শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ বৈঠকে আমীরে জামায়াত ক্লাসে বিশ্বনবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল ফিরে দেখা’র উনযুগপূর্তি উৎসব পালিত জমকালো আয়োজনে ৭৬ তম আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট ইউনিয়ন দিবস পালিত বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান -অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খোকসায় মুফতি ফয়জুল করীমের যাত্রা বিরতি পাংশায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য পাংশা পৌর সভায় মন্দির সমূহে নিরাপত্তায় কাজ করেছেন যুবদল নেতা আশরাফুল ইসলাম ফরিদ পাংশায় র‌্যালী মহড়া ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত অতন্ত্র প্রহরীর ন্যায় আপনাদের পাশে ছিলাম আছি থাকবো -হারুন অর-রশিদ হারুন পাংশায় নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক খোকসার ফুলবাড়ি গ্রামে সিরাজ সর্দার কর্তৃক রাসুল (সঃ) কে কটূক্তি
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

জীবনযুদ্ধের ছড়াকু মানসুর মুজাম্মিল

মুহাম্মদ ইসমাঈল / ১৮২ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ পূর্বাহ্ন

লেখক: মুহাম্মদ ইসমাঈল

জীবনযুদ্ধের ছড়াকু মানসুর মুজাম্মিল
– মুহাম্মদ ইসমাঈল
ছড়া মানে শিশুদের ঘুম পাড়ানি, ছড়া মানে ছন্দতালে মজার নাচন, ছড়া মানেই অন্যায় অসত্য অসামাজিকতা ও সমস্ত অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে ঠোঁটকাটা ভাষায় খটখটে অন্তমিলের ছন্দে তীব্র প্রতিবাদ। ছড়াকারের মুখের ভাষা কোমল হলেও কলমের ভাসা হয়ে থাকে বৈচিত্রময়। এমন ছড়াকারের বাস্তব উদাহরণ মানসুর মুজাম্মিল। কোন প্রকার হৈ হুল্লোর নেই, নিজেকে প্রকার করার ক্ষেত্রে ও যারা পিছনের কাতারের অথচ ভালো লেখেন, লেখেন শিশুতোষ থেকে সামাজিক সংস্কারমূলক লেখেন সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জীবনের অনুভ‚তিকে একাকার করে তাদের দলের প্রথম সারির একজন ছড়াশিল্পী মানসুর মুজাম্মিল। বাস্তব জীবনে অতীব বিনয়ী ন¤্র-ভদ্র অথচ তাঁর লেখনীতে ভিষন প্রতিবাদ ফুটে ওঠে। তাঁর ছড়ার গল্প, শব্দ চয়ন, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, ছন্দ ও আন্তমিলের কারুকাজ ও অসাধারণ। ছড়া সাহিত্যের এক উজ্জল নক্ষত্র তিনি।
১৯৬৬ সালের ৩০ জুলাই চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তী থানার দশনাপাড়া গ্রামে মানসুর মুজাম্মিলের জন্ম। পিতা মুক্তিযোদ্ধা মো: মুনছুর আহম্মেদ। মা হালিমা বেগম। শান্ত প্রকৃতির মাটি ও মানুষের লেখক ছড়াকার মানসুর মুজাম্মিল চাঁদপুর হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা গ্রহণ, সরকারী বাণিজ্য কলেজ চট্টগ্রাম এবং জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম সম্মান, এম.কম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেন এবং পরে এল.এল.বিও সম্পন্ন করেন।
স্কুল জীবনে ১৯৭৬ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকেই লেখালেখি শুরু। বিভিন্ন সাময়িকী সাহিত্য পত্র পত্রিকা ও জাতীয় দৈনিকে শুরু থেকেই লেখা প্রকাশ হয়ে আসছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, আমেরিকা, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের পত্র পত্রিকাতে লেখালেখিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।
চাঁদপুর হাসান আলী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ম্যাগাজিন কলিতে তিনটি ছড়া ছাপা হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৯ম শ্রেণিতে থাকাকালীন।

মানসুর মুজাম্মিল

ছড়া বলতে শিশু মনোরঞ্জন নিমিত্ত রচিত এক প্রকার ছন্দোবদ্ধ পদ্য রচনার কথা মানসপটে উদিত হয়। অন্য কথায় ছড়া শিশুতোষ রচনা। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে ছড়া কেবল শিশুর জন্য রচিত হয়নি, শিশু কিশোর, যুবক-বয়স্ক সকল শ্রেণির জন্যে রচিত হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের নরনারীর বিভিন্ন উপলক্ষে ছড়াচর্চা করে থাকে।
মানসুর মুজাম্মিল মূলত সময় ও সমাজ সচেতন ছড়াকার। জীবনবোধ, ভালোবাসা কিংবা মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড তাঁকে সামনে পিছনে তাকাতে এবং সহজভাবে পথ চলতে নতুনভাবে ভাবিয়ে তোলে। তাঁর ছড়ায় সেটাই স্পষ্টভাবে লক্ষ্যনীয়। তবে প্রকৃতি, কল্পনাবিলাস কিংবা শিশুতোষ ছড়াতে ও তার হাত খুব দক্ষ এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শিশুতোষ ছড়া, ছড়া সাহিত্যের আবহমান কালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তার জীবনঘনিষ্ঠ কিছু মনকাড়া ছড়া:
সবার সাথে আছি আমি সবার সাথে আছি/ ভোরের খোলা হাওয়ায় আমি গা এলিয়ে বাঁচি/
আমি সবার সাথে আছি/ পাখিরে/ তোর/ জীবন বড় সোজা/ আমার জীবন আমার কাছে/ পাহাড় সমান বোঝা।
মনে পড়ে মনে পড়ে/ মনে পড়ে মাকে/ বুকের ভেতরে আমি/ রেখেছি যে তাকে। কী কী নেবে সঙ্গে তুমি/ কী কী নেবে সঙ্গে/ বাড়ী গাড়ি টাকা কড়ি/ রাখবে বেঁধে অঙ্গে?
পাথর ভাঙ্গি পাথর ভাঙ্গি/ পাথর ভেঙ্গে রাত/ এই পাথরের জন্য আমার/ মেলে দুটো ভাত/ আমার সঙ্গী কেউ হলো না/ আমিই আমার সাথি/ রোদের চোটে পিট জ্বলে যায়/ ঘুমায় আমার জাতি/ ওগো আমার ছুটে চলা/ সোনামনি জিন/ আমার এবং আমার জাতির/ ভাগ্য বদলে দিন।
শিশুতোষ ছড়া এবং কিশোর কবিতায় যেমন যুতসই ছড়া-কবিতার চাদর বুনেছেন তার চেয়ে বেশী উজ্জল তিনি প্রতিবাদী ছড়ায়। তাঁর কলসের ধারে মনে হয় ছড়া মানেই প্রতিবাদ, ছড়া মানেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অগ্নিপশল দ্রোহ। সময়কে ধারণ করে কবি মানসুর মুজাম্মিল ফুঁসে উঠেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
সাহস নিয়ে এগিয়ে চলে/ ভয় নাই
সত্যিকারে জিন্দেগানির ক্ষয় নাই।
পথের সকল কাঁটা তুমি সরিয়ে দাও/ অত্যাচারের পায়ে শেকল পরিয়ে দাও।
সবচেয়ে ভালো কাজে তুমি/ যুক্ত হও
সব শাসকের শাসন থেকে/ মুক্ত হও।
পরকালীন জীবনকে কবি বেশী আত্মবিশ্বাসের সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন।
করে নেবেন কতো টাকা/ দাদা
কবরে নেবেন কতো/ সারাটা বছর কামান দেখি/
কোটি/ লাখ/ শতো/ শতো।
বাড়ি বানালেন/ গাড়ি বানালেন/ ব্যাংকে আছে ঢের/
ঘরে গেলে দাদা/ পাবেন ঠিকই টের।
মানসুর মুজাম্মিলের প্রকাশিত গ্রন্থগুলো (১) সোনায় বরণ মেয়ে (২) চাঁদের হাসি (৩) তাজা খুন (৪) এক ব্যাদা অফিসার (৫) হারিয়ে যাবার দিন (৬) সবার সাথে আছি (৭) পা চালিয়ে যাও (৮) দশ আকাশ (৯) সুগন্ধি গাছের কাছে (১০) তাওয়ায় জ্বলা রুটি আরো অনেক প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত পাÐুলিপি রয়েছে।
পেশাগত জীবনে প্রথম শিশু কল্যাণ পরিষদে দীর্ঘদিন চাকুরী করেছেন। একজন লেখক লেখালেখিতে সাথে সামঞ্জস্য পেশাতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। তেমনি ছড়াকার মানসুর মুজাম্মিল লেখালেখিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রকাশনা পেশায় কিছুদিন সম্পৃক্ত ছিলেন।
সাংগঠনিক জীবনে তিনি বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস পরিষদের জীবন সদস্য, তৃণমূল লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ লেখক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক, নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সাহিত্য সম্পাদক, গানের কবি প্রাণের কবি নজরুল ঢাকার আহŸায়ক, সিনেট সদস্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়াও বাংলা সন তারিখ প্রচলন আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ, বিশুদ্ধ বানান চর্চার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত।
লেখক তৈরীতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নবীন লেখকদের লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ করে লেখক সৃষ্টিতে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছেন। অনেক নবীন লেখকের নামকরণ করে পথ দেখিয়েছেন। তার কাছ থেকে লেখালেখিতে হাতেখড়ি অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত লেখক হিসেবে নিজেকে জায়গা করে নিয়েছেন।

অসুস্থ মানসুর মুজাম্মিল এর সাথে লেখক

“পারঘাট” নামে একটি পত্রিকা ও তিনি সম্পাদনা করেছেন বেশ কিছুদিন। পারঘাটের কিছু পরিকল্পনা নিয়ে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু পারেননি অসুস্থতার কারনে।
পারঘাটের পরিকল্পনাগুলো ছিল এই:
(১) বই কেনা, (২) বই প্রকাশ, (৩) কোরান বিতরণ বিনামূল্যে, (৪) হাদিস বিতরণ বিনামূল্যে, (৫) বই উপহার, (৬) জ্ঞান অন্বেষনে বিশেষ স্থান ভ্রমণ, (৭) সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ, (৮) মুক্তমঞ্চে নাকট মঞ্চায়ন, (৯) এতিম ও অভাবীদের খাবার বিতরণ, (১০) লেখকদের সহায়তা, (১১) লেখক আপ্যায়ন, (১২) রোগী সহায়তা (১৩) সাহিত্য বিষয়ক ট্রেনিং প্রোগ্রাম, (১৪) লেককদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্প (১৫) বিয়ে সহায়তা, (১৬) সুদমুক্ত ঋণদান কর্মসূচী, (১৭) বই প্রকাশে সহায়তা, (১৮) মফস্বলের লেখকদের হোটেলে বা বাসায় থাকার ব্যবস্থা করা, (১৯) পাঠাগার সৃষ্টিতে সহায়তা করা, (২০) সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদান, (২১) বিশেষ দিন উদযাপন, (২২) লেখকদের সন্তানদের শিক্ষা উপকরণ বা আর্থিক সহায়তা, (২৩) কার্যকরী সাহিত্যসভা করা।
নব্বই দশকের এই তুখোর ছড়াকার গত ১৪/ সেপ্টেম্বর ২০২১ এশার নামাজের পর স্থানীয় সমসজিদে অসুস্থ হন। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক রিপোর্টে বলা হয় মাথার ডানপাশে কিছু অংশে রক্তক্ষরণ হয়েছে। বাম পাশে নড়াচড়া করতে পারেন না। অর্থাৎ বাম পাশটা পুরাপুরি অবশ। কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। প্রতিদিন অনেক টাকার প্রয়োজন তাঁর সুচিকিৎসার জন্য। অনেক কষ্টে যাচ্ছে এই কবির পরিবারের দিনাতিপাত। আমরা দোয়া করি বাংলা সাহিত্যের এই ছড়াকার যদি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসেন। তা হলে আমাদের সাহিত্য আরো উর্বর হয়ে পলি ছড়াবে চতুর্দিকে।
তার ছড়া আমাদের আধুনিক ছড়া সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে এবং নতুন ছড়–য়াদের নতুন ভাবনায় আকৃষ্ট করবে এ কথা নির্ধিধায় বলা যায়। তিনি সুস্থ হবেন বেঁচে থাকবেন সাহিত্যের জগতে নান্দনিক ঢঙ্গে। বেঁচে থাকবেন জীবনযুদ্ধের স্বার্থক ছড়াকু হিসেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা আমিন। ছুম্মা আমিন \


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর