বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
ক্লাসে বিশ্বনবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ মিছিল ফিরে দেখা’র উনযুগপূর্তি উৎসব পালিত জমকালো আয়োজনে ৭৬ তম আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট ইউনিয়ন দিবস পালিত বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে ফিলিস্তিনের মুজাহিদদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান -অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার খোকসায় মুফতি ফয়জুল করীমের যাত্রা বিরতি পাংশায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য এইচ.এস.সিতে আসিফের অনন্য সাফল্য পাংশা পৌর সভায় মন্দির সমূহে নিরাপত্তায় কাজ করেছেন যুবদল নেতা আশরাফুল ইসলাম ফরিদ পাংশায় র‌্যালী মহড়া ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত অতন্ত্র প্রহরীর ন্যায় আপনাদের পাশে ছিলাম আছি থাকবো -হারুন অর-রশিদ হারুন পাংশায় নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু প্রধান উপদেষ্টার সাথে জামায়াতে ইসলামীর বৈঠক খোকসার ফুলবাড়ি গ্রামে সিরাজ সর্দার কর্তৃক রাসুল (সঃ) কে কটূক্তি স্বামীর পরোকিয়া জেনে ফেলাই  কাল হলো রুমা’র !
বিশেষ ঘোষনা
বাংলাদেশ ভূমি ডটকম এ আপনাকে স্বাগতম। আপনার মূল্যবান সাহিত্য-কর্ম প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ ভূমি’তে পাঠিয়ে দিন। এছাড়াও আপনার চারপাশের যে কোন খবর লিখে পাঠাতে পারেন আমাদের কাছে। আমরা বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করবো। যোগাযোগ: খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন, মোবাইল-  ০১৭৫০৪৯৫৮২০ , ই-মেইল: bangladeshbhumi@gmail.com, এছাড়াও ভিজিট করতে পারেন বাংলাদেশ ভূমি/ @Bangladeshbhumi / খন্দকার জাহাঙ্গীর হুসাইন ইউটিউব চ্যানেলগুলি। এখন থেকে নিয়মিত বন্ধ্যান্ত, যৌন, পাইলস, নাকের পলিপাসসহ যাবতীয় রোগের চিকিৎসা করছেন: খ্যাতিমান হোমিও চিকিৎসক ডা. মো. জাহাঙ্গীর হুসাইন (ডি.এইচ.এম.এস; এম.এ) । খন্দকার হোমিও হল, মুসলিমপাড়া, হেমায়েতপুর, সাভার, ঢাকা। রোগী দেখার সময়: বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।

গল্প । চেপে বসা অন্ধকার। ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী

ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী / ১৩৪ জন পড়েছেন
আপডেটের সময় মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২, ৪:২৯ অপরাহ্ন

চেপে বসা অন্ধকার
ওয়াজ কুরুনী সিদ্দিকী

ফারিহা শিল পাটায় শুকনো মরিচ বাটছে আর মিটিমিটি হাসছে আর ভাবছে উপহারটা ঘরের কোথায় লুকিয়ে রেখে গেছে ওয়াসিম। ওয়াসিম। ওর স্বামী। বিয়ের আগে কে জানতো এমন সহজ সরল সাদামাটা চেহারার মানুষটার ভেতর এতো রোমান্টিকতা লুকিয়ে ছিল। অথচ ফারিহাকে এ বিয়েতে রাজি করাতে আব্বু-আম্মু-দাদা-বুবুকে কত কাঠ খড়ই না পোহাতে হয়েছে! ফারিহাতো বিয়ে করবে না! করবেই না! “আব্বু, ভাইয়াকে মেডিকেলে পড়াচ্ছেন! আমি কি এতটাই অযোগ্য? আমাকে অন্তত ডেন্টালেও তো পড়তে দিতে পারেন।”
ফারিহার সর্বশেষ অজুহাত ছিল “ছেলে আমার দিকে তাকাইলে মনে হবে অন্যের দিকে তাকাইছে”! আম্মু হেসে বলছিলেন “লক্ষীট্যারা ছেলেরা একটু লাজুক হয় তারচে বেশি রসিক হয়” আম্মুর এ কথায় ফারিহা না হেসে পারেনি। আম্মুতো এখনো বলেন খেতে বসলে যাদের নাক ঘামে তারা বৌকে খুব আদর করে। একবার এক আত্মীয়ের বিয়েতে ফারিহার আব্বু-আম্মু, শশুর-শাশুড়ি, ফারিহা আর ওয়াসিম এক টেবিলে খেতে বসে। সেদিন ফিরে এসে ওয়াসিমের ঘর্মাক্ত নাকের সে কি প্রশংসা আম্মুর !
দুই হাজার চৌদ্দ সালের এই দিনে নতুন জীবন শুরু করেছিল সম্পূর্ন অজানা অচেনা দুটি মানুষ। অথচ সাত বছরের ব্যবধানে আজ মনে হয় কত শত বছরের আপন যেন ওড়া। মনে হয় এইতো সেদিন। কীভাবে সাতটি বছর কেটে গেছে!
ফারিহা বারবার করে না করছিলো। না গেলে হয় না? একটা দিন অন্তত বিশ্রাম নিন। কিন্তু ওয়াসিমের ওই একই কথা। তিনশো টাকা! এক দিন ছুটি কম কাটালে তিনশো টাকা অতিরিক্ত দেয় স্কুল কতৃপক্ষ। যা একেবারে কম না। কারো কারো হয়তো এক দিনের সিগারেটের পয়সাও না! কিন্তু ওয়াসিমের মত সীমিত আয়ের মানুষ যারা, তারা জানে এ তিনশো টাকার মূল্য কত!
ওয়াসিম বাড়ি থেকে পাঁচ ছয় মাইল দূরে স্থানীয় মফস্বল শহরের একটি বেসরকারি স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক। কতৃপক্ষ একযোগে দেশের প্রায় সবকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক বাছাই করে যেন এক তারার মেলা বসিয়েছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত সবচেয়ে অভিজাত পরিবারের সন্তানেরা এখানে পড়ে।
আজ স্কুলে যাওয়ার সময় একটা চিরকুট হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেছে। যাতে লেখা ” মিনি ডিপারর্টমেন্টাল স্টোর”। ওয়াসিম তো মজা করে মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগকে মিনি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বলে। তার মানে ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর এর পরের ক্লুটা! যা ভেবেছে তাই! ভ্যানিটি ব্যাগের ভেতর আরেকটি চিরকুট। যাতে লেখা “ঘসাঘসির তলে”।
শিল পাটায় মরিচ বাটতে বাটতে ভাবছে ঘসাঘসির তলে মানে কি? শেভিং রেজরের বক্সে দেখবে? না নেই তো! পাটা পুতায় ঘসেইতো মরিচ বাটি। আরে তাইতো! ওয়াসিমকে তো বলেছি আজ ওনার সবচেয়ে ফেভারিট খানা রান্না করব। তাইতো ঘসাঘসির তলে লিখেছে। দেখিতো! দেখিতো!যা ভেবেছে তাই! ছোট্ট এক টুকরা কাগজে লেখা ” জ্বালাইলে জ্বলে। এখন কেউ জ্বালায় না। কেরোসিন খায়”। তার মানে এর পরের ক্লুটা এমন একটা জিনিসের নিচে যা জ্বলে। কি হতে পারে? গ্যাসের চুলা? লাইট?মোমবাতি? আচ্ছা দেখি! না কোথাও তো নেই । তখনি চোখ যায় ঘরের চৌকাঠে ঝোলানো স্মৃতির স্মারক হারিকেনটার দিকে। হারিকেনটা যেই না সরিয়েছে তার পেছনে গোঁজা আরেকটি টুকরো কাগজ যাতে লেখা “পানের আগায় মরিচ বাটা ইসপিরিংয়ে চাবি আটা” তার মানে এর পরের ক্লুটা পানের বাটার ভেতর। কিন্তু এখনতো আব্বার রুমে ঢোকা যাবে না! আব্বা শুয়ে আছেন। মা পাশে বসে কোমরে গীঁট ফুটিয়ে দিচ্ছেন। আব্বা যদি দেখেন বিকেলে না ঘুমিয়ে মরিচ বাটতে গেছে তাহলে খবর আছে! শাশুড়ি মা কানে ধরে সোজা পাঠিয়ে দিয়ে বলবেন, যা! ছেরি ঘুমাইতে যা! রাগী মানুষ গুলো প্রচন্ড রকমের সৎ হয়। এরা ভাঙে তবু মচকায়না। তাদের অন্তরটা ভরা শুধু মায়া আর মায়া। যারা অন্যের ভলোর জন্য রাগে আর নিজের ক্ষতি দেখেও হাসে রাগ করা কেবল তাদেরই মানায় । তাই শশুর আব্বার রাগটাকে এ পরিবারের সবাই শ্রদ্ধা মিশ্রিত সমীহ করে।
যেতে যেতে শুনতে পায় শাশুড়ি মা বলছেন। আজকে কবি সাবে আইয়া লৌক! পিডামু ধৈরা! আমার বৌয়ে দুইডা বাচ্চা সামলায় কেমনে কবি সাবে তো টের পায় না! হেতারে কয় দিন পরপর খালি এইডা পাক কইরা দ্যাও ওইডা পাক দ্যাও! মাইয়াডায় পারন ক্যামনে? আইয়ুক আজকা! ধরমু রান ছিরমু কান!
যা! শুইয়া থাক গিয়া!
নিজের মা বাবাকে ছেড়ে শশুর বাড়ি এসে যেন মা বাবাকেই ফিরে পেয়েছে ফারিহা। ফারিহার দেবর ওসমান ভাই তো বলেন মানুষের মেয়ে ভালো হওয়ার চেয়ে ছেলের বৌ ভালো হওয়া জরুরি। কেননা মেয়েরাতো বিয়ের পর শশুর বাড়িই চলে যায়। সুখে দুঃখে বিপদে আপদে ছেলের বৌরাই পাশে থাকে সারাজীবন। কেন যে এ মানুষটা লেখাপড়া বন্ধ করে বিদেশ চলে গেল! দাদা শশুর সোনামিয়া সরকার ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। আব্বুর কাছে অনেক গল্প শুনেছে ফারিহা। দাদা শশুর সোনা মিয়া সরকারের। তিনি দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ন্যায় বিচারক ছিলেন। উনি ওনার হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে দাগ দিয়ে অপরাধীকে নাকে খত দেওয়াতেন। কান ধরে উঠবস করাতেন। অপরাধীর মুরুব্বিদের দিয়ে জুতাপেটা করাতেন। দেখা যেতো ওনার রুহানী ফায়েজে সে অপরাধী লোকটা এরপর এতো ভালো হয়ে যেতো সে লোকের বিচার আর দ্বিতীয় বার করতে হতো না। একশত বিশ বছর হায়াত পাওয়া সে মর্দে মুজাহিদ সারাজীবন ছিলেন শিরক বিদাতের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। কোন বিয়েতে বা জেয়াফতে ওনাকে দাওয়াত দিলে আগের দিন পাঁচ কেজি গরুর গোস্ত ঘরে আনতেন। বলতেন “ওরা আমারে দাওয়াত দিছে আমিয়েনা গোস গোস্ত খামু আমার নাতি নাতকুররা বৌজিয়েরা ত আর দাওয়াতে যাইতো না”। ওসমান ভাই যেন সোনা মিয়া সরকারের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। ওসমান ভাইয়ের মত লোক বিদেশে না। এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবেই ভালো মানায়। ওয়াসিম এর উল্টো। ও পড়ে আছে সাহিত্য সাধনা নিয়ে ।
ওয়াসিম তো প্রায় সময় বলে সারা দুনিয়ার মানুষ বড় ভাইয়ের কাছে ঋণী থাকে। আর আমি আমার ছোট ভাইয়ের কাছে ঋণী ।
ওয়াসিম ওদের বিবাহ বার্ষিকীর উপহারটা গতকাল সন্ধায় এনে লুকিয়ে রেখেছে। এটাকে খুঁজে বের করতে হবে। এ কাজটা করে একটা থ্রিলার থ্রিলার ফিলিংস পায় ফারিহা। নিজেকে তখন রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দা, কাজী আনোয়ার হোসেনের রানা সিরিজের মাসুদ রানা আর আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজের আহমদ মুসা মনে হয়। এমনও হয় দুদিনও লেগে যায় উপহারটি খুঁজে পেতে। কিন্তু যখন খুঁজে পায় তখন একটা অপার্থিব আনন্দ অনুভব হয়।
সব সময় এমনটা করেনা ওয়াসিম। বছরে মাত্র দুতিনবার। আর এ দু তিনটা উপলক্ষের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ফারিহা। উপহার গুলো যে খুব দামি হয় এমন না। কিন্তু ওয়াসিম উপহারটার মধ্যে এমন একটা রোমান্টিকতা মিশিয়ে দেয় তখন তা শুধু একটি উপহার থাকেনা। হয়ে যায় জীবনের অমূল্য একটি অংশ। একবার ফারিহার জন্ম দিনে ওয়াসিম একটি কাঁচের গোলাপ উপহার দেয়। সাথে স্কচ টেপ দিয়ে লাগানো চিরকুটে লেখা “গোলাপটা নকল/ ভালোবাসাটা আসল”। আবার এক ঈদের উপহারে একটা কফি মগ উপহার দিয়ে চিরকুটে লিখেছিল “গ্লাসটা ভঙ্গুর/ ভালোবাসাটা স্থায়ী।” এমন উপহার কি হারিয়ে ফেলা যায়? না! কখনোই না! রেখে দেবে ফারিহা। যদি ততদিন হায়াত পায় নাতি নাতনিদের দেখাবে। দেখো কতটা রোমান্টিক ছিল তোমাদের দাদা ভাই। ওয়াসিম তো প্রায় সময় বলে আমাদের যখন নাতনি হবে নাতনির নাম রাখবো রাবেয়া। রাবেয়া বেগম। ওয়াসিমের দাদির নাম। এ সাত বছরে যতবার দাদির প্রসঙ্গ এসেছে ফারিহা দেখেছে চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে ওয়াসিমের। দাদি শাশুড়িকে দেখেনি ফারিহা। ওদের বিয়ের একবছর আগে মারা যান তিনি। না দেখলেও এ মহীয়সী নারীর প্রতি শ্রদ্ধায় উথলে ওঠে ফারিহার তনুমন।
প্রতিদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর প্রথমে আব্বাকে ফোন করে ওয়াসিম। তারপর ফারিহাকে। ফারিহা মাঝে মাঝে ধরতে পারে মাঝে মাঝে পারেনা। ওয়াসিম বোঝে। কত ব্যস্ততা ফারিহার!
আজ অবশ্য প্রথম কলেই পেয়ে গেছে ওকে
হ্যালো ফারিহা! কি করছ?
– আসসালামু আলাইকুম। আবু বকরের আব্বু খাওয়া দাওয়া করেছেন? আমি সালাত আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
-ওয়া আলাই কুম আস সালাম। তোমার স্পেসাল উপহারটা পেয়েছি। জাযাকাল্লাহ।
– আমি আর কি স্পেশাল উপহার দেব আবু বকরের আব্বু, আপনাকে? আপনিই তো সব সময় আমাকে সুন্দর সুন্দর উপহার কিনে দেন। আমিও যদি কামাই রোজগার করতে পারতাম তাহলে আপনার এত টিউশনি করতে হতো না। আপনি যান সকাল সাতটায় হাড় ভাঙ্গা খাটুনি শেষে আসেন রাত আটটায় ।
– তুমি কি বললা এটা। তুমি যা দাও এগুলো এতই মূল্যবান আর দুষ্প্রাপ্য যে পৃথীবীর কোন দোকানেই এগুলো কিনতে পাওয়া যাবে না। আর তুমি কামাই করোনা এটা তুমি ভাবো কেন? তুমি এবং আমাদের মায়েরা, বোনেরা ভোর থেকে শুরু করে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত সংসারের জন্য যে পরিশ্রম করো তার অর্থ মূল্য কম করে হলেও বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা।
– আপনি ভালো বলেই এ কথা বলছেন।
– মোটেও তা না। আর শোন আমাদের তো সাপ্তাহিক ছুটি আছে বিভিন্ন দিবসে বন্ধ আছে। তোমাদের তো তাও নেই।
– শোনেন ডব্লিউ স্যার। আপনার কাঞ্জিপুরের মেহমান জুরান পুর চইলা যাওয়ার আগেই আইসা পইরেন।
একথায় দুজনেই হেসে ওঠে ওরা।
আজ হটপটে খাবারের সাথে ডিমের পিঠা বানিয়ে দিয়েছে ফারিহা। পিঠা গুলো
তিনটি ইংরেজি অক্ষর। যেগুলো হলো আই, আর, এবং ইউ। যা দিয়ে ফারিহা বোঝাতে চেয়েছে “আই রেসপেক্ট ইউ।”
ফারিহা! ওয়াসিমের জীবনটাকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে রেখেছে। একজন তাকওয়াবান স্ত্রী জমিনের উপরে আর আকাশের নিচে একজন পুরুষের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত।
ওয়াসিম প্রায় সময় ভাবে আমার মা বাবা আমার দাদা দাদিকে প্রাণভরে সেবা করেছে বলে আল্লাহ্ তার যথাযোগ্য প্রতিদান দিয়েছেন। ফারিহাকে পাঠিয়েছেন তাদের জন্য উপহার হিসেবে। একবার মাগরিবের পর ওয়াসিমের মা ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছেন ওজিফা পড়তে। চৌকির রেক্সিনে বসে ভেজা ভেজা অনুভব হলে হায় হায় করে উঠলেন। তুকতুক করছেন বিড়ালের প্রস্রাবে বসলেন কিনা। কারন প্রায় সময় বিড়াল ঘরের কারে ওঠে প্রস্রাব করে রাখে। ফারিহা পাশের রুমে আটার খামির বানাচ্ছিল। আর ওয়াসিম বসে টকশো শুনছিলো তাজ হাশমীর। ফারিহা এসে হাঁটু গেড়ে বসে মেক্সির কাপড়ে নাক লাগিয়ে শুঁকে বলে, “না, মা! বিড়ালের প্রস্রাব না। ওমর বা আবুবকর হয়তো পানি ফেলেছে।” নিজেকে পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ মনে হয়েছে সেদিন। চাইলে এমন আরো শত ঘটনা বলতে পারবে ওয়াসিম।
ওয়াসিম ফারিহার দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য যে হয়না এমন না। বরং এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফারিহা তার সীমাহীন ধৈর্য দিয়ে সবসময় সামাল দিয়ে এসেছে। একবার কি একটা ব্যাপারে যেন মনোমালিন্য হয় দুজনের। ওয়াসিম খাচ্ছে দাচ্ছে স্কুলে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক মতই চলছে। কিন্তু ফারিহার সাথে কথা বন্ধ। ফারিহার কাছে প্রচন্ড অস্বস্তিকর লাগে এ সময়টা। ও চায় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওয়াসিমের মনের গুমোট ভাবটা দূর করতে। এ সময়টাতে ওয়াসিমও যে খুব শান্তিতে থাকে এমন না। এমনও হয় চার রাকাত সুন্নত নামাজে রাকাত সংখ্যা মনে থাকে না। বই পড়তে ভালো লাগে না। কোন কিছুই ভালো লাগে না।
একবার দুতিন দিন যাবত মন ভালো নেই ওয়াসিমের। কলিগ সোহেল স্যার অন্তরঙ্গ বন্ধু। বিষয়টি নজর এড়ায়নি সোহেল স্যারের। কিন্তু আজ দুপুরে লাঞ্চ আওয়ারের পর থেকে ওয়াসিমকে বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে সোহেল স্যার । কিন্তু ওয়াসিম হাসি দিয়ে চেপে গেছে। হটপটে আজ ভাত না দিয়ে চালের আটার রুটি দিয়েছে ফারিহা। আর তিলের বুগি। একটি রুটি খাওয়া হয়েছে আরেকটি হাতে নিয়েছে ওয়াসিম। কিন্তু এটা কি! তিলের বুগি দিয়ে রুটিতে লেখা” 4give me plz ” সাথে একটি চিঠি।।আর খেতে পারেনী ওয়াসিম। তার হটপট ড্রয়ারে রেখে চোখের পানি আড়াল করতে সোজা ওয়াসরুমে। দাম্পত্য জীবনের রাগ অভিমান আর সুখের অনুভূতিগুলো একান্তই দুজনের মাঝে রাখতে চায় ওরা।
এ মোবাইল ইন্টারনেট,ফেসবুক,ইমো হোয়াটস এপের যুগে আজো চিঠি লিখে ওরা । দুজন দুজনকে। ওয়াসিম সব সময় বলে মনের কথা গুলো অনলাইনের কৃত্রিম ডিভাইসের খাচায় বন্দি না করে এগুলো আমরা অক্ষরের প্রজাপতি করে উড়িয়ে দেব নীল খামে ভরে। মোবাইলের লেখাগুলো ধরা যায় না ছোঁয়া যায় না নেয়া যায়না ঘ্রাণ। আর চিঠিতে ! সেতো ঐন্দ্রজালিক অনুভবের এক অপার দুনিয়া। প্রিয়জনের হাতের স্পর্শ মাখা সে স্বেত কবুতর ইচ্ছে হলে চুমু খাওয়া যায়। নাকে ধরে ঘ্রান নেয়া যায়। যায় বুক পকেটে নিয়ে ঘোরা। পকেটে হয়তো অনেক সময় টাকা থাকে না । কিন্তু যার মানি ব্যাগের কোনে লুকিয়ে রাখা সে রুপালি দলিল। যাতে সাফ কবলায় লেখা আছে আকাশের মত সীমাহীন এক হৃদয় রাজ্যের একচ্ছত্র মালিকানা। সে পৃথিবীর সব’চ ধনী, সব’চে সুখি না হয়ে পারে!
সেদিন সন্ধ্যায় স্কুল থেকে আসার সময় রজনী গন্ধার অনেকগুলো স্টিক নিয়ে আসে ওয়াসিম।এসে দেখে ফারিহা পাশের ঘরে রান্না বান্নায় ব্যাস্ত। মুখটি সকালে তুলে আনা বিকেলের শাপলার মত শুকনো।
কি করা যায়! কি করা যায়! নাহ! কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেনা কিভাবে নিজের প্রায়শ্চিত্ত করবে। আসলে ফারিহার কোন অন্যায় ছিল না। যা ছিল একান্তই মানবিক দুর্বলতা। যা সব মানুষেরই থাকে। হ্যা পেয়েছি। এই তো আয়না। একশো আশি টাকার দেয়ালে ঝোলানো একটি আয়না। এটিই ফারিহার চুল আঁচড়ানো থেকে শুরু করে সব রুপচর্চার সঙ্গী । ফারিহা দশ হাজার টাকার ড্রেসিং টেবিলের কাজ দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছে এ একশো আশি টাকার আয়নায়। মানুষ সুখী হওয়ার জন্য কত লাখ লাখ টাকাই না ব্যয় করে। অথচ সুখী হতে পারে কই? পারে না। আয়েশা (রাঃ) বলেন আমি যখন রাসুল (সঃ) এর সংসারে বৌ হয়ে প্রথম দিন আসি দেখি ঘরটিতে আসবাবপত্র বলতে একটি পানির সোরাহী আর একটি দড়ির খাটিয়া আছে মাত্র অথচ পুরো ঘরটি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ।
ওয়াসিম বাথরুম থেকে সাবান এনে গলিয়ে মেখে মেখে পুরো আয়নাটি ঘোলা করে ফেলে। তারপর তর্জনী দিয়ে লিখে ইংরেজি অক্ষরে লেখা “আই এম সরি।”
রাতের টিউশনি শেষে এসে দেখে ওজু করে এসেছে ফারিহা। যত ব্যস্ততাই থাক আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করে ফারিহা। ফারিহার এ গুনটি অসম্ভব ভালো লাগে ওয়াসিমের। দেখে আয়নাটি পরিস্কার বৃষ্টি শেষের আকাশের মত, তারও বেশি প্রশান্ত ফারিহার মুখ। ওয়াসিমকে দেখে আবার সে বৃষ্টি স্যলাইনের ফোটার মত টুপটুপ করে ঝড়ছে ফারিহার চোখ বেয়ে। রজনীগন্ধা গুলো অনেকক্ষণ নাকে ধরে রাখে। জিজ্ঞেস করে এতগুলো টাকা নষ্ট করতে গেলেন কেন! আজকে নিশ্চয়ই স্কুল থেকে স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে আসছেন। ওয়াসিম চোখের পানি লুকাতে বলে আমি ওজু করতে গেলাম। যখন চোখ কথা বলে তখন মুখের ভাষার দরকার পড়ে না। যেতে যেতে শুনতে পায় “মিস্টার লেট ওয়াসরুম থেকে তাড়াতাড়ি বেরুবেন। আজকে যেন জামায়াতের আগে চার রাকাত সুন্নত পড়তে পারেন।” আজ আর সুন্নতের রাকাতে ভুল হবেনা ওয়াসিমের।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে চারটা বেজে গেছে টেরই পায়নি ওয়াসিম। স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। সহকর্মী রাজু স্যার আর ওয়াসিম বাজারে দুটি পাশাপাশি বাসায় টিউশনি করতে যায়। রাজু স্যারের ডাকে সম্বিত ফিরে পায় ওয়াসিম। তারপর মুচকি হেসে বলে চলেন স্যার।
রাজু স্যারকে প্রথম যেদিন গৌরীপুর অক্সফোর্ডের ডাইনিং রুমে দেখে ওয়াসিম। জিজ্ঞেস করেছিল আপনি কি ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ? রাজু স্যার মুচকি হেসে শুধু এইটুক বলছিলেন নাহ স্যার। যতই দিন যাচ্ছে সুদূর সাতক্ষীরা থেকে আসা এই মানুষটার প্রতি বিস্ময় আর শ্রদ্ধাই কেবল বাড়ছে ওয়াসিমের। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গনিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া রাজু স্যার কি কি পারে সেটা সেটা জিজ্ঞেস না করে বরং জিজ্ঞেস করতে হবে কি কি পারেনা! রাজু স্যারের মাঝে খোলাফায়ে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের ছায়া দেখতে পায় ওয়াসিম। এই রাজু স্যারের মত উচ্চ শিক্ষিত তরুনেরা যেদিন ড্রাইভিং সিটে বসতে পারবে সেদিন এদেশের মানুষ তাদের শত বছরের লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে পাবে।
আসরের পর ফারিহা রাতের রান্নার গোছগাছ করছে এমন সময় শশুর আব্বার ত্রস্ত কন্ঠস্বর টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখাইতেছে। “দুই পক্ষের সহিংসতায় তিন জন স্পট ডেথ! শতাধিক আহত। শতাধিক দোকানপাট ভাংচুর।” ওয়াসিমের সাথে তোর সর্বশেষ কতক্ষণ আগে যোগাযোগ হইছে? আমি অনেক্ষণ যাবত বারবার কল করতেছি কিন্তু ধরতেছেনা।”
একথা শুনে ফারিহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনে ডায়াল করছে আর আল্লাহকে ডাকছে।দ্বিতীয় বার কল করতেই ওপাশ থেকে অনেক মানুষের ছোটাছুটি চিৎকার চেঁচামেচিতের ভেতর রাজু স্যারের ত্রস্ত কন্ঠ “আসসালামু আলাইকুম আমি রাজু স্যার বলছি। এখানে গন্ডগোল হয়েছে। আমি আর স্যার টিউশনি থেকে বের হইছি মাত্র। আমরা দুই দলের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যাই। স্যারের পিঠে কাচের টুকরো লেগেছে। আমরা স্যারকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে যাচ্ছি।” বিস্ময় যেন কাটছে না ফারিহার। ওয়াসিমের ফোন থেকে ওয়াসিম কথা না বলে, রাজু স্যার কেন কথা বলছে। কি হয়েছে ওনার?মুহূর্তেই যেন পায়ের নিচের জমিনটা সরে গেছে ফারিহার।
ওয়াসিম কাতর কন্ঠে বললো “স্যার আমি একটু কথা বলমু আব্বার সাথে। আমার আব্বা আম্মা হার্ট এটাক করে ফেলবে। রাজু স্যার ফোনটি ধরে রেখে কানে লাগিয়ে দিতেই ওয়াসিম বাবাকে বলে, আব্বা! আমি ভালো আছি আব্বা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। একটু লাগছে মাত্র। একটু পরে স্যারের সাথে চইলা আসমু আপনেরা কিন্তু আইসেন না।”
ওয়াসিমের বাবা সিদ্দিকুর রহমান সাহেব। মুখে হাত দিয়ে ধপ করে বসে পড়লেন চেয়ারে। মুহূর্তেই আবার উঠে দাড়ালেন। ফারিহাকে বললেন তুই নামাজ পইড়া আয় আমিও নামাজ পইড়া সিএনজি থামাই। এরা অন্য ধাতুতে গড়া মানুষ। বিপদে এরা কান্নায় ভেঙে পড়ে না। তখন কথা বলে এদের হৃদয় আর চোখ। এ সময় এরা জায়নামাজে দাড়ায় আর সিজদায় বিগলিত চিত্তে চোখের পানিতে কথা বলে পরম প্রভুর সাথে। যা কিছু চাওয়ার পরম প্রভুর কাছেই এরা চায়। জাগতিক কোন মুসিবতএ কাবু করতে পারেনা এদের প্রশান্ত চিত্ত হৃদয়কে। কোরআন পাকে যাকে বলা হয়েছে নাফসুল মুতমাইন্না।
আহতদের আর্তনাদ আর তাদের আত্মীয় স্বজনের গগন বিদারি চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক উৎসুক জনতা আর রোগীদের আত্মীয় স্বজনের ভিরে মূহুর্তেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ।
কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার আসলেন বেশ খানিকটা পর। এসে একটা অন্যমনস্ক ভাব নিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলেন কি হইছে ? নার্স আর কিছু ছোকরা যারা বোধ হয় স্টাফই হবে এখানকার রোগীদের প্রতি একটা তাচ্ছিল্য আর অবহেলার সাথে বেন্ডিজ বাঁধছে আর একে ওকে ধমকাচ্ছে। মুচিরা নদী দিয়ে ভেসে যাওয়া গরুর চামড়াও বোধ হয় এত তাড়াহুড়ো করে ছিলে না, এখানকার নার্স আর ওই ছোকরা গুলো যেভাবে যা তা ভাবে সাথে আহত লোকগুলোর ড্রেসিং করছে। ডাক্তারের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে ভুড়ভুড় করে বেরুচ্ছে সিগারেটের নোংরা গন্ধ। চেইন স্মোকার বোধয় লোকটা।
ইতিমধ্যে ফারিহা আর ওয়াসিমের বাবা এছে গেছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। ওয়াসিমের শরীর থেকে কাঁচের টুকরো খুলে ড্রেসিং করছে একজন নার্স। ওয়াসিমের বাবা জরুরি বিভাগের এই রুমে প্রবেশ করা মাত্র মুহুর্তেই যেন আবহাওয়াটা বদলে গেল। কর্তব্যরত ডাক্তার বেশ সমীহ করে তাঁকে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললো “বসুন স্যার”। একে ওকে চোখ ইশারায় আর কি কি যেন বললো। দেখা গেল নার্সেরা কয়েকজন এরুমে ওরুমে ছোটাছুটি করছে। কিছু ফাইলপত্র সরাচ্ছে কেউকেউ। দরজার ও পাশে গিয়ে কয়েকজন চাঁপা গলায় ফোন করছে কাকে কাকে যেন।
সিদ্দিকুর রহমান সাহেব নির্বিকার চিত্তে চেয়ে আছেন প্রাণ প্রিয় সন্তানের পিঠ বেয়ে পড়া রক্তের দিকে।তিনি স্মিত হেসে বললেন “নো থ্যাঙ্কস” আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যান। আমি নিজেও একজন হোমিও প্র্যাকটিসনার। কয়েক ফোঁটা ক্যালেনডুলা দিয়ে দিয়েছি। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ। একটু পর কয়েক দানা একোনাইট খাইয়ে দেব। ব্যথাটাও কমে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
ডাক্তারের চোখে মুখে বিস্ময়। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ইনি এ আহত রোগীর বাবা! ডাক্তার ভেবেছিল কোন গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের অফিসার হবে নিশ্চয়ই। এমনটাই হয় সবসময়। বাটা ক্যাজুয়াল সু, কালো প্যান্ট, অফ হোয়াইট নিভাজ পাঞ্জাবি ।বকের পালকের মত শুভ্র আর দুগ্ধ ফেনিল মুষ্ঠি পরিমান ছাটা ঘন চাপ দাড়ি।দৃঢ় মনোবলে ঈষৎ কামড়ে থাকা ধনুকের জ্যা এর মত বাঁকানো রক্তিম দুটি ঠোঁট। অপরাজেয় ব্যক্তিত্বের সমহিমায় সমুজ্বল আলিফের মত খাঁড়া নাক। ঈগলের মত ডানা মেলা ঘন ভুরু। চকলেট কালারের পুরো ফ্রেমের চশমার ওপাশে ধ্রুবতারার মত জ্বলজলে বুদ্ধিদীপ্ত দুটি চোখ। প্রশস্ত ললাট। যে ললাটে সূর্য রশ্মির মত ভাস্বর নিষ্কলুষ জীবনাচরনের দীপ্তি। ব্যাক ব্রাশ করা ঢেউ খেলানো সফেদ ঘন চুল। সব মিলিয়ে শ্রদ্ধা জাগানো ব্যক্তিত্বের এক সিংহ পুরুষ! যাকে সম্ভ্রমে সম্মান না দেখিয়ে পারা যায় না। এমনও হয়েছে অন্যেরা নিজেদের জমিজমা সংক্রান্ত যে ন্যায্য কাজ সরকারি অফিস থেকে করিয়ে আনতে দশ বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগেছে। অথচ এই একই কাজ তিনি যখন করতে গেছেন টাকা লাগবে দূর থাক ওরা ওনার কাজটা করে দিয়ে যেন নিজেরা ধন্য হয়েছে এমন ভাবে চা অফার করেছে।
রাত একটা। শুনশান নিরবতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে হাসপাতালের এ পাশটা। ওয়াসিমের বাবা ওয়াসিমের জন্য গরম পানি আনতে নিচে গেছেন। শীতের রাত শেষ হতে চায় না। ফারিহার চোখে ঘুম নেই। ফারিহা বলে সকাল হলেই আমরা বাড়ি চলে যাব আবু বকরের আব্বু। এখানে আপনার প্রপার ট্রিটমেন্ট হচ্ছে না। ওয়াসিম কিছু বলে না। উদাস চোখে বাইরের ঘুটঘুটে আঁধারের দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু।
বাইরে নাম না জানা কিছু নিশাচর রাতজাগা পাখির কন্ঠ শোনা যায়। আর শোনা যায় দূরের মহাসড়ক বেয়ে চলা বেপরোয়া কিছু নৈশ যানের এলোমেলো হর্ন । অনেক্ষন পর ওয়াসিম বলে এ পৃথিবীতে পাখীরাই প্রকৃত স্বাধীন। কোকিলেরা কুহু কুহু ডাকতে পারে দোয়েলেরা পিউ পিউ আর কাকেরা কা কা। আমরা মানূষ আরেক মানুষের ভয়ে সত্য কথাটিও মুখ ফুটে বলতে পারি না। লিখতে পারিনা! ওয়াসিম বাইরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ফারিহার চোখে চোখ রেখে তাকায়। সে চোখে নির্ভরতা আর ডানা মেলে উড়বার এক অপার আকাশ। টলোমলো চোখে ওয়াসিম বলে চলে। বোয়াল মাছ গুলো লাফিয়ে জাল থেকে বেরিয়ে যায়। ঐ জাল পেরুতে পারেনা টেংরা আর বজুরিরা। তাইতো এরা নিজেরা নিজেরা কামড়া কামড়ি করে আর প্রাণ যায় কিছূ নিরীহ মলা ঢেলার। আজ কত গুলো নিরিহ মানুষ মারা গেল! কত মানুষ আহত হলো! কত মানুষের রুটি রুজির শেষ সম্বল টুকু ধ্বংস হলো! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পর সকাল হবে। ভোরের আলোয় আলোকিত হবে চারদিক। কিন্তু এ মানুষ গুলোর জীবনে নেমে এসেছে যে অন্ধকার ! আমাদের চারপাশে চেপে বসা যে অন্ধকার! সে অন্ধকার দূর হবে কবে?

০৭/০১/২০২২


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর