মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
ক্লাসে বিশ্বনবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল ফিরে দেখা’র উনযুগপূর্তি উৎসব পালিত জমকালো আয়োজনে ৭৬ তম আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট ইউনিয়ন দিবস পালিত বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান -অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খোকসায় মুফতি ফয়জুল করীমের যাত্রা বিরতি পাংশায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য পাংশা পৌর সভায় মন্দির সমূহে নিরাপত্তায় কাজ করেছেন যুবদল নেতা আশরাফুল ইসলাম ফরিদ পাংশায় র‌্যালী মহড়া ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত অতন্ত্র প্রহরীর ন্যায় আপনাদের পাশে ছিলাম আছি থাকবো -হারুন অর-রশিদ হারুন পাংশায় নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক খোকসার ফুলবাড়ি গ্রামে সিরাজ সর্দার কর্তৃক রাসুল (সঃ) কে কটূক্তি স্বামীর পরোকিয়া জেনে ফেলাই  কাল হলো রুমা’র !
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

ছোটগল্প>< শ্মশাণ ঘাটের ভূত ।। খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন

খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন / ৩৯৪ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ মে, ২০২১, ১:১৫ অপরাহ্ন

শ্মশান ঘাটের ভূত!
খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন

ভূত! ওরা অশরীরি। চোখে দেখা যায় না। জ্ঞানীলোকেরা বলেন, ‘ভ‚ত বলতে কিছু নেই। ওসব হলো দুর্বল মনের ভীতি!’ তবে আঁধারে বেশ দাপট দেখায় কিন্তু আলো দেখলে ওরা পালায়। আঁধারই ওদের রাজ্য। অন্ধকারে সব ধরণের বাজে বাজে কাজ করে বেড়ায়। চুপি চুপি সানীকে ভয় দেখায়। সাবিত, সাকিল সক্কলকেই ভয় দেখিয়ে বেড়ায়। তবে যারা খুব সাহসী এবং যাদের ভাইটাল ফোর্স হ্যাভি স্ট্রং তাদেরতো কিচ্ছু করতে পারে না এসব ভ‚ত। রাতের আঁধারে ভূতগুলো ইঁদুরের মত কুটকুট কুটকুট করে শব্দ করে। হিঁহিঁহিঁ করে হাসে। ঘোড়ার মত হাসে। কল তলায় ঘোমটা পড়ে দাঁড়ায়। ট্রয়লেটের পাশে দাঁড়িয়ে উঁ উঁ উঁ… করে কাঁদে। বাঁশ ঝাড়ে উৎপাত করে। রাস্তার পাশে যে লম্বা বাঁশগুলো থাকে, সেগুলোয় ঝুলন দিয়ে নিচে নামিয়ে আনে। মাঝে মাঝে পথচারীদের সামনে একদম বেরিকেড দেয়। ওরা নাকি গভীর রাতে কোন কোন রাস্তায় পিকেটিং করতে ভালবাসে।
টিনের চালের উপর ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে খিল খিল করে হাসে। কিন্তু আলো দেখলে ওরা আর থাকে না। কোথায় যে পালিয়ে যায়, তখন তোমরা তাদের খুঁজেই পাবে না। আলোতে একটা ভূতকেও পাবে না। ভূতগুলো খুবই বজ্জাত। তাই ওরা বজ্জাতি করে। সাবিত আর সানি দুজন মিলে একদিন একটা ভূতকে আচ্ছা তরফে পিটিয়েছিল। তারপর থেকে আর কোন দিন ওদের সামনে ভূতের মা-বাপও দাঁড়াবার সাহস করেনি।
সানী। পুরো নাম জুনাইদ সানী। ও বন্ধুদের সাথে বাড়ীর পাশের স্কুলের মাঠেই খেলাধুলা করে। স্কুল থেকে ফিরে আজও খেলতে গিয়েছিল ওরা।
খেলার শেষে কালীতলা মোড়ের মন্দিরের পাশে বসে গল্প করছিল বন্ধুদের সাথে। ওদের এক বন্ধুর নাম ভজহরি। সবাই তাকে ভজা বলেই ডাকে।
ভজার মুখে শুধু ভূতের গল্প। ওর মাসী নাকি ভূত কাহিনি লিখে বিখ্যাত হয়ে গেছেন। প্রতিদিনই একটা করে ভূতের গল্প বানিয়ে ভজাকে শোনান। আর তা শুনে এসে বন্ধু মহলে সেও ভূতের গল্প শুনায়। বন্ধুরা বাহবা দেয়।
এসব গল্প শুনে সানীও কিছুটা ভয় যে পায়না তা কিন্তু নয়। গায়ের লোমগুলোও দাঁড়িয়ে যায় ওর। আর শরীরটা ছমছম করে ওঠে কেমন যেন।
তখন ওর মনে পড়ে ঘুমানোর সময় মা লাইট অফ করে দিয়ে গেলেই কুটকুট করে শব্দ করার কথা। তখন একটু খিস্তি করে বলে- “ভূতগুলোতো খুব পাঁজি”!!
একদিন ভজার মুখে ভূতের গল্প শুনতে শুনতে মসজিদে ঈশা’র নামাজের আজান হয়ে গেল। আজানের সু-মধুর সুর শুনে গল্প শোনার ঘোরটা কেটে গেল সানীর। আজ পড়তে বসতে দেরী হয়ে গেল। মা নিশ্চিত বকা দেবে। পরশুদিন একবার দেরী হয়েছিল। ফুপিটা না থাকলে কিয়ামত হয়ে যেত।
তাই দৌড়ে সে বাড়ী ফেরে। দেউরীতে দাঁড়িয়ে আন্দাজ করতে পারল আজ আর রক্ষা নেই। মা রুটি সেঁকছেন আর বক বক করছেন। ফুপিতো শ্বশুর বাড়ী চলে গেছে। এখন কি হবে? সুরা ফাতেহা পড়ে বুকে থুথু নিয়ে সাহস জোগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে বাড়ীতে ঢুকতেই মা খুন্তি হাতে নিয়ে হুংকার ছাড়ল……
” কোনে ছিলিরে হারামির বাচ্ছা? দুই দিন পরে তোর জে.এস.সি পরীক্ষা। আর তুমি নবাবের বাচ্ছার মতো রাইত ভইরে ইস্কুলির ফিল্টারে বইসে গ্যাঁজায়া আসতেছো? আইজকে তোর কপালে কী, আমার কপালে। জানুয়ার ছাওয়াল এট্টা মানুষ কততিছি আমি?”
বলতে বলতে পাছার বরাবর একটা খুনতির এক ঘা দিয়ে দিয়েছেন।
সানী এক দৌড়ে পুকুর পাড়ে গিয়ে আঘাতের জায়গাটি ঘষতে ঘষতে বলল- আমিতো পড়া-লেকার কামই কততিছিলাম।
“কি কলি তুই? মুহি মুহি আবার তর্ক করতিছিস ছাওয়াল?
তোর হাঁস দুডের এটাও আইজ ঘরে ফেরে নাই। আগে হাঁস উটকোয়া আনবি তার পর খাতি দেবো। তার আগে খাবার পাবিনানে, কয়া দিলাম।”
কি? হাঁস আসে নাই? সব্বনাশ!
কত শখ করে হাঁস দুটো পালছিল সানী। বড় মামা দিয়েছিল একশ বিশ টাকা আর ছোট মামার দিয়েছিল সত্তর-আশি টাকার মত। এসব টাকা জমিয়েইতো কিনেছিল দুটি হাঁসের বাচ্চা। আর সে হাঁস যদি বন বিড়াল, বাঘডাশা খায়! এসব ভেবে ওর খুব খারাপ লাগছিল। মারের ব্যাথা তার হাওয়া হয়ে গেলো। কোন কথা না বাড়িয়ে ছোটভাই সাবিতকে নিয়ে হাওরের দিকে এগুতে থাকে সানী।
হাওরটির নাম সিরাজপুরের হাওর। এটি মূলত ছোট একটি নদী। নদী মানে কি! গড়াই নদীর মহব্বতের কন্যা সে। সিরাজপুর গ্রামের মাথামুন্ডু খেয়েই এই হাওরের জন্ম দিয়েছিল গড়াই বুড়ি। তারপর থেকে সে সিরাজপুরের হাওর নাম নিয়েছে। এখন অবশ্য স্থানীয়রা ‘মরা গাঙ’ বলেও ডেকে থাকেন।
এ হাওড়ের অনেক গল্প আছে। আমরা সানীর যে সময়ের গল্প বলছি, তখনও মৃদু মৃদু স্রোত বয়ে চলত হাওরে। এখন অবশ্য দখলদারিত্বের খপ্পরে পড়ে ও একটা মরা খালে পরিণত হয়েছে। বাঁচানোর কেউ নেই। তোমরা যখন বড় হবে, পারলে বাঁচিও একটা মরা নদীকে। মহান মালিক আল্লাহও তোমাদের বাঁচাবেন। প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারবে মানুষ। এক সময় ওই হাওর নদীই গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল বিশাল বিশাল বানিজ্য কেন্দ্র। যেমন ধরো, একতারপুরহাট, খোকসা জানিপুর বাজার, লাঙ্গলবাঁধ বাজার, কুষ্টিয়া বড়বাজার ইত্যাদি।
কুষ্টিয়া বড় বাজার ও খোকসা জানিপুর বাজার হলো গড়াই নদীর তীরে । তারও ওপাশে তালবাড়িয়া। পদ্মা নদী আর গড়াই নদীর মোহনাই কিন্তু তালবাড়ীয়া। পদ্মা ও গড়াই নদীর সাথে হাওরের একটা যোগাযোগ আছে। তোমরা হয়ত জেনে থাকবে, বাগলীরহাট, বনগ্রামহাট, একতারপুরহাট, লাঙ্গলবাঁধ বাজার ছিল একটি কৃষিবান্ধব বাজার। কৃষকরা যে সব ফসল ফলাতেন, যেমন: আঁখের গুড়, পাট, ধান,গম, খেসারী,মসূর,পিঁয়াজ-রসুন,আদা,মরিচ আরো কত কি। তারই একটা বড় বিক্রয় কেন্দ্র ছিল ওই লাঙ্গলবাঁধ বাজার। কোলকাতার মহাজন বাবুরাও রেল যোগে কুষ্টিয়ায় নেমে বড় বাজার ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদীপথে ওই একতারপুরহাট, বনগ্রামহাট, লাঙ্গলবাঁধ বাজারে যেতে পারতেন। আর লাঙ্গলবাঁধের মোকামতো গড়াই আর হাওর নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল। থাক ওসব কথা আজ আর বলবো না।
তোমরা যারা এই মরা নদী দেখছো তারা আমাকে মিথ্যুক বলে গালি দিতে পারো তাই বললাম এইটুকু। তা না হলে শুধু ভূতের গল্পটাই বলতাম। পড়তে বসে তুমি রাগ করবানা কিন্তু।
হাঁস দুটি সানীর খুব প্রিয় ছিল। ও দুটো হারিয়েছে শুনে খুব কান্না পাচ্ছে ওর। মা তো বকবেনই। বকায়তো যুক্তি আছে। তন্নী আপুর কথা খুব মনে পড়ছে ওর।
তন্নী আপু থাকলেও দুজন মিলে হাঁসগুলো খোঁজা যেত। তন্নী মানে জান্নাতুল তন্নী হলো সানীর বড় বোন। মামাদের বাড়ীতে থাকে ও। নানীর সাথে তন্নী আপুর খুব মিল। তাই ও ওই বাড়ী ছেড়ে আসে না। ওখানে থেকেই পড়াশুনা করে। সানী হনহন করে হাঁটছে। পিছনে চুপচাপ হাটছে সাবিত। হাওরের পাড় দিয়ে বয়ে চলা সরু পথ । দুই ভাই ডেকে চলছে-‘আয় চৈ চৈ চৈ। আয় চৈ চৈ চৈ আয় আয়।’ আবার কান্না আসে। সানী চোখ দুটো মুছে নেয় আর ডাকে।
একতারপুর হাট থেকে বাগলীর বাজার কিন্তু কমটুকু পথ নয়। আনুমানিক সাত/আট কিলোমিটারতো হবেই। কোন কিছুকে পরোয়া করেনি তারা। বাগলী বাজারের একটু আগে ভূমিহীনদের আবাসনকেন্দ্র। ওখানে পৌঁছুতেই ডেকে ওঠে হাঁস। একটি কলা গাছের উপর বসে বোধ হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিল হাঁস দুটো। আচ্ছা, হাঁসরাও কী ঘুমোয়? ঘুমোায় হয়ত। মৃদুমৃদু ¯্রােতে কলাগাছ এগিয়ে যাচ্ছে। হাঁস দুটি বুঝতেই পারেনি যে, তারা এত দুরে চলে এসেছে।
সানীদের ডাক শুনেই হয়ত ওদের ঘুম ভেঙেছে। ঘুম ভেঙে হাঁসও ডেকে ওঠে আর ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে কূলে এসে সানীর হাতে ধরা দেয়।
তখন সানীর মন খুশিতে নেচে ওঠে। শুকরিয়া আদায় করে নেয় সে। হাঁস মাটিতে রেখে আবার চোখ দুটি মুছে নেয় সানী।
আকাশে দু’চারটি তারা মিট মিট করে জ্বলছে। চাঁদটি মেঘেদের সাথে খেলছে লুকোচুরি। হালকা আলো-আঁধারের রাত। ভূমিহীন পাড়ার এক ঘর থেকে কে যেনো খুক খুক করে কেশে দিল। ওর বড় দাদার মত কাশি। বড় দাদা গড় গড় করে হুঁকো টানতো। মাঝে মধ্যে নিউজ পেপার কেটে ভাঁজ করে তার ভেতরে জর্দা-তামাক ঢুকিয়ে বিড়ি বানিয়ে টানতো আর এভাবেই কাশতো। ও একদিন বলেছিল- দাদা, তুমি হুঁকো টানো, বিড়ি টানো। তাই তোমার কোলে আর উঠতে মন চায় না। উঠবোওনা কোন দিন। তার পর আর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। কি যেন এক অসুখে মারা গেলেন। লোকেরা বলাবলি করে, সানীর দাদার নাকি ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে মারা গিয়েছিলো। মোনা যায়, বিড়ি-তামাক সেবনে ফুসফুসে ক্যান্সারই হয়। সানী আবার ভাবে, ‘বড় দাদা এখানে আসবেন কোত্থেকে? বড় দাদীর যা দেমাগ! গাছের কলা গুলো সব বাজারে পাঠায়। একটা কলাও খেতে দেয় না। বলে পান সুপোরি কিনতে হবে।’ সানী ভাবে, তন্নী আপু, সাবিত, সাকিল সবাই মিলে নিজেদের গাছে ধরা টাটকা কলা খেলে কত পুষ্টি পেতাম। আর বুড়ি সেই কলা বেচে পান সুপোরি খায়। আবার আব্বুর টাকা নেয়, কাকুর টাকা নেয় ওই পান সুপোরিই খাবার জন্য। আব্বু আমাকে দেয় দশ টাকা আর বড় দাদীকে দেয় একশ টাকা। পান সুপোরির জন্য কী অতো টাকা লাগে? তাও প্রতিদিন দেয়। আসলে বড় দাদী বুড়ির পেট ভরা হিংসে। মানুষ বুড়ি হলে বুঝি হিংসুক হতে হয়? বড় দাদীটা মূলত সানীর বাবার বড় চাচী। সানীকে খুব আদর করলে কি হবে ওই যে টাকা কম পেয়ে দাদিকে নিজেই হিংসে করে।
তাই বড় দাদার জন্য ওর দয়া হলো না বলে কে কাশলো এ নিয়ে ভাবার সময় নেই সানীর। মা হয়ত ঘুমোয়নি এখনো। দ্রæত বাড়ী যেতে হবে। সানী লুঙ্গী পড়েছিল আজ। লুঙ্গী গুছিয়ে কাছা বেঁধে নিল ভাল করে। দিনের বেলা হলে কাছা বাঁধতে লজ্জা লাগতো ওর। তবুও সাবিত বলল- ‘ভাইয়া ওভাবে কাছা বাঁধলেতো ফরজ তরক হয়ে যায়।’ কারণ ও মসজিদে জুময়ার বয়ানে শুনেছে। হাঁটুর উপরে লুঙ্গী উঠানো ঠিক নয়। মহান স্রষ্টার আদেশ অমান্য হয়। আর ভাল ছেলে-মেয়েরা মহান স্রষ্টার আদেশ অমান্য কওে না। সানীরও ইচ্ছে হয় ভাল ছেলেদের মত সব কাজ করতে। কিন্তু মাঝে মধ্যে অমান্য হয়ে যায়। এই যেমন হয়ে গেল। সাবিতের কথার কোন জবাব দিলো না সানী।
আবার হাঁটতে শুরু করলো ওরা। তখন রাত ক’টা বাজতে পারে জানো?
এই ধরো বারটা কি পৌনে বারটা হবে।
এই যে গভীর রাত। এই রাতে তুমি কখনো হাওড় পাড়ে হাটতে পারতে? খুব ভয় পেয়ে যেতে। তাইনা? সানী মোটামুটি সাহসী ছেলে। তাই সে ভয় পায়নি এতক্ষণ। আর সাহসীদের হৃদিপন্ডের এ্যাক্টিভিটি কিন্তু বেশ স্ট্রং হয়। বুকের পাশে ধুকধুক করে না। আবার যখন সাহস হারায় তখন তারা ভীরু হয়ে যায়। আর ভীরুদেরই কিন্তু অশরীরিরা মানে ভূতেরা ভয় দেখায়। ভয় কি দেখানো লাগে? তারা নিজেরাই ভয় পায়।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে কলিমোহর স্কুল পার হল। তারও কিছুদূর এসে সঞ্জয় নামের হোমিও ডাক্তারদের বাড়ী পেরিয়ে পানের বরজ পার হতেই বিশাল বাঁশ বাগানের কাছে আসতেই হঠাৎ গা ছমছম করে উঠল। সানীর মনে হল পেছন পেছন কে যেন আসছে। অচেনা পায়ের আওয়াজ পেল সানী। ইচ্ছে হচ্ছিল পেছন ফিরে দেখে নিতে। কিন্তু ভজার কথা মনে পড়ে আর পেছনে তাকায়নি সে।
ভজা বলেছে, এ রকম সময় পেছনে ঘাড় ঘুরালেই খারাপ ভূতেরা ঘাড় মচকে দেয়। পেছনের ভূতটি যদি খারাপ হয়? তাহলে তো বিপদ হবে।
বাঁশ বাগানের নিচ দিয়ে আসতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। একেতো ঘনঘোর অন্ধকার। তারপর পেছনে অচেনা পায়ের আওয়াজ। ও কথা বলতে চেষ্টা করলো কিন্তু বাকশক্তি হ্রাস পেয়েছে। ও বুঝতে পারছিল যে ও কথা বলতে পারছে না। ভয় পেলে কন্ঠনালীতে পক্ষাঘাত হয় অনেকেরই। তখন ও মনে মনে পড়ল ক্বুল আউজুবি রব্বিন নাস, মালিকিন্নাস, ইলাহিন্নাস। মিংসার্রিল অস অ..সিল খন্নাস। আল্লাজী ইউ অসুভিসু ফী..সু দূ..রিন্নাস। মিনাল জিন্নাতি অন্নাস। এটি পড়ার পর ও ভাবল আয়াতুল কুরসীটা একটু পড়বে এমন সময় একটা আওয়াজ এলো। বেঁচে গেলি সানী\ “আঁমি মাঁজারের সেঁই খাঁরাপ জ্বীন। এখানে একটি ঘোড়াপীরের মাজার ছিল। আমি তোকে ঘোড়ায় চড়িয়ে অচিন দেশে নিয়ে যেতে চাই। তা আর হলো না। কারণ তুই সয়ং খোদার কালাম পড়ে ফেলেছিস। দয়া করে তোর মুখের বাতাস বের করিস না সানী।”
সানী অবাক হলো খোদার কালামের অসীম শক্তি দেখে। ও কথাই তো বলতে পারছিল না। কিন্তু কি করে কালাম পড়ল?
আবার এই কালাম পাঠ অশরীরি কেউ শুনেও ফেলেছে। ওরা খারাপ হলেও পাক কালামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সাবিত ওর পাশাপাশি হাটছে কিন্তু সে কিছুই টের পেলো না।
আাবার গায়েবী আওয়াজ!!
“সানী সাবধানে যাস। সামনে শ্মশাণ আছে। সেখানে কিন্তু আমার থেকে বেশী ভয়ঙ্কর জ্বীন আছে……। আর শ্মশানে থাকে পিতৃ পরিচয়হীন জ্বীন। ওরা খবিশ। খবিশেরা কিন্তু খুব জাওরা। ওরা আল্লাহর কালাম মানেনা….. আমরা সামান্য দুষ্টু জ্বীন হলেও কিছুটা ঈমানদার! তাই আল্লাহর কালামের আগুনে টিকতে পারি না”
সে কি ভরাট গলা! নাকি নাকি করে চন্দ্রবিন্দু দিয়ে কথা বলছিল এই অশরীরিটি।
সত্যিই শ্মশানঘাটে এসে আবার পা ভারী হয়ে এলো। কান দিয়ে গরম ভাপ বেরোতে লাগলো। মনে হচ্ছে, আঁখের খোলার কড়াই থেকে উঠা ভাঁপের মত।
হঠাৎ হালকা আলো,শ্মশানজুড়ে। দুরে একটি আম গাছ। ওখানেই কারো উপস্থিতি অনুভব করে সানী। সাবিতও দেখেছে, ‘দুটো লম্বা হাত ঈশারায় ডাকছে ওদের লক্ষ করে। ধীরে ধীরে একটা ভয়ঙ্কর আওয়াজ! আরো ঘণিভূত হলো আওয়াজটি। একটানা বাতাসের হক্লায় শ্রবণশক্তিই যেন নিয়ন্ত্রণে নেই। সাহস হারায়নি ওরা। হাঁস দুটি মাটিতে নামায়। হাঁসগুলো কোন আওয়াজ করেনি, চুপ-চাপ। হাঁস দুটি সাবিতের হাতে দিয়ে কষে লুঙ্গির গিড়ে আঁটে। তারপর, একটা আমের ডাল ভেঙে ওই গাছটির দিকে আগায়। কাছে গিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা আঘাত করে। বিকট শব্দ হয়। একটি মাথা লুটে পড়ে মাটিতে। মুহুর্তের মধ্যে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। পূণরায় আঘাত করে। হাত দুটিও ঝুলে গেলো। বিষয়টি সানী ও সাবিতের কাছে অবাক লাগে। হাঁস নিয়ে বাড়ী ফিরলো। কিন্তু ঘুম হলো না। একদম ঘুম হলো না। চোখ বুঁজলেই মাথার খুলিটা ওদেও দু‘চোখের তারায় ভাসতে থাকে।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর