মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা ঃ কুষ্টিয়া ও কুমারখালী শহরে যত্রতত্র বরফ ও লবন মিশ্রিত লেবু বা ইনস্ট্যান্ট পাউডার মিশ্রিত শরবত বিক্রয় হচ্ছে দেদারছে। এর বেশীরভাগ ক্রেতা রিকশাচালক, দিনমজুর, দোকানদার, পথচারী। অনেক সচেতন মানুষকেও দেখা গেছে অস্বাস্থ্যকর এসব শরবত পান করতে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি থাকলেও কোন তদারকি নেই। স্বস্তির আশায় এই শরবত পান করে ডায়রিয়ার আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়ছে। এ দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তারা বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। প্রশাসনও নীরব।
কুষ্টিয়া শহরের চার রাস্তামোড়, পাঁচরাস্তা মোড়, মজমপুর গেইট, টার্মিনাল, স্টেশন, বড় বাজার, কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড, গড়াই সেতু, হলবাজারহ য়ে প্রধান সড়কের উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩০/৩৫টি ¯স্থানের বাইরেও অলিগলিতে এবং পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য শরবতের দোকান দৃশ্যমান, যার অধিকাংশই ভ্রাম্যমাণ। ছোট ভ্যানের ওপর একটি ফিলটার, লেবু, কয়েকটি গ্যাস, পানি, বিভিন্ন কোম্পানির ইনস্ট্যান্ট পাউডারের ছোট প্যাকেট দিয়েই দোকানের পসরা সাজানো হয়েছে। শরবত তৈরিতে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্য বিধি। বিক্রেতারা ফিল্টারের ওপরে ঢাকনা খুলে খালি হাতেই বরফ-পানি, লেবু দিয়ে শরবত নাড়া দিচ্ছেনা আবার ওই হাতেই টাকা নিচ্ছেন কিংবা অন্যান্য কাজও করছেন। যে গ্লাশ শরবত পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটি একজন পান করার পরে ছোট বালতির সাদা পানিতে বারবার ধুয়েই আবার আরেকজনকে পান করার জন্য দেওয়া হচ্ছে।
তাছাড়া শরবতে যে বরফ দেওয়া হচ্ছে সেটিও আনা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে। খালি রিকশা- ভ্যানে ছালার চট বিছিয়ে আনা এসব বরফ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সে প্রশ্নের উত্তরও জানা নেই কারোর। আর শরবত তৈরির জন্য যে পানি ব্যবহার করা হচ্ছে সেসব পানি দোকানিরা যার যার সুবিধা অনুযায়ী রাস্তার পাশ থেকে কোন থেকে সংগ্রহ করছেন। এচাড়াও বেলের শরবত বিক্রি করা হচ্ছে কোথাও। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বেল আগে থেকেই ভেঙে খোলা অবস্থায় রাখা হয়েছে। ধুলোবালি পড়ে থাকা সেই বেলই শরবতে দেওয়া হচ্ছে।
কয়েকজন বিক্রেতর সাথে কথা হলে তারা এবিষয়ে কিছুই বুঝেনা বলেই জানায়। ভ্যান চালক মজিদ মিয়া জানায়, গরমে আর পারছিনা, তাই খাচ্ছি। মটরসাইকেল থামিয়ে এই শরবত পানকারী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমে জীবন রাখায় কষ্ট, অত ভেবে দেখার সময় কই? সহজে পেলাম, তাই খেয়ে নিলাম ১০ টাকা দিয়ে। ভালো লাগছে। স্বাস্থ্য ঝুঁিক আছে বলেও তিনি স্বীকার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে যে বরফ ব্যবহার করা হচ্ছে তার অধিকাংশই মানুষের খাবার উপযোগী নয়। বিভিন্ন বরফকল থেকে মাছ সংরক্ষণ করার জন্য তৈরি করা বরফের পাটালি পাইকারি দামে কিনে এনে শরবতে মেশান বিক্রেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শরবত বিক্রেতা জানান, বরফকলে সাধারণত দুই ধরনের বরফ তৈরি করা হয়। একটি মাছ সংরক্ষণের জন্য। আরেকটি খাবার জন্য। এর মধ্যে মাছ সংরক্ষণের জন্য যে বরফ তৈরি করা হয় সেটির দাম তুলনামূলক কম। সেজন্য মাছ সংরক্ষণের জন্য তৈরি বড় বরফই কেনেন তারা।
বরফ কলের এক কর্মচারী জানান, মানুষ এসে বরফ কিনে নিয়ে যায়। কে কোন কারনে কিনছে তা জানা যায় না। তবে তিনি বলেন, শহরের মধ্যে লেবু পানি বিক্রি করে এমন অনেকেই বরফ কিনছে বলে তার মনে হয়।
এব্যাপারে কুমারখালী সহকারী কমিশনার ভ’মি আমিরুল আরাফাত বলেন, বিষয়টি স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের। তারা সহায়তা চাইলে অভিযান করা হবে।
কুষ্টিয়া জেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আরাফাত আলী জানান, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। আমরা অচিরেই ব্যব¯’া নিবো। তিনি আরো জানান, কেউ অসুস্থ্য হলে অভিযান করায় দেরি করা হবেনা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, বর্তমান এই তাপদাহের সময়ে স্বাভাবিক ও নিরাপদ খাবার পানির বিকল্প নেই। গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা, বফর পানি কিংবা অনিরাপদ পানি পান করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। বাইরের কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত শরবত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।