তোমরা বক্রতা অবলম্বন কর বা পশ্চাৎপদ হও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সমস্ত কর্মের পূর্ণ সংবাদ রাখেন’(নিসা ৪/১৩৫)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ كُوْنُوْا قَوَّامِيْنَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনও সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করবে, এটা তাক্বওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহ্কে ভয় করবে। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন’ (মায়েদা ৫/৮)।
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُواْ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى
‘যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায় কথাই বলবে, তোমার নিকট আত্মীয় হ’লেও’ (আন‘আম ৬/১৫২)।
ন্যায়বিচার সম্পর্কে মহান আল্লাহ আরও বলেন
,وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيْهَا أَنَّ النَّفْسَ بِالنَّفْسِ وَالْعَيْنَ بِالْعَيْنِ وَالأَنْفَ بِالأَنْفِ وَالأُذُنَ بِالأُذُنِ وَالسِّنَّ بِالسِّنِّ وَالْجُرُوْحَ قِصَاصٌ
‘আমরা তাদের জন্য এতে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ কিছাছ (যখম)’ (মায়েদাহ ৫/৪৫)।
কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘যখন মানুষের মাঝে (কোনো কিছুর) ব্যাপারে বিচার ফায়সালা করো তখন তা ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে করবে।’ (সূরা নিসা: ৫৮)।
সমাজের চলমান দ্ব›দ্ব, সংঘাত ও সমস্যা গুলো ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করার ক্ষেত্রে মোমিনের দায়িত্ব রয়েছে। যারা ন্যায় নিষ্ঠতার সাথে সমাজের কোনো দ্ব›দ্ব সংঘাতের ফায়সালা দেন তাদেরকে আল্লাহ খুব ভালোবাসেন।
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ المُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ: الَّذِينَ يَعْدِلُونَ في حُكْمِهِمْ وأَهْلِيْهِم وَمَا وَلُوْا ». رواه مسلم বাংলা অনুবাদ আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় ন্যায় বিচারকরা আল্লাহর নিকট জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। যারা তাদের বিচারে এবং তাদের গৃহবাসীদের মধ্যে ও যে সমস্ত কাজে তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, তাতে তারা ইনসাফ করে’ [মুসলিম ১৮২৭, নাসায়ি ৫৩৭৯, আহমদ ৬৪৪৯, ৬৪৫৬,
৬৮৫৮]
এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা দুটো দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায় বিচার করবে; নিশ্চয়ই আল্লাহপাক ন্যায় বিচারকদের ভালবাসেন।’ (সূরা হুজরাত:৯)।
রাসূল (সা:) ছিলেন তার সুমহান বিচারক। আল্লাহ পাকের ঘোষণা ( নিশ্চই আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি সত্য সহকারে, যাতে করে মানুষের মাঝে ফায়সালা করতে পারেন, আর আপনি সত্য গোপন কারীদের সাথে তর্কে লিপ্ত হবেন না, সূরা নিসা:১২০)।
বনী মাখযুম গোত্রের এক মহিলা মানুষের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কর্য করার পর তা অস্বীকার করলে, আল্লাহর রাসূল (সা:) তার উপর চুরির শাস্তি তথা আল্লাহর হুকুম হাত কাটার নির্দেশ প্রদান করেন। অত:পর মহিলা গোত্রের ব্যাক্তিবর্গ উসামা বিন যায়েদ (রা:) কে রাসূলের নিকট মহিলার জন্য সুপারিশ করতে অনুরোধ করলো, যাতে করে মহিলাকে উক্ত হুকুম থেকে পরিত্রাণ দেয়া হয়, উসামা রাসূলের নিকট অতি প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন । কিন্তু আল্লার রাসূল শুনে ভীষণ রাগাণ্বিত হলেন এবং বলেন: তোমাদের পূর্বে যারা ধ্বংশ হয়েছে তাদের মধ্যে কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত, আর কোন হীনদুর্বল ব্যক্তি চুরি করলে তারা তার উপর আল্লাহর বিধান আরোপ করত, আল্লাহর কসম যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত তবুও আমি তার হাত কেটে দিতাম। আর এভাবেই তিনি সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নজীর রেখে গেছেন । ইসলাম ন্যায়বিচারের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে, জুলুম অবিচার থেকে নিরুৎসাহীত করেছে কারণ জুলুম কেয়ামতের দিন হবে অন্ধকারাচ্ছন্নময় ।
ইসলামের প্রসারের সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল( সা:) বিচার কার্য পরিচালনার জন্য তার সাহাবীদের দূরদুরান্তে প্রেরণ করে ছিলেন । মুয়ায (রা:) কে ইয়ামানের প্রতিনিধি করে পাঠানোর সময় সর্বশেষ যেই নির্দেশ দিয়ে ছিলেন, হে মুয়ায! মাযলুমের দোয়া থেকে ভীত থাকবে, কারণ মাযলুম যখন আল্লাহর নিকট দোয়া করে তখন তার এবং আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকেনা ।
বিচার কার্য পরিচালনা বিষয়ে আলী (রা: ) কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,ওহে আলী! যখন তুমি দুই ব্যক্তির বিচার কাজে নিযুক্ত হবে, ততক্ষণ তাদের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন করবে না যতক্ষণ দ্বিতীয় ব্যক্তির নিকট থেকে ঘটনার বিবরণ পরিপূর্ণ না শুনবে, যেভাবে শুনেছিলে প্রথম ব্যক্তির নিকট থেকে, আর যখন এমনটি করবে তখনই বিচার কার্য তোমার নিকট স্পষ্ট হবে (আবু দাউদ,তিরমিযী)।
রাসূল (সা: ) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা একজন বিচারকের সাহায্যে থাকেন ততক্ষণ যতক্ষণ সে নিজেকে যুলুম অবিচার থেকে বিরত থাকে, আর যখন সে তাতে নিমজ্জিত হয় তখন তার সঙ্গী হয় একমাত্র শয়তান ।(হাকেম, বায়হাকী)
যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিচার কাজে নিযুক্ত হয় অত:পর তার ন্যায় বিচার সদাসর্বদা জুলুম অত্যাচার থেকে বিজয় লাভ করে তার জন্য রয়েছে জান্নাত, আর যার জূলুম অন্যায় রায় ন্যায় বিচারের উপর বিজয় লাভ করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম ।( আবু দাউদ )
আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন যেই সাত ব্যক্তিকে ছায়া দিবেন তার অন্যতম হল একজন ন্যায়বিচারক শাসক (মুসলিম ) ।
রাসুল (সা:) বলেছেন,বিচারক তিন ধরনের দুই ধরনের জাহান্নামী এক ধরনের জান্নাতী, যে সত্য জেনেও অন্যায় বিচার কার্য করে সে জাহান্নামী, যার বিচার কার্যের জ্ঞান না থাকা সত্বেও বিচার কার্য করল সে জাহান্নামী, আর যে সত্যকে জানলো এবং সে অনুযায়ী বিচার রায় দিল সে জান্নাতি (ইবনে মাজাহ) ।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ক্ষমতার দাপট কিংবা প্রতিপক্ষের সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তি থাকায় সত্য ঘটনাও মিথ্যে প্রমাণিত হয়ে যায়। প্রভাবশালীদের কেউ কেউ অনৈতিক অপকর্ম কিংবা খুন খারাবির মতো অন্যায় কাজ করেও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়। প্রভাবশালীদের আক্রমণের ভয়ে অনেক সময় সত্য একটি ঘটনা প্রমান করার জন্যে কোনো একজন সাক্ষীও খোঁজে পাওয়া যায় না। সাক্ষ্য দাতাদের মধ্যে কেউ কেউ কখনও কখনও উৎকোচ গ্রহণ করে মিথ্যে সাক্ষ্যও প্রদান করে থাকেন।
এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদারগণ! তোমরা (সর্বদাই) ন্যায় বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহ পাকের জন্যে সত্যের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করো, যদি এটি তোমার নিজের, তোমার নিজের পিতামাতার কিংবা নিজের নিকট আত্মীয় স্বজনের উপরও আসে, সে ব্যক্তি ধনী কিংবা গরীব, তাদের উভয়ের চাইতে মহান আল্লাহর অধিকার বেশী, অতত্রব আপনি কখনো ন্যায় বিচার করতে নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না, যদি তোমরা পেঁচানো কথা কিংবা (সাক্ষ্য দেয়া থেকে) বিরত থাকো, তাহলে (জেনে রাখ), তোমরা যা কিছুই করো না কেন, আল্লাহ পাক তার যথার্থ সংবাদ রাখেন।’ (সূরা নিসা:১৩৫)।
ন্যায় সংঘতভাবে কোনো ঘটনার ফায়সালা দেয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষীর ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষ্যদাতাকে সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে আল্লাহকে হাজের নাজের জেনে সত্য সাক্ষ্য প্রদান করতে হবে। কারণ সাক্ষ্যদাতা ঘটনার আমানতদার। এছাড়া সাক্ষ্য দাতার সাক্ষ্যর উপর বিচারের ফায়সালা নির্ভর করে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে নিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ করার লক্ষে বিদ্বেষ বশত: কোনো বিষয়ে ফায়সালা দেয়া কিংবা সাক্ষ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার স্বজন প্রীতি করা যাবে না। স্বজন প্রীতি দুর্নীতির একটি অংশ এবং ন্যায় বিচার পরিপন্থী কাজ।
এরশাদ হয়েছে,‘ হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহর জন্যে (সত্যও ) ন্যায়ের উপর সাক্ষী হয়ে অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, কোনো জাতির দুশমনি যেন তোমাদের এমনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ন্যায় ও ইনসাফ করবে না।’ (সূরা মায়েদা: ৮)।
বর্তমান সময়ের বাস্তবতায় কখনও কখনও ফায়সালা দানকারী কিংবা সাক্ষ্য দাতাকে প্ররোচিত হতে দেখা যায়। আল্লাাহ ইনসাফের সাথে বিবাদ মিমাংসাকারীকে ভালবাসেন।
এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ন্যায় নিষ্ঠদের ভালোবাসেন।’ (সূরা মায়েদা:৪২)। ন্যায় সংগত ফায়সালা দেয়া একটি সৎকর্ম। ইহার ফজিলত সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘মু’মিনরা তো (একে অপরের) ভাই বেরাদর, অতত্রব তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ পাককে ভয় কর আশা করা যায় তোমাদের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে।’( সূরা হুজরাত:১০)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, সাত শ্রেণীর লোকদের আল্লাহ সেই কঠিন দিনে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।
তারা হচ্ছে:
=======
১. ন্যায়বিচারক।
২. ঐ যুবক যে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত তথা তাঁর দাসত্ব ও আনুগত্যের মধ্যে বড় হয়েছে।
৩.ঐ ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সাথে জড়ানো।
৪. ঐ দু’ব্যক্তি যারা আল্লাহর জন্যে পরস্পরকে ভালোবাসে; আল্লাহর জন্যই তারা মিলিত হয় এবং আল্লাহর জন্যেই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
৫. ঐ লোক যাকে অভিজাত বংশীয় কোনো সুন্দরী রমণী কুকর্মের জন্যে আহŸান করে। জওয়াবে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।
৬. ঐ লোক যে গোপনে দান করে, এমনকি তার ডান হাত কি দান করল বাম হাত তা টেরও পায় না।
৭. ঐ লোক যে একাকী গোপনে আল্লাহকে শ্নরণ করে দুচোখের অশ্রæ ঝরায়। (বুখারী:৬৬০)। হ
যরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই যারা ইনসাফ ও ন্যায়বিচার করে আল্লাহর নিকট তারা নূরের আসন গ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী:৫৩৭৯)।
রাসূল (সা:) ছিলেন তার সুমহান বিচারক। আল্লাহ পাকের ঘোষণা
( নিশ্চই আমি আপনার প্রতি কোরআন অবতীর্ণ করেছি সত্য সহকারে, যাতে করে মানুষের মাঝে ফায়সালা করতে পারেন, আর আপনি সত্য গোপন কারীদের সাথে তর্কে লিপ্ত হবেন না, সূরা নিসা:১২০)।
বনী মাখযুম গোত্রের এক মহিলা মানুষের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কর্য করার পর তা অস্বীকার করলে, আল্লাহর রাসূল (সা:) তার উপর চুরির শাস্তি তথা আল্লাহর হুকুম হাত কাটার নির্দেশ প্রদান করেন। অত:পর মহিলা গোত্রের ব্যাক্তিবর্গ উসামা বিন যায়েদ (রা:) কে রাসূলের নিকট মহিলার জন্য সুপারিশ করতে অনুরোধ করলো, যাতে করে মহিলাকে উক্ত হুকুম থেকে পরিত্রাণ দেয়া হয়, উসামা রাসূলের নিকট অতি প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন । কিন্তু আল্লার রাসূল শুনে ভীষণ রাগাণ্বিত হলেন এবং বলেন: তোমাদের পূর্বে যারা ধ্বংশ হয়েছে তাদের মধ্যে কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত, আর কোন হীনদুর্বল ব্যক্তি চুরি করলে তারা তার উপর
আল্লাহর বিধান আরোপ করত, আল্লাহর কসম যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত তবুও আমি তার হাত কেটে দিতাম। আর এভাবেই তিনি সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নজীর রেখে গেছেন । ইসলাম ন্যায়বিচারের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে, জুলুম অবিচার থেকে নিরুৎসাহীত করেছে কারণ জুলুম কেয়ামতের দিন হবে অন্ধকারাচ্ছন্নময় ।
ইসলামের প্রসারের সাথে সাথে আল্লাহর রাসূল( সা:) বিচার কার্য পরিচালনার জন্য তার সাহাবীদের দূরদুরান্তে প্রেরণ করে ছিলেন । মুয়ায (রা:) কে ইয়ামানের প্রতিনিধি করে পাঠানোর সময় সর্বশেষ যেই নির্দেশ দিয়ে ছিলেন, হে মুয়ায! মাযলুমের দোয়া থেকে ভীত থাকবে, কারণ মাযলুম যখন আল্লাহর নিকট দোয়া করে তখন তার এবং আল্লাহর মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকেনা ।
বিচার কার্য পরিচালনা বিষয়ে আলী (রা: ) কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন,ওহে আলী! যখন তুমি দুই ব্যক্তির বিচার কাজে নিযুক্ত হবে, ততক্ষণ তাদের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন করবে না যতক্ষণ দ্বিতীয় ব্যক্তির নিকট থেকে ঘটনার বিবরণ পরিপূর্ণ না শুনবে, যেভাবে শুনেছিলে প্রথম ব্যক্তির নিকট থেকে, আর যখন এমনটি করবে তখনই বিচার কার্য তোমার নিকট স্পষ্ট হবে (আবু দাউদ,তিরমিযী)।
রাসূল (সা: ) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা একজন বিচারকের সাহায্যে থাকেন ততক্ষণ যতক্ষণ সে নিজেকে যুলুম অবিচার থেকে বিরত থাকে, আর যখন সে তাতে নিমজ্জিত হয় তখন তার সঙ্গী হয় একমাত্র শয়তান ।(হাকেম, বায়হাকী)
যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিচার কাজে নিযুক্ত হয় অত:পর তার ন্যায় বিচার সদাসর্বদা জুলুম অত্যাচার থেকে বিজয় লাভ করে তার জন্য রয়েছে জান্নাত, আর যার জূলুম অন্যায় রায় ন্যায় বিচারের উপর বিজয় লাভ করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম ।( আবু দাউদ )
আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন যেই সাত ব্যক্তিকে ছায়া দিবেন তার অন্যতম হল একজন ন্যায়বিচারক শাসক (মুসলিম ) ।
রাসুল (সা:) বলেছেন,বিচারক তিন ধরনের দুই ধরনের জাহান্নামী এক ধরনের জান্নাতী, যে সত্য জেনেও অন্যায় বিচার কার্য করে সে জাহান্নামী, যার বিচার কার্যের জ্ঞান না থাকা সত্বেও বিচার কার্য করল সে জাহান্নামী, আর যে সত্যকে জানলো এবং সে অনুযায়ী বিচার রায় দিল সে জান্নাতি (ইবনে মাজাহ) ।
রাসূল (সা:) আরও বলেছেন কাউকে যখন বিচার কার্যে নিযুক্ত করা হয় তাকে যেন ছুরি ছাড়া জবেহ করা হল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, একটি সুষ্ট বিচার কার্য পিরচালনা করা আমার নিকট সত্তর বছর নফল ইবাদাতের চেয়েও উত্তম।
একজন বিচারকের বিচার কার্য পরিচালনার সময় এমন সব বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা দরকার যাতে বিচার কার্যে কোন রকম প্রভাব না পড়ে,যেমন: ভয়-ভীতি ক্রোধ । তোমাদের মধ্যে কেউ যেন দুই ব্যক্তির মাঝে বিচার কার্য সম্পাদন না করে যখন সে রাগাণ্বিত (বুখারী-মুসলিম) ।
সাথে সাথে হারাম করা হয়েছে সকল ধরনের অবৈধ অর্থনৈতিক লেনদেন, এই কারণে ইসলামের সুমহান আদর্শের সাহাবীরা বিচার কার্যের পূর্বে কিংবা পরে বাদী-বিবাদী কারো নিকট থেকে কোন ধরনের উপঢেৌকন, মেহমানদারী গ্রহণ করতেন না, যাতে করে বিচার কার্যে কোন ধরনের প্রভাব না পড়ে ।
একজন বিচারকের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হল উত্তম চরিত্র ।বড় ধরনের পাপ থেকে বেচে থাকা, কারণ এগুলো মানুষকে ফাসেকীর দিকে নিয়ে যায়, আর মুসলমানদের বিচারক একজন ফাসেক ব্যাক্তী হতে পারেনা । আবার মুসলিম সরকারও বিচারক এবং তার পরিবারের সর্বোচচ নিরাপত্তা দিবে যাতে করে তিনি সত্য ও ন্যায়ের সাথে বিচার কার্য পরিচালনা করতে পারেন ।
ইসলামে সেই সকল বাদী-বিবাদী সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়েছে যারা তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং সাক্ষ প্রদান করে । রাসূল (সা:) কে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, অন্যায় ভাবে মানুষ হত্যা, মিথ্যা সাক্ষ প্রদান করা (বুখারী) ।
নিউওর্কের একজন প্রখ্যাত বিচারক লাজারদার সম্মুখে একজন বৃদ্ধ বিচারের কাঠগড়ায় দাড়ালেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি একখন্ড রুটি চুরি করেছিলেন । বৃদ্ব কাপা কন্ঠে বললেন ক্ষুধার তাড়নায় তিনি রুটি চুরি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন বিচারক তাকে বললেন, যেহেতু তুমি বুঝতে পেরেছো তুমি চোর সেহেতু তোমার বিরুদ্ধে দশ ডলার জরিমানা করা হলো । উপস্থিত অনেকে এই রায়ে বিস্মীত হয়েছিল ।অত:পর বিচারক তার পকেট থেকে দশ ডলার বের করে কোষাগারে জমা দিল আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং বৃদ্ধের প্রতি সহমর্মিতার জন্য ।
উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বললেন দশ ডলার যথেষ্ট নয় যেহেতু সে আমাদের সমাজে বাস করে এবং খাবারের অভাবে চুরি করেছে, সেহেতু সবাইকে দশ ডলার করে দিতে বললেন । অবশেষে সকলের প্রদানকৃত চারশত আশি ডলার দিয়ে বৃদ্ধকে বিদায় করা হলো ।
সমাজে সংগঠিত অপরাধ, অপরাধী থেকে নিরপরাধীকে আলাদা করা একজন বিচারকের দ্বায়িত্ব, যার ব্যর্থতায় সমাজের শৃঙখলা ভেঙ্গে পড়তে পারে । জনগণ অনাগ্রহী হয়ে পড়তে পারে পুস্তকে আবদ্ধ আইনের প্রতি, কমে যেতে পারে ভক্তি ,শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা শাসক শ্রেনীর প্রতি। সময়ের সাথে সাথে বিচার পদ্ধতি পাল্টাতে পারে কিন্তু পাল্টায়নি মানুষের বিবেক ও বোধগম্যতা ।
উম্মাহকে সর্তক করার জন্যে রাসূল (সঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি আপন ভাইয়ের ওপর জুলুম করে থাকলে সে যেন তার কাছ থেকে [পার্থিবেই মৃত্যুর] পূর্বেই মাফ করিয়ে নেয়। কারণ শেষ বিচারে [মযলুম] ভাইয়ের পক্ষে তার নেকীর অংশ কেটে নেয়া হবে, কিন্তু যদি নেকী তার [জালিমের] নিকট মওজুদ না থাকে তবে, তার [মযলুমের] ভাইয়ের গুনাহ কেটে এনে-এর [জালিমের] সাথে যোগ করে দেয়া হবে। কেননা, সেদিন দিনার-দেরহামের কোন লেন-দেন কিংবা আদান-প্রদান চলবে না। {সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ৬, ৬০৮৪}। অন্যের ভূসম্পদ জবর দখল সম্পর্কে নবী (সঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কারো জমিনের সামান্যতম অংশ আত্মসাৎ করেছে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনের নিচে তাকে ধসিয়ে দেয়া হবে। {সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ৩, ২১৫৫}।
আমানতের খিয়ানৎ ও অন্যের সম্পদ লুন্ঠন বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারের মত বিস্তার লাভ করেছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন. ৫৮: নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নিদের্শ দেন যে, তোমরা প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায়ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদেরকে সদুপেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী। {৪-নিসা}। আমাদের প্রিয় নবী(স) ধ্বংস আনয়নকারী ৭টি বিষয় থেকে দূরে সরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
এগুলো হচ্ছে: আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন করা। যাদু-মন্ত্র শিক্ষা করা বা ব্যবহার করা। এমন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যা আল্লাহ তা’আলা হারাম করেছেন, অবশ্য ন্যায়ভাবে হত্যা করা নিষিদ্ধ নয়। সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষন করা, জিহাদেও ময়দান থেকে পৃষ্ঠ-প্রদর্শন বা পলায়ন করা, সচ্চরিত্র-ঈমানদার নারীদের চরিত্র কলংকিত করা।{সহীহ আল-বোখারী, খন্ড ৬, ৬৩৮০}
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
الْقُضَاةُ ثَلاَثَةٌ وَاحِدٌ فِى الْجَنَّةِ وَاثْنَانِ فِى النَّارِ فَأَمَّا الَّذِى فِى الْجَنَّةِ فَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَقَضَى بِهِ وَرَجُلٌ عَرَفَ الْحَقَّ فَجَارَ فِى الْحُكْمِ فَهُوَ فِى النَّارِ وَرَجُلٌ قَضَى لِلنَّاسِ عَلَى جَهْلٍ فَهُوَ فِى النَّارِ
‘বিচারক তিন শ্রেণীর। তন্মধ্যে দু’শ্রেণীর বিচারক জাহান্নামী এবং এক শ্রেণীর বিচারক জান্নাতী। যিনি জান্নাতে যাবেন তিনি হলেন ঐ বিচারক, যিনি হক বুঝে সে অনুযায় বিচার-ফায়ছালা করেন। দ্বিতীয় প্রকার ঐ বিচারক, যিনি সত্যকে জানেন কিন্তু বিচার-ফায়ছালায় যুলুম করেন, তিনি জাহান্নামী। তৃতীয় প্রকার বিচারক তিনি, যিনি অজ্ঞতার উপর মানুষের বিচার-ফায়ছালা করেন, তিনি জাহান্নামী’।
ইতিহাসের আলোকে একথা সুবিদিত যে, পাঠান ও তূর্কী সুলতানেরা যখন বাংলা এলাকাসহ গোটা ভারতে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন, তখন বাংলা অঞ্চলের শাসনকর্তা গিয়াস উদ্দীন আযম শাহ্র খোদাভীরুতা এবং আদ্ল ও ইন্সাফ আজও পর্যন্ত চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। তাঁর ঘটনা বহুল জীবনেতিহাসে দেখা যায়, আকস্মিকভাবে তিনি এক বিধবার ছেলে হত্যা করার অপরাধে কাযীর (বিচারকের) আদালতে হাজির হয়ে একজন সাধারণ আসামীর মত অকপটে স্বীয় দোষ স্বীকার করতঃ অনুতপ্ত হন এবং যথোপযুক্ত শাস্তি গ্রহণে সম্মত হয়েছিলেন।
বাদশাহ্ জাহাঙ্গীর আদল্-ইন্সাফ ও ন্যায় পরায়ণতার জন্য মশ্হুর ছিলেন। তাঁর কাছে ফকীর-মিসকীন, এতিম বা মযলুম আসলে তিনি স্বয়ং তার সামনে উপস্থিত হয়ে তার প্রয়োজন ও অভিযোগ শুনতেন এবং তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিতেন অথবা সুবিচার করে দিতেন। একদা বাংলা অঞ্চল থেকে এক মযলুম পিতা বাংলার নবাব ফয়জুল্লাহ্র হস্তীপৃষ্ঠে আরোহণক্রমে নগর পরিভ্রমণকালে তার শিশু পুত্রকে হস্তী পদতলে পিষ্ট করার অপরাধের বিচার বাদশাহের দরবারে প্রার্থনা করলে বাদশাহ্ নবাবকে হাজির হবার জন্য ডেকে পাঠালেন।
ঘটনা শ্রবণে নবাব বাদশাহের দরবারে বাহাদুরীর সাথে কথা বললে পর এর যথোচিত বিচারে বাদশাহ্ জাহাঙ্গীর স্বীয় হস্তীপৃষ্ঠে মজলুম পিতাকে বসিয়ে দিয়ে নবাব ফয়জুল্লাহকে খোলা মাঠে হস্তীর পদতলে পিষ্টে মেরে ফেলেন এবং মজলুম পিতাকে সান্ত্বনা দানে বখশিশ দিয়ে বিদায় দেন।
আল্লাহ তায়ালা বিচারকদের ন্যায়বিচারক হওয়ার তৌফিক দান করুক।
আমীন।
সম্পাদনায়,
মাওলানা খালিদ হোসাইন সিপাহী
পরিচালক
হক্কানী দরবার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর